‘রবীন্দ্র-নজরুল হতে বলেন না কেন?’

‘সবার মা-বাবা বড় হয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে বলেন। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল হতে বলেন না কেন?’ শিক্ষকদের কাছে এই প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের ভাষা প্রতিযোগের উৎসবে। এইচএসবিসি-প্রথম আলো ভাষা প্রতিযোগের আঞ্চলিক উৎসব গতকাল শুক্রবার বসেছিল রংপুর জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে। এ আসরে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট—এ ৭ জেলার ১৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। উৎসব শুরু হওয়ার কথা সকাল ৯টায়। তবে অনেক আগেই ছুটে আসে শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে ব্যান্ড পার্টির বাদ্য-বাজনা। তাই শুরুর আগেই শিক্ষার্থীদের কলকাকলি আর বাদ্যের তালে মুখর ছিল উৎসব প্রাঙ্গণ। সকাল ৯টায় বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন রংপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক এ আর মিজানুর রহমান। ভাষা প্রতিযোগের পতাকা উত্তোলন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ কাহালি। এরপর শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাষা প্রতিযোগের স্মারক বেলুন ওড়ানোর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় উৎসবের। উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রথম আলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এ উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিকাশের চর্চা আরও এগিয়ে যাবে বলে তাঁর বিশ্বাস। উৎসব উদ্বোধনের পর শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে শ্রেণিকক্ষে চলে যায়। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত ৪ ক্যাটাগরিতে ৪০ মিনিটের মূল্যায়ন ও শুদ্ধ বানান পরীক্ষা হয়। পরে খোলা মাঠের মঞ্চে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। বাংলা ভাষার প্রাচীনতম কবি কে?, বিদেশি ভাষায় বাংলার কোনো শব্দ ব্যবহার হয় কি না? শিক্ষকদের কাছে শিক্ষার্থীদের এমন মজাদার সব প্রশ্নে উৎসব হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত। এ পর্বে শিক্ষার্থীদের কৌতূহল মেটান শিক্ষকেরা। অধ্যাপক অনিরুদ্ধ কাহালি ছাড়াও প্রশ্নোত্তর পর্বে মঞ্চে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুন-অর-রশীদ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ, রংপুর সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক এ আই মুসা, সরকারি শ্রীনগর কলেজের সহকারী অধ্যাপক কুদরত-ই-হুদা। প্রশ্নোত্তর পর্বে ভালো ও বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করার জন্য অনেক শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ও ভাষা প্রতিযোগ ২০১৭-এর সমন্বয়ক অরুণ বসু। পরীক্ষার পর ও প্রশ্নোত্তর পর্বের মাঝে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাজেদ ফাতেমী। রংপুরে ভাষা প্রতিযোগ উৎসবে ৬০ জন শিক্ষার্থী বিজয়ী হয়। তারা ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় উৎসবে অংশ নেবে। বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে সনদ, পদক ও বই তুলে দেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে প্রথম আলো বন্ধুসভা। প্রতিযোগিতায় সেরা শিক্ষার্থী হয়েছে দিনাজপুর জিলা স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির তৌকির নূর রাহাত। এ ছাড়া ‘বানান বীর’ হিসেবে সেরা হয় কারমাইকেল কলেজের মো. আল ইমরান।

No comments

Powered by Blogger.