বদলে যাও বদলে দাও মিছিল বিশেষ সংলাপ- নৌ-দুর্ঘটনা বন্ধ করতেই হবে

প্রথম আলো ও দেশ টিভির যৌথ বিশেষ সংলাপ অনুষ্ঠান গত ১৮ জুলাই দেশ টিভিতে সম্প্রচারিত হয়েছে। এই সংলাপে সহযোগিতা করেছে বিএসআরএম। ‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’-এর উদ্যোগে নৌ-দুর্ঘটনা নিয়ে নির্মিত অনুষ্ঠানটির আলোচকদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত, সুপারিশ ও প্রতিশ্রুতিগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে আজ ছাপা হলো।


যাঁরা অংশ নিলেন
শাজাহান খান
মন্ত্রী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়
খবিরুল হক চৌধুরী
অধ্যাপক, নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগ, বুয়েট
বদিউজ্জামান
সিনিয়র সহসভাপতি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থা
আমিনুর রসুল
সদস্যসচিব, নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলন
আবুল খায়ের
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি
মাহমুদুজ্জামান বাবু
কণ্ঠশিল্পী ও সমাজকর্মী
নুরুন্নবী
২০০৯ সালে লঞ্চ দুর্ঘটনায় বাবা-মাকে হারিয়েছেন
জলিলহাওলাদার
লঞ্চ দুর্ঘটনায় (২০১২) পরিবারের ১০ জন সদস্যকে হারিয়েছেন
সঞ্চালক
মিথিলা ফারজানা
আয়োজনে
প্রথম আলো

