প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ওয়েবসাইটে অপপ্রচার by মিল্টন বিশ্বাস
চলতি মাসের ২ তারিখে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, বিরোধী দল তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ওয়েবসাইটে তাঁর কোনো একটি বক্তৃতার অংশবিশেষে মিথ্যা তারিখ দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারা। ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর কথা তিনি বলেছিলেন ১৯৯৬ সালে।
সেই বক্তব্যকে ২০০৮ সাল লিখে প্রচার করা হচ্ছে একটি বিশেষ ওয়েবসাইটে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ২০০৯ সালে বিডিআর কর্তৃক সেনা কর্মকর্তা হত্যাযজ্ঞের মর্মান্তিক ঘটনা থমকে দিয়েছিল। সে সময় সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সভার প্রশ্নোত্তর ও কথোপকথনের কিছু অংশ ওয়েবসাইটে প্রচার করা হয়। এটিরও উদ্দেশ্য ছিল তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও তাঁকে হেয়প্রতিপন্ন করা। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অপপ্রচার আছে ইন্টারনেটে। এমনকি তাঁর পূর্বপুরুষ হিন্দু ছিল বলে প্রচার করছে একটি কুচক্রীমহল। ১২ ফেব্রুয়ারি দলীয় সভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা থেকেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিরোধী দলের বিরোধিতা ও অপপ্রচারের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। আমরা ইতিহাসের একটি উদ্দীপিত মুহূর্ত যাপন করছি। বিস্তৃত পরিসরে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ আমাদের যোগাযোগ ও শিক্ষাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, অধিকাংশ মানুষ যোগাযোগ ও শিক্ষার শক্তিশালী এবং উপযোগী মাধ্যম মনে করলেও কোনো কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেটের অপপ্রয়োগে অতিউৎসাহী বিশেষত অপরাধ ও সন্ত্রাসের উদ্দেশ্যে। বর্তমানে সাইবার এথিকস প্রচলিত আছে। নিরাপদ ও দায়িত্বের সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারকে সাইবার এথিকস বলে। অনলাইনের ক্ষতিকর ও বেআইনি ব্যবহার থেকে কিভাবে নিজেদের এবং অন্যকে রক্ষা করা যায়, এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে এতে। নিরাপদ ও দায়িত্বের সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহার এবং অপব্যবহার সম্পর্কে তরুণসমাজকে সচেতন করে তোলাকেও এর আওতা বলে মনে করি। ই-মেইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জানতে হবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের নীতিমালা। মা-বাবা ও শিক্ষকরা এ বিষয়ে সচেতন করতে পারেন অন্যদের।
মূলত তথ্যপ্রযুক্তির অবারিত প্রবাহের সুযোগে ভালো কাজের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আমার ফেইসবুক খুলে দেখলাম, আমার নাম ও ছবির সঙ্গে একটি ক্ষুদ্র নাম যুক্ত করে আরো একটি মিথ্যা আইডি খোলা হয়েছে। প্রাণনাশের হুমকিসহ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক হওয়ার জন্য এ বিষয়ে আমি থানায় জিডি করেছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মতো ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টার বিরুদ্ধে যখন সাইবারে অপপ্রচার চলে, তখন আমরা আঁতকে উঠি। চিন্তা করতে থাকি এ কোন দেশের অধিবাসী আমরা, যেখানে মানুষের কল্যাণ কামনায় রাত-দিন সরকারকে ব্যস্ত থাকতে হয়, সেখানেই এ ধরনের অপতৎপরতা শুরু হয় কেন? প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের যৌক্তিক সমালোচনা প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার; কিন্তু নোংরামি কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায় না।
ইন্টারনেটের ব্যবহার দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। শিক্ষা, বিনোদন, ব্যবসায় ও খেলার উপকরণে পরিণত হয়েছে ইন্টারনেট। কিন্তু সাইবার ক্রাইম এর সবচেয়ে খারাপ দিক। বেআইনিভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারকে ক্রাইম হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। নানাবিধ সুবিধা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত, সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘি্নত করছে ইন্টারনেট। ই-মেইল হ্যাকিং, ক্রেডিট কার্ড হাতিয়ে নেওয়া, ভাইরাস ছড়ানো, সফটওয়ার নকল করাসহ ক্রমাগত বাড়ছে সাইবার ক্রাইম। আধুনিক তস্কর বন্দুক রেখে কম্পিউটার চুরি করে। বোমা মেরে নয়, সন্ত্রাসীরা পিসির কিবোর্ড ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষতি করে বেশি। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ইন্টারনেট-সংক্রান্ত অপকর্মকে সাইবার ক্রাইম বলে। এটা হতে পারে ব্যক্তি, সম্পত্তি ও সরকারের বিরুদ্ধে।
