কালান্তরের কড়চা : এবারের বঙ্গদর্শন (৩)-ছহি বড় ইউনূস-নামা by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
এবার ঢাকায় গিয়ে সহসাই ইউনূস-বিতর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলাম। লেখালেখিতে নয়, তদবির-তদারকে। এবার সিদ্ধান্ত নিয়েই গিয়েছিলাম যে মাসখানেক দেশে থাকার সময় কোনো কাগজেই লেখালেখি করব না। কেবল দেখব, শুনব, জানব।
কিন্তু 'জন্ম যার বঙ্গে কপাল যায় সঙ্গে!' আমাকে লেখালেখিতে জড়াতে হয়নি, কিন্তু ড. ইউনূসের মামলা সংক্রান্ত একটি ব্যাপারে নিজের অজান্তেই পরোক্ষভাবে জড়াতে হয়েছিল।
এবার ঢাকায় একটু নিরিবিলি থাকব বলে কোনো আত্মীয়ের বাসায় উঠিনি। বনানী গোরস্তানের কাছে ২৭ নম্বর রোডে ইস্টার্ন রেসিডেন্স নামের একটা চমৎকার হোটেলে উঠেছিলাম। ফাইভ স্টার বা ফোর স্টার হোটেল নয়, কিন্তু একটি অভিজাত হোটেলের সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আতিথেয়তা এবং সার্ভিস দুই-ই উন্নতমানের। আমি একটু বেশি সমাদর পেয়েছি হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। হোটেলের তেতলায় একটা দুই রুমের সুইট আমাকে দেওয়া হয়েছিল। মাসখানেক ছিলাম। মনে হয়েছে নিজের বাসাতেই আছি। হোটেলে বাস করছি না।
হোটেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর খায়রুল আনাম পল্টু এবং এঙ্িিকউটিভ ডিরেক্টর ফারুক হোসেন ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। একজন ছিলেন মোহাম্মদপুর ছাত্রলীগের সভাপতি এবং অন্যজন ছিলেন ঢাকা ছাত্রলীগের অর্গানাইজিং সেক্রেটারি। এখন ব্যবসায়ী হলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত। আমিও প্রাক্তন ছাত্রলীগার। সেই সুবাদেও যত্ন-আত্তিটা তাঁদের কাছ থেকে একটু বেশিই পেয়েছি।
আমি যখন ঢাকায় পেঁৗছেছি, তখন গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূসকে নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। ব্যাংকিং রীতিনীতি ভঙ্গ করে দীর্ঘকাল ধরে গ্রামীণ ব্যাংকে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা এবং নানা অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে তাঁর পদ ছেড়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দেয়। তিনি তা মানতে রাজি হননি। পদ ছাড়ার নির্দেশের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে মামলা করেন। তাঁর আইনজীবী হয়ে কোর্টে দাঁড়ান ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দীন মাহমুদ।
আমি ড. ইউনূসের অনুরাগী অথবা তাঁর সব কর্মকাণ্ডের সমর্থক নই। তাঁকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না এবং তাঁর প্রতি আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরাগও নেই। কিন্তু তাঁর মাইক্রো ক্রেডিটের ব্যবসা এবং গ্রামীণফোন সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড দেখে গোড়া থেকেই আমার সন্দেহ হয়েছে এর পেছনে গরিবের স্বার্থ নয়, আত্মস্বার্থ ও আন্তর্জাতিক স্বার্থের (গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের) একটা ব্যাপার-স্যাপার আছে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, 'রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।' এই কাঙালের ধন চুরি