২০১২: যা কিছু ঘটবে by প্রাক-কথন

দ্য শুরু ২০১২ বছরটিতে পৃথিবীর কোন কোন ক্ষেত্রে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে, ২০১২ সালে পৃথিবী কোন দিকে এগোবে? কোন প্রযুক্তি বিপ্লব সৃষ্টি করবে চারদিকে, এমনই কিছু ব্যাপার নিয়ে এ লেখা। মধ্যপ্রাচ্য: সমস্যার মানচিত্র
গেল বছর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে লেগেছে জাগরণের ঢেউ। উত্তর আফ্রিকার তিউনিসিয়া, মিসর, লিবিয়ায় এ জাগরণ পতন ঘটিয়েছে তিন স্বৈরশাসকের। মধ্যপ্রাচ্যের ইয়েমেনেও জনতার দাবির কাছে নতিস্বীকার করেছেন স্বৈরশাসক আবদুল্লাহ


সালেহ। সিরিয়া, মিসরে অস্থিরতা এখনো বিরাজমান। তবে, এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে ইরান। বছরের শুরুতেই হরমুজ প্রণালিতে বিভিন্ন মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে ইরান নিজেদের শক্তি জাহির করেছে। মিসরে মোবারক সরকারের পতন হলেও স্থিতিশীলতা অনেক দূরের বিষয় মনে হচ্ছে। ২০১২ সালেও মিসরের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রচ্ছন্ন প্রভাব বিদ্যমান থাকবে। কারণ, মিসরের বিরোধী দল এখনো সেনাবাহিনীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ব্যাপারে সত্যিকারের সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। লিবিয়ায় দীর্ঘদিনের কেন্দ্রীভূত শাসনের কারণে, রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাঠামো গড়ে ওঠেনি। এনটিসি এখন ক্ষমতায় থাকলেও এ বছর নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন তাদের হতে হবে। দেশটির পূর্ব-পশ্চিম ভাগ ও বেদুইন উপজাতিদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বার্থের দ্বন্দ্ব ২০১২ সালে লিবিয়ার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটকে বিষিয়ে তুলতে পারে। ২০১১ সালের মাঝামাঝি থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিক্ষোভকারীদের ওপর নানা ধরনের দমন-পীড়ন শুরু করেছেন। এ বছরও এ দমন-পীড়ন চলতে থাকবে বলেই বিশ্লেষকদের মত। ইরানের প্রচ্ছন্ন সমর্থনে উন্মত্ত হয়ে উঠেছেন বাশার। তবে পাশের দেশ ইসরায়েল বুঝতে পেরেছে, দমন-পীড়ন চালিয়ে বাশার আল-আসাদ বেশি দূর যেতে পারবেন না। তারা ভয় পাচ্ছে, ইরান সিরিয়াকে মদদ জোগালেও বাশার আল-আসাদের পতনের পর সেখানে না আবার ইরানের মতো ইসলামি ঘরানার কট্টর কোনো সরকার ক্ষমতায় চলে আসে। সে ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব তো দূরের কথা অস্তিত্ব ধরে রাখাই কাল হবে ইসরায়েলের জন্য। এ বছরও পৃথক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র অনেক দূরের স্বপ্ন বলেই মনে হচ্ছে। লেবানন, ইরাক, ইয়েমেন—এ দেশগুলোও অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাবে। আর সৌদির রাজবংশ সব সময় শঙ্কায় থাকবে, তাদের দেশে মার্কিন-প্রভাবের কমবেশি নিয়ে। কারণ, সৌদি রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে মার্কিন মদদ যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

উত্তর কোরিয়া: সৌহার্দ্যের সূর্যের অপেক্ষায়
২০১১ সালের শেষপ্রান্তে এসে কিম জং-ইলের মৃত্যু কি সৌহার্দ্যের বাতাবরণ তৈরি করছে? তাঁর বিশের কোঠায় থাকা ছেলে কিম জং-উন দায়িত্ব নিয়ে পৃথিবী থেকে দূরে সরে থাকা এ দেশকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন রাতারাতি—এমন ভাবাটা অবশ্যই বাতুলতা। কিম জং-ইলের ছেলে নতুন যুগের হলেও, উত্তর কোরিয়ার সবকিছু একটি নির্দিষ্ট ধারায় গড়ে ওঠা। সেখানে সেনাবাহিনীর জেনারেলরা অনেক বেশি কট্টর। কিম জং-উনের যদি পৃথিবীর সঙ্গে সৌহার্দ্য গড়ার ইচ্ছা থাকেও, ওই জেনারেলরাই তাঁকে আপাতত আরও কিছুদিন সে ধরনের কোনো প্রচেষ্টা থেকে বিরত রাখবেন। দক্ষিণ কোরিয়া কিম জং-ইলের মৃত্যুর পরপরই পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট লি মিউং-বাক এখন দেশের ভেতর থেকেই উত্তরের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন নিয়ে সাধারণ দক্ষিণ কোরীয়দের চাপে রয়েছেন। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্র সবকিছুতে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়, তার ওপর।

