চার দিক-অনামিকা, তোমাকে বাঁচাবই by আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী
প্রতিদিনের মতো সকালে চেম্বারে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের পিআইসিইউ ইনচার্জ ফারজানা এসে আমাকে জানাল, ‘স্যার, পেডিয়াট্রিক আইসিইউতে (চওঈট) পাঁচ বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে অনামিকা ভর্তি আছে। ভর্তির সময় ওর লক্ষণগুলো—গুলেন বারি সিনড্রোমের (জিবিএস) মতো মনে হলেও পরে অ্যাকিউট স্ট্রোক সিনড্রোম, সেই সঙ্গে
নিউমোনিয়া রোগে বর্তমানে ভেন্টিলেটর মেশিনে লাইফ সাপোর্টে আছে।
‘ওর মা-বাবা আপনার সঙ্গে কথা বলতে চায়।’
সব কাজ বাদ দিয়ে দিনের শুরুটা অনামিকার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলা দিয়ে শুরু করলাম। তাঁরা জানালেন যে তাঁরা গরিব, এই চিকিৎসা চালানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়, তাঁরা মেশিন খুলে অনামিকাকে বাড়ি নিয়ে যাবেন। আমি চিকিৎসক হিসেবে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করলাম চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। কারণ এই চিকিৎসা বন্ধ করার ফল নিশ্চিত মৃত্যু। তাঁরা উপায়হীন। ‘আমরা বাড়িঘর বন্ধক দিয়ে কিছু টাকা নিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম। এখন আমাদের আর কিছুই করার নেই!’
এতক্ষণ হাসপাতালের প্রশাসক (পরিচালক) হিসেবে ধৈর্যসহ তাঁদের কথা শুনলাম, চিকিৎসক হিসেবে পাষাণ হূদয়ে সব ঘটনা বুঝলাম এবং ধরেই নিলাম যে তাঁরা রোগীকে বাড়ি নিয়ে যাবেন, পথে ছটফট করতে করতে অনামিকা মা-বাবার কাছ থেকে চিরদিনের মতো হারিয়ে যাবে...। কিন্তু হঠাৎ আমাদের (আমার ও নীতুর) ভালোবাসার ফসল, আমাদের প্রাণের অংশ, আমাদের সাত রাজার ধন, যার কলকাকলিতে সারা দিন আমার বাসা মাথায় উঠিয়ে রাখে আমাদের আড়াই বছরের সন্তান ঋজুর কথা মনে হতেই আমার চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। আর কোনোভাবেই নিজেকে সামলাতে পারলাম না। পাশে থাকা সহকর্মী চিকিৎসক রফিক ভাই, চিকিৎসক উজ্জ্বল ও বন্ধু সঞ্জীব স্তব্ধ! নিজেকে একটু সামলে অনামিকার মা-বাবাকে বললাম, ‘আপনারা চিন্তা করবেন না, ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা দেখছি। ওরা ধরেই নিয়েছিল, অনামিকা মারা যাচ্ছে, টাকা নেই এই অপরাধে! ভাবলাম, এত মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক, কেউ না কেউ আমাদের ডাকে সাড়া দেবেই। এটা আমার বিশ্বাস, কারণ এ দেশের মানুষের মন মানবতায় ভরপুর, আবেগপ্রবণ ও সহানুভূতিশীল। পাঁচ বছরের অনামিকার চিকিৎসায় যত টাকাই লাগুক—এ দেশের কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসার কাছে তা কিছুই নয়।
অনামিকার মা-বাবার হাতে আর টাকা নেই। টাকা দেওয়ার সামর্থ্যও নেই তাঁদের। আমরা আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালের পক্ষ থেকে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। ওর পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অক্সিজেন চালিয়ে নেওয়া, ওষুধপথ্য চলছে। ওর চিকিৎসার জন্য কত সাহায্য আসবে, তা আমরা জানি না। কিন্তু আশা করব, মেয়েটির চিকিৎসার খরচ তাতে উঠে যাবে। আমাদের তরফ থেকে যতটুকু ছাড় দেওয়া সম্ভব তা তো করবেই। তহবিল যা-ই হোক না কেন, মেয়েটি বেঁচে উঠলে আমরা চিকিৎসার খরচের পর যদি বাড়তি টাকা থাকে, তাহলে তা অনামিকার মা-বাবার হাতে তুলে দিতে চাই।
অনামিকা মহাখালীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক আইসিইউয়ের ১ নম্বর বিছানায় বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মো. মনির হোসেনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার জন্য পাঁচ-ছয় লাখ টাকা প্রয়োজন।
আমি যেমন ঋজুর বাবা হয়ে অনামিকার জন্য ভাবছি, জানি এমন অনেক বাবা-মা অনামিকার কথা ভাববেন। শোনার পর মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবেন না। কিছু একটা করবেন। আমি নিশ্চিত, আপনারা অনেকেই একজন চিকিৎসক ও বাবা হিসেবে আমার এই অনুরোধ রাখবেন। আমার আত্মবিশ্বাস, অনামিকার মা-বাবাকে জানানোর পর তাঁদের অশ্রুঝরা অবয়বে ছিল আনন্দের বার্তা। চাঁদপুরের মতলবের হতদরিদ্র মা-বাবাকে যদি কেউ একবার দেখেন, তাহলে আমার আর সাহায্যের জন্য অনুরোধ করতে হবে না। একজন চিকিৎসক হিসেবে আমার আবেদন আপনাদের একটু স্নেহ, একটু সাহায্য মৃত্যুপথযাত্রী ছোট্ট অনামিকাকে আবার প্রজাপতির মতো ফুলের বাগানে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ করে দেবে। অনামিকাকে দেখতে মহাখালীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চলে আসুন। তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করুন। মুঠোফোনে (০১৯১৯৩৭২৬৪৭) যোগাযোগ করতে পারেন। অনামিকাকে বাঁচানোর জন্য যে সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়েছে, তার খোঁজ পাবেন সেখানে। আমরা চিকিৎসকেরা এই দায়টুকু মাথা পেতে নিতে চাই।
‘ওর মা-বাবা আপনার সঙ্গে কথা বলতে চায়।’
সব কাজ বাদ দিয়ে দিনের শুরুটা অনামিকার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলা দিয়ে শুরু করলাম। তাঁরা জানালেন যে তাঁরা গরিব, এই চিকিৎসা চালানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়, তাঁরা মেশিন খুলে অনামিকাকে বাড়ি নিয়ে যাবেন। আমি চিকিৎসক হিসেবে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করলাম চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। কারণ এই চিকিৎসা বন্ধ করার ফল নিশ্চিত মৃত্যু। তাঁরা উপায়হীন। ‘আমরা বাড়িঘর বন্ধক দিয়ে কিছু টাকা নিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম। এখন আমাদের আর কিছুই করার নেই!’
