দুই বন্ধুর আনন্দের পাঠশালা by শিহাব জিশান
নগরের দেওয়ান বাজারে আনন্দের পাঠশালা সহযাত্রিকে পড়ছে বস্তির সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। কলেজপড়ুয়া দুই তরুণ তাঁদের বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন এই বিদ্যালয় l জুয়েল শীল |
বিদ্যালয় গড়ে তোলার মূল উদ্যোক্তা দুই বন্ধু বেলাল হোসেন (বাঁয়ে) ও নাহিদ হাসান l প্রথম আলো |
ছোট্ট
একটি কক্ষ। তাতে গাদাগাদি করে বসে আছে জনা বিশেক শিশু। পরনে মলিন পোশাক।
মুখে হাসি। কেউ কেউ পাশের জনের সঙ্গে খুনসুটিতে ব্যস্ত। সবাই সমস্বরে
পড়ছে—অ, আ, ই, ঈ...। মনোযোগ বইয়ে। এভাবে ঘণ্টাখানেক চলার পর এবার ছড়া
পাঠ—‘আম পাতা জোড়া জোড়া/ মারব চাবুক চলবে ঘোড়া...।’ ছড়া পাঠের সময় হেসে
কুটি কুটি একেক জন। আনন্দের এই পাঠশালা নগরের দেওয়ান বাজারের বগার বিলে।
নাম সহযাত্রীক।
বস্তির সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য এই বিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন এক ঝাঁক তরুণ। যার শুরুটা হয় দুই বন্ধু নাহিদ হাসান ও বেলাল হোসেনের হাত ধরে। নাহিদ পড়ছেন ইসলামিয়া কলেজের ইংরেজি বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষে, বেলাল হিসাববিজ্ঞান নিয়ে পড়ছেন চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজের তৃতীয় বর্ষে। গত মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে গেলে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে।
এবার আসা যাক সহযািত্রক শুরুর গল্পে। ২০১৪ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি সময়। তপ্ত দুপুরে নগরের নিউমার্কেট এলাকার জেনারেল পোস্ট অফিসের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন নাহিদ ও বেলাল। তখন সেখানে ডাস্টবিনে বোতল কুড়িয়ে বস্তায় ভরছিল দুই পথশিশু। নগরের যেকোনো স্থানে এই দৃশ্য হামেশাই দেখা গেলেও সেদিনের ঘটনা তাঁদের নাড়া দেয়। দুজনেই ভাবলেন কী করা যায়? শেষে একমত হলেন, ‘গড়ে তুলব বিদ্যালয়। যেখানে বিনা মূল্যে পড়বে পথশিশুরা।’
এরপর কাজের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিলেন বাকলিয়ার বগারবিল বস্তি। প্রতিদিন সময় করে সেখানে যেতে লাগলেন দুজনই। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বাবা-মাকে বোঝাতে লাগলেন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা। সঙ্গে উদ্বুদ্ধ করছেন শিশুদেরও। প্রথম দিকে তাঁদের কথায় কেউ তেমন কান দিতে চায়নি। ধীরে ধীরে সব বদলে গেল। পরিবর্তন এল বস্তির মানুষের মধ্যে। এদিকে বন্ধু তন্ময় চৌধুরী, তনিমা তনু, রানা দেবনাথ, ফারজানা আক্তার, ইয়াসমিন হেনা, সাইফুল ইসলাম ও সাবেহা আফসানাকে জানালেন তাঁদের স্বপ্নের কথা। সবাই একবাক্যে রাজি হলেন। এরপর শুধুই শিক্ষার আলো ছড়ানোর পথে একদল অভিযাত্রীর স্বপ্নপূরণের গল্প।
২০১৪ সালের ১৪ জুলাই বগারবিল বস্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ‘সহযািত্রক বিদ্যালয়’। শুরুতে বস্তির খোলা মাঠে ১৮ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে নিয়ে চলে শিক্ষা কার্যক্রম। অক্টোবরে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালাতে তিন হাজার টাকায় ভাড়া নেওয়া হয় বগারবিল বস্তির সেমিপাকা একটি ঘর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যাও। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে পড়ছে ৪০ জন শিক্ষার্থী, স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে ৮০ জন। তবে এদের মধ্যে নিয়মিতভাবে ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সহযোগিতা করছেন। সহযািত্রক বিদ্যালয়ের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যুক্ত রয়েছেন শ্রীলঙ্কান দুই শিক্ষার্থীও। এঁদের একজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওশিনী লিয়ানারািচ্চ। তিনি জানালেন ভালো লাগা থেকেই তাঁর এই সংগঠনে যুক্ত হওয়ার কথা।
