‘আমার বাইচ্চাটারে আইন্না দিলাও’

জঙ্গি আস্তানা বলে সন্দেহে থাকা ‘আতিয়া মহলে’ আটকা মেয়ে আর জামাতা। বাইরে অজানা আশঙ্কায় বুক ধড়ফড় করছে বাবা আর মায়ের। মা সাফিয়া বেগম কাঁদছেন আর বলছেন, ‘আমার বাইচ্চাটারে আইন্না দিলাও। আমার নাতিন নওশডারে আইন্না দিলাও।’ বাবা নূর মিয়াও অস্থির, ব্যাকুল। গতকাল শুক্রবার থেকে কাটছে তাঁদের এই প্রতীক্ষার প্রহর। নূর মিয়া বলেন, তাঁর মেয়ে রুমি বেগম। জামাতা খলকু মিয়া সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়ে। রুমির সঙ্গে রুমির ছোট বোনও রয়েছে। আতিয়া মহলে নিচতলায় একটি ফ্ল্যাট থাকে মেয়ের পরিবার। এখনো তিনি মেয়ের পরিবারের কাউকে পাননি। পুলিশের ধারণা, আতিয়া মহল নামের বাড়িটির নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা অবস্থান করছে। ভেতরে একজন নারী থাকার কথা নিশ্চিত হলেও মোট কতজন আছে, সেটা জানা যায়নি। পুলিশের ধারণা, ভেতরে নব্য জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ নেতা মাইনুল ওরফে মুসা রয়েছেন। আতিয়া মহল নামের পাঁচতলা ওই বাড়িতে মোট ২৯টি ফ্ল্যাট রয়েছে। নূর মিয়া দাবি করেন, এক ঘণ্টা (বেলা সোয়া একটা) আগে মেয়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়। জানিয়েছে, তাঁরা ভালো আছেন।
তবে এখনো নিজেদের ফ্ল্যাটেই আটকা আছেন। বেলা দুইটার দিকে আতিয়া মহল থেকে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের যখন শব্দ আসছিল, তখন চোখে-মুখে অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে নূর মিয়া ও সাফিয়া বেগমের। মেয়ের পরিবারকে নিরাপদে ফিরে পাবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা। জঙ্গিরা অবস্থান করছে—এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে পাঁচতলা বাড়িটি ঘেরাও করে পুলিশ। গতকাল দিনভর বারবার মাইকে আহ্বান জানিয়েও ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করাতে পারেনি পুলিশ। উল্টো ভেতর থেকে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। অভিযান চালাতে ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটের একটি দল গতকাল বিকেলে সিলেটে পৌঁছায়। রাতভর বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। গতকাল সন্ধ্যার পর সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি ঘটনাস্থলে যায়। আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে দায়িত্ব পালনরত পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল আতিয়া মহল নামের ওই বাড়ির বাসিন্দাদের বের করে আনছে। আতিয়া মহল ও তার পাশের আতিয়া মহল ২ নামের আরেকটি ভবনের মাঝখানে ফায়ার সার্ভিসের মই দিয়ে সেতু তৈরি করা হয়েছে। এই পথে সেনাবাহিনীর সহায়তায় বাসিন্দাদের বের করা হচ্ছে। এ সময় ফায়ার সার্ভিসকে বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেখা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.