ধনীদের জন্য পয়মন্ত ২০১৬ সাল!
২০১৬ সালে বিশ্ব অর্থনীতি সার্বিকভাবে মন্দা সময় পার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া, জ্বালানি তেলের পড়তি দামসহ নেতিবাচক খবরের শেষ ছিল না। এত কিছুর পরও বিলিয়নিয়ার বা শীর্ষ কোটিপতিদের জন্য বছরটা ছিল পয়মন্ত। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস-এর ‘শীর্ষ ধনী ২০১৭’ তালিকা বলছে, গত এক বছরে সারা বিশ্বে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ১৩ শতাংশ বেড়েছে। আর এ তালিকায় যথারীতি শীর্ষে আছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। ফোর্বস-এর শীর্ষ ধনীর তালিকা প্রকাশ শুরু হওয়ার পর থেকে গত ৩১ বছরে এই প্রথম বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে বিশ্বে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ২ হাজার ৪৩, যা এক বছর আগে ছিল ১ হাজার ৮১০। এ দুই হাজার ব্যক্তির সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ৭ লাখ ৬৭ হাজার কোটি মার্কিন ডলার বা ৭ দশমিক ৬৭ ট্রিলিয়ন ডলার।
এক বছরে শীর্ষ ধনীদের সম্পদ বেড়েছে ১৮ শতাংশ। স্থানের অদলবদল ছাড়া শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকায় এ বছর তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। বিল গেটসের পরে এ তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছেন যথাক্রমে বিনিয়োগ-গুরু ওয়ারেন বাফেট ও অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। চার নম্বরে আছেন স্পেনের অ্যামানসিও ওর্তেগা, পাঁচ নম্বরে ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। শীর্ষ দশে থাকা অন্যরা হলেন যথাক্রমে কার্লোস স্লিম হেলু, ল্যারি এলিসন, চার্লস কচ, ডেভিড কচ ও মাইকেল ব্লুমবার্গ। চার্লস কচ ও ডেভিড কচের সম্পদের পরিমাণ একই হওয়ায় তাঁরা যৌথভাবে আট নম্বরে রয়েছেন। শীর্ষ ১০ ধনীর আটজনই যুক্তরাষ্ট্রের, একজন স্পেনের, আরেকজন মেক্সিকোর। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বিল গেটসের সম্পদের পরিমাণ এক বছরে এক হাজার কোটি ডলার বেড়েছে। গত বছর তাঁর মোট সম্পদ ছিল ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার, যা এ বছর হয়েছে ৮ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। গত ২৩ বছরের মধ্যে ১৮ বারই তিনি ফোর্বস-এর শীর্ষ ধনী নির্বাচিত হয়েছেন। অর্থাৎ, শীর্ষ ধনী হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে তাঁর ধারেকাছে কেউ নেই। ওয়ারেন বাফেটের জন্যও গত বছরটা বেশ ভালো কেটেছে। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৭ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার। এক বছরে বাফেটের সম্পদ বেড়েছে ১ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার। বাফেটের সম্পদের এ বৃদ্ধি অ্যামানসিও ওর্তেগাকে সরিয়ে দ্বিতীয় স্থান দখলের জন্য ছিল যথেষ্ট। তবে সম্পদ বৃদ্ধিতে গত এক বছরে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন ই-কমার্স ওয়েবসাইট অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস।
তাঁর সম্পদ গত এক বছরে বেড়েছে ২ হাজার ৭৬০ কোটি ডলার। শীর্ষ তিনে উঠে আসা বেজোস গত বছর ছিলেন পাঁচ নম্বরে। দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ স্থানে নেমে যাওয়া বস্ত্র ব্যবসায়ী অ্যামানসিও ওর্তেগার জন্য গত বছরটি খারাপ কাটেনি। এ সময়ে তাঁর সম্পদ বেড়েছে ৪৩০ কোটি ডলার। তবে বাফেট বা বেজোসের মতো লক্ষ্মী বৃদ্ধি না পাওয়ায় এবার তিনি একটু পিছিয়ে পড়েছেন। ফোর্বস-এর সেরা ১০ ধনীর তালিকায় গত বছর প্রথম উঠে আসেন ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। ৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলার সম্পদের মালিক জাকারবার্গ এ বছর রয়েছেন পাঁচ নম্বরে। ৪ হাজার ৪৬০ কোটি ডলার নিয়ে গতবার তিনি ছিলেন ষষ্ঠ স্থানে। এবারের তালিকায় ছয় নম্বরে থাকা মেক্সিকোর কার্লোস স্লিম হেলুর সম্পদও গত এক বছরে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার বেড়েছে। গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন এ বছরও আগের মতোই তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছেন। তবে এ বছর তাঁর সম্পদ বেড়েছে ৮৬০ কোটি ডলার। যৌথভাবে অষ্টম স্থানে থাকা কচ ভাইদের সম্পদও গত এক বছরে ৯৭০ কোটি ডলার বেড়েছে। আর আট থেকে দশে নেমে যাওয়া মাইকেল ব্লুমবার্গের সম্পদও গত এক বছরে ৭৫০ কোটি ডলার বেড়েছে।
No comments