শ্রদ্ধাঞ্জলি-দীক্ষাগুরু মোহাম্মদ ফরহাদ by সারওয়ার আলী
বয়স যখন ১৫ থেকে ২৫, তখন অধিকাংশ মানুষের মধ্যে জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। সে সময় অভিভাবক কিংবা বন্ধুবান্ধব তাদের চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করে। ষাটের দশকে আমরা যারা ছাত্র ইউনিয়ন করেছি, তাদের ক্ষেত্রে এ দায় নিয়েছিলেন মোহাম্মদ ফরহাদ।
তিনি আমাদের চারপাশের জগৎকে চেনার পথের সন্ধান দিয়েছেন; এমনকি অনুসরণ করার মতো সাংগঠনিক গুণাবলি রপ্ত করতে সহায়তা করেছেন। অবশ্য পরবর্তী জীবনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতায় স্বাভাবিকভাবে অনেকের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও রূপান্তর ঘটেছে, কিন্তু মূল চিন্তাধারাটি বদলায়নি।
তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৬২ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনকালে; তখন মোহাম্মদ ফরহাদ আধা-আত্মগোপন অবস্থায় ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে। কয়েক দিনের জন্য তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি আহমেদ জামানের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন মেডিকেল কলেজের তৃতীয় তলায় হাইজিন বিভাগের ছোট একটি ঘরে। এ সময় সরকারি গেজেটে তাঁর নামে হুলিয়া প্রকাশ পায় এবং তিনি পরিপূর্ণ আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন। এরপর স্বাধীনতার পূর্বমুহূর্ত অবধি তাঁকে আত্মগোপন অবস্থায় থেকে যেতে হয়।
১৯৬২ সালের শেষ পর্যায়ে জঙ্গি ছাত্র আন্দোলনের মুখে ছাত্রনেতাদের ওপর আরোপিত বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়, গ্রেপ্তারকৃত নেতারা মুক্তি পেলেন, মোহাম্মদ ফরহাদের হুলিয়ায় অঘোষিত সাময়িক বিরতি পাওয়া যায়। সে সময় স্বামীবাগের কমিউনিটি সেন্টারে ছাত্র ইউনিয়নের গোপন কনভেনশনে মোহাম্মদ ফরহাদের মেধা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণের অনন্য ক্ষমতা ও সাংগঠনিক গুণাবলির সঙ্গে আমরা পরিচিত হই। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ অবধি ছাত্র ইউনিয়নের সূত্রে আমার ধারাবাহিক ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ হয়েছে। তখন নেতা সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে সারা দিন সভা-সমাবেশ, পুলিশ বাহিনীর প্রতি ইট নিক্ষেপের প্রতিযোগিতা চলে, আবার গ্রেপ্তার এড়িয়ে হল-হোস্টেলে প্রত্যাবর্তন, সন্ধ্যায় মূলত ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভায় পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ (তবে প্রায় রাতেই মোহাম্মদ ফরহাদের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হতে হয়)। গভীর রাত অবধি মোহাম্মদ ফরহাদ ঘটনাবলির বিবরণ শুনে পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা করতেন। আমাদের কথাবার্তা শুনে যুক্তিতর্ক দিয়ে, যেভাবে আন্দোলন ও সাংগঠনিক কর্তব্যটি স্থির করে দিতেন, তাতে কখনো মনে হয়নি তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন (যদিও আদতে তা-ই নিয়মিত ঘটেছে)। তাঁর কর্মপরিকল্পনায় এবং কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় ক্ষেত্রে যথাযথ সিদ্ধান্তের ফলেই পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ) মূলধারার ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়েছে এবং আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। মোহাম্মদ ফরহাদ তাঁর প্রতি আনুগত্য চাপিয়ে দেননি, তিনি আমাদের কাছ থেকে সেটি অর্জন করেছেন।
ষাটের দশক থেকে এই অঞ্চলে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মোহাম্মদ ফরহাদ প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। এ বিষয়ে সাধারণভাবে আলোকপাত করা যেতে পারে। বিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশকে এই অঞ্চলে কমিউনিস্ট পার্টি প্রধানত কৃষক ও শ্রমিকদের সংগঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং সে যুগে কয়েকজন বামপন্থী নেতা এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাহসী ভূমিকা পালন করেন।
