ভুয়া চিকিৎসক-জনস্বাস্থ্যের হুমকি দূর করুন
উচ্চ ডিগ্রিধারী পরিচয়ে বছরের পর বছর চিকিৎসা পেশা চালিয়ে যাওয়ার ঘটনা মাঝেমধ্যেই সংবাদপত্রে আসে। অপরাধ ফাঁস হয়ে পড়লে কখনও বিপদ ঘটে, কিন্তু সবার প্রতারণা বন্ধ হয় না। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, জ্যামাইকাসহ আরও অনেক দেশেই এ ধরনের 'চিকিৎসকের' জমজমাট ব্যবসার কথা শোনা গেছে।
বাংলাদেশও রয়েছে এ তালিকায়। আমাদের দেশে হাতুড়ে ও আনাড়ি চিকিৎসকেরও দেখা মিলবে শহর এবং গ্রামের সর্বত্র। তাদের জ্ঞান সামান্য, কিন্তু কারও কারও পসার অসামান্য। প্রতিদিন চেম্বারের সামনে রোগীদের লম্বা লাইন দেখে রোগযন্ত্রণা থেকে নিরাময় পেতে আগ্রহী আরও নারী-পুরুষ উৎসাহিত হয়। কেউ ওষুধের দোকানের কর্মচারী থেকে নিজেকে ডাক্তার ঘোষণা করে, কারও বা দৌড় মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ পর্যন্ত। কেউ বা চিকিৎসা শাস্ত্রের অ আ ক খ বিষয়ে স্বল্পমেয়াদি কোর্স সম্পন্ন করেছে। অলৌকিক ক্ষমতাও কারও কারও ওপর আছড় করে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা সবাই জনস্বাস্থ্যের প্রতি মারাত্মক হুমকি। সোমবার সমকালে 'ডাক্তার! ও ডাক্তার!' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে : ওরা সব ভুয়া ডাক্তার। নামের শুরুতে 'ডা.' লিখে হাজার হাজার মানুষকে প্রতারণা করছে ওরা। অনেকের প্রাণনাশও করেছে। এদের অসৎ ব্যবসা চলছে দেশজুড়ে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি স্বাস্থ্য কার্যক্রমের প্রসার ঘটেছে। উপজেলা পর্যায়ে গড়ে উঠেছে হেলথ কমপ্লেক্স। ইউনিয়ন পর্যায়ে এ সুবিধা পেঁৗছে দেওয়ার কর্মসূচিও রয়েছে। কিন্তু তারপরও বলতে হবে, বিপুলসংখ্যক হতদরিদ্র মানুষের এ দেশে রোগ-ব্যাধি নিরাময়ের জন্য অনেকেই এসব হাতুড়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়। অনেকে চটকদার বিজ্ঞাপনেও প্রলুব্ধ হয়। ক্যান্সার কিংবা এ ধরনের জটিল ব্যাধি নিরাময়ের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। তার পরিবর্তে যদি তুকতাক করে কিংবা সামান্য ওষুধ দিয়েই কেউ তা দূর করার ভরসা দেয় তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন স্বাভাবিক। এমন ভরসা ভুয়া চিকিৎসকের কাছ থেকে এলে বিপদের মাত্রা বেশি ঘটে। তাদের কেউ কেউ এমনকি নিজেকে 'খ্যাতিম্যান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক' হিসেবেও দাবি করে। রাজধানীর সুপরিচিত জয়নুল হক শিকদার কার্ডিয়াক কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে এক ব্যক্তির ডাক্তার পদবি ও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে দীর্ঘদিন চিকিৎসা কার্যক্রম চালানোর প্রমাণ মিলেছে। এ ঘটনা প্রকাশের পর দেশের আরও কয়েকটি হাসপাতাল থেকে জানা যায়, একই ব্যক্তি সেসব স্থানেও পসার জমিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। এ ধরনের প্রতারকদের শাস্তির বিধান আমাদের আইনে রয়েছে। তবে তা কার্যকরের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগ প্রত্যাশিত। অন্যদিকে হাতুড়ে ও অজ্ঞ চিকিৎসকদের হাত থেকে হতদরিদ্র ও নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য রয়েছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ করণীয়। এক, সরকারি চিকিৎসাসেবার সম্প্রসারণ। দুই, তথাকথিত ডিগ্রিধারী ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসনের সর্বোচ্চ সতর্কতা। জনসচেতনতার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার নামে প্রতারণার ঘটনা নজরে এলেই তার বিরুদ্ধে সমাজকে জেগে উঠতে হবে। এখন প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে। গণমাধ্যমের সহায়তা পাওয়াও সহজ। এভাবে সমন্বিত উদ্যোগ থাকলে তথাকথিত ডাক্তারদের রমরমা ব্যবসার অবসান ঘটবেই।
No comments