করার জন্য গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম নানা কৌশল আবিষ্কার করেছে, সেই কৌশল কার্যকর করার জন্য নানা 'এজেন্ট' তৈরি করেছে। এমনকি এই এজেন্টদের নোবেল পুরস্কারসহ নানা আন্তর্জাতিক পুরস্কার দিয়ে অনুন্নত দেশগুলোর মানুষের কাছে দেবতা হিসেবে খাড়া করার চেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশে ড. ইউনূস পশ্চিমাদের সৃষ্ট এই ধরনের দেবতা কি না আমি জানি না। কিন্তু গরিব তৃতীয় বিশ্বে এই দেবতা সৃষ্টির সব প্রকরণের সঙ্গে ফতুয়া গায়ে, গরিবের জন্য ক্ষুদ্রঋণ সাহায্য নিয়ে ড. ইউনূসের দেবতার মতো আবির্ভাবের পন্থার মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ড. ইউনূসকে 'শান্তির জন্য অবদান রাখায়' নোবেল পুরস্কার দেওয়ার পেছনে বিশ্বের একক পরাশক্তির উদ্দেশ্যমূলক কৌশল কাজ করেছে বলে আমার এবং অনেকেরই মনে হয়েছে। এর পেছনে আমেরিকার অত্যন্ত শক্তিশালী ক্লিনটন পরিবারের গোপন ও প্রকাশ্য ক্যাম্পেইনও কাজ করেছে। দেশে অথবা বিদেশে শান্তির জন্য ড. ইউনূসের কণামাত্র অবদান আছে বলে কেউ প্রমাণ করতে পারবেন না। ক্ষুদ্রঋণ দানের ব্যবস্থা দ্বারা তিনি গরিবের ঘরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন বলে কেউ প্রমাণ করতে পারেননি। বরং বহু গরিবের ঘরে অশান্তি, ঋণ পরিশোধে অক্ষমতার জন্য আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েছে। তবু দেশের দরিদ্রদের খুবই একটা ক্ষুদ্র অংশের স্বাবলম্বিতা অর্জনে গ্রামীণ ব্যাংক কোনো ভূমিকা রাখেনি তা বলব না।
তেমন ভূমিকা ব্রিটিশ আমলে সমবায় আন্দোলন, কুটির শিল্পব্যবস্থা এবং পাকিস্তান আমলে মার্কিন অর্থে পরিচালিত ভিলেজ এইড কর্মসূচিও রেখেছে। তাতে বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূর হয়নি। ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প পশ্চিমা তথাকথিত দাতা দেশগুলোর স্বার্থে ও সাহায্যে এবং প্রচারণায় আগেকার সমবায় ও গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পগুলোর চাইতে অনেক বেশি পাবলিসিটি ও প্রসারতা পেয়েছে। কিন্তু নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেনি। তবু পশ্চিমারা তাঁকে সেই পুরস্কার দিয়েছে। আর ওয়াশিংটনের কর্তারা তো তাঁকে বছর বছর সম্মানজনক পুরস্কার দিয়ে তাঁর দেবতার মুখোশটি পাকাপোক্ত রাখার ব্যবস্থা করছেন। এর পেছনের উদ্দেশ্য কি গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম ও নিউ ইমপেরিয়ালিজমের স্বার্থে তাঁকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যবহারের পর রাজনৈতিক স্বার্থেও ব্যবহার করা?
তা নইলে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পরপরই তিনি তাঁর নিজ দেশে সেনা তাঁবেদার অনির্বাচিত সরকারের আমলে (তাদের সমর্থনে ও সাহায্যেও নয় কি?) হঠাৎ তাদের মাইনাস টু থিওরি কার্যকর করার জন্য লাফ দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন কেন? নোবেল পুরস্কার কি কোনো ব্যক্তিকে রাজনৈতিক নেতা হওয়ার সিঁড়ি তৈরি করে? রবীন্দ্রনাথ তো নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি কি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন, না রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন?
