সোনালী ব্যাংকে নজিরবিহীন কেলেঙ্কারি-পর্ষদে অভিযুক্তরা থাকছেন! by আবুল কাশেম
সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে রাজনীতিবিদরা হয়ে গেছেন সমাজসেবক। ১৩ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে এ রকম অন্তত তিনজনের নাম পাওয়া গেছে, যাঁদের পরিচয়ে যুক্ত হয়েছে সমাজসেবকের খেতাব। জানা গেছে, তাঁরা রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পেলেও সে পরিচয় উহ্য রেখে স্বীকৃতি নিয়েছেন সমাজসেবক হিসেবে।
তাঁদের একজন আবার আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ নির্বাচনও করেছেন। হলমার্ক গ্রুপের দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকারও বেশি কেলেঙ্কারিসহ নানা ধরনের অর্থ কেলেঙ্কারির জন্য এই সমাজসেবকদের নিয়ে গঠিত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদকে ব্যর্থ বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকও। শুধু তাই নয়, দেশের সর্বকালের বৃহত্তম এই ব্যাংক কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত পরিচালকদের অনেককে নিয়েই সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করতে যাচ্ছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে আরো জানা গেছে, ব্যর্থতার দায় এনে বাংলাদেশ ব্যাংক এই পর্ষদ পুনর্গঠনের অনুরোধ করলেও বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলামকে পুনঃনিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুভাষ সিংহ রায় নিয়েছেন ফার্মাসিস্ট ও ব্যবসায়ীর পরিচিতি। রাজনৈতিক কারণে তিনিও পুনঃনিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। বর্তমান পর্ষদের আরো একজন সদস্যও পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর চীন সফরে যাওয়ার আগেই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই তিনজনকে পুনঃনিয়োগ দেবেন বলে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সোনালী ব্যাংকের ১৩ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. নাসরীন খন্দকার ও মাদারীপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. লুৎফর রহমান খান মৃত্যুবরণ করায় দুটি পদ শূন্য রয়েছে। অন্য ১১ সদস্যের মধ্যে চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম, গার্মেন্ট ব্যবসায়ী এ কে এম জামান রুমেল, সাংবাদিক কাশেম হুমায়ূন, সমাজকর্মী ও ব্যবসায়ী সাইমুম সরওয়ার কমল, আইনজীবী ও সমাজকর্মী সত্যেন্দ্রনাথ ভক্ত ও গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েও শিক্ষক ও সমাজসেবক পরিচয়ধারী জান্নাত আরা হেনরীর মেয়াদকাল শেষ হচ্ছে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর। আর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুভাষ সিংহ রায়ের পরিচালক হিসেবে তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সহিদ উল্লা মিয়ার মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ২১ মার্চ। আর গত বছরের ৩১ আগস্ট মেয়াদ শেষ হওয়া ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় এ এস এম নাঈম ও মো. আনোয়ার শহীদকে ওই বছরের ৩০ আগস্ট দ্বিতীয় মেয়াদে পুনঃনিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের জীবিত ১১ সদস্যের মধ্যে কাজী বাহারুল ইসলাম, সুভাষ সিংহ রায়, সহিদ উল্লা মিয়াসহ চারজন এক মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদের দ্বিতীয় মেয়াদ চলছে। ব্যাংক কম্পানি আইন ১৯৯১-এর ১৫ ধারা মোতাবেক 'কোনো ব্যক্তি একাদিক্রমে দুই মেয়াদে ছয় বছরের অধিক পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন না।' তবে এই আইন অনুযায়ী এক মেয়াদের পরিচালকরা পুনঃনিয়োগের যোগ্য থাকবেন। জানা গেছে, গত মাসের মাঝামাঝি সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এক মেয়াদে থাকা ওই চারজনকে পুনঃনিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দেওয়া হয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। আর অর্থমন্ত্রী এই চারজনের তিনজনকে পুনঃনিয়োগ দিতে যাচ্ছেন। তা ছাড়া সোনালী ব্যাংকের আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদে কমপক্ষে সাতজন সদস্য থাকতে হবে। সোনালী ব্যাংকের নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, পরিচালনা