বেলাল বললেন, ‘আমরা তাদের একটা কাপড় ও কয়েক বেলা খাবার হয়তো জোগান দিতে পারব। কিন্তু এতে সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুর দীর্ঘমেয়াদি কোনো লাভ হবে না। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পারলে তারা একদিন স্বাবলম্বী হতে পারবে। সেই চিন্তা থেকে বিদ্যালয় খোলা।
এখানকার পাঠদান প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা গেল বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবক ও চট্টগ্রাম কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী উমাশ্রী মহাজনের কাছ থেকে। তিনি বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত শিশুর অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করে তাদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করাই। তাদের প্রাথমিক পাঠ দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। আগামী বছরের শুরুতে এ বিদ্যালয়ের ভালো শিক্ষার্থীদের নিকটস্থ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হবে। এরপর তাদের নিয়মিত শিক্ষাসামগ্রী প্রদানসহ যাবতীয় সহযোগিতা করা হবে।’ প্রতি সপ্তাহের সোম, বুধ ও শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা এবং মঙ্গলবার বিকেল চারটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ের পাঠদান চলে।
শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি সহযাত্রিকের উদ্যোগে প্রতি মাসে এখানকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, ঈদ ও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। আয়োজন করা হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
এত কিছুর অর্থায়ন হয় কিভাবে? নাহিদ হাসান জানান, খরচ জোগাড় হয় প্রতিমাসে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের দেওয়া ১০০ টাকা করে মাসিক চাঁদা থেকে। মাঝে মধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন পরিচিতজরনেরাও।
বিদ্যালয়ে কথা হয় আট বছরের শিশু হোসেন বাবুর সঙ্গে। সারা দিন ময়লা কুড়িয়ে বিক্রি করে ৭০ থেকে ৮০ টাকা উপার্জন করে সে। ময়লা কুড়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত বাবু পড়তে আসে সহযাত্রিক বিদ্যালয়ে। এখানে পড়তে কেমন লাগে? বলল, ‘খুব ভালো লাগে। ভাইয়ারা আদর করে।’ বড় হয়ে কী হবে? এবার দৃঢ় উত্তর, ‘চাকরি করব। আর ভাইয়াদের মতো পড়াব।’
বস্তির সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য এই বিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন এক ঝাঁক তরুণ। যার শুরুটা হয় দুই বন্ধু নাহিদ হাসান ও বেলাল হোসেনের হাত ধরে। নাহিদ পড়ছেন ইসলামিয়া কলেজের ইংরেজি বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষে, বেলাল হিসাববিজ্ঞান নিয়ে পড়ছেন চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজের তৃতীয় বর্ষে। গত মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে গেলে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে।
এবার আসা যাক সহযািত্রক শুরুর গল্পে। ২০১৪ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি সময়। তপ্ত দুপুরে নগরের নিউমার্কেট এলাকার জেনারেল পোস্ট অফিসের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন নাহিদ ও বেলাল। তখন সেখানে ডাস্টবিনে বোতল কুড়িয়ে বস্তায় ভরছিল দুই পথশিশু। নগরের যেকোনো স্থানে এই দৃশ্য হামেশাই দেখা গেলেও সেদিনের ঘটনা তাঁদের নাড়া দেয়। দুজনেই ভাবলেন কী করা যায়? শেষে একমত হলেন, ‘গড়ে তুলব বিদ্যালয়। যেখানে বিনা মূল্যে পড়বে পথশিশুরা।’
