বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুনে জড়িত সরকার: বিএনপি

বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩-১৪ তলায় অগ্নিকাণ্ড ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ অভিহিত করে এর সঙ্গে ক্ষমতাসীনরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। শুক্রবার এক আলোচনা সভায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৪ তলা, ১৩ তলা, ১২ তলায় আগুন ধরে গেল। বাহ! যেখানে রেমিটেন্স, যেখানে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের ব্যাপার, ঠিক ওই জায়গায় আগুন ধরে গেল। যে তলাতে আমাদের পলিসি এবং নীতি, যেটা ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার জরুরি জায়গা, সেখানে আগুন ধরে গেল। এটা কি খামোখা আগুন ধরেছে? আকস্মিকভাবে আগুন ধরেছে? আপনারা তো অনেকে কথা বলেন, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট। এগুলো কিছুই না। সরকারই জড়িত, শাসক দলই জড়িত।’ পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে স্বাধীনতা ফোরামের উদ্যোগে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর শিরোনাম ছিল ‘১৯৮২ সালে ২৪ মার্চ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে এইচএম এরশাদের ক্ষমতা দখলের কালো দিবস’। সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন,
সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম প্রমুখ। এক বছর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, এর কাগজপত্র ও বিভিন্ন ডকুমেন্টস পুড়িয়ে ছাই করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ১৩-১৪ তলায় আগুন লাগানো হয়েছে। না হলে গুরুত্বপূর্ণ পলিসি ও নীতির কক্ষে আগুন ধরবে কেন, পুড়ে যাবে কেন। এটা শুধু রহস্যজনক নয়, এটা অত্যন্ত পরিকল্পিত, ক্ষমতাসীনদের একটি ষড়যন্ত্র। এ সময় হঠাৎ করে আবারও জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রিজভী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী গর্ব করে বলেন, উন্নয়ন করেছি, এই করেছি, সেই করেছি, জঙ্গিবাদ দমন করেছি। আবার এখন জঙ্গিবাদ কোন গর্তের ভেতর থেকে একেবারে বিষাক্ত সাপের মতো ফণা দিয়ে উঠল। চট্টগ্রামে শেষ না হতে আশকোনার (ঢাকা) নাটক, এটা শেষ না হতে খিলগাঁওয়ের নাটক। এর দু’দিন না যেতে শুক্রবার সিলেটে মহিলা জঙ্গিদের বলা হচ্ছে- আত্মসমর্পণ করুন, ঘিরে রেখেছে, সোয়াত আসছে। কারণ দৃষ্টি ওদিকে দাও, দৃষ্টি দিল্লির দিকে দিও না, দৃষ্টি হিন্দুস্থানের দিকে দিও না। দৃষ্টি জঙ্গি জঙ্গি নিয়ে থাক। আমরা এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভারতের অঙ্গীভূত করব, বাংলাদেশের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে ভারতের অধীন করব। এভাবেই শেখ হাসিনা সাধের সিংহাসন, তার ময়ূরের সিংহাসন টিকে রাখবেন। কারণ তিনি জনগণকে তালাক দিয়েছেন, তিনি মানুষের ইচ্ছাকে তালাক দিয়েছেন। কিন্তু তিনি তার চিরকালের বন্ধু হিন্দুস্থানকে তালাক দেননি, তালাক দিতে পারবেন না।
কারণ তার ক্ষমতার সব চাবিকাঠি দিল্লির সাউথ ব্লকে। ওই চাবি তারা (ভারত) যখন যেভাবে ইচ্ছা ঘুরাবেন, তখন পুতুলের মতো আওয়ামী সরকার নাচবে। এর বাইরে আর কিছুই নেই। জনমনে অনেক প্রশ্ন আছে -আমীর খসরু : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এ নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন আছে। ফিলিপাইনের পত্রিকায় সংবাদ হওয়ায় রিজার্ভ চুরির দুই মাস পর মানুষ তা জানতে পেরেছে। এটি তদন্ত করা হলেও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না। কেন এটি প্রকাশ করা হচ্ছে না, তা বাংলাদেশের গণমাধ্যম লিখতে পারছে না। তবে ফিলিপাইন বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরের লোকজনই রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত। ব্যাংকের ভেতর থেকেই এ কাজ হয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকও একই কথা বলেছে। এ কারণেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না। আগুন লাগার কারণও কি একই? এটাই জনগণের প্রশ্ন। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন খসরু। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু সভায় সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দীন মাস্টার, এমএ তাহের প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, এ সফর নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে। তিস্তা চুক্তি আলোচনার বাইরে চলে গেছে। যে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে তা বাংলাদেশের জনগণের চাহিদা নয়। জনগণের চাহিদা হল তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা। তিনি প্রশ্ন রাখেন, তাহলে কার চাহিদার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর? তিনি বলেন, গণমাধ্যমে যে চুক্তির (প্রতিরক্ষা চুক্তি) কথা বলা হচ্ছে, তা হলে সেটি হবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে। প্রত্যেক দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর নিজস্ব চিন্তা, দর্শন, গোপনীয়তা, কৌশল ও অহংকার থাকে। এটা বিনিময়ের কিছু নেই। সবকিছু বিনিময় করতে হলে প্রতিরক্ষা বাহিনী স্বাধীন থাকবে কিনা, সে প্রশ্ন রাখেন তিনি। খসরু হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী চুক্তিতে সই করতে পারেন। কিন্তু জনগণ তা গ্রহণ করবে না। এ ধরনের চুক্তি করা থেকে বিরত থাকতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ২০১৮-১৯ সাল আলোচনার বিষয় নয়, আমাদের মনে রাখতে হবে, এ সালের মধ্যেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হবেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী। আর আগামী দিনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনাকে যতই উন্নয়নের নায়িকা, মহানায়ক বলা হোক না কেন, তার ছবি টানিয়ে আর যে ভোট পাওয়া যাবে না- এ সত্যটি এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও বুঝে গেছেন।

No comments

Powered by Blogger.