ভিনদেশের চিঠি-স্বপ্নে তাঁর সাথে হয় দেখা
ইউসিএলে (ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন) আন্তর্জাতিক শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ে পড়ার সময় ড. এমার সঙ্গে আমার একটু ভাব জমেছিল। পরে সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে সম্পর্কের কাটাকাটি হয়ে যায়। সেই সম্পর্ক আর জোড়া লাগেনি। তবে সেদিন রোববার ছুটির দিনে সকালবেলায় একটু বেশি ঘুমাতে গিয়ে অনেকদিন পর এমার সঙ্গে আমার একটা স্বর্গীয়সুন্দর সাক্ষাৎ হয়।
শুনুন তাহলে। দুপুরের খাবারের বিরতি চলছে। এমা প্রতিদিনের মতো ইনস্টিটিটিউট অব চাইল্ড হেলথের ক্যাফেটরিয়ায় না গিয়ে আমাকে বলল, আজ আমরা বাইরে কোথাও খাব। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায়? এমা একটু রহস্য করে জানাল, বলা যাবে না; আসতে থাকো। আমি ওর পিছে হাঁটতে হাঁটতে একসময় দেখলাম, আমরা হাইড পার্কের অনেক ভেতরে একটা অন্যরকম জায়গায় চলে এসেছি। আমি হাইড পার্কে বহুবার গিয়েছি কিন্তু এখন এমা আমাকে যেখানে নিয়ে এসেছে, এই জায়গাটা আমি আগে কখনো দেখিনি। নানান জাতের ফুল ও ফলের গাছগাছালিতে ভরা জায়গাটা পাখপাখালির কিচিরমিচিরে স্বপ্নের মতোই সুন্দর লাগল। এমা এবার মুচকি হেসে আমাকে বলল, তোমাকে নিয়ে বসলে তো শুধু ফলের জুস খেতে চাও, আজ যত ইচ্ছে ফল খাও, ফলই তোমার জন্য আজকের দুপুরের খাবার। আমি চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম, আমার পছন্দের ফল আফ্রিকান শ্যারনের একটা গাছে দেখা যাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে এমাকে জিজ্ঞেস করলাম কেউ কিছু বলবে না! এমা ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে আমাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি জানতে ইংল্যান্ডের রানি আমার রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়? আমি বললাম, হ্যাঁ শুনেছিলাম তো একবার। আচ্ছা, তো এবার জেনে রাখো, আমি হলাম রানির মেয়ে। এ কথাটা গোপনীয়, কাউকে জানাবে না। আমি আর কিছু না ভেবে বললাম, আচ্ছা এ কারণেই তুমি এত সুন্দর। রানি তাঁর মুকুট পরার ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে হাইড পার্কের এই সুন্দর জায়গাটা আমাকে লিখে দিয়েছেন। আমি এবার উচ্ছ্বসিত হয়ে—আচ্ছা তাহলে তো যত খুশি ফল খাওয়া যায় বলেই একটা একটা রসাল শ্যারন ছিঁড়ে খেতে থাকলাম। এমা কিছু খাচ্ছে না; হঠাৎ একটা শ্যারন ছিঁড়ে ওটা চাপ দিয়ে ও আমাকে দেখাল এর ভেতর বিশাল একটা বিচি; কিন্তু ওটা বিচি নয়। একটা টিস্যু দিয়ে বিচিটা মুছে এমা দেখাল ওটা একটা সোনার টুকরা। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কী করে সম্ভব? এমা বলল, ব্যাপার নয়, তুমিও পারবে। তোমার পছন্দের একটা নাও, তারপর ওটা না খেয়ে আমি যেভাবে চাপ দিলাম ওভাবে মাঝে ধরে চাপ দাও। আমি তাই করলাম এবং ভেতরের বড় বিচিটা টিস্যু দিয়ে মুছে দেখলাম ওটা একটা সোনার টুকরা। আমি কিছু ভাবতে যাওয়ার আগেই এমা বলল, সামনের দিকে আসতে থাকো...। আমি হাঁটতে থাকলাম। একটা বড় গাছের নিচে দাঁড়িয়ে এমা বলল, এই গাছটার গোড়া থেকে একটু মাটি তুলে দেখো কী পাওয়া যায়। আমি দেখলাম, একটা সিন্দুকের কোনা দেখা যাচ্ছে। আরও মাটি খুঁড়ে দেখলাম, একটা ছোট্ট কপাট আর ওটা ধরে টান দিতেই দেখলাম চকচকে টাকার বান্ডিলভর্তি সিন্দুক। এমা এবার বলল, কপাট লাগিয়ে দাও। আমি কপাট লাগিয়ে দিলাম। আমরা একটা বেঞ্চিতে বসলাম। এমা বলল, এ গাছটা যত বড় হবে ওটার নিচের সিন্দুকটাও তত বড় হবে আর টাকার পরিমাণও বাড়তে থাকবে। আমি এমাকে জিজ্ঞেস করলাম, এত টাকা দিয়ে তুমি কি করবে? এমা হাসল, তুমি না বলতে বাংলাদেশে তোমাদের গ্রামের বাড়ির নদীর পাড়ে একটা বিশাল শিশুস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট বানাবে। আমি বললাম, ঠিকই বলেছিলাম। এমা আরেকটু ভেবে বলল, আরও তো অনেক কথা বলেছিলে; বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রতি রাতে প্রতি মাসে অনেক সমস্যা, দুর্ঘটনা ঘটে আর তুমি তার সমাধান দেখতে চাও। আমি হ্যাঁ বলে এমাকে ব্যাখ্যা দিলাম, প্রতিদিন প্রতি রাতে সড়ক দুর্ঘটনা খুন, প্রতি মাসে অগ্নিকাণ্ড আর প্রতিবছর লঞ্চডুবি ও ভবনধস এসবের একটা স্থায়ী সমাধান আমি দেখতে চাই। এমা হেসে বলল, ভেবো না পারবে; তোমার চিন্তাগুলো এবার একটা পরিকল্পনার ফ্রেমে বেঁধে ফেলো। আচ্ছা, এর জন্য স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণার কাজ শিগগিরই শুরু করে দাও। আর তোমার টাকা যত লাগবে ওই সিন্দুক থেকে নিয়ে যাবে, জানো তো (?) এই সিন্দুকের টাকার মান বাইরের পাউন্ডের চেয়ে অনেক বেশি। আমি কিছু না ভেবে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু এর জন্য তো মিলিয়ন-মিলিয়ন টাকার দরকার। এমা ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে বলল, ব্যাপার নয় আরও দরকার হলে ওই গাছ থেকে সোনার টুকরা নিয়ে যাবে। আমি এমার দিকে তাকাতেই আমাদের একটু অন্যরকম চোখাচোখি হলো। ওকে আজ রাজকন্যার মতোই লাগছে। এমা আমার কাঁধে হাত রাখতেই ক্লাস শুরু হয়ে যাচ্ছে বলে তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালাম। আর সঙ্গে সঙ্গেই আমার ঘুমও ভেঙে গেল। জানালার পর্দা টেনে দেখলাম বাইরে টাটকা নীল রোদ, সময় সকাল ১১টা ১৮ মিনিট।
রাশেদুল ইসলাম, লন্ডন থেকে
rafi_b2004@yahoo.com
রাশেদুল ইসলাম, লন্ডন থেকে
rafi_b2004@yahoo.com
No comments