শ নি বা রে র বিশেষ প্রতিবেদন-কিষান কিষানিদের পাঠশালা by রহিদুল মিয়া
তারাগঞ্জের বাছুরবান্দা গ্রামে ঢুকলেই চোখে পড়ে চকচকে একটি টিনের ঘর। সাইনবোর্ডে লেখা ‘কৃষি পাঠশালা’। এখানে বসে থাকেন একজন মানুষ, নাম গিরিশচন্দ্র রায় (৫০)। কীটনাশককে তিনি বলেন সর্বনাশা বিষ এবং সেটা ব্যবহার করতে বারণ করেন। সেই সঙ্গে এ বিষ ছাড়াই কীভাবে ফসলের পোকা দমন করা যায়, তার পরামর্শ দেন।
এই লোকটির নাম এখন এলাকার মানুষের মুখে মুখে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকেরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসেন তাঁর কাছে। গিরিশ পরামর্শ দেন। তাই কৃষকদের এখন এদিক-ওদিক দৌড়াতে হয় না।
সপ্তাহে এক দিন কৃষকদের নিয়ে ওই ঘরে বসে কৃষি পাঠশালা। কৃষি বিষয় নিয়েই পড়াশোনা চলে এ পাঠশালায়। গিরিশের গড়া এ পাঠশালাটি বিদেশিরা পরিদর্শন করেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন জেলার কৃষকদের এনে তাঁর কর্মকাণ্ড দেখাচ্ছেন।
সবাইকে তিনি একটি কথাই বিশেষভাবে বলছেন; তা হলো, জমিতে ফলন বাড়ানো ও কীটপতঙ্গ দমন করতে কোনো কিছুতেই কীটনাশক ব্যবহার করা ঠিক নয়। সেই সঙ্গে তিনি সবাইকে ফলের গাছ রোপণের পরামর্শ দেন। গিরিশ বলেন, বনজ গাছ লাগালে শুধু কাঠই পাওয়া যায়। তাই উপযুক্ত জায়গা পেলেই ফলের গাছ লাগাতে হবে। এতে ফল ও কাঠ দুটোই পাওয়া যাবে। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যসচেতন এ মানুষটি বিনা মূল্যে গাছের চারা, কলা ও সবজির বীজ বিতরণ করেন।
যেখান থেকে শুরু: ১৪ বছর আগের কথা। গিরিশের দুটি ছাগল হঠাৎ মারা যায়। ছাগল কীভাবে মারা গেল, সেই কারণ বের করার চেষ্টা করেন তিনি। পরে জানতে পারেন, খেতে কীটনাশক ছিটানো সবজি খেয়ে ছাগল দুটি মারা যায়। এ ঘটনাটি গিরিশকে নাড়া দেয়। প্রতিজ্ঞা করেন, ফসল ফলাতে খেতে কীটনাশক ছিটাবেন না। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই তিনি ১৯৯৯ সালে ১০ শতক জমিতে লাগান করলা। গঙ্গাচড়া উপজেলার লালচাঁদপুর গ্রামের কৃষক এনামুল হকের পরামর্শে পোকা দমনে খেতে ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’ ব্যবহার করেন। দেখতে দেখতে করলার খেত সবুজে ভরে ওঠে। বিক্রি করে খরচ উঠেও লাভ থাকে আট হাজার টাকা। গিরিশের এই উদ্যোগের কথা জানতে পেরে সহযোগিতার হাত বাড়ান তারাগঞ্জের তৎকালীন কৃষি কর্মকর্তা আলী আজম। তিনি পরিবেশবান্ধব বালাইনাশক ব্যবহারসহ আধুনিক পদ্ধতিতে চাষবাসের ওপর এক মাস তাঁকে প্রশিক্ষণ দেন।
