হিমাগারে আলুর পচন-কৃষক দায় নেবে কেন?

গোল আলু উৎপাদনে কৃষককে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উৎসাহ জোগানো হলেও এর বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণে যে নীতিনির্ধারকরা মনোযোগ দিচ্ছেন না, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় হিমাগারে রক্ষিত পাঁচ হাজার বস্তা আলু পচে যাওয়ার অঘটনে তা আরেকবার স্পষ্ট হলো।


শনিবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকের কমবেশি পৌনে দুই কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমাদের মনে আছে, ভরা মৌসুমে বাজারে আলুর দাম সস্তা থাকার খবর সমকালেই ছাপা হয়েছিল। দাম কম থাকা ভোক্তার জন্য স্বস্তিকর হলেও উৎপাদকের দিক থেকে দুঃসংবাদই বয়ে এনেছিল। উল্লাপাড়ার কৃষকদের জন্য আলু পচে যাওয়ার খবর এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা বিবেচিত হবে। আমরা মনে করি, এই ক্ষতির দায় কোনোভাবেই কৃষক বহন করতে পারে না। হিমাগারটির একজন কর্মকর্তা আলুর পচনের কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ সংকট, জেনারেটরের অভাব, স্টোরের র‌্যাক ভাঙা কিংবা ককপিট ড্যামেজের যে দীর্ঘ কাহিনী শুনিয়েছেন, তার দায় কৃষক নেবে কেন? আলু যাতে সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষিত হয়, সে জন্যই তো হিমাগারে গিয়ে অর্থের শ্রাদ্ধ করা! আমরা আশা করি, স্থানীয় প্রশাসন অবিলম্বে হিমাগার কর্তৃপক্ষের কাছে কৃষকের পক্ষে ক্ষতিপূরণ আদায় করবে। ভালো হয় হিমাগারগুলো যদি আগে থেকে আলু সংরক্ষণের নিশ্চয়তা প্রদান করে। একই সঙ্গে গোল আলু উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নীতিগত ধারাবাহিকতাও কাম্য। আমাদের মনে আছে, ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক আলু বর্ষ নিয়ে জাতীয়ভাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে যেন সেসব বেমালুম উবে গেছে। আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি বহুদিন ধরে তোলা হলেও, সেক্ষেত্রে সামান্য অগ্রগতিই পরিলক্ষিত হচ্ছে। এসব হিমাগারের অব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগগুলো যে অমূলক নয়, উল্লাপাড়াতেই তো তা প্রমাণ হলো। কৃষকের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাই হবে যথার্থ।
 

No comments

Powered by Blogger.