বোতলের দামে 'পুকুরচুরি' by রাজীব আহমেদ
খরচ কম করলেও একটি পরিবারে মাসে কমপক্ষে পাঁচ লিটার ভোজ্য তেল প্রয়োজন। তেলের গুণ, কোলেস্টেরলমুক্ত থাকা, বিশুদ্ধতা- কম্পানিগুলোর ইত্যাকার বিজ্ঞাপনে বিশ্বাসী হয়ে বোতলজাত ভোজ্য তেল কিনতে পছন্দ করেন ক্রেতারা। কিন্তু বোতলের দামের নামে উৎপাদন খরচের তিন গুণ টাকা নিয়ে ক্রেতাদের ঠকানোর অভিযোগ উঠেছে ভোজ্য তেল বাজারজাতকারী কম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে।
তবাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের মনিটরিং সেল হিসাব করে দেখেছে, পাঁচ লিটার পরিমাণ তেল ধরে এমন একটি বোতলের মোট উৎপাদন খরচ ২৪ টাকা ৮৬ পয়সা। কিন্তু কম্পানিগুলো ওই বোতলের দাম নিচ্ছে ৭০ টাকা। এর আগে ওই বোতলবাবদ খরচ সরকার ৫০ টাকা বেঁধে দিলেও তা তারা মানছে না। এভাবে এক লিটার ও দুই লিটারের বোতলের দামও দুই থেকে আড়াই গুণ বেশি নেওয়া হচ্ছে।
বোতলের দাম বাবদ যে টাকা নেওয়া হয়, তার মধ্যে কম্পানিগুলো বিজ্ঞাপন খরচ যুক্ত করে দেখায় কি না জানতে চাইলে দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, বিজ্ঞাপন খরচ বোতলের দামের ভেতরে দেখানো হয় না।
পরিবেশক প্রথা অনুযায়ী বাংলাদেশে ভোজ্য তেল ও চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়। ওই নিয়মে আমদানি ও উৎপাদন খরচ বিশ্লেষণ করে দাম বেঁধে দেয় মনিটরিং কমিটি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, কম্পানিগুলো মিলগেটে যে দামে ভোজ্য তেল বিক্রি করবে তার চেয়ে বোতলের দাম বাবদ ১৫ টাকা বেশি নেওয়া যাবে এক লিটার বোতলের ক্ষেত্রে। দুই লিটারের ক্ষেত্রে কত টাকা বেশি নেওয়া যাবে তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে পাঁচ লিটারের বোতলের ক্ষেত্রে বোতল বাবদ খরচ ৫০ টাকা নির্দিষ্ট করা আছে।
পরিবেশক প্রথা অনুযায়ী ট্যারিফ কমিশনের অধীনে গঠিত মনিটরিং সেল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য বোতলের উৎপাদন খরচের একটি হিসাব করেছে। ওই হিসাবে বোতল উৎপাদনে বিভিন্ন কাঁচামালের দাম, লেবেলিংসহ সব খরচ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ওই হিসাবে দেখা যায়, আধা লিটার পরিমাপের একটি বোতলের উৎপাদন খরচ পাঁচ টাকা চার পয়সা, এক লিটারের বোতলের উৎপাদন খরচ সাত টাকা ১২ পয়সা। দুই লিটারের বোতলের উৎপাদন খরচ ১২ টাকা ৬৬ পয়সা, তিন লিটারের বোতলের উৎপাদন খরচ ১৯ টাকা ৭৪ পয়সা ও পাঁচ লিটারের বোতলের উৎপাদন খরচ ২৪ টাকা ৮৬ পয়সা।
উৎপাদন খরচের তুলনায় কম্পানিগুলো এক লিটারের বোতলে সাত টাকা ৮৮ পয়সা, দুই লিটারের বোতলে প্রায় ১৭ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতলে প্রায় ৪৫ টাকা বেশি নিচ্ছে। বোতলের দাম উৎপাদন খরচ অনুযায়ী নেওয়ার ব্যবস্থা করা গেলে এখনই ভোজ্য তেলের দাম লিটারে সাত থেকে ৯ টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
