বিদেশিদের আনাগোনা বেড়েছে কক্সবাজারে-আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের পরবর্তী টার্গেট 'স্বাধীন নিউরোশিয়া' by তোফায়েল আহমদ ও রফিকুল ইসলাম
কক্সবাজারে আকস্মিকভাবেই বিদেশি নাগরিকের আনাগোনা বেড়ে গেছে। তাঁরা সাধারণ অর্থে পর্যটক নন। কারণ পর্যটক হলে আগতদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকার কথা সাগর সৈকত ও সংশ্লিষ্ট এলাকা। কিন্তু আগতরা কক্সবাজারে পা রেখেই ছুটছেন সীমান্তের দিকে।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ইসলামের নাম ভাঙিয়ে হরকাতুল জিহাদ, লস্কর-ই তৈয়বা, জয়শ-ই-মোহাম্মদ, হিযবুত তাহ্রীর, জেএমবি, আরএসও, এআরএনও, ইবতাদা-তুলাহ আল মুসলেমিন বা আইটিএম, ইউনাইটেড স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব আরাকান মুভমেন্ট বা ইউএসএএম, এএসএফসহ অন্তত দেড় ডজন জঙ্গি সংগঠন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় সংগঠিত হচ্ছে। তারা চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজারকে অন্তর্ভুক্ত করে পুরো আরাকান প্রদেশ নিয়ে কথিত 'স্বাধীন নিউরোশিয়া' রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছে। মিয়ানমারের আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিয়ে এরা সংগঠিত হচ্ছে। সম্প্রতি কক্সবাজারে গ্রেপ্তার হওয়া 'জামায়াতে আরাকান' নামের জঙ্গি সংগঠনের চার কর্মীর দেওয়া তথ্য ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
কক্সবাজারে বিদেশি নাগরিকদের রহস্যজনক আনাগোনা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সম্প্রতি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। তাতে বলা হয়েছে- পাকিস্তান, তুরস্ক, সৌদি আরব, কুয়েত, সুদানসহ আরো কয়েকটি দেশের নাগরিকরা হরহামেশা কক্সবাজার সফর করছেন। গত রমজানে টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় তুরস্ক, সৌদি আরব ও কুয়েতের লোকজন ত্রাণসামগ্রী বিলিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা মানা হয়নি।
টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলা মাদ্রাসা নামের একটি প্রতিষ্ঠানে পাকিস্তানের নাগরিকরা দলে দলে যাতায়াত করছে। এদের বেশির ভাগই থাকে 'ভিসা অন অ্যারাইভাল।' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজারে আগত বিদেশিদের খোঁজখবর নিতে গিয়ে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন। আর বিদেশিরা এতটাই বেপরোয়া যে, হোটেলে উঠে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার নিয়মও তাঁরা মানছেন না। বিদেশিরা রোহিঙ্গাদের সহায়তার আগ্রহ নিয়ে এখানে এলেও বাস্তবে তাঁদের কর্মকাণ্ড অস্পষ্ট।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর বিদেশি নাগরিকদের তৎপরতা বৃদ্ধির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কয়েক স্থানে বিদেশিদের অননুমোদিত কাজের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। তাঁদের ব্যাপারে জোরালোভাবে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আকতার গতকাল এ প্রসঙ্গে বলেন, বিদেশিদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা 'আত-তাহরীদ' নামের জিহাদি ম্যাগাজিনটি পড়লেই বোঝা যায় এই জঙ্গি গ্রুপের নেপথ্যে বড় মাপের লোকজন জড়িত। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ম্যাগাজিনটি বেশ উন্নতমানের প্রকাশনা। এতে ওসামা বিন লাদেনের এক সহযোগীসহ পাকিস্তানি আল-কায়েদার শীর্ষস্থানীয় নেতার সাক্ষাৎকার রয়েছে। বাইরের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া স্থানীয়ভাবে এই জঙ্গি সংগঠনের যাত্রা অসম্ভব। তবে এরা স্থানীয় কারো কারো সহায়তা পাচ্ছে।
গত শনি ও রবিবার কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া চার জঙ্গি পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তাদের নেতা সালমান ওরফে রুহুল আমিন ওরফে তালহা। তাঁর উদ্যোগে জেএমবির একাংশ পাহাড়ে জমাতুল আরকান নামে সংগঠিত হয়।
