ওসামা বিন লাদেন-আল কায়দা কঠিন সময় অতিক্রম করছে by আসিফ আহমেদ
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, জঙ্গিবাদী আদর্শের ওপর এ মৃত্যুর কী প্রভাব পড়বে? তিনি র্যাডিক্যাল ইসলামের ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। অনেকেই বিভিন্ন সময় জঙ্গিবাদী মত প্রচার করেছেন। কিন্তু তিনি তা করেছেন কাজের মাধ্যমে।
'জিহাদি সংস্কৃতি'র ধারণা গ্রহণযোগ্য করে তোলায় তার অবদান অস্বীকার করা যাবে না
যুক্তরাষ্ট্র নাইন-ইলেভেন হিসেবে পরিচিত ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার ধ্বংসের বদলা নিয়েছে। ওসামা বিন লাদেন নিহত হয়েছেন। আর কোনো দিন কোনো আমেরিকানকে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত হানার নির্দেশ তিনি দেবেন না। আল কায়দার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর হোয়াইট হাউসের এটিই বড় সাফল্য। লাদেন এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। এর ফলে মুসলিম চরমপন্থিদের অনেকে তাদের কাগুজে বাঘ হিসেবে মনে করতে শুরু করে। এখন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে তাদের শক্তিমত্তার প্রমাণ দিল। লাদেন বলেছিলেন, মানুষ তেজি ঘোড়ায় বাজি ধরে। তার হত্যাকাণ্ড থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নতুন করে বার্তা গেল যে, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বাজি ধরা যায়। এটিও স্পষ্ট হয়ে গেল, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত হানা হলে তার পরিণতি কী হতে পারে এবং এটি এড়ানো একেবারেই অসম্ভব।
যে কোনো সাধারণ আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকই মন্তব্য করবেন, লাদেনের মৃত্যুতেই আল কায়দা শেষ হয়ে যাবে না। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এ শক্তি কাজ করছে। তাদের বন্ধন অবশ্য তেমন জোরালো নয়। উত্তর আফ্রিকার মৌরিতানিয়া ও মালিতে তারা যথেষ্ট শক্তিশালী। লাদেনের মৃত্যুতে তাদের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। ইয়েমেনে আনওয়ার আল-আওলাকির নেতৃত্বে যারা কাজ করছে, এ ঘটনায় তারাও বিরত থাকবে না। তবে এটিও ঠিক, সাত-আট বছর আগে বিন লাদেনের মৃত্যু ঘটলে প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতো। সে সময় পাকিস্তানের অনেক নাগরিকের কাছে তিনি ছিলেন বীরের মর্যাদায়। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে তার সম্পর্কে ধারণা বদলাতে শুরু করেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জিহাদ করছেন_ এটি অনেকের কাছে প্রশংসনীয় ঘটনা। কিন্তু এখন ওসামা টি-শার্ট বা পোস্টার বাজার থেকে প্রায় উঠে গেছে। তাকে ধর্মযুদ্ধের শহীদের মর্যাদাও বেশি মানুষ দিতে চাইবে না। অনেক সাধারণ পাকিস্তানি, ইয়েমেনি কিংবা আফগান তার মৃত্যুর খবর শুনে বড়জোর কাঁধ ঝাঁকিয়ে 'ও আচ্ছা' বলে নিজের কাজে মনোযোগ দেবে। তার মৃত্যু জনগণকে প্রতিশোধের শপথ নিতে উদ্বুদ্ধ করবে না, যেমনটি ঘটতে পারত ২০০২ সালে। আল কায়দা ইতিমধ্যেই কঠিন সময় অতিক্রম করছে। আরব বিশ্বে গণতন্ত্রের যে আন্দোলন চলছে তাতে শরিক কোটি কোটি তরুণ এ সংস্থার দ্বারস্থ হয়নি।
আল কায়দা কি প্রতিশোধমূলক হামলা চালাবে_ এ প্রশ্ন স্বাভাবিক। এটি হতেই পারে। তবে তা বড় আকারের হবে বলে মনে হয় না। এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এ সাফল্য কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান-আফগানিস্তানে এ সংস্থাকে আরও দুর্বল করে ফেলা। তালেবানদের সঙ্গে সমঝোতায় পেঁৗছানোও গুরুত্বপূর্ণ। লাদেনের অনুপস্থিতিতে এ কাজ সহজ হবে বলেই মনে হয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগানিস্তানের কারজাই সরকার আফগান সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের জন্য ব্যগ্র। তালেবানদের অস্ত্রসমর্পণ করে সরকারে যোগদান করানোর জন্যও চেষ্টা চলছে। তালেবানরা কিছু প্রশ্নে অবস্থান নমনীয় করছে বলে জানা যাচ্ছে।
