২০১২ পৃথিবী ধ্বংসের বছর!
হঠাৎ দুলে উঠবে পৃথিবী। বদলে যাবে আহ্নিক গতি। ঘুরতে শুরু করবে উল্টো দিকে! উত্তর মেরু চলে যাবে দক্ষিণ মেরুতে, দক্ষিণ মেরু উত্তর মেরুতে। পশ্চিম দিকে অস্ত নয়, উদয় হবে সূর্যের! নড়তে শুরু করবে মহাদেশীয় প্লেটগুলো। ফুঁসে উঠবে মৃত, সুপ্ত, অর্ধসুপ্ত—সব আগ্নেয়গিরি। দেখা দেবে প্রবল জলোচ্ছ্বাস। বেড়ে যাবে সূর্যের উত্তাপ; উত্তাপ বাড়বে পৃথিবীরও। গলিত লাভার মতো গলে যেতে শুরু করবে পৃথিবীর ভূখণ্ড। পৃথিবীকে লক্ষ্য করে ধেয়ে আসবে এক
গ্রহ—‘নিবিরু’। ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর, পৃথিবীর ভাগ্যললাটে লেখা একটাই শব্দ—মৃত্যু! ওই দিনই ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের মায়া-ভালোবাসা, লোভ-ঘৃণা, পাপ-পুণ্যের এই নীল-সবুজ পৃথিবী!
পৃথিবী ধ্বংসের পূর্বাভাস নতুন নয়। নতুন হলো, আবারও এমন একটা গুঞ্জন পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া। এবার মূলত দুটো কল্পিত ধারণার ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীর শেষ দিন ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাচ্ছে মায়া বর্ষপঞ্জির। ২৫০ থেকে ৯০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার বিশাল অঞ্চলজুড়ে বিকাশ লাভ করেছিল এই মায়া সভ্যতা। এই সভ্যতার আরও অনেক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে এর কয়েক হাজার বছর ধরে চলা বর্ষপঞ্জি। দক্ষিণ আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের আগে এই বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করত এ অঞ্চলের মানুষ। পরে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি চালু হয়ে যায়। সেই বিখ্যাত মেসোঅ্যামেরিকান লং কাউন্ট ক্যালেন্ডার পাঁচ হাজার ১২৫ বছরের বৃত্ত শেষ করছে এ বছরের ২১ ডিসেম্বর।
এর থেকে রটে গেছে, ২০১২ সালের এই ২১ ডিসেম্বর আসলে পৃথিবীরও শেষ দিন। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে সুমেরীয়দের আবিষ্কৃত গ্রহ নিবিরু আর পৃথিবীর কক্ষপথ এই রেখায় চলে আসার তত্ত্ব। এ দুই গ্রহের মুখোমুখি সংঘর্ষ হবে; পুরোপুরি না হলেও পৃথিবীর একটা অংশ ছুঁয়ে যাবে। তা ছাড়া নিবিরু পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসার ফলে দুই গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ঘাত-প্রতিঘাত পৃথিবীর গতিতেও এনে দেবে পরিবর্তন। কেউ কেউ প্রমাণ হিসেবে নাসার একটি পূর্বাভাসকেও ব্যবহার করছে। যেখানে বলা হচ্ছে, ২০১২ সালে সূর্য তুলনামূলকভাবে বেশি উত্তপ্ত থাকবে। এ সময় ‘সোলার ফ্লেয়ার’ বা সূর্যের মধ্যে বিস্ফোরণের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
‘এন্ড অব ওয়ার্ল্ড ২০১২’ লিখে গুগল-দৈত্যের প্রদীপে ঘষা মারলে সঙ্গে সঙ্গে পাঁচ কোটি ৪৫ লাখ ভুক্তির হদিস পাওয়া যাচ্ছে। এ-সংক্রান্ত ভিডিও যদি খুঁজতে চান, ইউটিউব আপনার কাছে এনে হাজির করবে ৯৬ হাজার পোস্ট! হুট করে পৃথিবী ধ্বংসের এই গুজবকে আরও উসকে দিয়েছে ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া ২০১২ নামের একটি ছবি। যেখানে দেখানো হয়েছে, সূর্যের উত্তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর কেন্দ্রের উত্তাপও ভয়ংকরভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে গলে যাচ্ছে পৃথিবীর ভূখণ্ড। পৃথিবীতে আর ভূখণ্ড বলে কিছু থাকছে না। পুরো পৃথিবী তলিয়ে যাচ্ছে পানির নিচে। ওই ছবির প্রচার-প্রচারণায় মায়া বর্ষপঞ্জির শেষ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি ব্যবহার করা হয়েছে জোরালোভাবে।
