শনিবারের সুসংবাদ-মোজাফ্ফরের চোখে আমবিপ্লবের স্বপ্ন by তোফায়েল আহমদ
চলতি মৌসুমে লেবু বিক্রি করে পেয়েছেন আড়াই লাখ টাকা। কয়েক দিনের মধ্যেই আম বিক্রি করে আসবে আরো প্রায় ছয় লাখ টাকা। গত বছরের চেয়ে এবার আয় পাঁচ লাখ টাকা বেশি। প্রতিবছরই বাগানে লেবু ও আমের ফলন বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আয়ের অঙ্ক।
প্রায় ১৫ একর জায়গায় গড়ে তোলা বাগান থেকে এই হারে আয় তাঁর আশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এখন তিনি স্বপ্ন দেখেন, নিজ জেলায় বিশেষ করে আম আবাদে বিপ্লব ঘটাবেন।
উল্লিখিত বাগানমালিকের নাম মোজাফ্ফর আহমদ। বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের লট উখিয়ারঘোনায়। একাত্তরে রামু খিজারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী মোজাফ্ফর আহমদ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। একাত্তরের সেই অকুতোভয় সৈনিক আশির দশকে ঝুঁকে পড়েন বাগান গড়ার কাজে। একপর্যায়ে গাছ লাগানো ও পরিচর্যা তাঁর নেশায় পরিণত হয়। মন-প্রাণ দিয়ে জড়িয়ে পড়েন এই কাজে। প্রকৃতিকে ভালোবেসে গাছ লাগানো ও পরিচর্যার নেশা থেকে একসময় বৃক্ষের মধ্যেই নিজের কর্মসংস্থান খুঁজে নেন এই মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমানে তিনি এলাকায় বৃক্ষপ্রেমী মোজাফ্ফর নামেই বেশি পরিচিত।
মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর তাঁর বাগান সৃজন কর্মসূচি শুরু করেন লেবুগাছ রোপণের মধ্য দিয়ে। ধীরে ধীরে অন্যান্য ফলদ বৃক্ষরোপণের দিকে হাত বাড়ান তিনি। এভাবেই টানা ৩১টি বছর পার করে দিয়েছেন ৫৭ বছর বয়সী এই বৃক্ষপ্রেমী। সকাল-সন্ধ্যা এমনকি দিনের পুরো সময়ই তিনি কাটান বাগানের সাজানো গাছগুলোর সান্নিধ্যে।
নিজ হাতে গড়া বাগান এবং তা থেকে আয়ের আশাতীত সাফল্যে মোজাফ্ফর আহমদ নিজেই অভিভূত। তাঁর এমন সফলতার কাহিনী নিজ গ্রাম ও উপজেলা ছাড়িয়ে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যরা উৎসাহী হচ্ছেন বৃক্ষরোপণে। তাঁর বাগানে উৎপাদিত ফরমালিনমুক্ত আম ও লেবু যাচ্ছে দূর-দূরান্তে। সঙ্গে যাচ্ছে আমগাছের চারাও।
খামারি মোজাফ্ফর আহমদও এ ব্যাপারে অন্যদের রীতিমতো উৎসাহ দিয়ে থাকেন। এলাকার উদ্যমী যুবকদের দাওয়াত দিয়ে বাগানে ডেকে আনেন। নিজ অভিজ্ঞতার ঝুলি উজাড় করে তাদের শেখানোর চেষ্টা করেন। বাগান করেও যে সচ্ছল-স্বাবলম্বী হওয়া যায়, তা তিনি সবাইকে বোঝানোর পাশাপাশি তাদের উদ্বুদ্ধ করেন। বিনা মূল্যে বিতরণ করেন গাছের চারা।
মোজাফ্ফর আহমদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ইতিমধ্যে এলাকার আবদুর রহিম, আমিনুল হক, মোতাহের, নুরুল ইসলামসহ প্রায় ১৫ জন শতাধিক একর জমিতে আমের বাগান তৈরি করেছেন। এমনকি এলাকার বাইরেও অর্ধশতাধিক পরিচিতজনকে তিনি বাগান তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করে চাষি হিসেবে তৈরি করে ফেলেছেন। ওই সব বাগানের গাছগুলো ইতিমধ্যে ফলনও দিতে শুরু করেছে।
