জাফলংয়ে বেপরোয়া বোমাচক্র নদীতে ৩০০ একর ভূমি by ওয়েছ খছরু
‘সিলেটের
প্রশাসনের টেবিলে টেবিলে অভিযোগ নিয়ে হেঁটেছি। এখনও হাঁটছি। বোমা মেশিনের
কবল থেকে ঐতিহ্যবাহী জাফলং চা-বাগানকে রক্ষার জন্য আকুতি জানিয়েছি। কিন্তু
কেউ আমাদের কথায় কান দেয়নি। বরং বোমা মেশিন চক্রের টাকার জোরে বড় কর্তারা
নড়চড় করেননি। আর এই সুযোগে অবাধে পাথর লুট হচ্ছে জাফলং চা-বাগানের।’ দুঃখের
সঙ্গে এ কথাগুলো বললেন বাগানের ম্যানেজার একরামুল কবির। মঙ্গলবারের
সংঘর্ষের পর গতকাল তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘এখনও সময় আছে। সবাই
ঐক্যবদ্ধ হলে দেশের সম্পদ চা-বাগান রক্ষা হবে।’ জাফলং চা-বাগান হচ্ছে এখন
পর্যটকদের কাছে জাফলংয়ের একমাত্র ঐতিহ্য। বল্লাঘাটের পাথররাজি আর নেই।
খাশিয়াপুঞ্জি ও বাগানের যে পরিবেশটুকু রয়েছে সেগুলোই এখন পর্যটকদের কাছে
বিনোদনের স্থান। কিন্তু বোমা সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে জাফলং বাগান ক্রমেই
হারিয়ে যেতে বসেছে। পাল্টে গেছে জাফলংয়ের মানচিত্রও। আর এই চক্রের কাছ থেকে
বাগান রক্ষা করতে গিয়ে মঙ্গলবার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় অন্তত ২৫ জন
আহত হন। পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর থেকে
জাফলং এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। জাফলং চা-বাগানের মূল ভূমির পরিমাণ ২
হাজার ২৬৫ একর। পিয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত এ বাগানের ৩০০ একর ভূমি চলে গেছে
বোমা মেশিন সিন্ডিকেটের কবলে। প্রথমে বাগানের অব্যবহৃত ভূমি এবং পরে মূল
বাগানের অংশ দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়। আর এই দখল প্রক্রিয়ার কারণেই বাগানের
৩০০ একর ভূমির এখন কোন অস্তিত্ব নেই। জাফলংয়ের ভাটি এলাকায় বাগান অবস্থিত।
আর উজানে কোয়ারি। ইতিমধ্যে কোয়ারিতে অবাধ লুটপাটের ফলে পাথরশূন্য হয়ে পড়েছে
জাফলং। গত ৭ বছর ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের ছত্রছায়ায় চালানো হয়
এই লুটপাট। এ কারণে উজানের কোয়ারি এলাকায় পাথর সংকট চরমে। ফলে ভাটি এলাকায়
বাগানে গিয়ে হানা দিচ্ছে বোমা মেশিন সিন্ডিকেটরা। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে,
জাফলং চা- বাগানের ৩০০ একর ভূমি বোমা মেশিন দিয়ে খুবলে খেয়েছেন বোমা মেশিন
সিন্ডিকেটের মূল হোতা ছাতকের আলাউদ্দিন। তার নেতৃত্বে নয়াবস্তির নিমাই
মিয়া, আতাই মিয়া, কুটিল মিয়া, নানু মিয়া, কিশোরগঞ্জের হানিফ গাজী সহ
কয়েকজনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক বোমা মেশিন লাগানো হতো চা-বাগানের গর্তে। এই
গর্তগুলো আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখতো খোকন, আসলাম, রেফাই, শামীম সহ
কয়েকজন। তাদের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে গর্ত বুঝে নেয় বোমা
মেশিন সিন্ডিকেটরা। এরপর তারা রাতের আঁধারে বোমা মেশিন চালিয়ে পাথর লুটপাট
চালায়। বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ওইসব সিন্ডিকেটরা বাগানের কোটি
টাকার পাথর লুট করেছে। টাকার কারণে তারা চোখের সামনে পরিবেশ ধ্বংস করে
দিচ্ছে সেদিকে তাদের কোন নজর নেই। জাফলং চা-বাগান এলাকার বোমা মেশিন
সিন্ডিকেটের টিম লিডার আলাউদ্দিন গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘তার
বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে, সেটি ঠিক নয়। তার কোন বোমা মেশিন নেই।
তিনি কোন লুটপাট চালাচ্ছেন না। তবে, এলাকার মাসুক মেম্বার, আব্দুল্লাহ,
মোস্তফা, উজ্জ্বল, মানিক, রেফাই, নাসির, গনি, মমিন উল্লাহ সহ কয়েকজন বোমা
মেশিন চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, ওরাই জাফলং কোয়ারি
ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি নন।’ জাফলং বাগানের ম্যানেজার একরামুল কবির
জানিয়েছেন, ‘জাফলং বাগানের দিকে বোমা সিন্ডিকেটের আগে নজর ছিল না। কিন্তু
গত ৬ মাস ধরে তারা নজর দিয়েছে। আর এই সময়ে তারা রাতের আঁধারে লুটে নিচ্ছে
পাথর। এ নিয়ে তিনি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ
সুপার, গোয়াইনঘাট ইউএনও, গোয়াইনঘাটের ওসি সহ একাধিক স্থানে অভিযোগের পর
অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এতে নজর দেননি কেউ। তিনি বলেন, বাগান তো
রাষ্ট্রের। এটিকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।’ এদিকে, বাগানের পাথর
লুটপাটে প্রশাসনের একটি চক্র ও বাগানের কতিপয় কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন বলে
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। তারা বলেন, বোমা সিন্ডিকেটের কাছ থেকে প্রতিদিন
লক্ষাধিক টাকা যায় গোয়াইনঘাটের প্রশাসন ও পুলিশের কাছে। এ কারণে যতবারই
অভিযোগ করা হয়েছে সব অভিযোগ তামাদি করে রাখা হয়েছে। আর টাস্কফোর্সের
অভিযানের নামে আইওয়াশ অভিযান চালানো হয়েছে। একই সঙ্গে বোমা মেশিন
সিন্ডিকেটের সঙ্গে বাগানের কর্মচারী কফিল উদ্দিন লিটন ও বিলাল আহমদের
সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মঙ্গলবার জানিয়েছেন, টাস্কফোর্স গেলো কয়েকদিন ধরে
অভিযান চালাচ্ছে। অভিযোগ পেলেই প্রশাসন অভিযান চালায়। তিনি বলেন, মঙ্গলবার
টাস্কফোর্স অভিযান চালাতেই আসে। সেখানে সংঘর্ষ বাধলে প্রশাসন পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে আনে।
মঙ্গলবার যা ঘটেছিলো: পুলিশ গুলি না ছুড়লে কয়েকটি লাশ পড়তো জাফলংয়ে- এমন তথ্য জানিয়েছেন জাফলংয়ের সাংবাদিকরা। তারা বলেন, মঙ্গলবার বাগানের শত শত শ্রমিক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি বারকি ও পাথর শ্রমিকের নামে একাংশ হামলা চালায়। সংঘর্ষে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। জাফলং চা-বাগানের তীরবর্তী নদী থেকে অবৈধ পন্থায় বোমা মেশিন ধারা পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে সকাল থেকে চা-বাগানের কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষ সংঘবদ্ধ হয়ে পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত বোমা মেশিনের সরঞ্জাম ধ্বংস ও চা-বাগানের জায়গায় গড়ে ওঠা প্রায় ১০টি দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দুটি পেলুডার মেশিনেও (পাথর তোলার যন্ত্র) ভাঙচুর চালায়। পরবর্তীতে শ্রমিকদের নামে পাল্টা হামলা চালানো হয়। ইউএনও জানান, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধ পন্থায় পাথর উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত ১৪ বোমা মেশিনের সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়েছে। অভিযান শেষে চা-শ্রমিক ও বোমা মেশিনে কর্মরত শ্রমিকদের মাঝে সংঘর্ষ ঘটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালায়।
মঙ্গলবার যা ঘটেছিলো: পুলিশ গুলি না ছুড়লে কয়েকটি লাশ পড়তো জাফলংয়ে- এমন তথ্য জানিয়েছেন জাফলংয়ের সাংবাদিকরা। তারা বলেন, মঙ্গলবার বাগানের শত শত শ্রমিক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি বারকি ও পাথর শ্রমিকের নামে একাংশ হামলা চালায়। সংঘর্ষে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। জাফলং চা-বাগানের তীরবর্তী নদী থেকে অবৈধ পন্থায় বোমা মেশিন ধারা পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে সকাল থেকে চা-বাগানের কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষ সংঘবদ্ধ হয়ে পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত বোমা মেশিনের সরঞ্জাম ধ্বংস ও চা-বাগানের জায়গায় গড়ে ওঠা প্রায় ১০টি দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দুটি পেলুডার মেশিনেও (পাথর তোলার যন্ত্র) ভাঙচুর চালায়। পরবর্তীতে শ্রমিকদের নামে পাল্টা হামলা চালানো হয়। ইউএনও জানান, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধ পন্থায় পাথর উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত ১৪ বোমা মেশিনের সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়েছে। অভিযান শেষে চা-শ্রমিক ও বোমা মেশিনে কর্মরত শ্রমিকদের মাঝে সংঘর্ষ ঘটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালায়।
No comments