লাদেনের মৃত্যু বারাক ওবামার রাজনৈতিক সম্ভাবনার ওপর কী প্রভাব ফেলবে তাও আলোচনায় এসে গেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের নিকোলাস ক্রিস্টোফ এখনই তেমন কিছু দেখেন না। কারণ ২০১২ সালের নির্বাচন এখনও দেড় বছর দূরে। সে সময় অর্থনীতিই প্রধান এজেন্ডা হবে। জর্জ ডবি্লউ বুশ প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পরও পুনর্নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। কারণ অর্থনীতিতে ছিল মন্দা। তবে লাদেনের মৃত্যুর পরও আল কায়দা উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা হুমকি থেকে যাবে বলেই ধারণা করা হয়।
সাম্প্রতিক গোয়েন্দা তথ্য থেকে ইয়েমেনের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। আল কায়দা সোমালিয়াতেও নিজের অবস্থান শক্ত করেছে। বারাক ওবামাও তার রোববারের ভাষণে এ সংস্থার তরফে আসা হুমকির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের সংগঠকরা অবশ্য এরপরও মনে করেন, এ মৃত্যুর ঘটনা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কে মারাত্মক আঘাত হিসেবে চিহ্নিত হবে। তিনি ইসলামী জঙ্গিদের কাছে প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন। সিআইর সাবেক কর্মকর্তা জন ম্যাকলঘলিন মনে করেন, আল কায়দা এখনও হুমকি থাকবে। তাকে কেন্দ্র থেকে যে অনুপ্রেরণা আসত সেটি আর থাকবে না। অন্যদিকে সিআইর আরেক সাবেক কর্মকর্তা পল পিলার মনে করেন, আল কায়দা এখন যথেষ্ট বিকেন্দ্রীভূত। লাদেনের উপস্থিতি ছাড়াও তারা কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা যেসব অভিযান চালিয়েছে তার বেশিরভাগই কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঘটেছে। তিনি নিকট ভবিষ্যতে কোনো হামলার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এ আন্দোলন যে শেষ হয়ে যায়নি তা প্রমাণে কিছু তৎপরতা সংঘটিত হতেই পারে।
আল কায়দায় ভাঙন ধরেছে বলে খবর রয়েছে। সৌদি, মিসরীয় ও লিবীয় জঙ্গিরা একের বিরুদ্ধে অপরে সক্রিয় রয়েছে। লাদেন অবশ্যই সংগঠনের কাজে বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষপাতী ছিলেন। আল কায়দা ছাতার মতো থাকুক_ এটিই তিনি চাইতেন। প্রতিটি দেশে যেন স্থানীয় পরিবেশ ও ইতিহাস বিবেচনায় নিয়ে কাজ পরিচালনা করা হয়_ এমন নির্দেশ ছিল তার। তার অবর্তমানে এসব বিচ্ছিন্ন সংগঠন কীভাবে কাজ পরিচালনা করে সেটিই দেখার বিষয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, জঙ্গিবাদী আদর্শের ওপর এ মৃত্যুর কী প্রভাব পড়বে? তিনি র্যাডিক্যাল ইসলামের ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। অনেকেই বিভিন্ন সময় জঙ্গিবাদী মত প্রচার করেছেন। কিন্তু তিনি তা করেছেন কাজের মাধ্যমে। 'জিহাদি সংস্কৃতি'র ধারণা গ্রহণযোগ্য করে তোলায় তার অবদান অস্বীকার করা যাবে না। আল কায়দাকে 'সামাজিক আন্দোলন' হিসেবে পরিচিত করানোর ক্ষেত্রে তিনি অবশ্যই সফল। কিন্তু বিশ্ব আমাদের অন্য ধারণাও দিচ্ছে।
আরব বিশ্বের সাম্প্রতিক গণজাগরণের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, লাদেন তাদের অনুপ্রেরণা দেয় না। জঙ্গিবাদী ধারণাতেও তাদের আস্থা নেই। এক সময় তরুণরা জঙ্গিবাদকে ধ্যান-জ্ঞান করত। পাকিস্তানের বিভিন্ন শিবির থেকে তরুণরা দলে দলে যোগ দিয়েছে আল কায়দা বা তাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত সংগঠনে। এখন চিত্র ভিন্ন। বিন লাদেন ২০০১ সালে গর্বভরে বলেছিলেন, 'আমি জীবিত কিংবা মৃত_ সেটি বড় কথা নয়। মানুষ জেগে উঠছে।' তার মৃত্যুর পর নতুন প্রশ্ন_ তিনি কি ঠিক বলেছিলেন? এর উত্তর জানার জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে এখনকার মতো জরুরি প্রশ্ন, বড় ধরনের হামলার ঘটনা কি লাদেনের বুদ্ধি ও অর্থবলে গঠিত সংস্থাটির পক্ষে সম্ভব?