গাছকে ভালোবাসার স্বীকৃতি হিসেবে মোজাফ্ফর আহমদ উপজেলা পর্যায়ে পেয়েছেন সেরা ফলদ বাগানের পুরস্কার, সেরা নার্সারি পুরস্কার, সেরা মৎস্যচাষি পুরস্কারসহ আরো অনেক পুরস্কার।
মোজাফ্ফর আহমদের স্বপ্ন, তিনি পুরো কক্সবাজার জেলায় আমের আবাদ ছড়িয়ে দেবেন। হাতে-কলমে শেখাবেন, কিভাবে কাজ করলে ভালো ফলন মিলবে। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'গাছগাছালির সঙ্গে সখ্য গড়ার সুবাদে বন্ধু-বান্ধবদের তুলনায় শারীরিকভাবে আমি অনেকটাই সুস্থ-সবল ও সতেজ আছি। আর্থিক সচ্ছলতাও ধরা দিয়েছে। জীবনের শুরুতে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি। আর দেশ গড়ার জন্যই করেছি এই বাগান।'
মোজাফ্ফর স্বপ্ন দেখেন, একদিন অনেকেই তাঁর মতো বাগান করে ফুলে-ফলে ভরিয়ে দেবে দেশ। মানুষ হয়ে উঠবে স্বাবলম্বী। তিনি বলেন, 'কেবল শখের বশে লেবুগাছ রোপণ শুরু করি। এরপর একাধারে বিভিন্ন প্রজাতির আম, জলপাই, বাউকুল, তেজপাতা, দারুচিনিসহ বিভিন্ন জাতের পাঁচ হাজারের বেশি গাছ রোপণ করেছি। প্রায় ১৫ একর পাহাড় শ্রেণীর জমিতে এসব গাছ লাগিয়ে বাগানটি সাজিয়েছি মনের মতো করে। বাগানে মাছের খামারও আছে। রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য ফুলের গাছ।' বৃক্ষপ্রেমী মোজাফ্ফর আহমদ আরো বলেন, 'এই বাগান থেকে বাণিজ্যিকভাবে লেবু, আম, তেজপাতা, দারুচিনি, বাউকুল ইত্যাদি বিক্রি শুরু করেছি। অর্থও আসছে আশাতীত হারে।'
বর্তমানে বাগান থেকে মোজাফ্ফর আহমদের বার্ষিক আয় আট লক্ষাধিক টাকা। প্রতিবছরই বাড়ছে আয়ের পরিমাণ। সংসারের ব্যয় নির্বাহ করেও বাড়তি আয়ের অর্থ বিনিয়োগ করছেন নতুন বাগান তৈরিতে।
কিছুটা ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে এই বৃক্ষপ্রেমী বলেন, গাছ রোপণ করা (বনায়নকৃত) এই বাগানের জমি বন্দোবস্তের জন্য তিনি সরকারের কাছে আবেদন করলেও আজও তা মেলেনি। সরকারি সহযোগিতা পেলে বৃক্ষ থেকে ফল বের করে পুরো উপজেলায় ফল, বিশেষ করে আম উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়ে দেওয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফরের বাগানে বর্তমানে মল্লিকা, লেংড়া, আম্রপালি, রেংগুয়ে, হিমসাগর, সুরমা ফজলি ও দেশি জাতের সহস্রাধিক আমগাছ রয়েছে। এর মধ্যে এবার ৩০০ গাছ ফলন দেওয়া শুরু করেছে। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই চোখে ধরা পড়ে থোকা থোকা আম আর আম। ছোট ছোট আমের গাছ এত বেশি ফলন দিয়েছে যে ফলের ভারে ডাল নুয়ে পড়েছে মাটিতে। প্রতিটি গাছেই গড়ে ৩০০ আম ধরেছে। সবচেয়ে বেশি ফলন দিয়েছে 'রেংগুয়ে' জাতের আম। এসব আম পাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মোজাফ্ফর। বর্তমানে তাঁর বাগানে চার-পাঁচজন কর্মচারী রয়েছে।