পর্ষদের ছয় সদস্যের মেয়াদ আছে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। মেয়াদ থাকবে মাত্র পাঁচজনের। তাই বিধান অনুযায়ী, ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে দুইজন পরিচালক নিয়োগ বা পুনঃনিয়োগ করতে হবে। আর সে কারণেই অর্থমন্ত্রী চীন সফরের আগেই কাজটি সম্পন্ন করতে চান বলে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে জানান, চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম এবং সুভাষ সিংহ রায়সহ পর্ষদের দুই সদস্যকে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী চীন যাওয়ার আগেই পুনঃনিয়োগ দেওয়া হবে। আর মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া অন্য পরিচালকদের মধ্যে মো. সহিদ উল্লা মিয়ার পুনঃনিয়োগের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কম্পানি গঠন হলেও সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের শতভাগ মালিকানা সরকারের। তাই সরকারই মূলত এ ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ দিয়ে থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, 'আমার তো মনে হয়, সোনালী ব্যাংকের পুরো পরিচালনা পর্ষদই বাতিল করে, নতুন করে নিয়োগ দেওয়া উচিত। কারণ, স্বাধীনতার পর ব্যাংকিং খাতে এত বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি আর ঘটেনি। অর্থ মন্ত্রণালয় পর্ষদের কাউকে এ জন্য দোষী বা কাউকে নির্দোষ ভাবতে পারে না। তাই এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ মতোই অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজ করা উচিত।'
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজ সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারির জন্য প্রাথমিকভাবে ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা দায়ী হলেও পর্ষদও দায় এড়াতে পারে না। পর্ষদের দায়িত্ব শাখার কর্মকাণ্ড তদারকি করা, পোর্টফোলিও দেখা, সন্দেহভাজন ঋণ শনাক্ত করা। কিন্তু জালিয়াতি রোধে পর্ষদ ভূমিকা রাখতে পারেনি।
কম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম বলেন, এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনার জন্য প্রথমেই দায়ী ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। আর তাদের নিয়মিত তদারকিতে ব্যর্থতার দায় নিতে হবে পরিচালনা পর্ষদকে। সোনালী ব্যাংকের শতভাগ মালিকানা সরকারের। ফলে সরকার যাকে ইচ্ছা তাকেই পরিচালক নিয়োগ করতে পারে। এ বিবেচনায় অনেকেই ঢুকে গেছেন পর্ষদে। দলীয় ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা সুবিধাবঞ্চিত, এভাবে তাঁদের পয়সা কামানোর একটা সুযোগ করে দেওয়া হয়। পর্ষদের সদস্যদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে এই আইনজীবী বলেন, পরিচালকরা তো মিটিং ভাতা ছাড়া আর কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। পরিচালক হওয়ার আগে তাঁদের কী সম্পদ ছিল, আর এখন কী আছে, তা মিলিয়ে দেখতে পারে সরকার।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য পুনঃনিয়োগ প্রসঙ্গে একটি নির্দেশনা পাঠিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সেখানে বলা হয়েছে, 'কম্পানি আইন ১৯৯৪ এবং ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের বিধান অনুযায়ী বার্ষিক সাধারণ সভায় চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা অবসর গ্রহণের পর পুনঃনিয়োগ পেলেও ওই পুনঃনিয়োগের মেয়াদ শতভাগ বা বেশির ভাগ শেয়ারের মালিক হিসেবে সরকারের নির্ধারণ করা মেয়াদের চেয়ে বেশি হবে না। এ ছাড়া পুনঃনিয়োগের অনুমোদনও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ হতে গ্রহণ করতে হবে।