এরপর কাজের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিলেন বাকলিয়ার বগারবিল বস্তি। প্রতিদিন সময় করে সেখানে যেতে লাগলেন দুজনই। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বাবা-মাকে বোঝাতে লাগলেন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা। সঙ্গে উদ্বুদ্ধ করছেন শিশুদেরও। প্রথম দিকে তাঁদের কথায় কেউ তেমন কান দিতে চায়নি। ধীরে ধীরে সব বদলে গেল। পরিবর্তন এল বস্তির মানুষের মধ্যে। এদিকে বন্ধু তন্ময় চৌধুরী, তনিমা তনু, রানা দেবনাথ, ফারজানা আক্তার, ইয়াসমিন হেনা, সাইফুল ইসলাম ও সাবেহা আফসানাকে জানালেন তাঁদের স্বপ্নের কথা। সবাই একবাক্যে রাজি হলেন। এরপর শুধুই শিক্ষার আলো ছড়ানোর পথে একদল অভিযাত্রীর স্বপ্নপূরণের গল্প।
২০১৪ সালের ১৪ জুলাই বগারবিল বস্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ‘সহযািত্রক বিদ্যালয়’। শুরুতে বস্তির খোলা মাঠে ১৮ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে নিয়ে চলে শিক্ষা কার্যক্রম। অক্টোবরে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালাতে তিন হাজার টাকায় ভাড়া নেওয়া হয় বগারবিল বস্তির সেমিপাকা একটি ঘর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যাও। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে পড়ছে ৪০ জন শিক্ষার্থী, স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে ৮০ জন। তবে এদের মধ্যে নিয়মিতভাবে ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সহযোগিতা করছেন। সহযািত্রক বিদ্যালয়ের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যুক্ত রয়েছেন শ্রীলঙ্কান দুই শিক্ষার্থীও। এঁদের একজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওশিনী লিয়ানারািচ্চ। তিনি জানালেন ভালো লাগা থেকেই তাঁর এই সংগঠনে যুক্ত হওয়ার কথা।
বেলাল বললেন, ‘আমরা তাদের একটা কাপড় ও কয়েক বেলা খাবার হয়তো জোগান দিতে পারব। কিন্তু এতে সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুর দীর্ঘমেয়াদি কোনো লাভ হবে না। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পারলে তারা একদিন স্বাবলম্বী হতে পারবে। সেই চিন্তা থেকে বিদ্যালয় খোলা।
এখানকার পাঠদান প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা গেল বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবক ও চট্টগ্রাম কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী উমাশ্রী মহাজনের কাছ থেকে। তিনি বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত শিশুর অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করে তাদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করাই। তাদের প্রাথমিক পাঠ দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। আগামী বছরের শুরুতে এ বিদ্যালয়ের ভালো শিক্ষার্থীদের নিকটস্থ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হবে। এরপর তাদের নিয়মিত শিক্ষাসামগ্রী প্রদানসহ যাবতীয় সহযোগিতা করা হবে।’ প্রতি সপ্তাহের সোম, বুধ ও শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা এবং মঙ্গলবার বিকেল চারটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ের পাঠদান চলে।
শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি সহযাত্রিকের উদ্যোগে প্রতি মাসে এখানকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, ঈদ ও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। আয়োজন করা হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
এত কিছুর অর্থায়ন হয় কিভাবে? নাহিদ হাসান জানান, খরচ জোগাড় হয় প্রতিমাসে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের দেওয়া ১০০ টাকা করে মাসিক চাঁদা থেকে। মাঝে মধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন পরিচিতজরনেরাও।
বিদ্যালয়ে কথা হয় আট বছরের শিশু হোসেন বাবুর সঙ্গে। সারা দিন ময়লা কুড়িয়ে বিক্রি করে ৭০ থেকে ৮০ টাকা উপার্জন করে সে। ময়লা কুড়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত বাবু পড়তে আসে সহযাত্রিক বিদ্যালয়ে। এখানে পড়তে কেমন লাগে? বলল, ‘খুব ভালো লাগে। ভাইয়ারা আদর করে।’ বড় হয়ে কী হবে? এবার দৃঢ় উত্তর, ‘চাকরি করব। আর ভাইয়াদের মতো পড়াব।’
No comments