আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের এখনই সময় by জোনাথন স্টিল
ওসামা বিন লাদেন হত্যা ওবামা প্রশাসনের জন্য এক বিরাট বিজয় এবং আমেরিকানদের কাছে বিষয়টির সমাপ্তি টানতে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে আফগানিস্তানে যুদ্ধ করার বিচক্ষণতা নিয়ে ১০ বছর আগে উত্থাপিত প্রশ্ন পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।
বুশ প্রশাসনের নেতৃত্বে ২০০১ সালে ওই যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত লাদেনের ৯/১১-এর হামলায় নিহত আমেরিকানদের মোট সংখ্যার অর্ধেক সংখ্যক ইতিমধ্যে নিহত হয়েছে। অবশ্য মৃতদের মধ্যে নিহত আফগান বেসামরিক লোকের সংখ্যা যুক্ত করা হয়নি।
এটা বোধগম্য, ৯/১১-এর মর্মান্তিক নৃশংসতার পর আমেরিকানরা এর ন্যায়বিচার আশা করছিল। তবে ন্যায়বিচারকে প্রতিশোধ গ্রহণের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না।
প্রতিশোধে উত্তেজনার আতিশয্য থাকে, কিন্তু ন্যায়বিচারের জন্য প্রয়োজন পড়ে উত্তেজনাহীনতা ও নিয়ন্ত্রণ। তড়িঘড়ি করে তালেবান উৎখাত করার প্রচেষ্টাকে অনেকটা প্রতিশোধ গ্রহণপ্রসূত মনে হয়েছে এবং অপরাধের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার পরিবর্তে কিছু একটা করে দেখানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
৯/১১-এর ঘটনা যারা ঘটিয়েছে সেই ১৯ জনের কেউই আফগান নাগরিক ছিলেন না এবং তারা যেসব বিমান হাইজ্যাক করে সেগুলোও এদেশে করা হয়নি।
তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তানে বিন লাদেনের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল স্বল্পস্থায়ী। বৈবাহিক সূত্রে আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্তিই ছিল সেখানে প্রধান বিবেচ্য। লাদেনকে প্রত্যর্পণে তালেবানের প্রতি প্রেসিডেন্ট ডবি্লউ বুশের আহ্বান জানানো ও তা না হলে তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে মর্মে হুমকি-ধমকি দেওয়া ছাড়া বেশি কিছু তখন করা হয়নি। কিন্তু যখন সত্যিকার অর্থে লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সমর্পণের কথা বলা হলো ততক্ষণে তিনি কান্দাহার ত্যাগ করে চলে গেছেন। তখন লাদেনকে ধরার মতো শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের থাকলেও তালেবানের ছিল না।
এটা বারবার ভুলে যাওয়া হয় যে, আফগানিস্তানে নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাবটি ওসামা বিন লাদেনকে তালেবান দেয়নি। লাদেন যখন সুদানে তার সাবেক সদর দফতর ত্যাগ করার পরিকল্পনা করেন তখন তালেবানের ক্রমবর্ধমান প্রসারে প্রাণভয়ে ভীত আফগান মুজাহিদিন নেতারা তাকে সেখানে থাকার জায়গা দেয়। তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট বুরহান উদ্দিন রব্বানির ব্যবস্থা করা বিমানে চেপে লাদেন তার অনুসারীসহ স্ত্রীদের সঙ্গে করে জালালাবাদে এসে নামেন। সেই বুরহান উদ্দিন রব্বানি এখন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শান্তি কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
তালেবান যোদ্ধারা ১৯৯৬ সালে কাবুলসহ আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়ার পর সুবিধাবাদীর মতো লাদেন তাদের দিকে তার আনুগত্য পরিবর্তন করেন। আর তখন কান্দাহারে চলে গিয়ে ও তাদের জন্য তহবিলের ব্যবস্থা করে মোল্লা ওমর ও তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে বিন লাদেন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন।
৯/১১-এর ঘটনার পর লাদেন তোরাবোরা ও পূর্বাঞ্চলীয় আফগানিস্তানের পাহাড়ি এলাকায় চলে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে সম্পর্ক আবার ঢিলেঢালা হয়ে যায়। ওই পাহাড়ি এলাকা ও তোরাবোরা পাহাড় রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে জিহাদের সময় তার পরিচিত ছিল। তখন লাদেনের ব্যাপারে আমেরিকানরা তাদের বিশেষ বাহিনী ও সুসংবদ্ধ গোয়েন্দা তথ্যের ওপর নির্ভর করে, যেমনটা এবার অভিযান পরিচালনার আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে অনুসরণ করা হয়। আমেরিকান বিমান শক্তির ব্যাপক প্রদর্শনীর মাধ্যমে তালেবান উৎখাত ও আফগানিস্তানকে পুনরায় যুদ্ধে নিমজ্জিত করা সঠিক কৌশল নয়। তখন তারা বিন লাদেনের টিকিটিও স্পর্শ করতে পারেনি, এবং তারা সম্ভবত তা চায়ওনি। আমরা এখনও জানতে পারিনি যে বিন লাদেন সত্যি সত্যি কখন পাকিস্তানের উদ্দেশে আফগানিস্তান ত্যাগ করেন। এটা সম্ভবত ২০০১ সালের শেষ সপ্তাহগুলোতে ঘটে থাকবে। এরপর আফগানিস্তানকে আমেরিকার ফোকাস করার বিষয়টি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মোল্লা ওমর ও অন্যান্য তালেবান নেতা বারবার আভাস দিতে থাকেন যে, তারা একটি শান্তিচুক্তির অধীনে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার বিনিময়ে আল কায়দার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে রাজি। এ বিষয়টি কি ওবামা এখন বিবেচনা করে দেখবেন?