ব্যক্তি সম্পৃক্ত হয় পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দিয়ে, হয়রানি করতে পারে ই-মেইলে। এ ছাড়া কেউ কেউ শিশু-নারী পাচার করে পর্নোগ্রাফে নিযুক্ত করায়। এসব যুবসমাজকে সহজেই আকৃষ্ট ও বিভ্রান্ত করে। সাইবার চ্যাট থেকে পাকিস্তানে নাবালিকাকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। 'মেলিসা' ভাইরাস বিস্তারে ইন্টারনেটের ভূমিকা আছে। ১৯৯৯ সালে মার্চে এ ভাইরাসটি প্রথমে ইন্টারনেটে দেখা দেয়। কম্পিউটারের মাধ্যমে এরপর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে। ৮০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি করে কম্পিউটার জগতের। 'লাভ বাগ'ও একটি ভাইরাস।
সাইবার হয়রানি ও সাইবার ক্রাইমের পার্থক্য আছে। যৌন হয়রানি, ধর্ম, বর্ণ এবং অন্য হয়রানি সাইবার স্পেস ব্যহারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এ ধরনের হয়রানিও সাইবার ক্রাইম। একজন নাগরিকের গোপনীয়তা নষ্ট করা হয় এর মাধ্যমে। অনলাইনে কারো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করাও গুরুতর অপরাধ। ক্ষতিকর প্রোগ্রাম সঞ্চারিত করে কম্পিউটারের ক্ষতি করা সম্ভব। উপরন্তু সাইবার স্পাইয়ের মাধ্যমে কারো ডেটা চুরি করে ব্যবসায়ের ক্ষতি করতে পারা যায়।
সরকারের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম হতেই পারে। সাইবার টেরোরিজম এ ধরনের অপরাধের মধ্যে আলাদা। ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে সরকার ও নাগরিকরা। সরকারের নিজস্ব ওয়েবসাইট অথবা মিলিটারির ওয়েবপেজ ধ্বংস করে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে সন্ত্রাসীরা। জঙ্গি সংগঠনগুলো যোগাযোগ ও অর্থ সংগ্রহ করে থাকে নেট ব্যবহার করে। লস্কর-ই-তৈয়বা এভাবে অর্থ সংগ্রহ করে। ক্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে কারো অজান্তে কম্পিউটার নষ্ট হয়ে মূল্যবান ও গোপন তথ্য হারিয়ে যেতে পারে। কারণ বিশ্বে ক্র্যাকিং প্রুফ কম্পিউটার নেই। প্রতিদিন জনপ্রিয় বাণিজ্যিক সাইটও আক্রান্ত হচ্ছে। সফটওয়ার পাইরেসিও অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। অনেকে অবৈধ ও অননুমোদিতভাবে পাইরেটেড কপি ইন্টারনেটে প্রচার করে এটাও একটি অপরাধ। পেশাগতভাবে এ কাজটি যারা করে তারা ক্র্যাকার। এদের অধিকাংশই উঠতি বয়সের।
২০০০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের এক সরকারি প্রজ্ঞাপনে সাইবার সিটিজেনশিপ সম্পর্কে সচেতন হতে বলা হয় অভিভাবক ও শিক্ষকদের। অনলাইন আচরণের দায়িত্ব সম্পর্কেও জানানো হয়। সাইবার এথিকস, কম্পিউটার ক্রাইম ও ইন্টারনেট ব্যবহারে জননিরাপত্তা সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেট আসক্তি থেকে রক্ষার জন্য সেখানে বিধিবিধান প্রণীত হয়েছে। ভারতে ২০০০ সালে তথ্যপ্রযুক্তি আইন প্রণীত হয়েছে। সাইবার ক্রাইমের জন্য পুলিশ যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় হানা দিতে পারবে এবং দোষীকে ধরতে পারবে এই বিধান অনুসারে। এই আইন কয়েকটি বিষয়কে সাইবার ক্রাইম গণ্য করেছে। যেমন_কম্পিউটার সোর্স কোড নষ্ট করা, হ্যাকিং, গোপনীয় স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস করা, ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে গোপনীয় তথ্য প্রকাশ করা। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সম্পৃক্ত অপরাধ তদন্তের নানা উদ্যোগ আছে যুক্তরাষ্ট্রে। বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি রক্ষার জন্য আইন থাকা জরুরি। এ লক্ষ্যে এফবিআই থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক ও ব্যবসাসংশ্লিষ্টরা তৎপর সেখানে। বাংলাদেশে এ বিষয়ে কোনো আইন নেই, তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-২এর ৫ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে অনুষ্ঠিত 'জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার' কমিটির অষ্টম সভার কার্যবিবরণী থেকে জানতে পারলাম। কারণ সেখানে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে কোনো কথা বলা হয়নি। বাংলাদেশের