সূত্র :ওয়াশিংটন পোস্ট ও
নিউইয়র্ক টাইমস
যুক্তরাষ্ট্র নাইন-ইলেভেন হিসেবে পরিচিত ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার ধ্বংসের বদলা নিয়েছে। ওসামা বিন লাদেন নিহত হয়েছেন। আর কোনো দিন কোনো আমেরিকানকে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত হানার নির্দেশ তিনি দেবেন না। আল কায়দার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর হোয়াইট হাউসের এটিই বড় সাফল্য। লাদেন এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। এর ফলে মুসলিম চরমপন্থিদের অনেকে তাদের কাগুজে বাঘ হিসেবে মনে করতে শুরু করে। এখন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে তাদের শক্তিমত্তার প্রমাণ দিল। লাদেন বলেছিলেন, মানুষ তেজি ঘোড়ায় বাজি ধরে। তার হত্যাকাণ্ড থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নতুন করে বার্তা গেল যে, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বাজি ধরা যায়। এটিও স্পষ্ট হয়ে গেল, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত হানা হলে তার পরিণতি কী হতে পারে এবং এটি এড়ানো একেবারেই অসম্ভব।
যে কোনো সাধারণ আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকই মন্তব্য করবেন, লাদেনের মৃত্যুতেই আল কায়দা শেষ হয়ে যাবে না। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এ শক্তি কাজ করছে। তাদের বন্ধন অবশ্য তেমন জোরালো নয়। উত্তর আফ্রিকার মৌরিতানিয়া ও মালিতে তারা যথেষ্ট শক্তিশালী। লাদেনের মৃত্যুতে তাদের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। ইয়েমেনে আনওয়ার আল-আওলাকির নেতৃত্বে যারা কাজ করছে, এ ঘটনায় তারাও বিরত থাকবে না। তবে এটিও ঠিক, সাত-আট বছর আগে বিন লাদেনের মৃত্যু ঘটলে প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতো। সে সময় পাকিস্তানের অনেক নাগরিকের কাছে তিনি ছিলেন বীরের মর্যাদায়। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে তার সম্পর্কে ধারণা বদলাতে শুরু করেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জিহাদ করছেন_ এটি অনেকের কাছে প্রশংসনীয় ঘটনা। কিন্তু এখন ওসামা টি-শার্ট বা পোস্টার বাজার থেকে প্রায় উঠে গেছে। তাকে ধর্মযুদ্ধের শহীদের মর্যাদাও বেশি মানুষ দিতে চাইবে না। অনেক সাধারণ পাকিস্তানি, ইয়েমেনি কিংবা আফগান তার মৃত্যুর খবর শুনে বড়জোর কাঁধ ঝাঁকিয়ে 'ও আচ্ছা' বলে নিজের কাজে মনোযোগ দেবে। তার মৃত্যু জনগণকে প্রতিশোধের শপথ নিতে উদ্বুদ্ধ করবে না, যেমনটি ঘটতে পারত ২০০২ সালে। আল কায়দা ইতিমধ্যেই কঠিন সময় অতিক্রম করছে। আরব বিশ্বে গণতন্ত্রের যে আন্দোলন চলছে তাতে শরিক কোটি কোটি তরুণ এ সংস্থার দ্বারস্থ হয়নি।
আল কায়দা কি প্রতিশোধমূলক হামলা চালাবে_ এ প্রশ্ন স্বাভাবিক। এটি হতেই পারে। তবে তা বড় আকারের হবে বলে মনে হয় না। এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এ সাফল্য কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান-আফগানিস্তানে এ সংস্থাকে আরও দুর্বল করে ফেলা। তালেবানদের সঙ্গে সমঝোতায় পেঁৗছানোও গুরুত্বপূর্ণ। লাদেনের অনুপস্থিতিতে এ কাজ সহজ হবে বলেই মনে হয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগানিস্তানের কারজাই সরকার আফগান সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের জন্য ব্যগ্র। তালেবানদের অস্ত্রসমর্পণ করে সরকারে যোগদান করানোর জন্যও চেষ্টা চলছে। তালেবানরা কিছু প্রশ্নে অবস্থান নমনীয় করছে বলে জানা যাচ্ছে।