সন্দেহটা তখন আমার মতো অনেকের মনেই দানা বেঁধেছে। পশ্চিমারা ড. ইউনূসকে দুই হাতে অর্থ সাহায্য ঢেলে তাঁর গ্রামীণ ব্যাংকের ও অন্যান্য ব্যবসায়ের দারুণ প্রসার ঘটিয়ে, তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দিয়ে 'আনন্দের এভারেস্টে' তুলে দিয়ে আসলে করতে চাইছে কী? পশ্চিমা প্রচারণায় 'গরিবের ত্রাতা' এবং 'নোবেল লরিয়েট মনীষী' হিসেবে তাঁর ঢক্কা এখন বিশ্বময় নিনাদিত। তাহলে মাইনাস টু থিওরির নামে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে শূন্যতা সৃষ্টি করে আফগানিস্তানের কারজাই, পাকিস্তানের জারদারির মতো বাংলাদেশে ড. ইউনূসকে আরেক পলিটিক্যাল রোবট হিসেবে ক্ষমতায় বসানোর ইচ্ছা কি ছিল পশ্চিমাদের? ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে দীর্ঘকালের এঙ্পেরিমেন্ট ব্যর্থ হওয়ার পর এখন কি ড. ইউনূস হবেন পশ্চিমাদের নতুন তুরুপের তাস? প্রশ্নগুলোর সদুত্তর এখনো পাওয়া যায়নি।
ড. ইউনূস সম্পর্কিত একটা বিষয় অনেকের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। সেটা হলো, বাংলাদেশে ওয়ান-ইলেভেনের সঙ্গে এই নোবেল লরিয়েটের সম্পৃক্ততা এবং ওয়ান-ইলেভেনের সরকার গঠনে তাঁর নেপথ্য ভূমিকা। ড. ইউনূস রাজনীতি করেন না, কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন বলে দাবি করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগে ভাঙন সৃষ্টির জন্য যখন ড. কামাল হোসেন কিছু দলছুট রাজনৈতিক নেতা নিয়ে গণফোরাম গঠন করেন, তখন থেকেই ড. ইউনূসের রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের কর্মকাণ্ড শুরু। তিনি গণফোরামের উদ্বোধনী সভায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে পরোক্ষভাবে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির সমালোচনা করে এলিট রাজনীতির একটা ফর্মুলার কথা বলেছিলেন। আমি তখনই আমার লেখায় তাঁর সমালোচনা করে তাঁর ফর্মুলাকে স্বপ্নের পোলাও আখ্যা দিয়েছিলাম।
গণফোরাম প্রতিষ্ঠার পর ড. কামাল হোসেনের জনসমর্থন অর্জনে ব্যর্থতা এবং জনগণ কর্তৃক বারবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার দীর্ঘকাল পর পশ্চিমা ফর্মুলায় যে ওয়ান-ইলেভেন সৃষ্টি হয়, তা ড. ইউনূসের বহু আগের স্বপ্নের পোলাওয়েরই বিলম্বিত বাস্তবায়ন কি না সে প্রশ্নটি আমার মতো অনেকের মনেই জেগেছে। বিএনপির ক্রীড়নক রাষ্ট্রপ্রধান ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভেঙে দেওয়ার পর সেনাপ্রধানদের ইচ্ছায় যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়, তাতে ড. ইউনূসকেই প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ড. ইউনূস একটি টেম্পোরারি সরকারের টেম্পোরারি প্রধান হতে চাননি। তাঁর দৃষ্টি ছিল গাছের মগডালের দিকে। তাঁরই মনোনয়নে তাঁরই সহপাঠী ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে সেনা-তাঁবেদার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা হয়।
ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। একজন সজ্জন, নিরীহ গোবেচারা মানুষ। ড. ইউনূুস তাঁর মাথায় কাঁঠাল রেখে কোয়া খেতে চেয়েছিলেন। তাঁর পরামর্শের চক্করে পড়ে ফখরুদ্দীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতে রাজি হয়েছিলেন এবং ওই পদে বসার কিছুদিনের মধ্যে বুঝতে পেরেছিলেন, ড. ইউনূস তাঁকে কোন ফাঁদে আটকে দিয়েছেন! তাঁকে সামনে শিখণ্ডি হিসেবে খাড়া করে ডিজিএফআইয়ের বারী-আমিন গোষ্ঠী দেশে যথেচ্ছাচার করেছে। ফখরুদ্দীন তাঁর প্রতিবাদ করার সাহস ও ব্যক্তিত্ব দেখাতে পারেননি। কেবল একটি নির্বাচন দিয়ে দ্রুত এই পদটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য দিন গুনছিলেন। তাতেও তিনি নিজেকে বাঁচাতে পারেননি, ড. ইউনূসের পরামর্শের ফাঁদে পা দিয়ে আজ তিনি ওয়ান-ইলেভেনের সব দুর্বৃত্তপনার জন্য দায়ী হয়ে দেশ ছেড়ে ওয়াশিংটনে গিয়ে প্রায় স্বেচ্ছা-নির্বাসিত জীবনযাপনে বাধ্য হয়েছেন।
মজার ব্যাপার এই যে ওয়ান-ইলেভেনের আবির্ভাব এবং সেই আমলের বিভীষিকাময় দিনগুলোর জন্য বিএনপি এখন তারস্বরে ড. ফখরুদ্দীন ও জেনারেল মইনের বিচার দাবি করছে। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের স্বপ্নদ্রষ্টাদের মধ্যে যিনি অন্যতম প্রধান এবং ওয়ান-ইলেভেনের সরকার গঠনের প্রধান রূপকার সেই ড. ইউনূসের বিচার দাবি করছে না। সংগতভাবেই এই প্রশ্নটি এখন ওঠে, ওয়ান-ইলেভেনের জন্য জেনারেল মইন ও ফখরুদ্দীন আহমদের বিচারের দাবি যদি তোলা হয়, তাহলে এই সরকারের যিনি প্রধান রূপকার, এমনকি এই সরকারের সমর্থনে (তাদের মাইনাস টু থিওরি বাস্তবায়নের জন্য) একটি রাজনৈতিক দল পর্যন্ত গঠন করতে চেয়েছিলেন, তাঁকে এই বিচারের অন্তর্ভুক্ত করা হবে না কেন?