জানা গেছে, অন্য দুই রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে জনতা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত, সদস্য মো. নজিবুর রহমান, অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর। এ ছাড়া অন্য পরিচালকদের মধ্যে মো. ইমদাদুল হক ও পারভীন মাহমুদ ছাড়া অন্যদের মেয়াদও চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই শেষ হচ্ছে। আর অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, সদস্য শেখর দত্ত, নাগিবুল ইসলাম দীপু, আবদুস সবুর, জাকির হোসেন ও শাহজাদা মহিউদ্দিনের মেয়াদও ৮ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। ব্যাংকটির অন্য পরিচালকদের মেয়াদও সেপ্টেম্বর মাসেই শেষ হবে। নিয়মানুযায়ী, একজন ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি পরিচালনা পর্ষদের সদস্য থাকতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে যেসব পরিচালক এক মেয়াদ দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদেরকে পুনঃনিয়োগ দিতে ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে আরো জানা গেছে, ব্যর্থতার দায় এনে বাংলাদেশ ব্যাংক এই পর্ষদ পুনর্গঠনের অনুরোধ করলেও বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলামকে পুনঃনিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুভাষ সিংহ রায় নিয়েছেন ফার্মাসিস্ট ও ব্যবসায়ীর পরিচিতি। রাজনৈতিক কারণে তিনিও পুনঃনিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। বর্তমান পর্ষদের আরো একজন সদস্যও পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর চীন সফরে যাওয়ার আগেই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই তিনজনকে পুনঃনিয়োগ দেবেন বলে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সোনালী ব্যাংকের ১৩ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. নাসরীন খন্দকার ও মাদারীপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. লুৎফর রহমান খান মৃত্যুবরণ করায় দুটি পদ শূন্য রয়েছে। অন্য ১১ সদস্যের মধ্যে চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম, গার্মেন্ট ব্যবসায়ী এ কে এম জামান রুমেল, সাংবাদিক কাশেম হুমায়ূন, সমাজকর্মী ও ব্যবসায়ী সাইমুম সরওয়ার কমল, আইনজীবী ও সমাজকর্মী সত্যেন্দ্রনাথ ভক্ত ও গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েও শিক্ষক ও সমাজসেবক পরিচয়ধারী জান্নাত আরা হেনরীর মেয়াদকাল শেষ হচ্ছে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর। আর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুভাষ সিংহ রায়ের পরিচালক হিসেবে তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সহিদ উল্লা মিয়ার মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ২১ মার্চ। আর গত বছরের ৩১ আগস্ট মেয়াদ শেষ হওয়া ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় এ এস এম নাঈম ও মো. আনোয়ার শহীদকে ওই বছরের ৩০ আগস্ট দ্বিতীয় মেয়াদে পুনঃনিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের জীবিত ১১ সদস্যের মধ্যে কাজী বাহারুল ইসলাম, সুভাষ সিংহ রায়, সহিদ উল্লা মিয়াসহ চারজন এক মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদের দ্বিতীয় মেয়াদ চলছে। ব্যাংক কম্পানি আইন ১৯৯১-এর ১৫ ধারা মোতাবেক 'কোনো ব্যক্তি একাদিক্রমে দুই মেয়াদে ছয় বছরের অধিক পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন না।' তবে এই আইন অনুযায়ী এক মেয়াদের পরিচালকরা পুনঃনিয়োগের যোগ্য থাকবেন। জানা গেছে, গত মাসের মাঝামাঝি সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এক মেয়াদে থাকা ওই চারজনকে পুনঃনিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দেওয়া হয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। আর অর্থমন্ত্রী এই চারজনের তিনজনকে পুনঃনিয়োগ দিতে যাচ্ছেন। তা ছাড়া সোনালী ব্যাংকের আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদে কমপক্ষে সাতজন সদস্য থাকতে হবে। সোনালী ব্যাংকের নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, পরিচালনা পর্ষদের ছয় সদস্যের মেয়াদ আছে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। মেয়াদ থাকবে মাত্র পাঁচজনের। তাই বিধান অনুযায়ী, ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে দুইজন পরিচালক নিয়োগ বা পুনঃনিয়োগ করতে হবে। আর সে কারণেই অর্থমন্ত্রী চীন সফরের আগেই কাজটি সম্পন্ন করতে চান বলে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে জানান, চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম এবং সুভাষ সিংহ রায়সহ পর্ষদের দুই সদস্যকে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী