বহির্বিভাগ ছাড়া সব তালা মারা

কামরাঙ্গীরচরে ৩১ শয্যার সরকারি হাসপাতাল ভবন নির্মাণের তিন বছর পরও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা শুরু হয়নি। জরুরি বিভাগ, অপারেশন থিয়েটারসহ প্রায় সব কটি বিভাগ তালাবদ্ধ। কবে নাগাদ হাসপাতালটি পুরোদমে চালু হবে, তা জানেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কামরাঙ্গীরচর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন। এখানে ডিএসসিসির তিনটি ওয়ার্ডে প্রায় ১২ লাখ লোকের বসবাস। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই হাসপাতাল ছাড়া কামরাঙ্গীরচরে আর কোনো সরকারি হাসপাতাল ও নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। কেউ অসুস্থ হলে পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার দূরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে যেতে হয়। এতে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অবিলম্বে এই হাসপাতালের সব কার্যক্রম চালুর দাবি জানান তাঁরা। হাসপাতাল এলাকাটি ডিএসসিসির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ কামরাঙ্গীরচরের জনগণকে সেবা দিতেই কুড়ার ঘাটে এই হাসপাতাল নির্মাণ করেছে সরকার। কিন্তু এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় নাগরিকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সাংসদ কামরুল ইসলামকে জানানো হয়েছে। কবে নাগাদ এই সমস্যার সমাধান হবে তা জানা নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ২০১৩ সালে প্রায় পাঁচ একর জমির ওপর ওই হাসপাতাল ভবন এবং চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য আবাসিক ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে প্রেষণে চারজন চিকিৎসক ও দুজন নার্স দিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগ চালু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বর্তমানে তিনজন চিকিৎসা কর্মকর্তা,
দুজন নার্স ও দুজন সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে বহির্বিভাগ চালু আছে। এর মধ্যে গত ২৪ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক পদে প্রেষণে নিয়োগ পান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, তিনতলা হাসপাতাল ভবনের নিচতলার প্রায় প্রতিটি দরজা-জানালার কাচ ভাঙা। বহির্বিভাগের একটি কক্ষে বসে রয়েছেন দুজন চিকিৎসক ও একজন নার্স। পাশে আরেকটি কক্ষে বসে আছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক। তাঁর কক্ষের জানালার কাচ ভাঙা। এ ছাড়া হাসপাতালের নিচতলায় জরুরি বিভাগ, এক্স-রে কক্ষ ও দ্বিতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার, আলট্রাসনোগ্রাম কক্ষ, ল্যাবরেটরি, নারী ও পুরুষ ওয়ার্ড তালাবদ্ধ রয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের চারতলাবিশিষ্ট আবাসিক ভবনের জানালার কাচও ভেঙে চৌচির। তত্ত্বাবধায়ক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে আজিমপুর সিভিল সার্জনের অফিস থেকে এই হাসপাতালে ওষুধপথ্য দেওয়া হয়। তা দিয়েই হাসপাতালের বহির্বিভাগ চালু রয়েছে। এই বিভাগ থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত প্রায় দুই শ রোগী চিকিৎসা নেয়। জানতে চাইলে ঢাকার সিভিল সার্জন এহসানুল করিম বলেন, এই হাসপাতাল নির্মাণের পর জনবল নিয়োগ-সংক্রান্ত জটিলতায় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে অন্যান্য খাত থেকে ওই হাসপাতালে ওষুধ ও জনবল দিয়ে বহির্বিভাগ চালু রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে এই হাসপাতালে নয়জন চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদ অনুমোদন লাভ করেছে। আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করে আগামী জুন বা জুলাইয়ের মধ্যে হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাবে।

No comments

Powered by Blogger.