৫ই জানুয়ারির নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অপরিবর্তিত
৫ই
জানুয়ারি নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ‘অপরিবর্তিত’ রয়েছে বলে
আবারও জানালেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম
বার্নিকাট। গতকাল দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ
আলীর সঙ্গে বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন। আলাপ-আলোচনা
এবং বিতর্কের মধ্য দিয়ে দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের তাগিদ দেন
তিনি। আহ্বান জানান সব দলের ‘রাজনীতি’ এবং ‘গণতন্ত্র’ চর্চার সুযোগ নিশ্চিত
করার। এত কিছুর মধ্যেও নিম্ন আয় থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের জাতিতে উন্নীত
হওয়ায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান বার্নিকাট। এটাকে ‘অনন্য সাধারণ উন্নতি’
হিসাবে দেখছেন তিনি। আঞ্চলিক যোগাযোগ বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত নেপাল ও
ভুটান চতুর্দেশীয় কানেকটিভিটির প্রশ্নে বাংলাদেশের উদ্যোগে এবং এ খাতে
সুনির্দিষ্টভবে সামপ্রতিক সময়ে যে অগ্রগতিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তিনি।
বলেন, এখানে আমেরিকান কোম্পনিগুলোরও যুক্ত হওয়ার সূযোগ রয়েছে বলে মনে করি।
রাজনীতির মাঠে বিরোধ থাকলেও রমজান মাসে ইফতারকে কেন্দ্র করে পরস্পর বিরোধী
রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে ইতিবাচক রাজনীতি হয় সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে
রাষ্ট্রদূত রমজানকে ‘মান্থ অব রিফ্লেকশন’ বা প্রতিফলের মাস হিসাবে
আখ্যায়িত করেন। ইফতার রাজনীতির প্রশংসা করেন তিনি বলেন, আমি মনে করি এটা
‘ভাল চিন্তা’। মাকিন দূত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টি
গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন। বলেন, এমডিজি অর্জনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে
বাংলাদেশের যে অগ্রগতি তাতে আমরা খুবই আনন্দিত। সামপ্রতিক সময়ে মানবপাচার
রোধে বাংলাদেশ গৃহীত ন্যাশনাল প্ল্যান অব অ্যাকশনসহ চলমান লড়াইয়ের প্রশংসাও
করেন তিনি। এটি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র আরও ঘনিষ্ট হয়ে কিভাবে বাংলাদেশের
সঙ্গে কাজ করতে পারে সেটি নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে জানান
রাষ্ট্রদূত। সেখানে দেশের তৈরী পোশাক শিল্প এবং এর সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের
অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন জানিয়ে বার্নিকাট বলেন, এ শিল্পের অনেক বিষয়ে
বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। কিন্তু কেবল নিরাপত্তা খাতের উন্নতিই যথেষ্ট নয়।
এখানে শ্রমিকদের অধিকার এবং তাদের সংগঠনের স্বাধীনতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
এ সব বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকার রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। উন্নয়নের
প্রশ্নে বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন খাতে
অনেক কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এর মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে
শক্তিশালী করার কর্মসূচিও আছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির বাংলাদেশ
সফরের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, সফরটি যাতে
হয় এ জন্য আমরা স্টেট ডিপার্টমন্টেকে নিয়মিত তাগিদ দিচ্ছি, কিন্তু এ নিয়ে
নতুন কোন খবর পাইনি। বিষয়টি নিয়ে হাসতে হাসতে রাষ্ট্রদূত উপস্থিত
সাংবাদিকদের বলেন, যতক্ষণ না হচ্ছে, ততক্ষণ আপনারা প্রশ্ন করতে থাকুন।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির যে চিত্র সমপ্রতি প্রকাশিত
যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টে ওঠে এসেছে তা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কোন
আলোচনা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, হ্যাঁ, এটি প্রকাশিত
রিপোর্ট। মন্ত্রীও দেখেছেন। এটি নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই এমন রিপোর্ট
প্রকাশ পায়। এখানে যে সব বিষয় স্থান পেয়েছে তার অনেক কিছুতে পরিবর্তন
এসেছে। মানুষকে কিভাবে আরও ভাল রাখা যায় সেটাই বিবেচ্য বিষয়। এখানে যে সব
বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে তা নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন,
আমরা এসব উদ্বেগ নিরসনে কাজ করছি। দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ে যান বার্নিকাট। এ সময় মন্ত্রণালয়ের আমেরিকাস অনুবিভাগের
কর্মকর্তারা তাকে স্বাগত জানান। এরপর তিনি মন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক
করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে ঢাকায় যোগদানের পর
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এটা তার দ্বিতীয় আনুষ্ঠানিক বৈঠক। গত চার মাসে
মন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার সাক্ষাৎ হলে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি।
No comments