এদিকে ১৬ আগস্ট ঢাকায় ধরা পড়েন পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জয়শ-ই মোহাম্মদের বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক ইউনুস। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। ওই সংগঠনের অন্য নেতা মাওলানা সাবের আহাম্মদ দীর্ঘ এক যুগ পাকিস্তানে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তিনি ইউনুসের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জঙ্গি সংগঠনে অন্তর্ভুক্তির কাজ করে আসছিলেন।
জানা গেছে, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার পূর্বাঞ্চলে অবস্থানরত রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশন বা আরএসও নেতা ডা. ইউনুছসহ একাধিক রোহিঙ্গা নেতা বাংলাদেশসহ প্রবাসে অবস্থান করে জঙ্গি সংগঠনগুলোকে 'স্বাধীন নিউরোশিয়া' রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একীভূত করার কাজ সমন্বয় করছেন। তাঁরা বান্দরবান, কক্সবাজারের রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়ার বিভিন্ন স্থানে বিদেশি অর্থায়নে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর মসজিদের নামে ইসলামিক কমপ্লেঙ্ প্রতিষ্ঠাসহ নানামুখী লোভ দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের দলে ভেড়াচ্ছে। নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে এভাবে তারা ধীরে ধীরে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো গোয়েন্দা প্রতিবেদনে কক্সবাজার, বান্দরবানসহ পার্শ্ববর্তী জেলার সীমান্ত এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গাসহ ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নতুনভাবে সংগঠিত করার চেষ্টা চালানোর কথা বলা হয়েছে। এদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, গোলাবারুদ সংগ্রহে অর্থ সাহায্য দিচ্ছে কিছু এনজিও। জঙ্গিদের লক্ষ্য কক্সবাজার, বান্দরবান অঞ্চলকে আরাকানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আলাদা রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা ঘোষণা করে স্বায়ত্তশাসন চাওয়া ও নতুন স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
ইবতাদা তুলাহ-আল মুসলেমিন বা আইটিএম, লুজনা মক্কা আল খায়েবিয়ারের অর্থ আসছে বেশ কয়েকটি মুসলিমপ্রধান দেশ থেকে। মূলত পরিকল্পিত রাষ্ট্র বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান আসছে কিছু এনজিওর মাধ্যমে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সংগঠিত করতে সৌদি আরবের রিয়াদ, জেদ্দা, পাকিস্তানের বেলুচ, লিবিয়া, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক ও লন্ডন থেকে কলকাঠি নাড়া হচ্ছে। জঙ্গি সংগঠনগুলোকে দিয়ে অপারেশন শুরু করতে ইতিমধ্যে প্রায় দেড় ডজন জঙ্গি সংগঠনকে এককাতারে আনার জোর চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে সংগঠনের নেতৃস্থানীয়রা ওই সব দেশে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা ও জঙ্গি নেতা ডা. ইউনুছ, ডা. ওয়াকার উদ্দিন, শাহ ফরিদী, আবুল ফয়েজ জিলানী, নুরুল ইসলাম, সালামত উল্লাহ, শফিউল্লাহ, নাজমুল আলম চৌধুরী, হাফেজ ছালাহুল, ডা. ফয়সাল, র্যাব আনোয়ার ও তৈয়ব অংশ নেন বলে রোহিঙ্গা ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে বিবদমান রোহিঙ্গা সংগঠনগুলো ভেঙে 'আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন বা এআরইউ' নামে নতুন সংগঠন গঠনে ঐকমত্য হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, উখিয়া, টেকনাফ, রামু, নাইক্ষ্যংছড়ির শতাধিক মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। জানা গেছে, রোহিঙ্গা জঙ্গিদের অন্তত ৪০০ প্রশিক্ষিত সদস্য কক্সবাজার, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, গাজীপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও অন্যান্য পেশার আড়ালে সক্রিয়। আর রোহিঙ্গা জঙ্গিদের মাঠপর্যায়ে সংগঠিত করতে উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবিরে আলী জুহার, ফজল হাজি, রাকিব, হাফেজ নাইম, লালু ডাক্তার, শামশু মাঝি, হাফেজ জালাল, ডা. নজির, মাওলানা শফি উল্লাহ, নুরুল ইসলাম, নুরুল হক মাঝি, নুর মোহাম্মদ, আবদুর রশিদ, সায়ের, আবুল, আবদুল কাদের, আবু ইয়াহিয়া, হামিদ, রুহুল আমিনসহ অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা মিশন চালিয়ে যাচ্ছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, আটককৃত জঙ্গিদের কাছ থেকে বান্দরবান, কক্সবাজার ও আরাকান নিয়ে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। রোহিঙ্গা জঙ্গি ও আন্তইসলামী জঙ্গিদের সমন্বয়ে এ ধরনের পরিকল্পনার কথাও তার জানা নেই বলে জানান।
কক্সবাজারে বিদেশি নাগরিকদের রহস্যজনক আনাগোনা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সম্প্রতি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। তাতে বলা হয়েছে- পাকিস্তান, তুরস্ক, সৌদি আরব, কুয়েত, সুদানসহ আরো কয়েকটি দেশের নাগরিকরা হরহামেশা কক্সবাজার সফর করছেন। গত রমজানে টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় তুরস্ক, সৌদি আরব ও কুয়েতের লোকজন ত্রাণসামগ্রী বিলিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা মানা হয়নি।
টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলা মাদ্রাসা নামের একটি প্রতিষ্ঠানে পাকিস্তানের নাগরিকরা দলে দলে যাতায়াত করছে। এদের বেশির ভাগই থাকে 'ভিসা অন অ্যারাইভাল।' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজারে আগত বিদেশিদের খোঁজখবর নিতে গিয়ে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন। আর বিদেশিরা এতটাই বেপরোয়া যে, হোটেলে উঠে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার নিয়মও তাঁরা মানছেন না। বিদেশিরা রোহিঙ্গাদের সহায়তার আগ্রহ নিয়ে এখানে এলেও বাস্তবে তাঁদের কর্মকাণ্ড অস্পষ্ট।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর বিদেশি নাগরিকদের তৎপরতা বৃদ্ধির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কয়েক স্থানে বিদেশিদের অননুমোদিত কাজের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। তাঁদের ব্যাপারে জোরালোভাবে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আকতার গতকাল এ প্রসঙ্গে বলেন, বিদেশিদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা 'আত-তাহরীদ' নামের জিহাদি ম্যাগাজিনটি পড়লেই বোঝা যায় এই জঙ্গি গ্রুপের নেপথ্যে বড় মাপের লোকজন জড়িত। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ম্যাগাজিনটি বেশ উন্নতমানের প্রকাশনা। এতে ওসামা বিন লাদেনের এক সহযোগীসহ পাকিস্তানি আল-কায়েদার শীর্ষস্থানীয় নেতার সাক্ষাৎকার রয়েছে। বাইরের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া স্থানীয়ভাবে এই জঙ্গি সংগঠনের যাত্রা অসম্ভব। তবে এরা স্থানীয় কারো কারো সহায়তা পাচ্ছে।
গত শনি ও রবিবার কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া চার জঙ্গি পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তাদের নেতা সালমান ওরফে রুহুল আমিন ওরফে তালহা। তাঁর উদ্যোগে জেএমবির একাংশ পাহাড়ে জমাতুল আরকান নামে সংগঠিত হয়।
এদিকে ১৬ আগস্ট ঢাকায় ধরা পড়েন পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জয়শ-ই মোহাম্মদের বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক ইউনুস। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। ওই সংগঠনের অন্য নেতা মাওলানা সাবের আহাম্মদ দীর্ঘ এক যুগ পাকিস্তানে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তিনি ইউনুসের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জঙ্গি সংগঠনে অন্তর্ভুক্তির কাজ করে আসছিলেন।