তখন চারদিকে কীটনাশকের উপকারিতার জয়গান। বাড়ি এসে কয়েকজনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন গিরিশ, কিন্তু কেউ তাঁর পরামর্শ শুনতে চায় না। অনেক বুঝিয়ে তাঁর চাচাতো ভাই অতুলচন্দ্র রায় ও প্রফুল্লচন্দ্র রায়কে রাজি করান। তাঁরা ২০ শতক করে জমিতে করলা লাগান। পোকা দমনে কীটনাশক ব্যবহার না করে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করেন। ফলন ভালো হয়। এ পর্যায় অন্য কৃষকেরা খেত দেখতে আসেন। তাঁরাও গিরিশের পরামর্শে ফসল চাষ করতে আগ্রহ দেখান। ২০০০ সালের গিরিশ নিজের টাকায় ৪০ হাত দৈর্ঘ্যের একটি টিনের ঘর তোলেন। সেখানে চালু করেন কৃষি পাঠশালা।
পাঠশালার কথা: বই নেই, খাতাও নেই। শুধু শ্রবণশক্তিই পাঠশালায় বিদ্যা অর্জনের একমাত্র ভরসা। গিরিশ বলে যান আর কৃষকেরা শোনেন; আবার কৃষকেরা বলেন, তিনি শোনেন। এলাকার সব বয়সের নারী-পুরুষই শিখতে আসেন এই কৃষি পাঠশালায়। খেত-খামারে পোকার আক্রমণ, জমি তৈরি, পরিমিত সারের ব্যবহার, বীজ সংরক্ষণ, কম্পোস্ট সার তৈরিসহ সবকিছু সম্পর্কে জানেন তাঁরা। এ ছাড়া কীভাবে পুকুর সংস্কার করে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়, তা-ও শিখেছেন তাঁরা এ পাঠশালায়। বেতন-ভাতা ছাড়াই চলে এই পাঠশালার কার্যক্রম। শতাধিক কৃষকের নিয়মিত পাঠের আসর বসে এখানে।
পাঠশালায় একদিন: সরেজমিনে দেখা গেল, ১৫ শতক জমির ওপর পাঠশালাটি। নয় রকম ফলের গাছ সেখানে। ছয় রকম ঔষধি গাছও আছে। পাঠশালার পেছনে ৬০ শতক আয়তনের একটি পুকুর। এতে চলছে মাছ চাষ। এভাবে গাছ লাগানো, মাছ চাষে গ্রামের কৃষকদের হাতে-কলমে জ্ঞান দেওয়ার আয়োজন করেন গিরিশ।
কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করে তুলতে পাঠশালার বারান্দা ও ভেতরে বেশ কিছু পোস্টার টাঙানো রয়েছে। সেখানে রয়েছে কোন পোকা ফসলের জন্য ক্ষতিকর আর কোনটি ফসলের জন্য সহায়ক, সেই ছবি। পাঠশালার সামনে কৃষকদের নানান বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন গিরিশ। সেখানে খগেন রায় আসেন লিচুগাছের পাতা কুঁকড়ে যাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ নিতে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সবজিচাষি মেনাজুল ইসলাম বললেন, ‘গিরিশ দাদার কাছ থেকে সব সময় পরামর্শ পাই।’ গ্রামের সোলেমান হক জানান, পাঠশালায় শিখে তিনি এখন মানসম্মত ধানের বীজ উৎপাদন করছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাঁর বীজ কিনে নেয়। নদীরপাড় গ্রামের কৃষক মুকুল মিয়া বলেন, ‘ফসল ফলাইতে এলা ঔষুধ লাগেছে না, ধানের খেতোত ধইঞ্চার বিচি ছিটাই, কঞ্চি গাড়ি দেই, সবজির খেতোত সেক্স ফেরোমন ফাঁদ বসাই।’
সমিতি গঠন: গিরিশ চন্দ্র কৃষকদের নিয়ে গঠন করেছেন বাছুরবান্ধা কৃষক সমবায় সমিতি। প্রতি সপ্তাহে সদস্যরা ১০ টাকা করে সমিতিতে সঞ্চয় জমা করেন। এ টাকা থেকে তাঁরা বিভিন্ন প্রয়োজনে সহজ শর্তে ঋণ নেন। সমিতির তহবিলে এখন সাত লাখ টাকা জমেছে। রাস্তায় লাগানো আছে ১৫ হাজার ফলের গাছ। পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষও চলছে। এসব থেকে যা আয় হয় তা শুধু সদস্যরাই ভাগ করে নেন না, গ্রামের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানও করা হয়।
