পিলখানা হত্যা মামলা-চার্জশিটে একই নাম আসামি ও সাক্ষীর তালিকায়

পিলখানা হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) আসামির নাম রয়েছে সাক্ষীর তালিকায়ও। একজন আসামির নাম আবার সাক্ষী হিসেবে রয়েছে দুইবার। এ কারণে সিআইডির তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ বলে দাবি করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।


এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আসামি হিসেবে নাকি সাক্ষী হিসেবে ধরা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল অবশ্য দাবি করেছেন, আসলে তাঁরা আসামি। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ভুল করে তাঁদের নাম সাক্ষী হিসেবে চলে গেছে। তাড়াহুড়োর কারণে এমনটি হয়েছে। এত এত আসামি-সাক্ষীর মধ্যে দু-একটা ভুল হতেই পারে।'
আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. জামাল উদ্দিন খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'একই ব্যক্তি সাক্ষী আবার আসামিও, এমন দ্বৈত চরিত্র মামলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। মিথ্যা সাক্ষী সাজাতে গিয়ে এমনটি হয়েছে বলে আমি মনে করি।'
একজন আইনজীবী জানান, শামসুল হক পিলখানা হত্যা মামলার ৬৪১ নম্বর আসামি। তাঁর বাবার নাম সাখাওয়াত উল্লাহ, গ্রাম- রাজাপুর, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী উল্লেখ রয়েছে।
একই ঠিকানার শামসুল হক নামটি রয়েছে ১০২৩ ও ৬০৫ নম্বর সাক্ষী হিসেবেও। তাঁর কার্পেন্টার নম্বরও তিন জায়গায় রয়েছে একই। শুধু তিনিই নন, কারাবন্দি আসামি পাচক হাবিবুর রহমানের নামও রয়েছে সাক্ষীর তালিকায়। তাঁর বাবার নাম দুই জায়গাই রয়েছে আবদুল ওয়াহাব। ঠিকানা উল্লেখ আছে গ্রাম- নয়াকান্দি, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ। পিলখানা হত্যা মামলায় তিনি ৫৫৫ নম্বর আসামি। আবার ৯৯৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবেও রয়েছে হাবিবুর রহমানের নাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সিআইডি চার্জশিট দেওয়ার পর সব সাক্ষীর নাম ও পদবি জানতে পারেননি আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। বকশিবাজারের উমেশ দত্ত রোডে স্থাপিত আদালতে পিলখানা হত্যা মামলার বিচার এগিয়ে যাচ্ছে, আর বেরিয়ে আসছে সাক্ষীদের নাম-পদবি সবই।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শামীম সরদার গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'চার্জশিটে আসামি কখনোই সাক্ষী হওয়ার নিয়ম নাই, যদি তিনি রাজসাক্ষী না হন। এখন যখন আমরা দেখছি যে আসামির নাম সাক্ষীর তালিকায়ও রয়েছে। সুতরাং সিআইডির তদন্তই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তারা সঠিকভাবে তদন্ত করেনি বলেই ধীরে ধীরে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।' শামীম সরদার আরো বলেন, 'সাক্ষীদের জেরা করতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছি, কোনো কোনো সাক্ষী ১০-১২ জন আসামির নাম বলছে। মূলত যাদের নাম বলছে তাদের মধ্যে চার-পাঁচজন আসামি হিসেবে পাওয়া যায়। এতেও প্রশ্ন ওঠে তদন্ত নিয়ে। এই তদন্ত প্রতিবেদন যদি বিশ্বাস করি তাহলে সাক্ষী না আসামি কোনটা বিবেচনা করা হবে।'
অন্যদিকে গতকাল দুপুর ১টার দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এক সাক্ষীকে জেরা করার সময় কাঠগড়া থেকে কয়েকজন জওয়ান আদালতের উদ্দেশে বলেন, 'আমাদের কিছু বলার আছে।' তখন আদালত বলেন, 'আপনারা আইনজীবীর মাধ্যমে বলেন।' জওয়ানরা বলেন, 'আইনজীবীদের বলেছি, তারা বলে না।' তখন আদালত সাক্ষীর জবানবন্দি স্থগিত করেন। পরে বিচারক তাঁর খাসকামরায় গিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. জামাল উদ্দিন খন্দকার, মো. আমিনুল ইসলাম, ফারুক আহম্মেদ ও শামীম সরদারের সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল, বাহারুল ইসলাম বাহারসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার আদালত চলাকালে আসামিদের পক্ষে একজন কয়েকটি দাবি উল্লেখ করে আইনজীবীদের একটি চিঠি লিখেন। এতে অভিযোগ করা হয়, জেরা করার সময় প্রসিকিউশন দলবদ্ধ হয়ে সাক্ষীকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছে। এ আদালতে আরো একটি বিস্ফোরক মামলা আছে। মামলাটিও যাতে একই সঙ্গে উপস্থাপন করে ফয়সালা করা হয় সে দাবিও জানানো হয়। ডাণ্ডাবেড়ি পরানোতে কষ্ট হয় বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
বিচারক এজলাসে আসামিদের উদ্দেশে বলেন, 'আপনাদের দাবি-দাওয়া মেটানোর চেষ্টা করা হবে। আদালত জেরা ও জবানবন্দির কী রেকর্ড করবেন, তা একান্তই বিচারকের ব্যাপার। জেরার জবাব প্রসিকিউশন বলে দেওয়া কাম্য হতে পারে না। ডাণ্ডাবেড়ি ও খাবারের বিষয়ে আইনজীবীদের মাধ্যমে আবেদন করলে সেটা বিবেচনা করা হবে। পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যাপার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হবে।'
গতকাল সকাল পৌনে ১০টার দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়ে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত চলে। বুধবার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.