ষাটের দশকের তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে, ছাত্র আন্দোলন হয়ে ওঠে গণতন্ত্র ও জাতীয় অধিকার আদায়ের মূলধারার জাতীয় আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি এবং ছাত্র ইউনিয়নের সূত্রে বামপন্থী রাজনীতিবিদেরা মূলধারার জাতীয় সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ শরিকে পরিণত হন। এ সূত্রে বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতির সক্রিয় নেতা-কর্মীরা কমিউনিস্ট আন্দোলনে যুক্ত হন। বায়ান্নতে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে বাস্তব পরিস্থিতির কারণে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেননি, কিন্তু ষাটের দশক থেকে শুরু হওয়া গণআন্দোলনের জোয়ার নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে দেশকে পৌঁছে দেয়। ফলে এই তরুণ সম্প্রদায়ের পক্ষে রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে এবং কমিউনিস্ট পার্টির বিভক্তি অবধি তাঁরা টিকে ছিলেন। এটি অবশ্য সম্ভব হয়েছে ষাট ও সত্তরের দশকে কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় আন্দোলনে যথাযথ সিদ্ধান্ত এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে। কমিউনিস্ট পার্টির যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দল ও নেতৃত্বের রূপান্তরে মোহাম্মদ ফরহাদ প্রবীণ নেতাদের সমর্থনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
যাঁরা বাংলাদেশের রাজনীতি ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করেছেন, তাঁরা লক্ষ করবেন, কমিউনিস্ট পার্টি যখন মূলধারার জাতীয় আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে, তখন দোদুল্যমানতা কমেছে, সংগ্রাম বলিষ্ঠ ও নীতিনিষ্ঠ হয়েছে। বিশেষ করে ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সবাই যখন দিশেহারা, তখন মোহাম্মদ ফরহাদ হাল ধরেছেন, ঐক্যবদ্ধ জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন (এ কথা সব দলের নেতা-কর্মীরা স্বীকার করবেন। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে তাঁর জুড়ি নেই)। সব সময় তাঁর লক্ষ্য স্থির, কিন্তু কৌশল নমনীয়। মোহাম্মদ ফরহাদ মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর অকালপ্রয়াণে শুধু বামপন্থী আন্দোলন নয়, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি, মোহাম্মদ ফরহাদ আমাদের শিক্ষাগুরু ছিলেন। আন্দোলন ও সংগঠন গড়ে তুলে তাকে বাস্তবসম্মত ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর নীতি ও কৌশল আজও আমাদের জন্য অনুসরণীয়। তবে তাঁর একটি গুণ আয়ত্ত করা অসম্ভব মনে হয়। ফরহাদ ভাইয়ের মৃত্যুর পর কেন্দ্রীয় কমিটির সংশ্লিষ্ট শাখার সভায় আমি বলেছিলাম, তিনি সব বাস্তবতার মধ্যেও নেতা-কর্মী, এমনকি বন্ধুদের খোঁজখবর নিতেন, বিপদে পাশে এসে সর্বাত্মক সহায়তা করতেন। আমি নিশ্চিত জানতাম, আমার শিশুপুত্র বা কন্যা অসুস্থ হলে ফরহাদ ভাই যত রাতই হোক, তার অবস্থা জানতে টেলিফোন করবেন কিংবা শত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজে এসে উপস্থিত হবেন। গভীর বিস্ময়ে লক্ষ করলাম, উপস্থিত সবাই একই ধরনের ঘটনার বিবরণ দিলেন। পরে ভিন্ন দলের নেতা-কর্মীদের কাছে একই ধরনের কাহিনি শুনেছি। মোহাম্মদ ফরহাদ এক অনন্য মানবিক গুণাবলির মানুষ, যিনি ৫০ বছরে শতবর্ষের কাজ করে গেছেন।
তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৬২ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনকালে; তখন মোহাম্মদ ফরহাদ আধা-আত্মগোপন অবস্থায় ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে। কয়েক দিনের জন্য তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি আহমেদ জামানের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন মেডিকেল কলেজের তৃতীয় তলায় হাইজিন বিভাগের ছোট একটি ঘরে। এ সময় সরকারি গেজেটে তাঁর নামে হুলিয়া প্রকাশ পায় এবং তিনি পরিপূর্ণ আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন। এরপর স্বাধীনতার পূর্বমুহূর্ত অবধি তাঁকে আত্মগোপন অবস্থায় থেকে যেতে হয়।
১৯৬২ সালের শেষ পর্যায়ে জঙ্গি ছাত্র আন্দোলনের মুখে ছাত্রনেতাদের ওপর আরোপিত বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়, গ্রেপ্তারকৃত নেতারা মুক্তি পেলেন, মোহাম্মদ ফরহাদের হুলিয়ায় অঘোষিত সাময়িক বিরতি পাওয়া যায়। সে সময় স্বামীবাগের কমিউনিটি সেন্টারে ছাত্র ইউনিয়নের গোপন কনভেনশনে মোহাম্মদ ফরহাদের মেধা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণের অনন্য ক্ষমতা ও সাংগঠনিক গুণাবলির সঙ্গে আমরা পরিচিত হই। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ অবধি ছাত্র ইউনিয়নের সূত্রে আমার ধারাবাহিক ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ হয়েছে। তখন নেতা সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে সারা দিন সভা-সমাবেশ, পুলিশ বাহিনীর প্রতি ইট নিক্ষেপের প্রতিযোগিতা চলে, আবার গ্রেপ্তার এড়িয়ে হল-হোস্টেলে প্রত্যাবর্তন, সন্ধ্যায় মূলত ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভায় পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ (তবে প্রায় রাতেই মোহাম্মদ ফরহাদের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হতে হয়)। গভীর রাত অবধি মোহাম্মদ ফরহাদ ঘটনাবলির