ত্রিভুজ প্রেমের শিকার চবি ছাত্র জীবন!

‘দুই বধূর এক স্বামী’ বা ‘এক রমণীর বহু প্রেমিক’ নিয়ে নাটক বা সিনেমা গল্পের শেষ নেই। বিয়ের পরে আগের প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার কাহিনী পুরনো। প্রেমিকা তার স্বামী বা বন্ধুরা মিলে প্রেমিককে নাটকীয়ভাবে হত্যার ঘটনা টিভি চ্যানেলের ক্রাইম প্রোগ্রামে অহরহ দেখা যায়। এমনই আরেকটি নাটকীয় হত্যাকাণ্ডের শিকার হল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র আলাউদ্দিন জীবন। বুধবার রাতে নগরীর অক্সিজেন এলাকার শহীদনগরে একটি ভবনের তৃতীয় তলায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় জীবনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। তারপর (এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত) ৪০ ঘণ্টা কেটে গেলেও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ পায়নি। তবে প্রকাশ হয়েছে হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকা এক ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী। আলাউদ্দিন জীবনের প্রতিবেশী ও সহপাঠীদের সঙ্গে তাকে নিয়ে আলোচনায় উঠে আসে এসব কাহিনী।
তবে এ ধরনের মোটিভ পুলিশের হাতে এসেছে কিনা জানতে চাইলে সরাসরি কিছু বলতে চাননি বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন। তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের মোটিভ অনেকটা পরিষ্কার। আমরা কিছুটা নিশ্চিতও হয়েছি কি জন্য তাকে হত্যা করা হতে পারে। ওই মেয়েটিকে গ্রেফতার করা গেলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যেত। আসামি গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত কিছু প্রকাশ করা যাবে না।’ জীবনের সহপাঠী মাহমুদুল হাসান জানান, ‘জীবন খুবই সাধারণ ছেলে ছিল। কারও সঙ্গে খুব একটা সখ্য ছিল না। কখন কি করত তা আমাদের জানা ছিল না। তাকে খুব একটা ক্যাম্পাসে দেখা যেত না।’ বিভাগে একেবারে অনুপস্থিত থাকায় তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ ছিল না। কয়েকদিন আগে মাস্টার্সে ভর্তির সময় তার সঙ্গে সর্বশেষ দেখা হয়েছিল। এ ধরনের ছেলেকে কেন এভাবে জীবন দিতে হবে ভাবতে পারছি না। মোতালেব হোসেন ও জমির উদ্দিন নামে তার অপর দুই সহপাঠী তার সম্পর্কে এসব তথ্য জানালেন। শুধু সহপাঠীরাই নয়, বিভাগের শিক্ষকরাও জানালেন জীবন সম্পর্কে তাদের বিস্তারিত না জানার কথা। তবে জীবনের খুব ঘনিষ্ঠ ছিল সাদিক এমনটা জানালেন সবাইকে। এসব বিষয় নিয়ে সাদিকের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ‘অনার্সে আমরা একসঙ্গে ভর্তি হয়েছিলাম। আমার রোল নম্বর ২৯, আলাওলের ছিল ৩০। দু’জনের বাবার নাম একই। সে ছিল আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সাদেক জানান, মাঝে মাঝে জীবন অক্সিজেন এলাকায় আসতেন। তার সঙ্গে একটি মেয়ের ৫-৬ বছরের সম্পর্ক ছিল। সে ওই মেয়েটাকে পড়াত। রুম্পা নাম ছিল তার। খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায় মেয়েটার। সেখানে তার একটি বাচ্চা হয়। পরে সেখানে বনিবনা হয় না এমন অজুহাত তুলে বিবাহ বিচ্ছেদ করে রুম্পা। এর মধ্যেও রিলেশন চলে তাদের। পরবর্তীকালে মেয়েটার বাবা মারা গেলে তাকে আবারও বিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে কিছুদিন জীবনের সঙ্গে রুম্পার সম্পর্কে ফাটল ধরে। পরে আবারও জীবনের সঙ্গে তার সম্পর্ক শুরু হয়। সাদিক বলেন, আমি তাকে অনেকবার বলেছি এসব থেকে সরে আসতে। কিন্তু সেটা একেবারেই আমলে নেয়নি।
