জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-নামবদলই যথেষ্ট নয়

সংস্থাপন মন্ত্রণালয় কিংবা মিনিস্ট্রি অব এস্টাবলিস্টমেন্ট নতুন নামে পেয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হিসেবে। এ পরিবর্তনকে নতুন যাত্রা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা মনে করেন, এর মাধ্যমে প্রশাসনের কাজে গতি ফিরে আসবে।


এ দাবি যথার্থ হলে বলতে হয়, প্রশাসনের কাজে যেমন গতি থাকার কথা তেমনটি নেই, কিন্তু এক সময় তা ছিল। কেন ছন্দপতন, তার ব্যাখ্যা চাওয়া যেতেই পারে। তাহলে করণীয়টাও বের হয়ে আসবে। কথায় বলে, নামে কী আসে যায়। বাংলাদেশের প্রশাসন ঠিক জনমুখী নয়, এমন অভিযোগ বহুকাল ধরেই চলছে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসনামলের কাজের ধারা সচিব থেকে কেরানি পর্যন্ত কোনো পর্যায়ে তেমন বদলায়নি। আমজনতা তাদের কাছে প্রজা বৈ কিছু নয়। নতুন নামে এ মানসিকতায় কি পরিবর্তন আসবে? নাকি কেবলই মালিক ঠিক থাকবে, কেবল বদলাবে জুতা? প্রশাসনের বিরুদ্ধে লালফিতার দৌরাত্ম্যের পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ সব আমলেই ছিল। ফুয়েল ছাড়া ফাইল নড়ে না_ এর চেয়ে নিষ্ঠুর সত্য আর কিছু নেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টিতে পড়ার জন্য নানা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাকুলতা। এর ফলে 'আমাদের' ও 'ওদের' লোক বলয় সৃষ্টি হয়েছে। অপছন্দের লোককে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি অনুগত বলে দূরে সরিয়ে রাখা এমনকি ঝেঁটিয়ে বিদায় করার মতো করুণ পরিণতি নেমে আসা ব্যক্তির সংখ্যা নেহাত কম নয়। 'অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি' বা ওএসডির সংজ্ঞাও এভাবে বদলে গেছে এবং তার তত্ত্বাবধান কিন্তু সংস্থাপন মন্ত্রণালয়েই হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা পরিস্থিতির সুযোগ পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে প্রশাসনের তরফে চাইছে পূর্ণ আনুগত্য এবং এ ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটলে পরিণতি আদৌ শুভ হওয়ার নয়। নিয়োগ, পদোন্নতি এবং পদায়ন সব ক্ষেত্রেই মেধা ও দক্ষতা ছাপিয়ে উঠতে দেখা যায় রাজনৈতিক কিংবা ব্যক্তিগত আনুগত্য। এভাবে প্রজাতন্ত্রের নয়, বরং দলীয় প্রশাসনই যেন হয়ে উঠছে নিয়তি। মঙ্গলবার সমকালে 'জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম শুরু' শিরোনামের খবরে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের সচিব মনে করেন_ নতুন নামের মধ্য দিয়ে অগ্রযাত্রার সূচনা হলো। এখন থেকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিধিমালার আওতায় পদোন্নতি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। কারও পদোন্নতি আটকে গেলে জানতে পারবেন তার কারণ। বহু বছর ধরে চলে আসা বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের স্থান ক্রমে গ্রহণ করবে পারফরম্যান্সভিত্তিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা। সরকারের কথা ও কাজে প্রায়ই মিল থাকে না বলে জনমনে ধারণা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব যা বলেছেন সেটা এখনও প্রত্যাশার পর্যায়ে। আর্থ-সামাজিক উন্নতির লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে চলতে হলে দক্ষ ও যোগ্য প্রশাসন অপরিহার্য। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচনায় প্রশাসনের অনেকেই ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিলেন। স্বাধীন দেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল প্রশাসনিক কাঠামো। এখন প্রশাসনের যথেষ্ট বিকেন্দ্রীকরণও হয়েছে। তারপরও কাঙ্ক্ষিত গতি কেন নেই, এ মূল্যায়ন যেমন দরকার, তেমনি চাই উপযুক্ত পদক্ষেপ। কেবল নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে এ লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না সেটা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের চেয়ে আর কেই-বা ভালো জানে।

No comments

Powered by Blogger.