বিএনপি এবং খালেদা জিয়া ড. ইউনূসের বিচার দাবি করছেন না। ওয়ান-ইলেভেন প্রসঙ্গে একবারও ড. ইউনূসের নাম মুখে আনছেন না। কারণ কী? কথায় বলে 'ভাদ্র বৌ ভাশুরের নাম মুখে আনে না।' ড. ইউনূস সম্পর্কে বিএনপির বর্তমান আচরণে এই প্রবাদটি সত্য মনে হয়। ড. ইউনূসকে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্ব ছাড়ার যে নির্দেশ দিয়েছে তা অর্থনৈতিক কারণে, কোনো রাজনৈতিক কারণে নয়। তাঁর বিরুদ্ধে আইনবহির্ভূতভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্বে থাকা এবং আরো নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ড. ইউনূস তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন। তাঁর হাইকোর্টের মামলা খারিজ হয়ে গেছে। তিনি এখন সুপ্রিম কোর্টে আপিলে যাচ্ছেন। এই বিচারাধীন বিষয়টিকেও বিএনপি রাজনৈতিক ইস্যু বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের সঙ্গে জুটেছে একটি তথাকথিত সুশীল সমাজ এবং তাদের ইংরেজি ও বাংলা দুটি 'নিরপেক্ষ' দৈনিক।
বিএনপি তথাকথিত সুশীল সমাজ ও দুটি নিরপেক্ষ দৈনিক_এই মিলিত অঙ্মি অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে ড. ইউনূসের বিষয়টিকে রাজনৈতিকীকরণের এবং শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারকে ঘায়েল করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে। আমি এই চেষ্টার মধ্যে ২০০১ সালের অক্টোবর-নির্বাচনপূর্ব চক্রান্ত ও চক্রীদের গন্ধ পাচ্ছি। এই অঙ্মি তাদের চক্রান্ত সফল করার জন্য দেশে বিদেশি হস্তক্ষেপও টেনে আনতে চাইছে। যা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্যও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।
দুর্ভাগ্যের ব্যাপার এই যে আওয়ামী লীগ সরকার, এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নিজেদের অবাঞ্ছিত কথাবার্তা দ্বারা চক্রান্তকারীদের ট্রাপে পা দিয়েছেন ও সরকারের জন্য এবং দেশের জন্যও এক বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন। আমি এবার দেশের মাটিতে পা রাখতেই ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক সংক্রান্ত বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কিছু লেখার জন্য অনুরুদ্ধ হয়েছিলাম। আমি বিষয়টি বিচারাধীন বলে লিখতে রাজি হইনি। তা সত্ত্বেও, গোড়াতেই বলেছি, দেশে পেঁৗছতেই ড. ইউনূস সংক্রান্ত বিতর্কে নয়, তাঁর মামলার ব্যাপারে একটা ছোট্ট নেপথ্য ভূমিকা গ্রহণে বাধ্য হয়েছিলাম। তখনই বুঝেছি একটি সম্মানজনক আপস-রফার পথে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিদায় নিতে চান না। তিনি সম্ভবত চান, তাঁর বিদেশি প্রভুদের সাহায্য ও সমর্থন আদায় করে হাসিনা সরকারকে একটা নাকে ডলা দিতে। তাতে বিদেশি হস্তক্ষেপে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নাকে ডলা খাক সেই বিবেচনা তাঁর নেই। এবার তাঁর মামলার ব্যাপারে আমার ছোট্ট নেপথ্য ভূমিকা ও তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাটা বলি।
(পরবর্তী অংশ আগামী মঙ্গলবার)
লন্ডন, ৩০ মার্চ, বুধবার, ২০১১
এবার ঢাকায় একটু নিরিবিলি থাকব বলে কোনো আত্মীয়ের বাসায় উঠিনি। বনানী গোরস্তানের কাছে ২৭ নম্বর রোডে ইস্টার্ন রেসিডেন্স নামের একটা চমৎকার হোটেলে উঠেছিলাম। ফাইভ স্টার বা ফোর স্টার হোটেল নয়, কিন্তু একটি অভিজাত হোটেলের সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আতিথেয়তা এবং সার্ভিস দুই-ই উন্নতমানের। আমি একটু বেশি সমাদর পেয়েছি হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। হোটেলের তেতলায় একটা দুই রুমের সুইট আমাকে দেওয়া হয়েছিল। মাসখানেক ছিলাম। মনে হয়েছে নিজের বাসাতেই আছি। হোটেলে বাস করছি না।
হোটেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর খায়রুল আনাম পল্টু এবং এঙ্িিকউটিভ ডিরেক্টর ফারুক হোসেন ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। একজন ছিলেন মোহাম্মদপুর ছাত্রলীগের সভাপতি এবং অন্যজন ছিলেন ঢাকা ছাত্রলীগের অর্গানাইজিং সেক্রেটারি। এখন ব্যবসায়ী হলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত। আমিও প্রাক্তন ছাত্রলীগার। সেই সুবাদেও যত্ন-আত্তিটা তাঁদের কাছ থেকে একটু বেশিই পেয়েছি।
আমি যখন ঢাকায় পেঁৗছেছি, তখন গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূসকে নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। ব্যাংকিং রীতিনীতি ভঙ্গ করে দীর্ঘকাল ধরে গ্রামীণ ব্যাংকে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা এবং নানা অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে তাঁর পদ ছেড়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দেয়। তিনি তা মানতে রাজি হননি। পদ ছাড়ার নির্দেশের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে মামলা করেন। তাঁর আইনজীবী হয়ে কোর্টে দাঁড়ান ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দীন মাহমুদ।
আমি ড. ইউনূসের অনুরাগী অথবা তাঁর সব কর্মকাণ্ডের সমর্থক নই। তাঁকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না এবং তাঁর প্রতি আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরাগও নেই। কিন্তু তাঁর মাইক্রো ক্রেডিটের ব্যবসা এবং গ্রামীণফোন সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড দেখে গোড়া থেকেই আমার সন্দেহ হয়েছে এর পেছনে গরিবের স্বার্থ নয়, আত্মস্বার্থ ও আন্তর্জাতিক স্বার্থের (গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের) একটা ব্যাপার-স্যাপার আছে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, 'রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।' এই কাঙালের ধন চুরি করার জন্য গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম নানা কৌশল আবিষ্কার করেছে, সেই কৌশল কার্যকর করার জন্য নানা 'এজেন্ট' তৈরি করেছে। এমনকি এই এজেন্টদের নোবেল পুরস্কারসহ নানা আন্তর্জাতিক পুরস্কার দিয়ে অনুন্নত দেশগুলোর মানুষের কাছে দেবতা হিসেবে খাড়া করার চেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশে ড. ইউনূস পশ্চিমাদের সৃষ্ট এই ধরনের দেবতা কি না আমি জানি না। কিন্তু গরিব তৃতীয় বিশ্বে এই দেবতা সৃষ্টির সব প্রকরণের সঙ্গে ফতুয়া গায়ে, গরিবের জন্য ক্ষুদ্রঋণ সাহায্য নিয়ে ড. ইউনূসের দেবতার মতো আবির্ভাবের পন্থার মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ড. ইউনূসকে 'শান্তির জন্য অবদান রাখায়' নোবেল পুরস্কার দেওয়ার পেছনে বিশ্বের একক পরাশক্তির উদ্দেশ্যমূলক কৌশল কাজ করেছে বলে আমার এবং অনেকেরই মনে হয়েছে। এর পেছনে আমেরিকার অত্যন্ত শক্তিশালী ক্লিনটন পরিবারের গোপন ও প্রকাশ্য ক্যাম্পেইনও কাজ করেছে। দেশে অথবা বিদেশে শান্তির জন্য ড. ইউনূসের কণামাত্র অবদান আছে বলে কেউ প্রমাণ করতে পারবেন না। ক্ষুদ্রঋণ দানের ব্যবস্থা দ্বারা তিনি গরিবের ঘরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন বলে কেউ প্রমাণ করতে পারেননি। বরং বহু গরিবের ঘরে অশান্তি, ঋণ পরিশোধে অক্ষমতার জন্য আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েছে। তবু দেশের দরিদ্রদের খুবই একটা ক্ষুদ্র অংশের স্বাবলম্বিতা অর্জনে গ্রামীণ ব্যাংক কোনো ভূমিকা রাখেনি তা বলব না।