এখনই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নাসার কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে। কেউ কেউ এমনও মন্তব্য করেছেন, ওই বিভীষিকা শুরুর আগেই তাঁরা সপরিবারে আত্মহত্যা করবেন! ভেবে দেখুন অবস্থাটা। বাধ্য হয়ে নাসা এ নিয়ে একটি বিশেষ ওয়েবসাইট খুলে সেখানে বৈজ্ঞানিক যুক্তিতর্ক দিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করছে, পৃথিবী অন্তত এ বছরেই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই।
প্রথমত, মায়া বর্ষপঞ্জির ব্যাপারটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। নিউইয়র্কের কোলগেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মায়া সভ্যতার বিশেষজ্ঞ ডেভিড স্টুয়ার্ট বলেছেন, মায়ার লম্বা বর্ষপঞ্জি শেষ হয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পরের দিন শেষে আবারও মায়ার লম্বা বর্ষপঞ্জির নতুন যাত্রা শুরু হবে; ঠিক যেমন এবার ৩১ ডিসেম্বর শেষে আমরা ঘরের দেয়ালে পুরোনো বর্ষপঞ্জি ফেলে দিয়ে নতুন বর্ষপঞ্জি টানিয়ে দিয়েছি। নিবিরু নামের কল্পিত সেই গ্রহের সঙ্গে পৃথিবীর সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছে নাসা। নাসার অ্যাস্ট্রোবায়োলজির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ডেভিড মরিসন বলেছেন, ‘এ ধরনের কোনো কিছুর অস্তিত্বই নেই।’
মরিসন অবশ্য স্বীকার করেছেন, এ বছর সোলার ফ্লেয়ার একটু বেশি হবে। তবে তাতে পৃথিবী ধ্বংসটংস নয়, বড়জোর সমস্যা হতে পারে স্যাটেলাইট যোগাযোগের ক্ষেত্রে।
রাজীব হাসান
তথ্য: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, নাসা, উইকিপিডিয়া, এবিসি।
পৃথিবী ধ্বংসের পূর্বাভাস নতুন নয়। নতুন হলো, আবারও এমন একটা গুঞ্জন পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া। এবার মূলত দুটো কল্পিত ধারণার ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীর শেষ দিন ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাচ্ছে মায়া বর্ষপঞ্জির। ২৫০ থেকে ৯০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার বিশাল অঞ্চলজুড়ে বিকাশ লাভ করেছিল এই মায়া সভ্যতা। এই সভ্যতার আরও অনেক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে এর কয়েক হাজার বছর ধরে চলা বর্ষপঞ্জি। দক্ষিণ আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের আগে এই বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করত এ অঞ্চলের মানুষ। পরে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি চালু হয়ে যায়। সেই বিখ্যাত মেসোঅ্যামেরিকান লং কাউন্ট ক্যালেন্ডার পাঁচ হাজার ১২৫ বছরের বৃত্ত শেষ করছে এ বছরের ২১ ডিসেম্বর।