জঙ্গিরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ বিষয়ে এ মুহূর্ত থেকে সতর্ক হওয়া দরকার। বিধিবিধান প্রণয়নসহ সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করাও জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজের বিষয়টি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করে আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। সাধারণ জনগণ জেনেছে ইন্টারনেট ব্যবহার করে এ ধরনের অপতৎপরতা চালাচ্ছে বিরোধীরা। বস্তুত সাইবার ক্রাইম দেশের অর্থ ও বুদ্ধি বিনষ্ট করছে। এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক কম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাকরি হারাচ্ছেন অনেকে। সরকারি ও ব্যবসায়িক তথ্যপ্রবাহ-প্রক্রিয়া বিঘি্নত হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন অনেকে। অপপ্রচারের দীর্ঘ গ্রহণকাল শিগগিরই অপসৃত হবে। তার করতল থেকে প্রধানমন্ত্রী মুক্ত হয়ে দেশের জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হবেন, তিনি প্রকৃতপক্ষে জনগণের জন্য কাজ করে চলেছেন। তিনি জনগণের মতামতকে শ্রদ্ধা করেন; কিন্তু নোংরা ও মিথ্যা প্রচারণাকে পরোয়া করেন না।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
email : dr.miltonbis@yahoo.com
মূলত তথ্যপ্রযুক্তির অবারিত প্রবাহের সুযোগে ভালো কাজের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আমার ফেইসবুক খুলে দেখলাম, আমার নাম ও ছবির সঙ্গে একটি ক্ষুদ্র নাম যুক্ত করে আরো একটি মিথ্যা আইডি খোলা হয়েছে। প্রাণনাশের হুমকিসহ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক হওয়ার জন্য এ বিষয়ে আমি থানায় জিডি করেছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মতো ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টার বিরুদ্ধে যখন সাইবারে অপপ্রচার চলে, তখন আমরা আঁতকে উঠি। চিন্তা করতে থাকি এ কোন দেশের অধিবাসী আমরা, যেখানে মানুষের কল্যাণ কামনায় রাত-দিন সরকারকে ব্যস্ত থাকতে হয়, সেখানেই এ ধরনের অপতৎপরতা শুরু হয় কেন? প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের যৌক্তিক সমালোচনা প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার; কিন্তু নোংরামি কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায় না।
ইন্টারনেটের ব্যবহার দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। শিক্ষা, বিনোদন, ব্যবসায় ও খেলার উপকরণে পরিণত হয়েছে ইন্টারনেট। কিন্তু সাইবার ক্রাইম এর সবচেয়ে খারাপ দিক। বেআইনিভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারকে ক্রাইম হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। নানাবিধ সুবিধা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত, সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘি্নত করছে ইন্টারনেট। ই-মেইল হ্যাকিং, ক্রেডিট কার্ড হাতিয়ে নেওয়া, ভাইরাস ছড়ানো, সফটওয়ার নকল করাসহ ক্রমাগত বাড়ছে সাইবার ক্রাইম। আধুনিক তস্কর বন্দুক রেখে কম্পিউটার চুরি করে। বোমা মেরে নয়, সন্ত্রাসীরা পিসির কিবোর্ড ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষতি করে বেশি। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ইন্টারনেট-সংক্রান্ত অপকর্মকে সাইবার ক্রাইম বলে। এটা হতে পারে ব্যক্তি, সম্পত্তি ও সরকারের বিরুদ্ধে।
ব্যক্তি সম্পৃক্ত হয় পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দিয়ে, হয়রানি করতে পারে ই-মেইলে। এ ছাড়া কেউ কেউ শিশু-নারী পাচার করে পর্নোগ্রাফে নিযুক্ত করায়। এসব যুবসমাজকে সহজেই আকৃষ্ট ও বিভ্রান্ত করে। সাইবার চ্যাট থেকে পাকিস্তানে নাবালিকাকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। 'মেলিসা' ভাইরাস বিস্তারে ইন্টারনেটের ভূমিকা আছে। ১৯৯৯ সালে মার্চে এ ভাইরাসটি প্রথমে ইন্টারনেটে দেখা দেয়। কম্পিউটারের মাধ্যমে এরপর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে। ৮০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি করে কম্পিউটার জগতের। 'লাভ বাগ'ও একটি ভাইরাস।
সাইবার হয়রানি ও সাইবার ক্রাইমের পার্থক্য আছে। যৌন হয়রানি, ধর্ম, বর্ণ এবং অন্য হয়রানি সাইবার স্পেস ব্যহারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এ ধরনের হয়রানিও সাইবার ক্রাইম। একজন নাগরিকের গোপনীয়তা নষ্ট করা হয় এর মাধ্যমে। অনলাইনে কারো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করাও গুরুতর অপরাধ। ক্ষতিকর প্রোগ্রাম সঞ্চারিত করে কম্পিউটারের ক্ষতি করা সম্ভব। উপরন্তু সাইবার স্পাইয়ের মাধ্যমে কারো ডেটা চুরি করে ব্যবসায়ের ক্ষতি করতে পারা যায়।
