চরাচর-রবি ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি by গৌরাঙ্গ নন্দী

তীর্থ নদ ভৈরবের পশ্চিম পাড়ে খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণ ডিহি গ্রাম। একসময়ের শান্ত নিরিবিলি এই গ্রামটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি। যদিও এই গ্রামটির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ ছিল না বললেই চলে, তবুও রবীন্দ্রভক্তদের কাছে এই গ্রামে তাঁর শ্বশুরের সেই প্রাচীন দ্বিতল ভবনটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়।


খুলনার একসময়ের জেলা প্রশাসক কাজী রিয়াজুল হক দখলদারদের কবল থেকে শ্বশুরবাড়িটি উদ্ধার করে এখানে রবীন্দ্র কমপ্লেঙ্ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। শুধু দক্ষিণ ডিহির শ্বশুরবাড়িটি নয়, খুলনার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগ গ্রামে রবীন্দ্রনাথের আদি পুরুষের ভিটামাটির একটি অংশও তিনি সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেন। অবশ্য তত দিনে আদি বাড়িটি বিক্রি হয়ে যায়। বিশ্বকবির মা সারদা দেবীর বাবার বাড়ি অর্থাৎ কবির মামার বাড়ি ও মাতামহী দিগম্বরী দেবীর বাড়ি ছিল এই দক্ষিণ ডিহিতে। ২২ বছরের রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ১০ বছরের ভবতারিণীর। ঠাকুরবাড়িতে বধূ হিসেবে গিয়ে সেখানে নাম হয় মৃণালিনী। রবীন্দ্রনাথ বর সেজে দক্ষিণ ডিহিতে আসেননি। কনেকে কলকাতার জোড়াসাঁকোতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁদের বিয়ে হয়। রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, ছেলেবেলায় মায়ের সঙ্গে কবি একবার তাঁর মামার বাড়ি দক্ষিণ ডিহিতে এসেছেন। ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র মিত্র তাঁর 'যশোর-খুলনার ইতিহাস' গ্রন্থে পিঠাভোগ ও দক্ষিণ ডিহি সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন। কবির পূর্বপুরুষরা বাস করতেন খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে চলা আঠারোবাঁকি নদীপাড়ের পিঠাভোগ গ্রামে। বহু দিন আগে থেকেই কলকাতাকেন্দ্রিক ব্যবসার সুবাদে তাঁদের পূর্বপুরুষ জোড়াসাঁকোতে বসবাস শুরু করেন। দক্ষিণ ডিহি গ্রামে রবি ঠাকুরের শ্বশুর ছিলেন বেণীমাধব রায়চৌধুরী। তাঁর পুত্র নগেন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী ওই বাড়ির দ্বিতল ভবনসহ ৮ দশমিক ৪১ একর জমির মালিক ছিলেন। নগেন্দ্রনাথের দুই ছেলে- বীরেন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী ও ধীরেন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী ওই জমির স্বত্বাধিকারী হন। পরবর্তীকালে দ্বিতল ভবনসহ এই জমি সরকারের শত্রু তথা অর্পিত সম্পত্তি তালিকাভুক্ত হয়। জমি ও বাড়ি একাধিক ব্যক্তি দখলে নেয়। ১৯৯৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বাড়িটি জেলা প্রশাসক কাজী রিয়াজুল হকের নির্দেশনায় অবৈধ দখলমুক্ত হয়। উদ্ধার করা বাড়িটির যথোপযুক্ত ব্যবহারের জন্য খুলনার সুধী সমাজের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এখানে রবীন্দ্র কমপ্লেঙ্ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। সেই দ্বিতল ভবনের সামনে স্থাপন করা হয় কবি ও মৃণালিনী দেবীর আবক্ষ মূর্তি এবং সেই পুরনো সবেদা তলায় নির্মাণ করা হয়েছে মৃণালিনী মঞ্চ। মঞ্চের বেশ দূরে একটি ভবন নির্মিত হয়েছে রবীন্দ্রচর্চার কেন্দ্র হিসেবে।
গৌরাঙ্গ নন্দী

No comments

Powered by Blogger.