চিকিৎসাবিজ্ঞান: উচ্চ রক্তচাপের বিদায়!
উচ্চ রক্তচাপ আপনার আয়ু কমিয়ে দেয় কিংবা তাড়াতাড়ি বয়স বাড়িয়ে দেয়, এ রোগকে যেভাবে ইচ্ছা চিত্রিত করতে পারেন। কিন্তু আসল কথা হলো, উচ্চ রক্তচাপ সত্যিকার অর্থেই মানুষের অজস্র শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টিকর্তা। উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, হূদ্যন্ত্রের সমস্যা ইত্যাদি এখন নিত্ত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে এ উচ্চ রক্তচাপকে বাগে আনতে পারলেই অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। ২০১২ সালে এ উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ে একটি বৈপ্লবিক কিছু করে ঘটিয়ে ফেলতে পারেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা।
সেই তিরিশের দশক থেকেই চিকিৎসকেরা একটি বিষয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। তাঁরা গবেষণা করে দেখেছেন, যকৃতের আশপাশে এমন কিছু স্নায়ু রয়েছে, যেগুলোকে কেটে বাদ দিলে রক্তচাপ সহনীয় পর্যায়ে চলে আসে। কিন্তু গবেষণাটি মূলত এখান থেকেই শুরু হয়েছে। এত বছরেও সেই স্নায়ুগুলোকে কেটে বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি বিজ্ঞানীদের পক্ষে। কারণ, ওই স্নায়ুগুলোর অনুপস্থিতি মানুষের আরও কিছু ভয়াবহ শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন, অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া, প্রজননক্ষমতাহানি ইত্যাদি। তবে ২০১০ সাল থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এ স্নায়ুগুলোকে মেরে ফেলার অনেক কম আক্রমণাত্মক পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন। বৈদ্যুতিক রশ্মির সাহায্যে ওই স্নায়ুকে মেরে ফেলে বা স্নায়ুর বাড়-বাড়ন্ত বন্ধ করে দিয়ে। ২০১১ সালের শেষ নাগাদ এতে এসেছে যুগান্তকারী সাফল্য। ১০৬ জন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, এ পদ্ধতি ৮৪ শতাংশ রোগীর রক্তচাপ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই সহনীয় মাত্রায় নেমে আসে। বাকিদের ক্ষেত্রে রক্তচাপ বেশি না নামলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। ফ্রান্সের ইউরোপিয়ান-জর্জেস-পাম্পিডু হাসপাতালে এ বিষয়ে সফল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এ বছরের মধ্যেই চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে আসা যাবে বলে আশাবাদী প্যারিসের সেই হাসপাতালের গবেষকেরা। সুতরাং ২০১২ সাল, তৈরি থাকো, উচ্চ রক্তচাপকে গুডবাই জানাতে!

কাগুজে নোটের বিদায়!
কেনাকাটা করতে ক্রেডিট কার্ড আছে, ডেবিট কার্ড আছে, ইলেকট্রনিক মানিব্যাগ বা ওয়ালেটের কথা শোনা যাচ্ছে অনেক দিন ধরেই। অর্থাৎ, আপনি সুপার শপে কেনাকাটা করতে যাবেন, কোনো কাগুজে মুদ্রা ছাড়াই। এ জন্য আপনার প্রয়োজন হবে কেবল একটি স্মার্টফোনের। এ বছরের মধ্যে আপনার স্মার্টফোনটিই ব্যবহূত হবে একটি ই-ওয়ালেট হিসেবে।
ই-ওয়ালেট আসলে কী? এটি কিন্তু ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডেরই আরও আধুনিক সংস্করণ। সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগল ‘গুগল ওয়ালেট’ নামে একটি মোবাইল ওয়ালেট সার্ভিস চালু করেছে। গুগলের সঙ্গে জুটি বেঁধেছে সিটিব্যাংক এনএ। মাস্টারকার্ড প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় এ সেবা এ মুহূর্তে দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে। এ সেবা ব্যবহার করলে আপনি ঘরে বসেই বিভিন্ন পণ্য মুঠোফোনের মাধ্যমে কিনে তার দাম অনলাইনে পরিশোধ করে দিতে পারবেন। এ সেবাটি যে গতিতে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে, তাতে খুব সম্ভবত এ বছরের মধ্যেই কাগুজে নোটের ব্যবহার আরও এক দফা কমে যাবে। ২০১২ সাল হয়তো হবে ই-মানিব্যাগের সাল।
 টাইম সাময়িকী অবলম্বনে নাইর ইকবাল

No comments

Powered by Blogger.