এর থেকে রটে গেছে, ২০১২ সালের এই ২১ ডিসেম্বর আসলে পৃথিবীরও শেষ দিন। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে সুমেরীয়দের আবিষ্কৃত গ্রহ নিবিরু আর পৃথিবীর কক্ষপথ এই রেখায় চলে আসার তত্ত্ব। এ দুই গ্রহের মুখোমুখি সংঘর্ষ হবে; পুরোপুরি না হলেও পৃথিবীর একটা অংশ ছুঁয়ে যাবে। তা ছাড়া নিবিরু পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসার ফলে দুই গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ঘাত-প্রতিঘাত পৃথিবীর গতিতেও এনে দেবে পরিবর্তন। কেউ কেউ প্রমাণ হিসেবে নাসার একটি পূর্বাভাসকেও ব্যবহার করছে। যেখানে বলা হচ্ছে, ২০১২ সালে সূর্য তুলনামূলকভাবে বেশি উত্তপ্ত থাকবে। এ সময় ‘সোলার ফ্লেয়ার’ বা সূর্যের মধ্যে বিস্ফোরণের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
‘এন্ড অব ওয়ার্ল্ড ২০১২’ লিখে গুগল-দৈত্যের প্রদীপে ঘষা মারলে সঙ্গে সঙ্গে পাঁচ কোটি ৪৫ লাখ ভুক্তির হদিস পাওয়া যাচ্ছে। এ-সংক্রান্ত ভিডিও যদি খুঁজতে চান, ইউটিউব আপনার কাছে এনে হাজির করবে ৯৬ হাজার পোস্ট! হুট করে পৃথিবী ধ্বংসের এই গুজবকে আরও উসকে দিয়েছে ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া ২০১২ নামের একটি ছবি। যেখানে দেখানো হয়েছে, সূর্যের উত্তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর কেন্দ্রের উত্তাপও ভয়ংকরভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে গলে যাচ্ছে পৃথিবীর ভূখণ্ড। পৃথিবীতে আর ভূখণ্ড বলে কিছু থাকছে না। পুরো পৃথিবী তলিয়ে যাচ্ছে পানির নিচে। ওই ছবির প্রচার-প্রচারণায় মায়া বর্ষপঞ্জির শেষ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি ব্যবহার করা হয়েছে জোরালোভাবে।
এখনই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নাসার কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে। কেউ কেউ এমনও মন্তব্য করেছেন, ওই বিভীষিকা শুরুর আগেই তাঁরা সপরিবারে আত্মহত্যা করবেন! ভেবে দেখুন অবস্থাটা। বাধ্য হয়ে নাসা এ নিয়ে একটি বিশেষ ওয়েবসাইট খুলে সেখানে বৈজ্ঞানিক যুক্তিতর্ক দিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করছে, পৃথিবী অন্তত এ বছরেই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই।
প্রথমত, মায়া বর্ষপঞ্জির ব্যাপারটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। নিউইয়র্কের কোলগেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মায়া সভ্যতার বিশেষজ্ঞ ডেভিড স্টুয়ার্ট বলেছেন, মায়ার লম্বা বর্ষপঞ্জি শেষ হয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পরের দিন শেষে আবারও মায়ার লম্বা বর্ষপঞ্জির নতুন যাত্রা শুরু হবে; ঠিক যেমন এবার ৩১ ডিসেম্বর শেষে আমরা ঘরের দেয়ালে পুরোনো বর্ষপঞ্জি ফেলে দিয়ে নতুন বর্ষপঞ্জি টানিয়ে দিয়েছি। নিবিরু নামের কল্পিত সেই গ্রহের সঙ্গে পৃথিবীর সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছে নাসা। নাসার অ্যাস্ট্রোবায়োলজির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ডেভিড মরিসন বলেছেন, ‘এ ধরনের কোনো কিছুর অস্তিত্বই নেই।’
মরিসন অবশ্য স্বীকার করেছেন, এ বছর সোলার ফ্লেয়ার একটু বেশি হবে। তবে তাতে পৃথিবী ধ্বংসটংস নয়, বড়জোর সমস্যা হতে পারে স্যাটেলাইট যোগাযোগের ক্ষেত্রে।
রাজীব হাসান
তথ্য: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, নাসা, উইকিপিডিয়া, এবিসি।
No comments