সতর্ক বিজিবি, কমেছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ-পাকিস্তানির ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে দাঙ্গার কারণে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা গত কয়েক দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। গত ছয় দিনে সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে সীমান্তের নিরাপত্তারক্ষীরা মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছেন। এদিকে গতকাল বুধবার মাত্র তিনটি নৌকায় করে রোহিঙ্গারা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়।


এর মধ্যে একটি নৌকার ৩৯ জন রোহিঙ্গা সেন্টমার্টিন দ্বীপের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত ছেড়াদ্বীপে ঢুকতে সক্ষম হয়। তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। অন্য দুই নৌকায় ৭০ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঠেকিয়ে দিয়েছেন বিজিবি সদস্যরা।
এদিকে রোহিঙ্গারা সাগরপথে যাতে ঢুকতে না পারে, সে জন্য টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ থেকে উখিয়ার মনখালী হয়ে পুরো উপকূলীয় এলাকায় মাছধরা নৌযান চলাচলের ওপর অস্থায়ী বিধিনিষেধ আরোপ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। আর জাতিসংঘের আহ্বানে সীমান্ত জনপদের লোকজনের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
গতকাল কালের কণ্ঠে খবর প্রকাশের পর টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে অবস্থানকারী পাকিস্তানি নাগরিকের ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, গতকাল ভোরে ছেড়াদ্বীপে একটি নৌকা নিয়ে প্রবেশ করে ৩৯ জন রোহিঙ্গার একটি দল। আগের দিন গত মঙ্গলবার রোহিঙ্গাদের এ দলটি দ্বীপে ওঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত রাতের আঁধারে তারা দ্বীপের সর্বশেষ দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুল হক কালের কণ্ঠকে জানান, রোহিঙ্গার দলটি আসার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যরা। দ্বীপের মহিলা মেম্বার রোজিনা আকতারের একটি ঘরে এসব রোহিঙ্গাকে রাখা হয়েছে। তিনি আরো জানান, রোহিঙ্গা দলের সদস্য আমেনার গতকাল সন্ধ্যায় একটি পুত্রসন্তান হয়েছে।
দ্বীপের পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত সাব ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে জানান, যে নৌকা নিয়ে রোহিঙ্গারা দ্বীপে এসেছে সেটি পাথরের আঘাতে ফুটো হয়ে গেছে। তাই তাদের তাৎক্ষণিক নৌকায় তুলে ফিরিয়ে দেওয়াও সম্ভব হয়নি। আর দুপুরের দিকে প্রবল ঝড়-বাতাস শুরু হওয়ার কারণে সাগরও হয়ে ওঠে উত্তাল। তাদের আপাতত দ্বীপেই হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে উখিয়া ও টেকনাফ উপকূলে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। প্রতিটি বাহিনীর সদস্যরা সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করেছে। টেকনাফের উপকূলীয় বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরে ঝাউবাগানগুলোতে রোহিঙ্গারা সমুদ্রপথে রাতের অন্ধকারে অনুপ্রবেশ করে বার্মাইয়াপাড়ায় আত্মগোপন করছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। টেকনাফ ৪২ বিজিবির ক্যাপ্টেন কামরুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, গত ছয় দিনে সহস্রাধিক রোহিঙ্গা নাগরিককে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ওমর ফারুক চৌধুরী গতকাল দুপুরে সীমান্তের উখিয়ার বালুখালী, পালংখালী, রাহমতের বিল, তুমব্রু, ঘুমধুম এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি ওই সময় রোহিঙ্গার অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন।
পাকিস্তানি নাগরিকের ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ : টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে এনজিওর চাকরি করেন সেই পাকিস্তানি নাগরিক। এই পাকিস্তানির ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের টনক নড়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল কালের কণ্ঠে এ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর তাঁর ব্যাপারে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, পাকিস্তানি এই নাগরিক একসময় জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশনে কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি ওই চাকরি ছেড়ে চলে আসেন 'মুসলিম এইড' নামের একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে। টেকনাফ সীমান্তে ওই এনজিওর প্রকল্প রয়েছে। পাকিস্তানি এই নাগরিক টেকনাফ সীমান্তে ওই এনজিও দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন। ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে তিনি এনজিওতে চাকরি করে আসছিলেন। তিনি কক্সবাজারের টেকনাফে রয়েছেন টানা আট থেকে ৯ মাস। সীমান্তে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। মিয়ানমারের বিদ্রোহী জঙ্গি রাখাইনদের সংগঠন আরএসওর সদস্যদের সঙ্গে তাঁর সখ্য থাকারও খবর পাওয়া গেছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক কক্সবাজার এবং টেকনাফ ও উখিয়া প্রতিনিধি]

No comments

Powered by Blogger.