জানা গেছে, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার পূর্বাঞ্চলে অবস্থানরত রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশন বা আরএসও নেতা ডা. ইউনুছসহ একাধিক রোহিঙ্গা নেতা বাংলাদেশসহ প্রবাসে অবস্থান করে জঙ্গি সংগঠনগুলোকে 'স্বাধীন নিউরোশিয়া' রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একীভূত করার কাজ সমন্বয় করছেন। তাঁরা বান্দরবান, কক্সবাজারের রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়ার বিভিন্ন স্থানে বিদেশি অর্থায়নে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর মসজিদের নামে ইসলামিক কমপ্লেঙ্ প্রতিষ্ঠাসহ নানামুখী লোভ দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের দলে ভেড়াচ্ছে। নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে এভাবে তারা ধীরে ধীরে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো গোয়েন্দা প্রতিবেদনে কক্সবাজার, বান্দরবানসহ পার্শ্ববর্তী জেলার সীমান্ত এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গাসহ ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নতুনভাবে সংগঠিত করার চেষ্টা চালানোর কথা বলা হয়েছে। এদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, গোলাবারুদ সংগ্রহে অর্থ সাহায্য দিচ্ছে কিছু এনজিও। জঙ্গিদের লক্ষ্য কক্সবাজার, বান্দরবান অঞ্চলকে আরাকানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আলাদা রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা ঘোষণা করে স্বায়ত্তশাসন চাওয়া ও নতুন স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
ইবতাদা তুলাহ-আল মুসলেমিন বা আইটিএম, লুজনা মক্কা আল খায়েবিয়ারের অর্থ আসছে বেশ কয়েকটি মুসলিমপ্রধান দেশ থেকে। মূলত পরিকল্পিত রাষ্ট্র বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান আসছে কিছু এনজিওর মাধ্যমে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সংগঠিত করতে সৌদি আরবের রিয়াদ, জেদ্দা, পাকিস্তানের বেলুচ, লিবিয়া, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক ও লন্ডন থেকে কলকাঠি নাড়া হচ্ছে। জঙ্গি সংগঠনগুলোকে দিয়ে অপারেশন শুরু করতে ইতিমধ্যে প্রায় দেড় ডজন জঙ্গি সংগঠনকে এককাতারে আনার জোর চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে সংগঠনের নেতৃস্থানীয়রা ওই সব দেশে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা ও জঙ্গি নেতা ডা. ইউনুছ, ডা. ওয়াকার উদ্দিন, শাহ ফরিদী, আবুল ফয়েজ জিলানী, নুরুল ইসলাম, সালামত উল্লাহ, শফিউল্লাহ, নাজমুল আলম চৌধুরী, হাফেজ ছালাহুল, ডা. ফয়সাল, র্যাব আনোয়ার ও তৈয়ব অংশ নেন বলে রোহিঙ্গা ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে বিবদমান রোহিঙ্গা সংগঠনগুলো ভেঙে 'আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন বা এআরইউ' নামে নতুন সংগঠন গঠনে ঐকমত্য হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, উখিয়া, টেকনাফ, রামু, নাইক্ষ্যংছড়ির শতাধিক মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। জানা গেছে, রোহিঙ্গা জঙ্গিদের অন্তত ৪০০ প্রশিক্ষিত সদস্য কক্সবাজার, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, গাজীপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও অন্যান্য পেশার আড়ালে সক্রিয়। আর রোহিঙ্গা জঙ্গিদের মাঠপর্যায়ে সংগঠিত করতে উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবিরে আলী জুহার, ফজল হাজি, রাকিব, হাফেজ নাইম, লালু ডাক্তার, শামশু মাঝি, হাফেজ জালাল, ডা. নজির, মাওলানা শফি উল্লাহ, নুরুল ইসলাম, নুরুল হক মাঝি, নুর মোহাম্মদ, আবদুর রশিদ, সায়ের, আবুল, আবদুল কাদের, আবু ইয়াহিয়া, হামিদ, রুহুল আমিনসহ অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা মিশন চালিয়ে যাচ্ছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, আটককৃত জঙ্গিদের কাছ থেকে বান্দরবান, কক্সবাজার ও আরাকান নিয়ে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। রোহিঙ্গা জঙ্গি ও আন্তইসলামী জঙ্গিদের সমন্বয়ে এ ধরনের পরিকল্পনার কথাও তার জানা নেই বলে জানান।
No comments