চীন যাওয়ার আগেই পুনঃনিয়োগ দেওয়া হবে। আর মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া অন্য পরিচালকদের মধ্যে মো. সহিদ উল্লা মিয়ার পুনঃনিয়োগের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কম্পানি গঠন হলেও সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের শতভাগ মালিকানা সরকারের। তাই সরকারই মূলত এ ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ দিয়ে থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, 'আমার তো মনে হয়, সোনালী ব্যাংকের পুরো পরিচালনা পর্ষদই বাতিল করে, নতুন করে নিয়োগ দেওয়া উচিত। কারণ, স্বাধীনতার পর ব্যাংকিং খাতে এত বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি আর ঘটেনি। অর্থ মন্ত্রণালয় পর্ষদের কাউকে এ জন্য দোষী বা কাউকে নির্দোষ ভাবতে পারে না। তাই এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ মতোই অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজ করা উচিত।'
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজ সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারির জন্য প্রাথমিকভাবে ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা দায়ী হলেও পর্ষদও দায় এড়াতে পারে না। পর্ষদের দায়িত্ব শাখার কর্মকাণ্ড তদারকি করা, পোর্টফোলিও দেখা, সন্দেহভাজন ঋণ শনাক্ত করা। কিন্তু জালিয়াতি রোধে পর্ষদ ভূমিকা রাখতে পারেনি।
কম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম বলেন, এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনার জন্য প্রথমেই দায়ী ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। আর তাদের নিয়মিত তদারকিতে ব্যর্থতার দায় নিতে হবে পরিচালনা পর্ষদকে। সোনালী ব্যাংকের শতভাগ মালিকানা সরকারের। ফলে সরকার যাকে ইচ্ছা তাকেই পরিচালক নিয়োগ করতে পারে। এ বিবেচনায় অনেকেই ঢুকে গেছেন পর্ষদে। দলীয় ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা সুবিধাবঞ্চিত, এভাবে তাঁদের পয়সা কামানোর একটা সুযোগ করে দেওয়া হয়। পর্ষদের সদস্যদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে এই আইনজীবী বলেন, পরিচালকরা তো মিটিং ভাতা ছাড়া আর কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। পরিচালক হওয়ার আগে তাঁদের কী সম্পদ ছিল, আর এখন কী আছে, তা মিলিয়ে দেখতে পারে সরকার।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য পুনঃনিয়োগ প্রসঙ্গে একটি নির্দেশনা পাঠিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সেখানে বলা হয়েছে, 'কম্পানি আইন ১৯৯৪ এবং ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের বিধান অনুযায়ী বার্ষিক সাধারণ সভায় চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা অবসর গ্রহণের পর পুনঃনিয়োগ পেলেও ওই পুনঃনিয়োগের মেয়াদ শতভাগ বা বেশির ভাগ শেয়ারের মালিক হিসেবে সরকারের নির্ধারণ করা মেয়াদের চেয়ে বেশি হবে না। এ ছাড়া পুনঃনিয়োগের অনুমোদনও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ হতে গ্রহণ করতে হবে।
জানা গেছে, অন্য দুই রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে জনতা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত, সদস্য মো. নজিবুর রহমান, অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর। এ ছাড়া অন্য পরিচালকদের মধ্যে মো. ইমদাদুল হক ও পারভীন মাহমুদ ছাড়া অন্যদের মেয়াদও চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই শেষ হচ্ছে। আর অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, সদস্য শেখর দত্ত, নাগিবুল ইসলাম দীপু, আবদুস সবুর, জাকির হোসেন ও শাহজাদা মহিউদ্দিনের মেয়াদও ৮ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। ব্যাংকটির অন্য পরিচালকদের মেয়াদও সেপ্টেম্বর মাসেই শেষ হবে। নিয়মানুযায়ী, একজন ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি পরিচালনা পর্ষদের সদস্য থাকতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে যেসব পরিচালক এক মেয়াদ দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদেরকে পুনঃনিয়োগ দিতে ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
No comments