ভিন্নরূপী এক মেয়ে
২৩ বছরের যুবতী হারনাম কাউর। লন্ডনে একটি
স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা। প্রতিদিন তিনি যখন স্কুলে যান, রাস্তায় বের হন,
কোন ফাস্টফুডের দোকানে প্রবেশ করেন তখন সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তাকে
নিয়ে মজা করে।
হাসাহাসি করে। তাতে হারনামের কিছু এসে যায়
না। তাকে নিয়ে এই হাসাহাসির কারণ, হারনাম যুবতী হলেও তার মুখভর্তি দাড়ি।
কুচকুচে কালো দাড়ি দেখে তিনি যে মেয়ে তা ঠাহর করা কঠিন। হারনাম এসব মেনে
নিয়েছেন। বিশ্বাস করেন, বিধাতা ইচ্ছে করে তাকে দান করেছেন দাড়ি। তা তিনি
কাটবেন না। কেউ হাসাহাসি করলে তাতে তার কি! হারনাম বলেন, ঈশ্বরই আমাকে
এভাবে সৃষ্টি করেছে। এতেই আমি খুশি। এগার বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ছিলেন
স্বাভাবিক একটি মেয়ে। এরপরই তার মুখে দেখা দিতে থাকে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। এক
সময় বিরক্ত হয়ে যান তিনি। অন্য মেয়েদের মতো কোমল মসৃণ ত্বক রাখার জন্য
আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে মুখ শেভ করেন, ব্লিচিং করেন। সপ্তাহে
দু’বার এ ধারা অব্যাহত রাখেন। কিন্তু কিছুতেই কাজ হয় না। স্কুলে সবাই তাকে
ক্ষেপাতে থাকে। দাড়ির ইংরেজি বিয়ার্ড বলে অনেকে তাকে বিয়ার্ডো নামে ডাকতে
থাকে। কেউ বা তাকে নারী-পুরুষ বলে ডাকতে থাকে। এতে এক সময় তিনি বিরক্ত হন।
নিজেকে আটকে রাখেন ঘরের মধ্যে। নিজের সঙ্গে লড়াই করতে থাকেন। অনেকবার
সিদ্ধান্ত নেন আত্মহত্যার। বয়স যখন ১৬ বছর তখন তিনি শিখ হিসেবে দীক্ষা নেন
এবং দাড়ি কাটা বন্ধ করে দেন। আস্তে আস্তে তার মধ্যে আস্থা ফিরতে থাকে।
হারনাম কাউর বলেন, এখন আমার মধ্যে অনেক বেশি নারীত্ব। আমার শরীরে যথেষ্ট
আবেদন আছে। আমি এটা পছন্দও করি। তিনি আরও বলেন, দাড়ি নিয়ে একজন নারী হিসেবে
স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে আমার কোন কষ্ট হয় না। আমি অবলীলায় নারীদের কেনাকাটার
দোকানে চলে যাই। আগে ভয় পেতাম যদি মুখে দাড়ি দেখে আমাকে পুরুষ ভেবে বের করে
দেয়! কিন্তু এখন আর সেই ভয় নেই। আমি স্কার্ট পরি। অন্য মেয়েদের মতো পোশাক
পরি। গহনা পরি। অন্য মেয়েদের মতো আমার নখ সাজাই। তার সঙ্গে রয়েছে ১৮ বছর
বয়সী ভাই। তিনি বলেন, হারনাম সুখে আছে। সে যা চায় তাই করে। করতে পারে। এটা
তার জন্য অনেক ভাল বিষয়। হারনাম বলেন, আমার আসল সৌন্দর্য হলো আমার ভেতরের
রূপ। আমার মুখে দাড়ি। এটা আমার বাইরের চেহারা। আমার ভিতরটা পরিষ্কার।
No comments