জানাজা বর্জন-ফতোয়ার অপপ্রয়োগ বন্ধ হোক
ফতোয়ার নামে এসব কী হচ্ছে? ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নূরাবাদ গ্রামে একটি মেয়ের জানাজায় গ্রামের কাউকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। দুদিন বাড়িতে লাশ রেখে দরিদ্র মা-বাবা নিজেরাই সন্তানের গোসল করালেন। ভিন্ন গ্রাম থেকে আসা কয়েকজন মানুষকে দিয়ে জানাজা ও দাফন করালেন।
মেয়েটির অপরাধ কী? দারিদ্র্যের কারণে বাধ্য হয়ে ঢাকায় এক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় গৃহকর্মী হয়েছিল সে। সেই বাসায় সে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল এবং তার প্রতিবাদ করায় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তার শরীরের নিম্নাংশ। এরপর তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল তার গ্রামের বাড়িতে। সেখানে একরকম বিনা চিকিৎসায়ই তার মৃত্যু হয়েছে। প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে স্থানীয় পুলিশ ও মাতব্বররা মেয়েটির বাবাকে সতর্ক করে দিয়েছিল, বিষয়টি যেন জানাজানি না হয়। কিন্তু বিষয়টি গোপন থাকেনি। পত্রিকায়ও এ নিয়ে খবর হয়েছে। আর তাতেই স্থানীয় মাতব্বর ও তথাকথিত ফতোয়াবাজদের রোষানলে পড়তে হয় পরিবারটিকে।
ফতোয়া ইসলাম ধর্মে একটি স্বীকৃত বিষয়। কিন্তু সেই ফতোয়া কারা দেবে, কখন এবং কী বিষয়ে দেবে, ইসলাম ধর্মে তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু বরাবরই দেখা যায়, সমাজের প্রভাবশালী অংশ দুর্বলের ওপর অত্যাচারের জন্য ফতোয়াকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। বিশেষ করে অসহায় নারীদের ওপর এক শ্রেণীর মোল্লার সহায়তায় নৈতিকতাবর্জিত কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের জীঘাংসা চরিতার্থ করে থাকে। আর এসব ফতোয়ার অবশ্যম্ভাবী অনুষঙ্গ হয় দোররা বা বেত মারা, সমাজচ্যুত করা, জানাজা-দাফন পর্যন্ত বাধাগ্রস্ত করা। দোররা মারার কারণে অতীতে অনেক নারী মারাও গেছেন, অনেকে আত্মহত্যা করেছেন। অনেককে সমাজচ্যুত হয়ে বছরের পর বছর অমানবিক জীবন যাপন করতে হয়েছে। আর তথাকথিত এসব ফতোয়া দেওয়া হয় মূলত হিলা বিয়ে ও ধর্ষণজনিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফতোয়া প্রভাবশালী ধর্ষকের পক্ষে যায়, আর শাস্তি পেতে হয় দুর্বল ও অসহায় নারীদের। এসব কারণে তথাকথিত ফতোয়ার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের মনে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০১ সালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ফতোয়া প্রদানকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে রায় দিয়েছিলেন। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দুটি রিট আবেদন দাখিল করা হয়। দীর্ঘ শুনানি এবং অভিজ্ঞ আইনজীবীদের মতামতের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ আদালত ফতোয়ার ওপর দেওয়া হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে উপযুক্তভাবে শিক্ষিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে ফতোয়া প্রদানকে বৈধ বলেছেন। তবে একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট ফতোয়ার মাধ্যমে শারীরিক কিংবা মানসিক শাস্তি প্রদানকে সম্পূর্ণরূপে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। আশা করা গিয়েছিল, এই রায়ের পর ফতোয়ার অপপ্রয়োগ বন্ধ হবে। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টোটাই আমরা দেখতে পেলাম ভোলায়। যাঁদের এই অপপ্রয়োগ বন্ধে ভূমিকা রাখার কথা, তাঁদেরই ইন্ধনে স্থানীয় মাতব্বররা দরিদ্র মেয়েটির পরিবারের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেছেন। আমরা ভোলার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কামনা করছি এবং এ ব্যাপারে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
ফতোয়া ইসলাম ধর্মে একটি স্বীকৃত বিষয়। কিন্তু সেই ফতোয়া কারা দেবে, কখন এবং কী বিষয়ে দেবে, ইসলাম ধর্মে তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু বরাবরই দেখা যায়, সমাজের প্রভাবশালী অংশ দুর্বলের ওপর অত্যাচারের জন্য ফতোয়াকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। বিশেষ করে অসহায় নারীদের ওপর এক শ্রেণীর মোল্লার সহায়তায় নৈতিকতাবর্জিত কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের জীঘাংসা চরিতার্থ করে থাকে। আর এসব ফতোয়ার অবশ্যম্ভাবী অনুষঙ্গ হয় দোররা বা বেত মারা, সমাজচ্যুত করা, জানাজা-দাফন পর্যন্ত বাধাগ্রস্ত করা। দোররা মারার কারণে অতীতে অনেক নারী মারাও গেছেন, অনেকে আত্মহত্যা করেছেন। অনেককে সমাজচ্যুত হয়ে বছরের পর বছর অমানবিক জীবন যাপন করতে হয়েছে। আর তথাকথিত এসব ফতোয়া দেওয়া হয় মূলত হিলা বিয়ে ও ধর্ষণজনিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফতোয়া প্রভাবশালী ধর্ষকের পক্ষে যায়, আর শাস্তি পেতে হয় দুর্বল ও অসহায় নারীদের। এসব কারণে তথাকথিত ফতোয়ার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের মনে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০১ সালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ফতোয়া প্রদানকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে রায় দিয়েছিলেন। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দুটি রিট আবেদন দাখিল করা হয়। দীর্ঘ শুনানি এবং অভিজ্ঞ আইনজীবীদের মতামতের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ আদালত ফতোয়ার ওপর দেওয়া হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে উপযুক্তভাবে শিক্ষিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে ফতোয়া প্রদানকে বৈধ বলেছেন। তবে একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট ফতোয়ার মাধ্যমে শারীরিক কিংবা মানসিক শাস্তি প্রদানকে সম্পূর্ণরূপে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। আশা করা গিয়েছিল, এই রায়ের পর ফতোয়ার অপপ্রয়োগ বন্ধ হবে। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টোটাই আমরা দেখতে পেলাম ভোলায়। যাঁদের এই অপপ্রয়োগ বন্ধে ভূমিকা রাখার কথা, তাঁদেরই ইন্ধনে স্থানীয় মাতব্বররা দরিদ্র মেয়েটির পরিবারের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেছেন। আমরা ভোলার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কামনা করছি এবং এ ব্যাপারে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
No comments