সাদ্দাম হোসেন ধরা পড়ার পর হোয়াইট হাউসে তখন যেমন বিজয়োল্লাস দেখা গিয়েছিল লাদেন মারা যাওয়ার ঘটনায় ওবামার উচ্ছ্বাসটা সুস্পষ্টভাবেই পৃথক মনে হয়েছে।
তার প্রতিক্রিয়াটা ছিল সুবিবেচিত ও কূটনৈতিক। তবে ওবামা যদি ২০০১ সালে ঘটনার সময় প্রেসিডেন্ট থাকতেন তাহলে তিনি ডবি্লউ বুশের চেয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতেন কি-না সে ব্যাপারে কেউই নিঃসন্দেহ নন। তিনিও হয়তো অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জজবার কারণে বিশাল সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে বাধ্য হতে পারতেন। সব সত্ত্বেও আফগানিস্তানের যুদ্ধকে তিনি জরুরি প্রয়োজন ও ইরাক যুদ্ধকে বেছে নেওয়া হিসেবে বারবার উল্লেখ করেছেন।
ওটা একটা ভুল। আফগানিস্তানও বেছে নেওয়া যুদ্ধ। এখন ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানে নিহত হয়েছেন এবং আল কায়দা সোমালিয়া, ইয়েমেন ও ইরাকসহ উত্তর আফ্রিকার বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এগুলোর মধ্য থেকে ওবামা তার বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। মার্কিন জনগণ আজ যে নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগটি পেল তা তাদের আগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া উচিত। আলোচনা শুরু করুন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তুতি নিন এবং আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার ত্বরান্বিত করুন। মার্কিন জনমত এর পক্ষে এবং অধিকাংশ আফগানও তাই চায়।
গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর
এটা বোধগম্য, ৯/১১-এর মর্মান্তিক নৃশংসতার পর আমেরিকানরা এর ন্যায়বিচার আশা করছিল। তবে ন্যায়বিচারকে প্রতিশোধ গ্রহণের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না।
প্রতিশোধে উত্তেজনার আতিশয্য থাকে, কিন্তু ন্যায়বিচারের জন্য প্রয়োজন পড়ে উত্তেজনাহীনতা ও নিয়ন্ত্রণ। তড়িঘড়ি করে তালেবান উৎখাত করার প্রচেষ্টাকে অনেকটা প্রতিশোধ গ্রহণপ্রসূত মনে হয়েছে এবং অপরাধের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার পরিবর্তে কিছু একটা করে দেখানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
৯/১১-এর ঘটনা যারা ঘটিয়েছে সেই ১৯ জনের কেউই আফগান নাগরিক ছিলেন না এবং তারা যেসব বিমান হাইজ্যাক করে সেগুলোও এদেশে করা হয়নি।
তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তানে বিন লাদেনের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল স্বল্পস্থায়ী। বৈবাহিক সূত্রে আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্তিই ছিল সেখানে প্রধান বিবেচ্য। লাদেনকে প্রত্যর্পণে তালেবানের প্রতি প্রেসিডেন্ট ডবি্লউ বুশের আহ্বান জানানো ও তা না হলে তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে মর্মে হুমকি-ধমকি দেওয়া ছাড়া বেশি কিছু তখন করা হয়নি। কিন্তু যখন সত্যিকার অর্থে লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সমর্পণের কথা বলা হলো ততক্ষণে তিনি কান্দাহার ত্যাগ করে চলে গেছেন। তখন লাদেনকে ধরার মতো শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের থাকলেও তালেবানের ছিল না।
এটা বারবার ভুলে যাওয়া হয় যে, আফগানিস্তানে নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাবটি ওসামা বিন লাদেনকে তালেবান দেয়নি। লাদেন যখন সুদানে তার সাবেক সদর দফতর ত্যাগ করার পরিকল্পনা করেন তখন তালেবানের ক্রমবর্ধমান প্রসারে প্রাণভয়ে ভীত আফগান মুজাহিদিন নেতারা তাকে সেখানে থাকার জায়গা দেয়। তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট বুরহান উদ্দিন রব্বানির ব্যবস্থা করা বিমানে চেপে লাদেন তার অনুসারীসহ স্ত্রীদের সঙ্গে করে জালালাবাদে এসে নামেন। সেই বুরহান উদ্দিন রব্বানি এখন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শান্তি কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