মোজাফ্ফর বলেন, 'দেশের উত্তরাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ চলছে। পার্বত্য অঞ্চলেও বাণিজ্যিকভাবে আমের চাষ হচ্ছে। তবে কক্সবাজারে মিয়ানমারের রেংগুয়ে জাতের আম চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।'
উল্লিখিত বাগানমালিকের নাম মোজাফ্ফর আহমদ। বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের লট উখিয়ারঘোনায়। একাত্তরে রামু খিজারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী মোজাফ্ফর আহমদ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। একাত্তরের সেই অকুতোভয় সৈনিক আশির দশকে ঝুঁকে পড়েন বাগান গড়ার কাজে। একপর্যায়ে গাছ লাগানো ও পরিচর্যা তাঁর নেশায় পরিণত হয়। মন-প্রাণ দিয়ে জড়িয়ে পড়েন এই কাজে। প্রকৃতিকে ভালোবেসে গাছ লাগানো ও পরিচর্যার নেশা থেকে একসময় বৃক্ষের মধ্যেই নিজের কর্মসংস্থান খুঁজে নেন এই মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমানে তিনি এলাকায় বৃক্ষপ্রেমী মোজাফ্ফর নামেই বেশি পরিচিত।
মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর তাঁর বাগান সৃজন কর্মসূচি শুরু করেন লেবুগাছ রোপণের মধ্য দিয়ে। ধীরে ধীরে অন্যান্য ফলদ বৃক্ষরোপণের দিকে হাত বাড়ান তিনি। এভাবেই টানা ৩১টি বছর পার করে দিয়েছেন ৫৭ বছর বয়সী এই বৃক্ষপ্রেমী। সকাল-সন্ধ্যা এমনকি দিনের পুরো সময়ই তিনি কাটান বাগানের সাজানো গাছগুলোর সান্নিধ্যে।
নিজ হাতে গড়া বাগান এবং তা থেকে আয়ের আশাতীত সাফল্যে মোজাফ্ফর আহমদ নিজেই অভিভূত। তাঁর এমন সফলতার কাহিনী নিজ গ্রাম ও উপজেলা ছাড়িয়ে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যরা উৎসাহী হচ্ছেন বৃক্ষরোপণে। তাঁর বাগানে উৎপাদিত ফরমালিনমুক্ত আম ও লেবু যাচ্ছে দূর-দূরান্তে। সঙ্গে যাচ্ছে আমগাছের চারাও।
খামারি মোজাফ্ফর আহমদও এ ব্যাপারে অন্যদের রীতিমতো উৎসাহ দিয়ে থাকেন। এলাকার উদ্যমী যুবকদের দাওয়াত দিয়ে বাগানে ডেকে আনেন। নিজ অভিজ্ঞতার ঝুলি উজাড় করে তাদের শেখানোর চেষ্টা করেন। বাগান করেও যে সচ্ছল-স্বাবলম্বী হওয়া যায়, তা তিনি সবাইকে বোঝানোর পাশাপাশি তাদের উদ্বুদ্ধ করেন। বিনা মূল্যে বিতরণ করেন গাছের চারা।
মোজাফ্ফর আহমদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ইতিমধ্যে এলাকার আবদুর রহিম, আমিনুল হক, মোতাহের, নুরুল ইসলামসহ প্রায় ১৫ জন শতাধিক একর জমিতে আমের বাগান তৈরি করেছেন। এমনকি এলাকার বাইরেও অর্ধশতাধিক পরিচিতজনকে তিনি বাগান তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করে চাষি হিসেবে তৈরি করে ফেলেছেন। ওই সব বাগানের গাছগুলো ইতিমধ্যে ফলনও দিতে শুরু করেছে।
গাছকে ভালোবাসার স্বীকৃতি হিসেবে মোজাফ্ফর আহমদ উপজেলা পর্যায়ে পেয়েছেন সেরা ফলদ বাগানের পুরস্কার, সেরা নার্সারি পুরস্কার, সেরা মৎস্যচাষি পুরস্কারসহ আরো অনেক পুরস্কার।
