এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ও মর্মান্তিক মৃত্যু আর দেখতে চাই না-আবার রাসায়নিকের আগুন, আবার লাশ

গতকালই আমরা সম্পাদকীয় লিখেছিলাম আবাসিক এলাকায় ‘গণবিধ্বংসী মৃত্যুফাঁদ’ রাসায়নিকের গুদাম বিষয়ে। দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আজও আমাদের একই বিষয়ে লিখতে হচ্ছে। গতকাল আমরা বলেছিলাম, ঢাকার নিমতলীর মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি থেকে আমরা কিছুই শিখিনি—সেই ঘটনার চার মাস পেরিয়ে গেলেও সেখানকার রাসায়নিক গুদামগুলোর একটিও সরিয়ে নেওয়া হয়নি।


আর আজ নয়জন অভাগার জন্য শোক করতে হচ্ছে।
এবার দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর একটি প্রতিষ্ঠানের কারখানা ও গুদামে রাসায়নিক দ্রব্যের অগ্নিকাণ্ডে মর্মান্তিকভাবে নিহত হলো নয়জন। আবাসিক এলাকায় এ রকম রাসায়নিকের গুদাম কিংবা কারখানা অবৈধ। তার পরও এর অস্তিত্ব ছিল এবং প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণের সরঞ্জামহীনভাবেই। এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা যতটা প্রভাবশালীই হোক না কেন, পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই। নিমতলী ট্র্যাজেডি সংশ্লিষ্টদের চোখ খুলে দেওয়ার কথা। প্রতিবেদন, সম্পাদকীয় ও ছবি প্রকাশ করে আমরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তৎপর হওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা করেছি। কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো এবং আবাসিক এলাকা থেকে গুদাম উচ্ছেদ করতে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি।
আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া বা গাফিলতির সুযোগ নেই। কেননা, এর সঙ্গে মানুষের জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন জড়িত। এ ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলোর সক্রিয়তা সবচেয়ে জরুরি। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যে জনগণের নিরাপত্তার ব্যাপারে যত্নশীল, তা তাদের কাজের মাধ্যমেই প্রমাণ দিতে হবে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ও মর্মান্তিক মৃত্যু আমরা আর দেখতে চাই না।
আমাদের সমাজে, কি ঘরে, কি বাইরে, নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতার অভাব দেখা যায়। আগুন লেগে কিছুদিন পরপর বহু মানুষ নিহত হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় প্রতিদিন মারা যায়। নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতনতা সবার মনে শিশু বয়সেই প্রোথিত করা দরকার এবং শিশুশিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। নিরাপত্তার মৌলিক মানদণ্ড সম্পর্কে সবার ধারণা সৃষ্টি করা গেলে আস্তে আস্তে এ অবস্থা পাল্টে যেতে থাকবে।
সমৃদ্ধি সবারই চাই, কিন্তু তা মানুষের প্রাণের বিনিময়ে নয়। অন্যের অবহেলার আগুনে এভাবে আর কত শ্রমজীবী মানুষ ভস্মীভূত হবে?

No comments

Powered by Blogger.