একজন পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, মিনারেল পানি ব্যবসায়ীরা যেখানে ভালো মানের বোতল পানিসহ সব কর, বিজ্ঞাপন খরচ ইত্যাদি দিয়ে ১৫ টাকায় বিক্রি করেন। সেখানে একটি বোতলের উৎপাদন খরচ ১৫ টাকা হলে পানি, কর ও অনান্য খরচ কোথায়। ওই ব্যবসায়ী এ বিষয়ে নাসির উদ্দিন হোজ্জার গল্প বলেন। তিনি বলেন, হোজ্জার স্ত্রী নিজে এক কেজি মাংস খেয়ে ফেলে হোজ্জাকে বলেন মাংস বিড়ালে খেয়েছে। হোজ্জা বিড়ালটি মেপে দেখেন সেটির ওজন এক কেজি। এরপর হোজ্জার প্রশ্ন, বিড়ালটি মাংস খেলে মাংসের ওজন কোথায় অথবা বিড়ালটির ওজন কোথায়।
ওই ব্যবসায়ী আরো বলেন, পানি বাজারজাতকারী কম্পানিগুলো প্রমাণ করে, বোতলের উৎপাদন খরচ অনেক কম। ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীরা ১৫ টাকা নেন অনেকটা প্রতারণা করে। এ ক্ষেত্রে মূল ব্যর্থতা সরকারের।
প্রথম যখন বোতলের দাম ১৫ টাকা ঠিক করা হয়, সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হেলাল উদ্দিন। তিনি জানান, আমদানি, পরিশোধন ও অন্যান্য খরচ যুক্ত করে তখন এক লিটার তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ১০১ টাকা। তখন প্রশ্ন ওঠে, বোতলের তেলের দাম কত হবে। সিদ্ধান্ত হয়, এক লিটারের বোতলের দাম কম্পানিগুলো ১৫ টাকা বেশি নিতে পারবে। তিনি বলেন, ওই সভার পর দেখা গেল কম্পানিগুলো পাঁচ লিটারের বোতলের দাম ৭৫ টাকা বেশি নিচ্ছে। জানা গেছে, পরে সেটি ৫০ টাকায় বেঁধে দেওয়া হয়, কিন্তু কম্পানিগুলো তা মানছে না।
হেলাল উদ্দিন বলেন, পরে দেখা গেল বাংলাদেশ এডিবল অয়েল পলিব্যাগে এক লিটারের তেল সরবরাহ শুরু করে। কিন্তু বোতলের দামের মতো পলিব্যাগের দামও তারা ১৫ টাকা নেওয়া শুরু করে। এ বিষয়ে তাদের প্রশ্ন করা হলে কম্পানির কর্মকর্তারা জানান, পলিব্যাগে লোকসান হচ্ছে। তাঁরা এটি বন্ধ করে দেবেন।
অভিযোগ রয়েছে, বোতলের খরচের নামে বেশি দাম নেওয়ার সুযোগ থাকায় কম্পানিগুলো পলিব্যাগে যাচ্ছে না। বিশ্বের অনেক দেশেই এক লিটারের তেল বা অন্য কোনো তরল পণ্য পলিব্যাগে বাজারজাত করার নজির আছে। বাংলাদেশে সব তরল দুধ পলিব্যাগেই সরবরাহ করা হয়। এটা করা গেলে লিটারে অন্তত ১০ টাকা কম দামে তেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বোতলের দাম বাবদ যে টাকা নেওয়া হয়, তার মধ্যে কম্পানিগুলো বিজ্ঞাপন খরচ যুক্ত করে দেখায় কি না জানতে চাইলে দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, বিজ্ঞাপন খরচ বোতলের দামের ভেতরে দেখানো হয় না।
পরিবেশক প্রথা অনুযায়ী বাংলাদেশে ভোজ্য তেল ও চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়। ওই নিয়মে আমদানি ও উৎপাদন খরচ বিশ্লেষণ করে দাম বেঁধে দেয় মনিটরিং কমিটি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, কম্পানিগুলো মিলগেটে যে দামে ভোজ্য তেল বিক্রি করবে তার চেয়ে বোতলের দাম বাবদ ১৫ টাকা বেশি নেওয়া যাবে এক লিটার বোতলের ক্ষেত্রে। দুই লিটারের ক্ষেত্রে কত টাকা বেশি নেওয়া যাবে তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে পাঁচ লিটারের বোতলের ক্ষেত্রে বোতল বাবদ খরচ ৫০ টাকা নির্দিষ্ট করা আছে।