মোজাফ্ফর আহমদের স্বপ্ন, তিনি পুরো কক্সবাজার জেলায় আমের আবাদ ছড়িয়ে দেবেন। হাতে-কলমে শেখাবেন, কিভাবে কাজ করলে ভালো ফলন মিলবে। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'গাছগাছালির সঙ্গে সখ্য গড়ার সুবাদে বন্ধু-বান্ধবদের তুলনায় শারীরিকভাবে আমি অনেকটাই সুস্থ-সবল ও সতেজ আছি। আর্থিক সচ্ছলতাও ধরা দিয়েছে। জীবনের শুরুতে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি। আর দেশ গড়ার জন্যই করেছি এই বাগান।'
মোজাফ্ফর স্বপ্ন দেখেন, একদিন অনেকেই তাঁর মতো বাগান করে ফুলে-ফলে ভরিয়ে দেবে দেশ। মানুষ হয়ে উঠবে স্বাবলম্বী। তিনি বলেন, 'কেবল শখের বশে লেবুগাছ রোপণ শুরু করি। এরপর একাধারে বিভিন্ন প্রজাতির আম, জলপাই, বাউকুল, তেজপাতা, দারুচিনিসহ বিভিন্ন জাতের পাঁচ হাজারের বেশি গাছ রোপণ করেছি। প্রায় ১৫ একর পাহাড় শ্রেণীর জমিতে এসব গাছ লাগিয়ে বাগানটি সাজিয়েছি মনের মতো করে। বাগানে মাছের খামারও আছে। রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য ফুলের গাছ।' বৃক্ষপ্রেমী মোজাফ্ফর আহমদ আরো বলেন, 'এই বাগান থেকে বাণিজ্যিকভাবে লেবু, আম, তেজপাতা, দারুচিনি, বাউকুল ইত্যাদি বিক্রি শুরু করেছি। অর্থও আসছে আশাতীত হারে।'
বর্তমানে বাগান থেকে মোজাফ্ফর আহমদের বার্ষিক আয় আট লক্ষাধিক টাকা। প্রতিবছরই বাড়ছে আয়ের পরিমাণ। সংসারের ব্যয় নির্বাহ করেও বাড়তি আয়ের অর্থ বিনিয়োগ করছেন নতুন বাগান তৈরিতে।
কিছুটা ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে এই বৃক্ষপ্রেমী বলেন, গাছ রোপণ করা (বনায়নকৃত) এই বাগানের জমি বন্দোবস্তের জন্য তিনি সরকারের কাছে আবেদন করলেও আজও তা মেলেনি। সরকারি সহযোগিতা পেলে বৃক্ষ থেকে ফল বের করে পুরো উপজেলায় ফল, বিশেষ করে আম উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়ে দেওয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফরের বাগানে বর্তমানে মল্লিকা, লেংড়া, আম্রপালি, রেংগুয়ে, হিমসাগর, সুরমা ফজলি ও দেশি জাতের সহস্রাধিক আমগাছ রয়েছে। এর মধ্যে এবার ৩০০ গাছ ফলন দেওয়া শুরু করেছে। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই চোখে ধরা পড়ে থোকা থোকা আম আর আম। ছোট ছোট আমের গাছ এত বেশি ফলন দিয়েছে যে ফলের ভারে ডাল নুয়ে পড়েছে মাটিতে। প্রতিটি গাছেই গড়ে ৩০০ আম ধরেছে। সবচেয়ে বেশি ফলন দিয়েছে 'রেংগুয়ে' জাতের আম। এসব আম পাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মোজাফ্ফর। বর্তমানে তাঁর বাগানে চার-পাঁচজন কর্মচারী রয়েছে।
মোজাফ্ফর বলেন, 'দেশের উত্তরাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ চলছে। পার্বত্য অঞ্চলেও বাণিজ্যিকভাবে আমের চাষ হচ্ছে। তবে কক্সবাজারে মিয়ানমারের রেংগুয়ে জাতের আম চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।'
No comments