বিবরণ শুনে পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা করতেন। আমাদের কথাবার্তা শুনে যুক্তিতর্ক দিয়ে, যেভাবে আন্দোলন ও সাংগঠনিক কর্তব্যটি স্থির করে দিতেন, তাতে কখনো মনে হয়নি তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন (যদিও আদতে তা-ই নিয়মিত ঘটেছে)। তাঁর কর্মপরিকল্পনায় এবং কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় ক্ষেত্রে যথাযথ সিদ্ধান্তের ফলেই পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ) মূলধারার ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়েছে এবং আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। মোহাম্মদ ফরহাদ তাঁর প্রতি আনুগত্য চাপিয়ে দেননি, তিনি আমাদের কাছ থেকে সেটি অর্জন করেছেন।
ষাটের দশক থেকে এই অঞ্চলে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মোহাম্মদ ফরহাদ প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। এ বিষয়ে সাধারণভাবে আলোকপাত করা যেতে পারে। বিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশকে এই অঞ্চলে কমিউনিস্ট পার্টি প্রধানত কৃষক ও শ্রমিকদের সংগঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং সে যুগে কয়েকজন বামপন্থী নেতা এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাহসী ভূমিকা পালন করেন।
ষাটের দশকের তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে, ছাত্র আন্দোলন হয়ে ওঠে গণতন্ত্র ও জাতীয় অধিকার আদায়ের মূলধারার জাতীয় আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি এবং ছাত্র ইউনিয়নের সূত্রে বামপন্থী রাজনীতিবিদেরা মূলধারার জাতীয় সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ শরিকে পরিণত হন। এ সূত্রে বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতির সক্রিয় নেতা-কর্মীরা কমিউনিস্ট আন্দোলনে যুক্ত হন। বায়ান্নতে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে বাস্তব পরিস্থিতির কারণে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেননি, কিন্তু ষাটের দশক থেকে শুরু হওয়া গণআন্দোলনের জোয়ার নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে দেশকে পৌঁছে দেয়। ফলে এই তরুণ সম্প্রদায়ের পক্ষে রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে এবং কমিউনিস্ট পার্টির বিভক্তি অবধি তাঁরা টিকে ছিলেন। এটি অবশ্য সম্ভব হয়েছে ষাট ও সত্তরের দশকে কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় আন্দোলনে যথাযথ সিদ্ধান্ত এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে। কমিউনিস্ট পার্টির যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দল ও নেতৃত্বের রূপান্তরে মোহাম্মদ ফরহাদ প্রবীণ নেতাদের সমর্থনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
যাঁরা বাংলাদেশের রাজনীতি ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করেছেন, তাঁরা লক্ষ করবেন, কমিউনিস্ট পার্টি যখন মূলধারার জাতীয় আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে, তখন দোদুল্যমানতা কমেছে, সংগ্রাম বলিষ্ঠ ও নীতিনিষ্ঠ হয়েছে। বিশেষ করে ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সবাই যখন দিশেহারা, তখন মোহাম্মদ ফরহাদ হাল ধরেছেন, ঐক্যবদ্ধ জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন (এ কথা সব দলের নেতা-কর্মীরা স্বীকার করবেন। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে তাঁর জুড়ি নেই)। সব সময় তাঁর লক্ষ্য স্থির, কিন্তু কৌশল নমনীয়। মোহাম্মদ ফরহাদ মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর অকালপ্রয়াণে শুধু বামপন্থী আন্দোলন নয়, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি, মোহাম্মদ ফরহাদ আমাদের শিক্ষাগুরু ছিলেন। আন্দোলন ও সংগঠন গড়ে তুলে তাকে বাস্তবসম্মত ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর নীতি ও কৌশল আজও আমাদের জন্য অনুসরণীয়। তবে তাঁর একটি গুণ আয়ত্ত করা অসম্ভব মনে হয়। ফরহাদ ভাইয়ের মৃত্যুর পর কেন্দ্রীয় কমিটির সংশ্লিষ্ট শাখার সভায় আমি বলেছিলাম, তিনি সব বাস্তবতার মধ্যেও নেতা-কর্মী, এমনকি বন্ধুদের খোঁজখবর নিতেন, বিপদে পাশে এসে সর্বাত্মক সহায়তা করতেন। আমি নিশ্চিত জানতাম, আমার শিশুপুত্র বা কন্যা অসুস্থ হলে ফরহাদ ভাই যত রাতই হোক, তার অবস্থা জানতে টেলিফোন করবেন কিংবা শত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজে এসে উপস্থিত হবেন। গভীর বিস্ময়ে লক্ষ করলাম, উপস্থিত সবাই একই ধরনের ঘটনার বিবরণ দিলেন। পরে ভিন্ন দলের নেতা-কর্মীদের কাছে একই ধরনের কাহিনি শুনেছি। মোহাম্মদ ফরহাদ এক অনন্য মানবিক গুণাবলির মানুষ, যিনি ৫০ বছরে শতবর্ষের কাজ করে গেছেন।
No comments