এমসি কলেজে ছাত্র সংঘর্ষ-দেবালয়েই যখন আগুন লাগে...
বিদ্যায়তনে ছাত্র সংগঠনগুলোর সংঘাত ও কোন্দল এবং তা থেকে উদ্ভূত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে আমরা কমবেশি অভ্যস্ত; কিন্তু তারা কতটা অবিমৃষ্যকারী হতে পারে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে আগুনের ঘটনা তার সাক্ষ্য। ছাত্র রাজনীতির বিষবাষ্পের কথা প্রতীকী অর্থে শোনা যায়; আমরা এবার সত্যিকারের লেলিহান শিখা প্রত্যক্ষ করলাম।
নিজের ঘর পোড়ানোর এই অঘটন নিকৃষ্ট নজির হয়ে থাকবে। ছাত্রাবাসটির বৃহদংশ পোড়ানোর মধ্য দিয়ে অগি্নসংযোগকারীরা কেবল রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট নয়, শত বছরের গৌরবময় ঐতিহ্যও ছাই করে দিল। এই অপকর্মের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। এই কাজের সঙ্গে জড়িতরা খাতায়-কলমে হয়তো শিক্ষার্থীই; কিন্তু চিন্তা ও তৎপরতায় তারা যে দুর্বৃত্ত তাতে সন্দেহ নেই। বস্তুত রাষ্ট্রীয় সম্পদের ওপর বিক্ষোভ মেটানোর ঔপনিবেশিক মানসিকতার বিরুদ্ধে আমরা বহুবারই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছি। তা সামান্যই আমলে নেওয়া হয়েছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাংচুর, সংঘর্ষ, অগি্নসংযোগের ছোটখাটো ঘটনার যথার্থ প্রতিকার না হওয়ায় পরিণতি হচ্ছে ছাত্রাবাসের গোটা ভবন পুড়িয়ে দেওয়ার দুঃসাহস। এর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষ এবার ভুল করবে না বলে প্রত্যাশা। একই সঙ্গে ছাত্রাবাসটি যাতে সাবেক আকার ফিরে পায়, সে ব্যাপারেও সবার সহযোগিতা জরুরি। সেখানে শিক্ষাজীবন কাটিয়ে যাওয়া অনেক প্রকৌশলী ও স্থপতি নিশ্চয়ই দেশে-বিদেশে রয়েছেন। তারা উদ্যোগী হলে নান্দনিক ক্ষতি পূরণ করা কঠিন নয় বলে আমরা বিশ্বাস করি। অভিযোগ উঠেছে, অগি্নসংযোগের সঙ্গে জড়িতরা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী। যেই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই আমরা। রাজনীতির রঙ লাগিয়ে দুর্বৃত্তদের রেহাই দেওয়ার অবকাশ নেই। সার্বিক আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নেই কেবল নয়, ঐতিহ্য ও সভ্যতার অন্যান্য স্মারকের নিরাপত্তায়ও এ ধরনের ঘটনায় নির্লিপ্ত থাকা উচিত হবে না। প্রশাসনের উচিত হবে অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তিদের আটক করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দেওয়া। স্থানীয় রাজনীতিক, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদেরও দুর্বৃত্তায়ন প্রতিরোধে সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে। ছাত্র রাজনীতির উৎকট চেহারা নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে সবাইকে। প্রবাদ রয়েছে, নগরে যখন আগুন লাগে তখন দেবালয় রক্ষা পায় না। আর এবার তো দেবালয়তুল্য ছাত্রাবাসেই সত্যিকারে আগুন লেগেছে।
No comments