পরিবেশক প্রথা অনুযায়ী ট্যারিফ কমিশনের অধীনে গঠিত মনিটরিং সেল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য বোতলের উৎপাদন খরচের একটি হিসাব করেছে। ওই হিসাবে বোতল উৎপাদনে বিভিন্ন কাঁচামালের দাম, লেবেলিংসহ সব খরচ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ওই হিসাবে দেখা যায়, আধা লিটার পরিমাপের একটি বোতলের উৎপাদন খরচ পাঁচ টাকা চার পয়সা, এক লিটারের বোতলের উৎপাদন খরচ সাত টাকা ১২ পয়সা। দুই লিটারের বোতলের উৎপাদন খরচ ১২ টাকা ৬৬ পয়সা, তিন লিটারের বোতলের উৎপাদন খরচ ১৯ টাকা ৭৪ পয়সা ও পাঁচ লিটারের বোতলের উৎপাদন খরচ ২৪ টাকা ৮৬ পয়সা।
উৎপাদন খরচের তুলনায় কম্পানিগুলো এক লিটারের বোতলে সাত টাকা ৮৮ পয়সা, দুই লিটারের বোতলে প্রায় ১৭ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতলে প্রায় ৪৫ টাকা বেশি নিচ্ছে। বোতলের দাম উৎপাদন খরচ অনুযায়ী নেওয়ার ব্যবস্থা করা গেলে এখনই ভোজ্য তেলের দাম লিটারে সাত থেকে ৯ টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
একজন পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, মিনারেল পানি ব্যবসায়ীরা যেখানে ভালো মানের বোতল পানিসহ সব কর, বিজ্ঞাপন খরচ ইত্যাদি দিয়ে ১৫ টাকায় বিক্রি করেন। সেখানে একটি বোতলের উৎপাদন খরচ ১৫ টাকা হলে পানি, কর ও অনান্য খরচ কোথায়। ওই ব্যবসায়ী এ বিষয়ে নাসির উদ্দিন হোজ্জার গল্প বলেন। তিনি বলেন, হোজ্জার স্ত্রী নিজে এক কেজি মাংস খেয়ে ফেলে হোজ্জাকে বলেন মাংস বিড়ালে খেয়েছে। হোজ্জা বিড়ালটি মেপে দেখেন সেটির ওজন এক কেজি। এরপর হোজ্জার প্রশ্ন, বিড়ালটি মাংস খেলে মাংসের ওজন কোথায় অথবা বিড়ালটির ওজন কোথায়।
ওই ব্যবসায়ী আরো বলেন, পানি বাজারজাতকারী কম্পানিগুলো প্রমাণ করে, বোতলের উৎপাদন খরচ অনেক কম। ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীরা ১৫ টাকা নেন অনেকটা প্রতারণা করে। এ ক্ষেত্রে মূল ব্যর্থতা সরকারের।
প্রথম যখন বোতলের দাম ১৫ টাকা ঠিক করা হয়, সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হেলাল উদ্দিন। তিনি জানান, আমদানি, পরিশোধন ও অন্যান্য খরচ যুক্ত করে তখন এক লিটার তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ১০১ টাকা। তখন প্রশ্ন ওঠে, বোতলের তেলের দাম কত হবে। সিদ্ধান্ত হয়, এক লিটারের বোতলের দাম কম্পানিগুলো ১৫ টাকা বেশি নিতে পারবে। তিনি বলেন, ওই সভার পর দেখা গেল কম্পানিগুলো পাঁচ লিটারের বোতলের দাম ৭৫ টাকা বেশি নিচ্ছে। জানা গেছে, পরে সেটি ৫০ টাকায় বেঁধে দেওয়া হয়, কিন্তু কম্পানিগুলো তা মানছে না।
হেলাল উদ্দিন বলেন, পরে দেখা গেল বাংলাদেশ এডিবল অয়েল পলিব্যাগে এক লিটারের তেল সরবরাহ শুরু করে। কিন্তু বোতলের দামের মতো পলিব্যাগের দামও তারা ১৫ টাকা নেওয়া শুরু করে। এ বিষয়ে তাদের প্রশ্ন করা হলে কম্পানির কর্মকর্তারা জানান, পলিব্যাগে লোকসান হচ্ছে। তাঁরা এটি বন্ধ করে দেবেন।
অভিযোগ রয়েছে, বোতলের খরচের নামে বেশি দাম নেওয়ার সুযোগ থাকায় কম্পানিগুলো পলিব্যাগে যাচ্ছে না। বিশ্বের অনেক দেশেই এক লিটারের তেল বা অন্য কোনো তরল পণ্য পলিব্যাগে বাজারজাত করার নজির আছে। বাংলাদেশে সব তরল দুধ পলিব্যাগেই সরবরাহ করা হয়। এটা করা গেলে লিটারে অন্তত ১০ টাকা কম দামে তেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
No comments