কলা বিতরণ: সময় পেলেই গিরিশচন্দ্র বেরিয়ে পড়েন কলার কাঁদি নিয়ে। কোনো একটি স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিতরণ করেন নিজের বাগানের কীটনাশকমুক্ত কলা। তারপর শিক্ষার্থীদের উপদেশ দেন, কীভাবে বাড়ির আঙিনায় কলাসহ নানান ধরনের ফল উৎপাদন করা যায়।
এলাকার গর্ব: ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন বলেন, ‘গিরিশ আমাদের গর্ব। তাঁর অবদানকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই।’ গিরিশকে একজন আদর্শ কৃষক হিসেবে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তথ্যটি জানালেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমিরচন্দ্র ঘোষ।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম বলেন, ইথিওপিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ট্যামরাট সেগাইয়িসহ আটজন গিরিশের পাঠশালাটি পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা পরিদর্শন বইয়ে এই পাঠশালার কর্মকাণ্ডকে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঢাকার মহাপরিচালকসহ অনেকেই পাঠশালাটি পরিদর্শন করছেন।
জীবন-জীবিকা: বাছুরবান্ধা গ্রামে গিরিশের জন্ম। এক একরে ধান, ৮০ শতকে সবজি, ৫০ শতকে কলা, ৬০ শতক পুকুরে করছেন মাছ চাষ। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। ফল আর ফসল বিক্রির আয় দিয়ে তাঁর সংসার চলে। গত ১০ বছরে তিনি ১০ হাজার ফলদ গাছের চারা এলাকাবাসীর মধ্যে বিতরণ করেছেন। সকাল-বিকেল কেটে যায় তাঁর পাঠশালায়। এখান থেকে তাঁর কোনো আয় নেই। কখনো বা বেরিয়ে পড়েন এলাকাবাসীর ডাকে। খোঁজখবর নেন তাঁর বিতরণ করা গাছের আর কথা বলেন মরণবিষের বিরুদ্ধে।
সপ্তাহে এক দিন কৃষকদের নিয়ে ওই ঘরে বসে কৃষি পাঠশালা। কৃষি বিষয় নিয়েই পড়াশোনা চলে এ পাঠশালায়। গিরিশের গড়া এ পাঠশালাটি বিদেশিরা পরিদর্শন করেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন জেলার কৃষকদের এনে তাঁর কর্মকাণ্ড দেখাচ্ছেন।
সবাইকে তিনি একটি কথাই বিশেষভাবে বলছেন; তা হলো, জমিতে ফলন বাড়ানো ও কীটপতঙ্গ দমন করতে কোনো কিছুতেই কীটনাশক ব্যবহার করা ঠিক নয়। সেই সঙ্গে তিনি সবাইকে ফলের গাছ রোপণের পরামর্শ দেন। গিরিশ বলেন, বনজ গাছ লাগালে শুধু কাঠই পাওয়া যায়। তাই উপযুক্ত জায়গা পেলেই ফলের গাছ লাগাতে হবে। এতে ফল ও কাঠ দুটোই পাওয়া যাবে। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যসচেতন এ মানুষটি বিনা মূল্যে গাছের চারা, কলা ও সবজির বীজ বিতরণ করেন।