রুম্পার দ্বিতীয় স্বামী প্রবাসী ছিলেন। জীবন-রুম্পার মধ্যে খুব গভীর সম্পর্ক ছিল। রুম্পার বাবার মৃত্যুর পর সে কয়েক মাসের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। এর মধ্যে সে জীবনের সঙ্গে কিছুদিন সময় কাটিয়েছিল। পরে তার পরিবারের লোকজন তাকে ২য় বিয়ে দেয়। জীবন কয়েকবার সম্পর্ক বিচ্ছেদ করতে চেয়েছিল কিন্তু মেয়েটার কারণে সেটা পারেনি। রুম্পার দ্বিতীয় স্বামী জীবনের বিষয়ে জানত বলে জানায় সাদিক। সাদিক বলেন, জীবন তো আমাকে বলেছিল ওর স্বামী নাকি জানত। তবে এরপর কোনো কিছু আমি জানি না। সাম্প্রতিককালে রুম্পার স্বামী দেশে ফিরেছেন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জীবন ও রুম্পার পরিচিত পুরনো বন্ধু বলেন, ‘জীবন রুম্পাকে খুবই ভালবাসত। জীবন অনেকবার রিলেশন থেকে সরে আসতে চাইলেও তা হতে দেয়নি রুম্পা। শুনলাম ইদানীং রুম্পাই নাকি ব্রেক আপ চাইছে।’ এদিকে দ্রুত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার ও শাস্তি দাবি করেছেন জীবনের বাবা শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘আমি কিচ্ছু জানতে ও বুঝতে চাই না, আমার ছেলেকে ফেরত চাই। যারা এ ধরনের কাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
থানায় মামলা : আলাউদ্দিন জীবনের রহস্যজনক খুনের ঘটনায় মামলা করেছেন তার বাবা শাহ আলম। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় বায়েজিদ বোস্তামী থানায় করা এ মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। বায়েজিদ বোস্তামি থানার এসআই শামীম শেখ বলেন, ‘আলাউদ্দিন জীবন হত্যার ঘটনায় তার বাবা শাহ আলম একটি মামলা করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আমাকে রাখা হয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে চেষ্টা চালাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, নগরীর শহীদনগর এলাকার চারতলা বাড়ির তিনতলার একটি ফ্ল্যাট খালি ছিল। বিজ্ঞপ্তি দেখে মঙ্গলবার এক যুবক ও এক তরুণী বাসা ভাড়া নিতে আসেন। তবে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক না থাকায় ওইদিন তাদের বাসা দেখানো সম্ভব হয়নি। বুধবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিন যুবক ও এক তরুণী পুনরায় বাসা দেখতে আসেন। এ সময় তারা এক বস্তা মালামাল নিয়ে আসেন এবং তখনই বাসায় উঠতে চান বলে জানান। পরে খুলে দেয়া হলে তারা ফ্ল্যাট পরিষ্কারের জন্য তত্ত্বাবধায়কের কাছ থেকে একটি বালতি নেন। পরে তারা বাজার আর অন্যান্য মালামাল নিয়ে আসার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। রাত ১০টার দিকে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ওই ফ্ল্যাটের সামনে দিয়ে হাঁটতে গিয়ে দেখেন দরজা খোলা। কারও আওয়াজ না শুনে তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন। তিনি টয়লেটের দরজা খুলে দেখেন এক যুবক হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সেখানে পড়ে আছেন। এরপর পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে মরদেহ উদ্ধার করে।

No comments

Powered by Blogger.