তেমন ভূমিকা ব্রিটিশ আমলে সমবায় আন্দোলন, কুটির শিল্পব্যবস্থা এবং পাকিস্তান আমলে মার্কিন অর্থে পরিচালিত ভিলেজ এইড কর্মসূচিও রেখেছে। তাতে বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূর হয়নি। ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প পশ্চিমা তথাকথিত দাতা দেশগুলোর স্বার্থে ও সাহায্যে এবং প্রচারণায় আগেকার সমবায় ও গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পগুলোর চাইতে অনেক বেশি পাবলিসিটি ও প্রসারতা পেয়েছে। কিন্তু নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেনি। তবু পশ্চিমারা তাঁকে সেই পুরস্কার দিয়েছে। আর ওয়াশিংটনের কর্তারা তো তাঁকে বছর বছর সম্মানজনক পুরস্কার দিয়ে তাঁর দেবতার মুখোশটি পাকাপোক্ত রাখার ব্যবস্থা করছেন। এর পেছনের উদ্দেশ্য কি গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম ও নিউ ইমপেরিয়ালিজমের স্বার্থে তাঁকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যবহারের পর রাজনৈতিক স্বার্থেও ব্যবহার করা?
তা নইলে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পরপরই তিনি তাঁর নিজ দেশে সেনা তাঁবেদার অনির্বাচিত সরকারের আমলে (তাদের সমর্থনে ও সাহায্যেও নয় কি?) হঠাৎ তাদের মাইনাস টু থিওরি কার্যকর করার জন্য লাফ দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন কেন? নোবেল পুরস্কার কি কোনো ব্যক্তিকে রাজনৈতিক নেতা হওয়ার সিঁড়ি তৈরি করে? রবীন্দ্রনাথ তো নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি কি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন, না রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন?
সন্দেহটা তখন আমার মতো অনেকের মনেই দানা বেঁধেছে। পশ্চিমারা ড. ইউনূসকে দুই হাতে অর্থ সাহায্য ঢেলে তাঁর গ্রামীণ ব্যাংকের ও অন্যান্য ব্যবসায়ের দারুণ প্রসার ঘটিয়ে, তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দিয়ে 'আনন্দের এভারেস্টে' তুলে দিয়ে আসলে করতে চাইছে কী? পশ্চিমা প্রচারণায় 'গরিবের ত্রাতা' এবং 'নোবেল লরিয়েট মনীষী' হিসেবে তাঁর ঢক্কা এখন বিশ্বময় নিনাদিত। তাহলে মাইনাস টু থিওরির নামে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে শূন্যতা সৃষ্টি করে আফগানিস্তানের কারজাই, পাকিস্তানের জারদারির মতো বাংলাদেশে ড. ইউনূসকে আরেক পলিটিক্যাল রোবট হিসেবে ক্ষমতায় বসানোর ইচ্ছা কি ছিল পশ্চিমাদের? ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে দীর্ঘকালের এঙ্পেরিমেন্ট ব্যর্থ হওয়ার পর এখন কি ড. ইউনূস হবেন পশ্চিমাদের নতুন তুরুপের তাস? প্রশ্নগুলোর সদুত্তর এখনো পাওয়া যায়নি।
