হামলাকারী খালিদ মাসুদ ধর্মান্তরিত মুসলিম
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এলাকায় বুধবারের হামলাকারী খালিদ মাসুদ একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম বলে মনে করছে যুক্তরাজ্যের পুলিশ। ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গ জ্যানেট এলমস তাঁর মা। বাবার পরিচয় জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, তিনি একজন কৃষ্ণাঙ্গ। হামলার ঘটনায় পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। গতকাল দুজন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সন্দেহভাজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ১০। তদন্তকারীরা বলেছেন, ৫২ বছর বয়সী এই হামলাকারী ২০০৯ সাল থেকে খালিদ মাসুদ হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে শুরু করেন। জন্মের সময় খালিদ মাসুদের নাম রাখা হয়েছিল অ্যাড্রিয়ান এলমস। তখন তাঁর মায়ের বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। এদিকে হামলায় আহত আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। ৭৫ বছর বয়সী লেজলি রোডস বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালে মারা যান।
তিনি লন্ডনের স্ট্রেথাম এলাকার বাসিন্দা। এ নিয়ে বুধবারের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য, হামলাকারীসহ মোট নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে হলো ৫। গতকাল শুক্রবার ওয়েস্টমিনস্টার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পর রাস্তাঘাট খুলে দেওয়া হয়েছে। নিত্যদিনের মতো দেশ-বিদেশের পর্যটকের পদভারে মুখরিত এলাকা। ডেইলি মেইলে প্রকাশিত তথ্য অনুয়ায়ী, ১৯৬৪ সালে লন্ডনের অদূরে কেন্ট এলাকার ডার্টফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন অ্যাড্রিয়ান এলমস (পরে খালিদ মাসুদ)। অ্যাড্রিয়ানের জন্মের দুই বছরের মাথায় তাঁর মা পশ্চিম সাসেক্সের অন্য এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। সৎবাবার নামের সঙ্গে মিলিয়ে তাঁর নাম হয় অ্যাড্রিয়ান রাসেল আজাও। ডার্টফোর্ডে অ্যাড্রিয়ানের ছোটবেলার বন্ধুরা বলেছেন, তিনি পড়াশোনা ও খেলাধুলায় বেশ ভালো ছিলেন। তবে পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী, তরুণ বয়স থেকে অ্যাড্রিয়ান নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন। ১৯ বছর বয়সে ১৯৮৩ সালে প্রথমবারের মতো ফৌজদারি অপরাধের দায়ে জেল খাটেন। ২০০২ সালে ইস্ট সাসেক্সে এক ব্যক্তিকে ছুরি দিয়ে হামলার অপরাধে জেলে যান।
তবে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কোনো অভিযোগ ছিল না। সর্বশেষ ২০০৩ সালে এক যুবকের ওপর ছুরি হামলা চালিয়ে ৬ মাসের জেল খাটেন অ্যাড্রিয়ান। জেল থেকে বের হয়ে ২০০৪ সালে কেন্ট শহরের মিডওয়ে এলাকার ফারজানা খালিদ নামে এক নারীকে বিয়ে করেন অ্যাড্রিয়ান। ফলে জেলে থাকা অবস্থায় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং খালিদ মাসুদ নাম ধারণ করেন বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি বছর চাকরির জন্য বেশ কয়েক জায়গায় জীবনবৃত্তান্ত বিলি করেন খালিদ মাসুদ। ওই জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী, ২০০৫ সালে তিনি সৌদি আরবে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে চাকরি নেন। ২০০৯ সালে দেশে ফিরে আসেন। ২০১২ সালে বিদেশিদের ইংরেজি শেখানোর সেন্টার চালু করেন। সর্বশেষ মিডল্যান্ডের বাড়িতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে থাকতেন খালিদ মাসুদ। ফলে ফারজানা খালিদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কত দিন ছিল, তা নিশ্চিত নয়। জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) হামলাকারীকে নিজেদের যোদ্ধা বলে দাবি করলেও হামলাকারীর নাম প্রকাশ করেনি। যুক্তরাজ্যের পুলিশ মনে করছে, আইএস আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকতে পারেন তিনি।
No comments