এতক্ষণ হাসপাতালের প্রশাসক (পরিচালক) হিসেবে ধৈর্যসহ তাঁদের কথা শুনলাম, চিকিৎসক হিসেবে পাষাণ হূদয়ে সব ঘটনা বুঝলাম এবং ধরেই নিলাম যে তাঁরা রোগীকে বাড়ি নিয়ে যাবেন, পথে ছটফট করতে করতে অনামিকা মা-বাবার কাছ থেকে চিরদিনের মতো হারিয়ে যাবে...। কিন্তু হঠাৎ আমাদের (আমার ও নীতুর) ভালোবাসার ফসল, আমাদের প্রাণের অংশ, আমাদের সাত রাজার ধন, যার কলকাকলিতে সারা দিন আমার বাসা মাথায় উঠিয়ে রাখে আমাদের আড়াই বছরের সন্তান ঋজুর কথা মনে হতেই আমার চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। আর কোনোভাবেই নিজেকে সামলাতে পারলাম না। পাশে থাকা সহকর্মী চিকিৎসক রফিক ভাই, চিকিৎসক উজ্জ্বল ও বন্ধু সঞ্জীব স্তব্ধ! নিজেকে একটু সামলে অনামিকার মা-বাবাকে বললাম, ‘আপনারা চিন্তা করবেন না, ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা দেখছি। ওরা ধরেই নিয়েছিল, অনামিকা মারা যাচ্ছে, টাকা নেই এই অপরাধে! ভাবলাম, এত মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক, কেউ না কেউ আমাদের ডাকে সাড়া দেবেই। এটা আমার বিশ্বাস, কারণ এ দেশের মানুষের মন মানবতায় ভরপুর, আবেগপ্রবণ ও সহানুভূতিশীল। পাঁচ বছরের অনামিকার চিকিৎসায় যত টাকাই লাগুক—এ দেশের কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসার কাছে তা কিছুই নয়।
অনামিকার মা-বাবার হাতে আর টাকা নেই। টাকা দেওয়ার সামর্থ্যও নেই তাঁদের। আমরা আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালের পক্ষ থেকে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। ওর পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অক্সিজেন চালিয়ে নেওয়া, ওষুধপথ্য চলছে। ওর চিকিৎসার জন্য কত সাহায্য আসবে, তা আমরা জানি না। কিন্তু আশা করব, মেয়েটির চিকিৎসার খরচ তাতে উঠে যাবে। আমাদের তরফ থেকে যতটুকু ছাড় দেওয়া সম্ভব তা তো করবেই। তহবিল যা-ই হোক না কেন, মেয়েটি বেঁচে উঠলে আমরা চিকিৎসার খরচের পর যদি বাড়তি টাকা থাকে, তাহলে তা অনামিকার মা-বাবার হাতে তুলে দিতে চাই।
অনামিকা মহাখালীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক আইসিইউয়ের ১ নম্বর বিছানায় বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মো. মনির হোসেনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার জন্য পাঁচ-ছয় লাখ টাকা প্রয়োজন।
আমি যেমন ঋজুর বাবা হয়ে অনামিকার জন্য ভাবছি, জানি এমন অনেক বাবা-মা অনামিকার কথা ভাববেন। শোনার পর মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবেন না। কিছু একটা করবেন। আমি নিশ্চিত, আপনারা অনেকেই একজন চিকিৎসক ও বাবা হিসেবে আমার এই অনুরোধ রাখবেন। আমার আত্মবিশ্বাস, অনামিকার মা-বাবাকে জানানোর পর তাঁদের অশ্রুঝরা অবয়বে ছিল আনন্দের বার্তা। চাঁদপুরের মতলবের হতদরিদ্র মা-বাবাকে যদি কেউ একবার দেখেন, তাহলে আমার আর সাহায্যের জন্য অনুরোধ করতে হবে না। একজন চিকিৎসক হিসেবে আমার আবেদন আপনাদের একটু স্নেহ, একটু সাহায্য মৃত্যুপথযাত্রী ছোট্ট অনামিকাকে আবার প্রজাপতির মতো ফুলের বাগানে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ করে দেবে। অনামিকাকে দেখতে মহাখালীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চলে আসুন। তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করুন। মুঠোফোনে (০১৯১৯৩৭২৬৪৭) যোগাযোগ করতে পারেন। অনামিকাকে বাঁচানোর জন্য যে সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়েছে, তার খোঁজ পাবেন সেখানে। আমরা চিকিৎসকেরা এই দায়টুকু মাথা পেতে নিতে চাই।
No comments