সরকারের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও আত্মঘাতী- রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে, তখনই সরকার চারটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানদের মেয়াদ বাড়িয়ে তার স্বেচ্ছাচারী আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটাল। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ সম্পর্কে জনমনে যেসব উদ্বেগ ও শঙ্কা রয়েছে, তা আমলেই নেওয়া হয়নি।


গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক খাত ও ব্যাংকিং বিভাগের বৈঠকে জনতা, অগ্রণী, রূপালী—এই তিন ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের আরও দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী আদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত’ তিনি স্বপদে বহাল থাকবেন।
দুর্ভাগ্যজনক হলো, যখন যে দল বা জোট ক্ষমতায় আসে, তখন তারা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব লোক বসিয়ে থাকে। কোনো নিয়মনীতির ধার ধারে না। দুই বছর আগে সরকার যখন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে, তখনই এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এরপর বিভিন্ন ব্যাংকের কার্যক্রমে পরিচালকদের অযাচিত হস্তক্ষেপের বহু নজির রয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনই যার প্রমাণ। তা সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এমনকি যেই সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক নামের একটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠান বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, সেই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানকেও রেখে দেওয়া হয়েছে। যেখানে ব্যাংকের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহি চাওয়া হচ্ছে, সেখানে এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানকে এভাবে পুরস্কৃত করা নজিরবিহীন ঘটনা।
বিগত সরকারের আমলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে গঠিত ব্যাংক সংস্কার কমিটি একটি জাতীয় কমিটির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ গঠনের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু কোনো সরকার সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করার প্রয়োজন বোধ করেনি; বরং সম্পূর্ণ দলীয় ও রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
৮ সেপ্টেম্বর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সবার প্রত্যাশা ছিল, সরকার অভিজ্ঞ ও যোগ্যতর লোকদের নিয়েই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করবে। কিন্তু সবার মতামত উপেক্ষা করে তারা ‘সাবেক বহালের’ নীতিই অনুসরণ করেছে। এসব ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা গত দুই বছরে কোনো ভালো কাজ দেখাতে পারেননি, বরং প্রতিটি ব্যাংকেই ঋণখেলাপিসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি বেড়েছে। এই অবস্থায় সরকারের সাবেক পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত যেমন অযৌক্তিক তেমনি আত্মঘাতী।
আমরা মনে করি, রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে দুই দফায় ব্যাংক সংস্কারের যে কমিটি হয়েছিল, তার সুুপারিশের ভিত্তিতে সব রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.