বোমা নিষ্ক্রিয় করার সময় আহত চার, একজন সংজ্ঞাহীন
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনের গোলচত্বরের উত্তর-পূর্ব পাশে বোমা বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তির ব্যাগে ছিল তিনটি তাজা বোমা। গতকাল শুক্রবার রাতে বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করার সময় স্প্লিন্টারের আঘাতে চারজন আহত ও প্রচণ্ড শব্দে একজন সংজ্ঞা হারিয়েছেন। প্রথম বোমাটি নিষ্ক্রিয় করা হয় রাত পৌনে ১১টার দিকে, দ্বিতীয়টি সাড়ে ১১টার দিকে এবং তৃতীয়টি রাত সোয়া ১২টার দিকে। প্রতিটি বোবা নিষ্ক্রিয় করার আগে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রিয় করণ দলের নেতৃত্বে বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়। তিন বোমার মধ্যে দ্বিতীয় দফায় নিষ্ক্রিয় করা বোমাটি ছিল সবচেয়ে বড়। এই বোমা নিষ্ক্রিয় করার সময়ই আশপাশের লোকজন আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে দেখা গেছে, রাত সোয়া ১১টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উৎসুক জনতা ও গণমাধ্যম কর্মীদের ঘটনাস্থল থেকে ১০০-১৫০ গজ দূরে সরিয়ে দেন। রাত ১১টা ৩৭ মিনিটে দ্বিতীয় বোমাটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। এ সময় প্রচণ্ড শব্দে চারপাশ কেঁপে ওঠে। অন্তত ২০০ গজ দূর পর্যন্ত ছুটে আসে বোমার স্প্লিন্টার। স্প্লিন্টার বিদ্ধ হন মহিয়ান মজনু ওরফে মজনু মিয়া, ফয়সাল, জাকির ও অজ্ঞাত একজন। শব্দে জ্ঞান হারানা স্থানীয় মাদ্রাসা ছাত্র বাহারউদ্দিন। মজনু মিয়ার ডান হাতে স্প্লিন্টারের আঘাত লেগেছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাবনা থেকে আজ শুক্রবার তিনি ঢাকায় এসেছেন। রাতে আশকোনার দিকে যাচ্ছিলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি স্প্লিন্টার তার ডান হাতে লাগে। কথা বলার সময় তাঁর হাত দিয়ে রক্ত ঝরছিল। তিনি কথা বলতে পারছিলেন না।
পরে পুলিশ তাঁকে একটি অটোরিকশায় করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। একই সময় স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁর তিন কর্মী আহত হন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুর রহিম সরদার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তিন রেস্তোরাঁ কর্মীর মধ্যে একজনের নাম তিনি জানেন না। বাকি দুজনের মধ্যে ফয়সালের শরীরের বিভিন্ন অংশে ও জাকিরের বুকে স্প্লিন্টার লেগেছে। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। রাত সোয়া ১২টার দিকে বিমানবন্দর গোলচত্বরের পাশের বাবুস সালাম নামে একটি মাদ্রাসার ছাত্রকে অজ্ঞান অবস্থায় কয়েকজনকে ধরাধরি করে নিয়ে আসতে দেখা যায়। তাঁর নাম বাহারউদ্দিন। বাহারউদ্দিনের সহপাঠীরা বলেন, বোমার শব্দে তিনি জ্ঞান হারিয়েছেন। তাঁকেও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহত হওয়ার ঘটনা ছাড়াও স্প্লিন্টারের আঘাতে পুলিশ ও র্যা ব-৪ এর একটি গাড়িসহ ৮-১০টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্প্লিন্টারের আঘাতে র্যা ব-৪ এর (ঢাকা মেট্রো-ঠ ১৩-২৫৬৭) গাড়িটির পেছনে ফুটো হয়ে গেছে। পুলিশ কর্মকর্তার ব্যবহৃত একটি পাজেরো গাড়ির (ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৪৪৭০) কাচ ভেঙে যায়। এ ছাড়াও ঘটনাস্থলের পাশে বিমানবন্দর ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও ট্রাফিক পুলিশের উত্তরা জোনের সহকারী কমিশনারের কার্যালয়ের অধিকাংশ কাচ ভাঙে। দ্বিতীয় বোমা নিষ্ক্রিয় করার সময় কয়েকজন আহত হওয়ার পর তৃতীয় বোমা নিষ্ক্রিয় করার আগে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। অনেককেই নিরাপদ দূরত্বে ও বিভিন্ন স্থাপনার দেওয়ালের আড়ালে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।
No comments