সরকারের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম হতেই পারে। সাইবার টেরোরিজম এ ধরনের অপরাধের মধ্যে আলাদা। ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে সরকার ও নাগরিকরা। সরকারের নিজস্ব ওয়েবসাইট অথবা মিলিটারির ওয়েবপেজ ধ্বংস করে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে সন্ত্রাসীরা। জঙ্গি সংগঠনগুলো যোগাযোগ ও অর্থ সংগ্রহ করে থাকে নেট ব্যবহার করে। লস্কর-ই-তৈয়বা এভাবে অর্থ সংগ্রহ করে। ক্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে কারো অজান্তে কম্পিউটার নষ্ট হয়ে মূল্যবান ও গোপন তথ্য হারিয়ে যেতে পারে। কারণ বিশ্বে ক্র্যাকিং প্রুফ কম্পিউটার নেই। প্রতিদিন জনপ্রিয় বাণিজ্যিক সাইটও আক্রান্ত হচ্ছে। সফটওয়ার পাইরেসিও অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। অনেকে অবৈধ ও অননুমোদিতভাবে পাইরেটেড কপি ইন্টারনেটে প্রচার করে এটাও একটি অপরাধ। পেশাগতভাবে এ কাজটি যারা করে তারা ক্র্যাকার। এদের অধিকাংশই উঠতি বয়সের।
২০০০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের এক সরকারি প্রজ্ঞাপনে সাইবার সিটিজেনশিপ সম্পর্কে সচেতন হতে বলা হয় অভিভাবক ও শিক্ষকদের। অনলাইন আচরণের দায়িত্ব সম্পর্কেও জানানো হয়। সাইবার এথিকস, কম্পিউটার ক্রাইম ও ইন্টারনেট ব্যবহারে জননিরাপত্তা সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেট আসক্তি থেকে রক্ষার জন্য সেখানে বিধিবিধান প্রণীত হয়েছে। ভারতে ২০০০ সালে তথ্যপ্রযুক্তি আইন প্রণীত হয়েছে। সাইবার ক্রাইমের জন্য পুলিশ যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় হানা দিতে পারবে এবং দোষীকে ধরতে পারবে এই বিধান অনুসারে। এই আইন কয়েকটি বিষয়কে সাইবার ক্রাইম গণ্য করেছে। যেমন_কম্পিউটার সোর্স কোড নষ্ট করা, হ্যাকিং, গোপনীয় স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস করা, ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে গোপনীয় তথ্য প্রকাশ করা। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সম্পৃক্ত অপরাধ তদন্তের নানা উদ্যোগ আছে যুক্তরাষ্ট্রে। বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি রক্ষার জন্য আইন থাকা জরুরি। এ লক্ষ্যে এফবিআই থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক ও ব্যবসাসংশ্লিষ্টরা তৎপর সেখানে। বাংলাদেশে এ বিষয়ে কোনো আইন নেই, তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-২এর ৫ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে অনুষ্ঠিত 'জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার' কমিটির অষ্টম সভার কার্যবিবরণী থেকে জানতে পারলাম। কারণ সেখানে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে কোনো কথা বলা হয়নি। বাংলাদেশের জঙ্গিরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ বিষয়ে এ মুহূর্ত থেকে সতর্ক হওয়া দরকার। বিধিবিধান প্রণয়নসহ সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করাও জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজের বিষয়টি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করে আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। সাধারণ জনগণ জেনেছে ইন্টারনেট ব্যবহার করে এ ধরনের অপতৎপরতা চালাচ্ছে বিরোধীরা। বস্তুত সাইবার ক্রাইম দেশের অর্থ ও বুদ্ধি বিনষ্ট করছে। এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক কম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাকরি হারাচ্ছেন অনেকে। সরকারি ও ব্যবসায়িক তথ্যপ্রবাহ-প্রক্রিয়া বিঘি্নত হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন অনেকে। অপপ্রচারের দীর্ঘ গ্রহণকাল শিগগিরই অপসৃত হবে। তার করতল থেকে প্রধানমন্ত্রী মুক্ত হয়ে দেশের জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হবেন, তিনি প্রকৃতপক্ষে জনগণের জন্য কাজ করে চলেছেন। তিনি জনগণের মতামতকে শ্রদ্ধা করেন; কিন্তু নোংরা ও মিথ্যা প্রচারণাকে পরোয়া করেন না।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
email : dr.miltonbis@yahoo.com
No comments