আস্থা ভোট ও শুনানি আজ-পার্লামেন্ট আর সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে জারদারি-গিলানি

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি তাঁদের সরকারের ভাগ্য জানার জন্য আজ সোমবার তাকিয়ে থাকবেন দেশের সুপ্রিম কোর্ট ও পার্লামেন্টের দিকে। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে আজ অনুষ্ঠিত হবে সরকারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে আস্থাভোট।


যুক্তরাষ্ট্রকে পাঠানো বিতর্কিত গোপন চিঠির বিষয়টির তদন্ত এবং প্রেসিডেন্ট জারদারিসহ অন্যদের দুর্নীতি মামলার বিষয়ে আজ শুনানি হবে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে। উভয় শুনানি থেকে জারদারি-গিলানি সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা আসতে পারে।
সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে নিজেদের ওপর দেশের জনগণের আস্থার প্রমাণ দিতে পার্লামেন্টে আস্থাভোটের ব্যবস্থা করেছে সরকার নিজেই। এর আগে গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী গিলানি পার্লামেন্টে বলেছেন, দেশে গণতান্ত্রিক সরকার থাকবে, নাকি আবার সামরিক শাসন শুরু হবে, পার্লামেন্টে সেই সিদ্ধান্ত হবে সোমবার। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আস্থাভোটে নিজের সরকারকে রক্ষা করতে পারবেন গিলানি।
২০০৭ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের সরকার ন্যাশনাল রিকনসিলেশন অর্ডিন্যান্সের (এনআরও) মাধ্যমে একটি সাধারণ দায়মুক্তি ঘোষণা করে। এর ফলে প্রেসিডেন্ট জারদারিসহ শত শত রাজনৈতিক নেতা দুর্নীতিসহ অন্যান্য অভিযোগ থেকে মুক্তি পান। সবচেয়ে লাভবান হন জারদারি। তিনি সুইজারল্যান্ডের আদালতে দায়ের হওয়া অর্থ পাচার মামলা থেকে অব্যাহতি পান।
কিন্তু এর দুই বছর পরই সুপ্রিম কোর্ট ওই অধ্যাদেশটি খারিজ করে দেন এবং জারদারির বিরুদ্ধে মামলাটি আবার চালু করার জন্য সুইজারল্যান্ড কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিতে সরকারকে বলেন। কিন্তু তাতে অস্বীকৃতি জানায় গিলানির পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সরকার। সরকারের বক্তব্য, প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক দায়মুক্তি আছে।
এ অবস্থায় ১০ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ বলেন, গিলানি সংবিধানের পরিবর্তে নিজের রাজনৈতিক দলের প্রতিই আনুগত্য দেখিয়েছেন। তিনি সম্মানিত মানুষ নন। তিনি তাঁর সাংবিধানিক শপথ ভঙ্গ করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট ১৬ জানুয়ারি সময়সীমা বেঁধে দিয়ে জারদারির বিরুদ্ধে মামলাটি আবার চালু করার পদক্ষেপ নিতে বলেন। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে গিলানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন আদালত। তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। একই পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধেও। ১৬ জানুয়ারি শুনানির দিনে এনআরও বিষয়ে সরকারের বক্তব্য তুলে ধরতে অ্যাটর্নি জেনারেল আনোয়ার-উল-হকের প্রতি নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে সম্ভাব্য সেনা-অভ্যুত্থান প্রতিহত এবং সেনাবাহিনীর ক্ষমতা কাটছাঁট করতে সহযোগিতা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পাঠানো গোপন চিঠির বিষয়টির তদন্ত নিয়েও আজ সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হবে। বিষয়টি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত অভিহিত করে বিচার বিভাগীয় নিরপক্ষে তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে সম্প্রতি আবেদন করেন সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানি। আদালত তাঁর আবেদন গ্রহণ করে আজ ১৬ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেন।
ফলে সুপ্রিম কোর্টে আজ এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ শুনানির ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে বেসামরিক নেতৃত্বের সম্পর্কের টানাপোড়েনের ভবিষ্যৎ গতিবিধি। যদিও এই দ্বন্দ্ব প্রশমিত করতে দুই দিন আগে সরকারের পক্ষ থেকে বড় ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। শনিবার সেনাপ্রধান কায়ানির সঙ্গে বৈঠক করে প্রেসিডেন্ট জারদারি ও প্রধানমন্ত্রী গিলানি জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন। প্রশংসা করেছেন সেনাবাহিনীর।
বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন না গিলানি: এদিকে প্রধানমন্ত্রী গিলানি সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দাপ্রধান সম্পর্কে তাঁর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এমনকি ওই বক্তব্যের জন্য কোনো ব্যক্তির কাছে জবাবদিহি করতেও রাজি নন তিনি। গতকাল ভিহারি শহরে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন। গিলানি বলেন, ‘সংবিধানের ৯১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শুধু পার্লামেন্টের কাছেই জবাবদিহি করতে বাধ্য। অন্য কারও কাছে নন।’
এর আগে গত শনিবার প্রেসিডেন্ট জারদারির সঙ্গে বৈঠকে সেনাপ্রধান কায়ানি দেশটির সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হবে, তা না হলে তা প্রত্যাহার করে নিতে নির্দেশ দিতে প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ জানান কায়ানি। এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.