ড. ইউনূস সম্পর্কিত একটা বিষয় অনেকের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। সেটা হলো, বাংলাদেশে ওয়ান-ইলেভেনের সঙ্গে এই নোবেল লরিয়েটের সম্পৃক্ততা এবং ওয়ান-ইলেভেনের সরকার গঠনে তাঁর নেপথ্য ভূমিকা। ড. ইউনূস রাজনীতি করেন না, কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন বলে দাবি করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগে ভাঙন সৃষ্টির জন্য যখন ড. কামাল হোসেন কিছু দলছুট রাজনৈতিক নেতা নিয়ে গণফোরাম গঠন করেন, তখন থেকেই ড. ইউনূসের রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের কর্মকাণ্ড শুরু। তিনি গণফোরামের উদ্বোধনী সভায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে পরোক্ষভাবে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির সমালোচনা করে এলিট রাজনীতির একটা ফর্মুলার কথা বলেছিলেন। আমি তখনই আমার লেখায় তাঁর সমালোচনা করে তাঁর ফর্মুলাকে স্বপ্নের পোলাও আখ্যা দিয়েছিলাম।
গণফোরাম প্রতিষ্ঠার পর ড. কামাল হোসেনের জনসমর্থন অর্জনে ব্যর্থতা এবং জনগণ কর্তৃক বারবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার দীর্ঘকাল পর পশ্চিমা ফর্মুলায় যে ওয়ান-ইলেভেন সৃষ্টি হয়, তা ড. ইউনূসের বহু আগের স্বপ্নের পোলাওয়েরই বিলম্বিত বাস্তবায়ন কি না সে প্রশ্নটি আমার মতো অনেকের মনেই জেগেছে। বিএনপির ক্রীড়নক রাষ্ট্রপ্রধান ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভেঙে দেওয়ার পর সেনাপ্রধানদের ইচ্ছায় যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়, তাতে ড. ইউনূসকেই প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ড. ইউনূস একটি টেম্পোরারি সরকারের টেম্পোরারি প্রধান হতে চাননি। তাঁর দৃষ্টি ছিল গাছের মগডালের দিকে। তাঁরই মনোনয়নে তাঁরই সহপাঠী ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে সেনা-তাঁবেদার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা হয়।
ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। একজন সজ্জন, নিরীহ গোবেচারা মানুষ। ড. ইউনূুস তাঁর মাথায় কাঁঠাল রেখে কোয়া খেতে চেয়েছিলেন। তাঁর পরামর্শের চক্করে পড়ে ফখরুদ্দীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতে রাজি হয়েছিলেন এবং ওই পদে বসার কিছুদিনের মধ্যে বুঝতে পেরেছিলেন, ড. ইউনূস তাঁকে কোন ফাঁদে আটকে দিয়েছেন! তাঁকে সামনে শিখণ্ডি হিসেবে খাড়া করে ডিজিএফআইয়ের বারী-আমিন গোষ্ঠী দেশে যথেচ্ছাচার করেছে। ফখরুদ্দীন তাঁর প্রতিবাদ করার সাহস ও ব্যক্তিত্ব দেখাতে পারেননি। কেবল একটি নির্বাচন দিয়ে দ্রুত এই পদটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য দিন গুনছিলেন। তাতেও তিনি নিজেকে বাঁচাতে পারেননি, ড. ইউনূসের পরামর্শের ফাঁদে পা দিয়ে আজ তিনি ওয়ান-ইলেভেনের সব দুর্বৃত্তপনার জন্য দায়ী হয়ে দেশ ছেড়ে ওয়াশিংটনে গিয়ে প্রায় স্বেচ্ছা-নির্বাসিত জীবনযাপনে বাধ্য হয়েছেন।
মজার ব্যাপার এই যে ওয়ান-ইলেভেনের আবির্ভাব এবং সেই আমলের বিভীষিকাময় দিনগুলোর জন্য বিএনপি এখন তারস্বরে ড. ফখরুদ্দীন ও জেনারেল মইনের বিচার দাবি করছে। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের স্বপ্নদ্রষ্টাদের মধ্যে যিনি অন্যতম প্রধান এবং ওয়ান-ইলেভেনের সরকার গঠনের প্রধান রূপকার সেই ড. ইউনূসের বিচার দাবি করছে না। সংগতভাবেই এই প্রশ্নটি এখন ওঠে, ওয়ান-ইলেভেনের জন্য জেনারেল মইন ও ফখরুদ্দীন আহমদের বিচারের দাবি যদি তোলা হয়, তাহলে এই সরকারের যিনি প্রধান রূপকার, এমনকি এই সরকারের সমর্থনে (তাদের মাইনাস টু থিওরি বাস্তবায়নের জন্য) একটি রাজনৈতিক দল পর্যন্ত গঠন করতে চেয়েছিলেন, তাঁকে এই বিচারের অন্তর্ভুক্ত করা হবে না কেন?