লাদেনের মৃত্যু বারাক ওবামার রাজনৈতিক সম্ভাবনার ওপর কী প্রভাব ফেলবে তাও আলোচনায় এসে গেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের নিকোলাস ক্রিস্টোফ এখনই তেমন কিছু দেখেন না। কারণ ২০১২ সালের নির্বাচন এখনও দেড় বছর দূরে। সে সময় অর্থনীতিই প্রধান এজেন্ডা হবে। জর্জ ডবি্লউ বুশ প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পরও পুনর্নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। কারণ অর্থনীতিতে ছিল মন্দা। তবে লাদেনের মৃত্যুর পরও আল কায়দা উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা হুমকি থেকে যাবে বলেই ধারণা করা হয়।
সাম্প্রতিক গোয়েন্দা তথ্য থেকে ইয়েমেনের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। আল কায়দা সোমালিয়াতেও নিজের অবস্থান শক্ত করেছে। বারাক ওবামাও তার রোববারের ভাষণে এ সংস্থার তরফে আসা হুমকির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের সংগঠকরা অবশ্য এরপরও মনে করেন, এ মৃত্যুর ঘটনা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কে মারাত্মক আঘাত হিসেবে চিহ্নিত হবে। তিনি ইসলামী জঙ্গিদের কাছে প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন। সিআইর সাবেক কর্মকর্তা জন ম্যাকলঘলিন মনে করেন, আল কায়দা এখনও হুমকি থাকবে। তাকে কেন্দ্র থেকে যে অনুপ্রেরণা আসত সেটি আর থাকবে না। অন্যদিকে সিআইর আরেক সাবেক কর্মকর্তা পল পিলার মনে করেন, আল কায়দা এখন যথেষ্ট বিকেন্দ্রীভূত। লাদেনের উপস্থিতি ছাড়াও তারা কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা যেসব অভিযান চালিয়েছে তার বেশিরভাগই কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঘটেছে। তিনি নিকট ভবিষ্যতে কোনো হামলার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এ আন্দোলন যে শেষ হয়ে যায়নি তা প্রমাণে কিছু তৎপরতা সংঘটিত হতেই পারে।
আল কায়দায় ভাঙন ধরেছে বলে খবর রয়েছে। সৌদি, মিসরীয় ও লিবীয় জঙ্গিরা একের বিরুদ্ধে অপরে সক্রিয় রয়েছে। লাদেন অবশ্যই সংগঠনের কাজে বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষপাতী ছিলেন। আল কায়দা ছাতার মতো থাকুক_ এটিই তিনি চাইতেন। প্রতিটি দেশে যেন স্থানীয় পরিবেশ ও ইতিহাস বিবেচনায় নিয়ে কাজ পরিচালনা করা হয়_ এমন নির্দেশ ছিল তার। তার অবর্তমানে এসব বিচ্ছিন্ন সংগঠন কীভাবে কাজ পরিচালনা করে সেটিই দেখার বিষয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, জঙ্গিবাদী আদর্শের ওপর এ মৃত্যুর কী প্রভাব পড়বে? তিনি র্যাডিক্যাল ইসলামের ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। অনেকেই বিভিন্ন সময় জঙ্গিবাদী মত প্রচার করেছেন। কিন্তু তিনি তা করেছেন কাজের মাধ্যমে। 'জিহাদি সংস্কৃতি'র ধারণা গ্রহণযোগ্য করে তোলায় তার অবদান অস্বীকার করা যাবে না। আল কায়দাকে 'সামাজিক আন্দোলন' হিসেবে পরিচিত করানোর ক্ষেত্রে তিনি অবশ্যই সফল। কিন্তু বিশ্ব আমাদের অন্য ধারণাও দিচ্ছে।
আরব বিশ্বের সাম্প্রতিক গণজাগরণের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, লাদেন তাদের অনুপ্রেরণা দেয় না। জঙ্গিবাদী ধারণাতেও তাদের আস্থা নেই। এক সময় তরুণরা জঙ্গিবাদকে ধ্যান-জ্ঞান করত। পাকিস্তানের বিভিন্ন শিবির থেকে তরুণরা দলে দলে যোগ দিয়েছে আল কায়দা বা তাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত সংগঠনে। এখন চিত্র ভিন্ন। বিন লাদেন ২০০১ সালে গর্বভরে বলেছিলেন, 'আমি জীবিত কিংবা মৃত_ সেটি বড় কথা নয়। মানুষ জেগে উঠছে।' তার মৃত্যুর পর নতুন প্রশ্ন_ তিনি কি ঠিক বলেছিলেন? এর উত্তর জানার জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে এখনকার মতো জরুরি প্রশ্ন, বড় ধরনের হামলার ঘটনা কি লাদেনের বুদ্ধি ও অর্থবলে গঠিত সংস্থাটির পক্ষে সম্ভব?
সূত্র :ওয়াশিংটন পোস্ট ও
নিউইয়র্ক টাইমস
No comments