তালেবান যোদ্ধারা ১৯৯৬ সালে কাবুলসহ আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়ার পর সুবিধাবাদীর মতো লাদেন তাদের দিকে তার আনুগত্য পরিবর্তন করেন। আর তখন কান্দাহারে চলে গিয়ে ও তাদের জন্য তহবিলের ব্যবস্থা করে মোল্লা ওমর ও তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে বিন লাদেন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন।
৯/১১-এর ঘটনার পর লাদেন তোরাবোরা ও পূর্বাঞ্চলীয় আফগানিস্তানের পাহাড়ি এলাকায় চলে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে সম্পর্ক আবার ঢিলেঢালা হয়ে যায়। ওই পাহাড়ি এলাকা ও তোরাবোরা পাহাড় রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে জিহাদের সময় তার পরিচিত ছিল। তখন লাদেনের ব্যাপারে আমেরিকানরা তাদের বিশেষ বাহিনী ও সুসংবদ্ধ গোয়েন্দা তথ্যের ওপর নির্ভর করে, যেমনটা এবার অভিযান পরিচালনার আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে অনুসরণ করা হয়। আমেরিকান বিমান শক্তির ব্যাপক প্রদর্শনীর মাধ্যমে তালেবান উৎখাত ও আফগানিস্তানকে পুনরায় যুদ্ধে নিমজ্জিত করা সঠিক কৌশল নয়। তখন তারা বিন লাদেনের টিকিটিও স্পর্শ করতে পারেনি, এবং তারা সম্ভবত তা চায়ওনি। আমরা এখনও জানতে পারিনি যে বিন লাদেন সত্যি সত্যি কখন পাকিস্তানের উদ্দেশে আফগানিস্তান ত্যাগ করেন। এটা সম্ভবত ২০০১ সালের শেষ সপ্তাহগুলোতে ঘটে থাকবে। এরপর আফগানিস্তানকে আমেরিকার ফোকাস করার বিষয়টি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মোল্লা ওমর ও অন্যান্য তালেবান নেতা বারবার আভাস দিতে থাকেন যে, তারা একটি শান্তিচুক্তির অধীনে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার বিনিময়ে আল কায়দার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে রাজি। এ বিষয়টি কি ওবামা এখন বিবেচনা করে দেখবেন?
সাদ্দাম হোসেন ধরা পড়ার পর হোয়াইট হাউসে তখন যেমন বিজয়োল্লাস দেখা গিয়েছিল লাদেন মারা যাওয়ার ঘটনায় ওবামার উচ্ছ্বাসটা সুস্পষ্টভাবেই পৃথক মনে হয়েছে।
তার প্রতিক্রিয়াটা ছিল সুবিবেচিত ও কূটনৈতিক। তবে ওবামা যদি ২০০১ সালে ঘটনার সময় প্রেসিডেন্ট থাকতেন তাহলে তিনি ডবি্লউ বুশের চেয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতেন কি-না সে ব্যাপারে কেউই নিঃসন্দেহ নন। তিনিও হয়তো অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জজবার কারণে বিশাল সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে বাধ্য হতে পারতেন। সব সত্ত্বেও আফগানিস্তানের যুদ্ধকে তিনি জরুরি প্রয়োজন ও ইরাক যুদ্ধকে বেছে নেওয়া হিসেবে বারবার উল্লেখ করেছেন।
ওটা একটা ভুল। আফগানিস্তানও বেছে নেওয়া যুদ্ধ। এখন ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানে নিহত হয়েছেন এবং আল কায়দা সোমালিয়া, ইয়েমেন ও ইরাকসহ উত্তর আফ্রিকার বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এগুলোর মধ্য থেকে ওবামা তার বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। মার্কিন জনগণ আজ যে নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগটি পেল তা তাদের আগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া উচিত। আলোচনা শুরু করুন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তুতি নিন এবং আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার ত্বরান্বিত করুন। মার্কিন জনমত এর পক্ষে এবং অধিকাংশ আফগানও তাই চায়।
গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর
No comments