বিএনপি এবং খালেদা জিয়া ড. ইউনূসের বিচার দাবি করছেন না। ওয়ান-ইলেভেন প্রসঙ্গে একবারও ড. ইউনূসের নাম মুখে আনছেন না। কারণ কী? কথায় বলে 'ভাদ্র বৌ ভাশুরের নাম মুখে আনে না।' ড. ইউনূস সম্পর্কে বিএনপির বর্তমান আচরণে এই প্রবাদটি সত্য মনে হয়। ড. ইউনূসকে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্ব ছাড়ার যে নির্দেশ দিয়েছে তা অর্থনৈতিক কারণে, কোনো রাজনৈতিক কারণে নয়। তাঁর বিরুদ্ধে আইনবহির্ভূতভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্বে থাকা এবং আরো নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ড. ইউনূস তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন। তাঁর হাইকোর্টের মামলা খারিজ হয়ে গেছে। তিনি এখন সুপ্রিম কোর্টে আপিলে যাচ্ছেন। এই বিচারাধীন বিষয়টিকেও বিএনপি রাজনৈতিক ইস্যু বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের সঙ্গে জুটেছে একটি তথাকথিত সুশীল সমাজ এবং তাদের ইংরেজি ও বাংলা দুটি 'নিরপেক্ষ' দৈনিক।
বিএনপি তথাকথিত সুশীল সমাজ ও দুটি নিরপেক্ষ দৈনিক_এই মিলিত অঙ্মি অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে ড. ইউনূসের বিষয়টিকে রাজনৈতিকীকরণের এবং শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারকে ঘায়েল করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে। আমি এই চেষ্টার মধ্যে ২০০১ সালের অক্টোবর-নির্বাচনপূর্ব চক্রান্ত ও চক্রীদের গন্ধ পাচ্ছি। এই অঙ্মি তাদের চক্রান্ত সফল করার জন্য দেশে বিদেশি হস্তক্ষেপও টেনে আনতে চাইছে। যা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্যও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।
দুর্ভাগ্যের ব্যাপার এই যে আওয়ামী লীগ সরকার, এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নিজেদের অবাঞ্ছিত কথাবার্তা দ্বারা চক্রান্তকারীদের ট্রাপে পা দিয়েছেন ও সরকারের জন্য এবং দেশের জন্যও এক বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন। আমি এবার দেশের মাটিতে পা রাখতেই ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক সংক্রান্ত বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কিছু লেখার জন্য অনুরুদ্ধ হয়েছিলাম। আমি বিষয়টি বিচারাধীন বলে লিখতে রাজি হইনি। তা সত্ত্বেও, গোড়াতেই বলেছি, দেশে পেঁৗছতেই ড. ইউনূস সংক্রান্ত বিতর্কে নয়, তাঁর মামলার ব্যাপারে একটা ছোট্ট নেপথ্য ভূমিকা গ্রহণে বাধ্য হয়েছিলাম। তখনই বুঝেছি একটি সম্মানজনক আপস-রফার পথে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিদায় নিতে চান না। তিনি সম্ভবত চান, তাঁর বিদেশি প্রভুদের সাহায্য ও সমর্থন আদায় করে হাসিনা সরকারকে একটা নাকে ডলা দিতে। তাতে বিদেশি হস্তক্ষেপে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নাকে ডলা খাক সেই বিবেচনা তাঁর নেই। এবার তাঁর মামলার ব্যাপারে আমার ছোট্ট নেপথ্য ভূমিকা ও তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাটা বলি।
(পরবর্তী অংশ আগামী মঙ্গলবার)
লন্ডন, ৩০ মার্চ, বুধবার, ২০১১
No comments