যেখান থেকে শুরু: ১৪ বছর আগের কথা। গিরিশের দুটি ছাগল হঠাৎ মারা যায়। ছাগল কীভাবে মারা গেল, সেই কারণ বের করার চেষ্টা করেন তিনি। পরে জানতে পারেন, খেতে কীটনাশক ছিটানো সবজি খেয়ে ছাগল দুটি মারা যায়। এ ঘটনাটি গিরিশকে নাড়া দেয়। প্রতিজ্ঞা করেন, ফসল ফলাতে খেতে কীটনাশক ছিটাবেন না। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই তিনি ১৯৯৯ সালে ১০ শতক জমিতে লাগান করলা। গঙ্গাচড়া উপজেলার লালচাঁদপুর গ্রামের কৃষক এনামুল হকের পরামর্শে পোকা দমনে খেতে ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’ ব্যবহার করেন। দেখতে দেখতে করলার খেত সবুজে ভরে ওঠে। বিক্রি করে খরচ উঠেও লাভ থাকে আট হাজার টাকা। গিরিশের এই উদ্যোগের কথা জানতে পেরে সহযোগিতার হাত বাড়ান তারাগঞ্জের তৎকালীন কৃষি কর্মকর্তা আলী আজম। তিনি পরিবেশবান্ধব বালাইনাশক ব্যবহারসহ আধুনিক পদ্ধতিতে চাষবাসের ওপর এক মাস তাঁকে প্রশিক্ষণ দেন।
তখন চারদিকে কীটনাশকের উপকারিতার জয়গান। বাড়ি এসে কয়েকজনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন গিরিশ, কিন্তু কেউ তাঁর পরামর্শ শুনতে চায় না। অনেক বুঝিয়ে তাঁর চাচাতো ভাই অতুলচন্দ্র রায় ও প্রফুল্লচন্দ্র রায়কে রাজি করান। তাঁরা ২০ শতক করে জমিতে করলা লাগান। পোকা দমনে কীটনাশক ব্যবহার না করে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করেন। ফলন ভালো হয়। এ পর্যায় অন্য কৃষকেরা খেত দেখতে আসেন। তাঁরাও গিরিশের পরামর্শে ফসল চাষ করতে আগ্রহ দেখান। ২০০০ সালের গিরিশ নিজের টাকায় ৪০ হাত দৈর্ঘ্যের একটি টিনের ঘর তোলেন। সেখানে চালু করেন কৃষি পাঠশালা।
পাঠশালার কথা: বই নেই, খাতাও নেই। শুধু শ্রবণশক্তিই পাঠশালায় বিদ্যা অর্জনের একমাত্র ভরসা। গিরিশ বলে যান আর কৃষকেরা শোনেন; আবার কৃষকেরা বলেন, তিনি শোনেন। এলাকার সব বয়সের নারী-পুরুষই শিখতে আসেন এই কৃষি পাঠশালায়। খেত-খামারে পোকার আক্রমণ, জমি তৈরি, পরিমিত সারের ব্যবহার, বীজ সংরক্ষণ, কম্পোস্ট সার তৈরিসহ সবকিছু সম্পর্কে জানেন তাঁরা। এ ছাড়া কীভাবে পুকুর সংস্কার করে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়, তা-ও শিখেছেন তাঁরা এ পাঠশালায়। বেতন-ভাতা ছাড়াই চলে এই পাঠশালার কার্যক্রম। শতাধিক কৃষকের নিয়মিত পাঠের আসর বসে এখানে।
পাঠশালায় একদিন: সরেজমিনে দেখা গেল, ১৫ শতক জমির ওপর পাঠশালাটি। নয় রকম ফলের গাছ সেখানে। ছয় রকম ঔষধি গাছও আছে। পাঠশালার পেছনে ৬০ শতক আয়তনের একটি পুকুর। এতে চলছে মাছ চাষ। এভাবে গাছ লাগানো, মাছ চাষে গ্রামের কৃষকদের হাতে-কলমে জ্ঞান দেওয়ার আয়োজন করেন গিরিশ।
কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করে তুলতে পাঠশালার বারান্দা ও ভেতরে বেশ কিছু পোস্টার টাঙানো রয়েছে। সেখানে রয়েছে কোন পোকা ফসলের জন্য ক্ষতিকর আর কোনটি ফসলের জন্য সহায়ক, সেই ছবি। পাঠশালার সামনে কৃষকদের নানান বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন গিরিশ। সেখানে খগেন রায় আসেন লিচুগাছের পাতা কুঁকড়ে যাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ নিতে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সবজিচাষি মেনাজুল ইসলাম বললেন, ‘গিরিশ দাদার কাছ থেকে সব সময় পরামর্শ পাই।’ গ্রামের সোলেমান হক জানান, পাঠশালায় শিখে তিনি এখন মানসম্মত ধানের বীজ উৎপাদন করছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাঁর বীজ কিনে নেয়। নদীরপাড় গ্রামের কৃষক মুকুল মিয়া বলেন, ‘ফসল ফলাইতে এলা ঔষুধ লাগেছে না, ধানের খেতোত ধইঞ্চার বিচি ছিটাই, কঞ্চি গাড়ি দেই, সবজির খেতোত সেক্স ফেরোমন ফাঁদ বসাই।’
সমিতি গঠন: গিরিশ চন্দ্র কৃষকদের নিয়ে গঠন করেছেন বাছুরবান্ধা কৃষক সমবায় সমিতি। প্রতি সপ্তাহে সদস্যরা ১০ টাকা করে সমিতিতে সঞ্চয় জমা করেন। এ টাকা থেকে তাঁরা বিভিন্ন প্রয়োজনে সহজ শর্তে ঋণ নেন। সমিতির তহবিলে এখন সাত লাখ টাকা জমেছে। রাস্তায় লাগানো আছে ১৫ হাজার ফলের গাছ। পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষও চলছে। এসব থেকে যা আয় হয় তা শুধু সদস্যরাই ভাগ করে নেন না, গ্রামের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানও করা হয়।
কলা বিতরণ: সময় পেলেই গিরিশচন্দ্র বেরিয়ে পড়েন কলার কাঁদি নিয়ে। কোনো একটি স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিতরণ করেন নিজের বাগানের কীটনাশকমুক্ত কলা। তারপর শিক্ষার্থীদের উপদেশ দেন, কীভাবে বাড়ির আঙিনায় কলাসহ নানান ধরনের ফল উৎপাদন করা যায়।
এলাকার গর্ব: ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন বলেন, ‘গিরিশ আমাদের গর্ব। তাঁর অবদানকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই।’ গিরিশকে একজন আদর্শ কৃষক হিসেবে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তথ্যটি জানালেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমিরচন্দ্র ঘোষ।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম বলেন, ইথিওপিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ট্যামরাট সেগাইয়িসহ আটজন গিরিশের পাঠশালাটি পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা পরিদর্শন বইয়ে এই পাঠশালার কর্মকাণ্ডকে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঢাকার মহাপরিচালকসহ অনেকেই পাঠশালাটি পরিদর্শন করছেন।
জীবন-জীবিকা: বাছুরবান্ধা গ্রামে গিরিশের জন্ম। এক একরে ধান, ৮০ শতকে সবজি, ৫০ শতকে কলা, ৬০ শতক পুকুরে করছেন মাছ চাষ। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। ফল আর ফসল বিক্রির আয় দিয়ে তাঁর সংসার চলে। গত ১০ বছরে তিনি ১০ হাজার ফলদ গাছের চারা এলাকাবাসীর মধ্যে বিতরণ করেছেন। সকাল-বিকেল কেটে যায় তাঁর পাঠশালায়। এখান থেকে তাঁর কোনো আয় নেই। কখনো বা বেরিয়ে পড়েন এলাকাবাসীর ডাকে। খোঁজখবর নেন তাঁর বিতরণ করা গাছের আর কথা বলেন মরণবিষের বিরুদ্ধে।
No comments