মিথিলা ফারজানা: আপনারা জানেন, এটি একটি ইস্যুভিত্তিক সমস্যার সমাধান খোঁজার অনুষ্ঠান। আমাদের আজকের বিষয়, ‘নৌ-দুর্ঘটনা বন্ধ করতেই হবে’। গত ১৩ বছরে নৌ-দুর্ঘটনায় চার হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। গণমাধ্যম এবং পত্র-পত্রিকার খবর অনুযায়ী, আরও ২৫ হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়েছে। আমাদের সঙ্গে আজকে আছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি আবুল খায়ের। আপনি প্রতিবছর ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে লাশ টেনে বের করেন, লঞ্চ ওঠাতে সাহায্য করেন। অনেক বছর ধরেই এই কাজ করছেন। খারাপ লাগে কখনো?
আবুল খায়ের: দৃশ্য দেখলে তো মনটা ভীষণ খারাপই হয়ে যায়। এটা আমার পেশাগত দায়িত্ব। আমরা লঞ্চে থেকে লাশগুলো উদ্ধার করে স্বজনদের ফিরিয়ে দিতে পারলে আমাদের সন্তুষ্টি আসে। কিন্তু নৌ-দুর্ঘটনার কারণে মনে খুব কষ্ট হয়।
মিথিলা ফারজানা: দুর্ঘটনার পর আপনারা মানুষগুলোকে কীভাবে দেখতে পান?
আবুল খায়ের: যদি দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে যাই, তাহলে মানুষগুলো লঞ্চের ভেতরেই পড়ে থাকে। যতগুলো লাশ উদ্ধার করছি, তাদের সবারই একটা হাত ওপর দিকে থাকে। এটা হলো লঞ্চডুবি লাশের ধর্ম। সে মরার আগে পর্যন্ত বলে, আমাকে বাঁচাও।
মিথিলা ফারজানা: আমাদের সঙ্গে নুরুন্নবী আছেন, তাঁর মা ও বাবা দুজনই এমভি কোকো লঞ্চ-দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তিনি পরিবারে একা বেঁচে আছেন। আপনি বলুন।
নুরুন্নবী: ২০০৯ সালের ২৭ নভেম্বর আমি আমার মা ও বাবার সঙ্গে ঢাকা থেকে কোকো লঞ্চে ফিরছিলাম। প্রচুর যাত্রী ছিল। লঞ্চের তলা ফেটে যাওয়ার কারণে অনেক পানি উঠে গিয়েছিল। লঞ্চ একদিকে কাত হয়ে দ্রুত ডুবে যায়। ওখানে আমার মা ও বাবা ছিলেন। তাঁরা ওখানেই মারা যান। আমার চাচাতো ভাই কীভাবে যেন আমাকে টেনে বাইরে বের করে দেয়।
মিথিলা ফারজানা: এখানে আছেন জলিল হাওলাদার। এ বছরেরই জানুয়ারি মাসে এমভি শরীয়তপুর-১ দুর্ঘটনায় তাঁর পরিবারের ১০ জন সদস্য মারা গেছেন। আপনার পরিবারের কে কে ছিলেন সেই লঞ্চে?
জলিল হাওলাদার: আমার ছেলের নাতি দুজন, আমার স্ত্রী, দুই মেয়ে, জামাইসহ ১০ জন লোক। আমি সেই লঞ্চে ছিলাম না। খবর পেয়ে আমি আসার পর দেখলাম, ডুবুরিরা লঞ্চ খুঁজে পাচ্ছেন না। পরে খোঁজ পাওয়ার পর কিছু লাশ ওঠানো হয়। এর পরের দিন আমার স্বজনদের লাশ পাই। আমার পরিবার শেষ। আমি ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই।
মিথিলা ফারজানা: মাননীয় নৌমন্ত্রী, এ মৃত্যুর দায় কার?
শাজাহান খান: একটা জাহাজ নির্মাণের জন্য যে পরিকল্পনা করতে হয় সেখানেই যদি দোষ থাকে, সে ক্ষেত্রে ওই জাহাজ বা লঞ্চ-দুর্ঘটনা করতে পারে। আমি এই সম্পর্কে বলতে চাই, একটা ছোট্ট লঞ্চকে কেটে বড় করা হয়েছে। লম্বা অনুযায়ী যেটুকু প্রশস্ত করা দরকার সেটুকু করা হয়নি। লঞ্চের উচ্চতা পরিমাপের চেয়ে বেশি করা হয়েছে। অথচ লঞ্চকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে তখন।
মিথিলা ফারজানা: আপনি কথা দিয়েছিলেন যে তদন্ত সাপেক্ষে যারা এসব কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?
শাজাহান খান: দুর্ঘটনার জন্য জাহাজের ফিটনেসের অভাবটাই দায়ী। আমরা জরিপ (সার্ভে) সাপেক্ষে জাহাজ বা লঞ্চকে ফিটনেস সনদ দিয়ে থাকি। ফিটনেস সনদ দেওয়ার লোকবলের আমাদের অভাব রয়েছে। যখন নিখিলবঙ্গ ছিল ভারতবর্ষে, এই পূর্ববঙ্গের জন্য তখন চারজন সার্ভেয়ার ও ইন্সপেক্টর মোট আটজন ছিলেন। এখন পর্যন্ত সেটাই সম্পদ। ওই সময় কত জাহাজ ছিল আমি জানি না, কিন্তু এখন থেকে ১০ বছর আগে দেড় হাজারের মতো জাহাজ ছিল। যা আজকে প্রায় ১০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। চারজন সার্ভেয়ারের পক্ষে এই ১০ হাজার জাহাজের সার্ভে করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রতিদিন একজন সার্ভেয়ারের পক্ষে চারটি জাহাজ সার্ভে করা অসম্ভব। রাতের বেলা জাহাজ চলাচল করে অনেক ক্ষেত্রেই লাইট ছাড়া। মাটিবোঝাই নৌকা, কার্গো প্রভৃতি রাতের বেলা চলাচল করে। এগুলোই অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। লাইটবিহীন এই জাহাজগুলোই দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। চারজন সার্ভেয়ারের জায়গায় আমরা ২১ জন সার্ভেয়ার এবং ২১ জন ইন্সপেক্টর নিয়োগের সুপারিশ করে ইতিমধ্যে অরগানোগ্রাম তৈরি করে দিয়েছি। জনপ্রশাসন, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ে পাস হয়ে এলে আমরা নিয়োগ দিতে পারব।
মিথিলা ফারজানা: প্রতিবার নৌ-দুর্ঘটনা বা সড়ক দুর্ঘটনার পর একই সীমাবদ্ধতার কথা আমরা শুনি। অধিকন্তু এর ওপর তদন্ত কমিটি গঠনের কথা শুনি। কিন্তু সেই তদন্ত কমিটি আসলে কী রিপোর্ট করল এবং সেই রিপোর্টের ফলাফলে আমরা কী পেলাম সেটি কিন্তু আমরা কেউ কিছু শুনিনি।
শাজাহান খান: আমি সংবাদ সম্মেলন করে প্রত্যেকটি দুর্ঘটনার রিপোর্ট প্রকাশ করেছি। এবং একটা কমিটি করে কিন্তু তদন্ত করিনি। আমরা তিনটি কমিটি করি। সে কমিটিগুলোর আবার সমন্বিত রিপোর্ট আমরা তৈরি করি। প্রত্যেকটি রিপোর্ট আমরা সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করেছি। আমি এসে এই পদ্ধতি চালু করেছি।
মিথিলা ফারজানা: আমরা এ জন্য অত্যন্ত খুশি যে তদন্তে কী আসছে সেটা আমরা জানতে পারছি। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে এটি আবারও চলে আসে যে তদন্ত কমিটির তদন্তের মাধ্যমে আমরা কী সুফল পেলাম?
শাজাহান খান: ১৯৯১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ১৫১টি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে।
মিথিলা ফারজানা: কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে এরই মধ্যে ১০০-এর বেশি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে, গণমাধ্যমের খবরের ওপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি।
শাজাহান খান: আপনি যেগুলোর কথা বলছেন, সেগুলো কোনগুলো? যেগুলোর রেজিস্ট্রেশন নেই। যেগুলো ট্রলার, রিভারসিবল গিয়ার নেই। আপনাদের বুঝতে হবে আসলে সমস্যাগুলো কোথায়?
মিথিলা ফারজানা: রেজিস্ট্রেশন থাকুক বা না-থাকুক সেখানে যে মানুষগুলো মারা যাচ্ছে, সবাই কিন্তু এই দেশের মানুষ।
আমিনুর রসুল: বাংলাদেশে রেজিস্ট্রেশনের জায়গাটায় তিনটি পর্যায় রয়েছে। ১. মালবাহী জাহাজ ২. যাত্রীবাহী এবং ৩. ফিশিং। মজার ঘটনা হলো, এগুলোর নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের হাতে। কিন্তু বাংলাদেশে লাখ লাখ নৌযান আছে, যেগুলোর কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। কিন্তু এর সংখ্যাটাও আমাদের জানা নেই।
এখানে আমাদের আদমশুমারির মতো করে একটা নৌ-শুমারি করা অতি জরুরি। এটাতে দুটো লাভ হবে। প্রথমত, সরকার তথ্য জানতে পারবে কী পরিমাণ নৌযান আমাদের দেশে আছে। দ্বিতীয়ত, এটার জন্য স্থানীয় সরকার অথবা কারও কাছে ব্যবস্থাপনা দায়বদ্ধতা দিলে ট্যাক্স আদায় করা যাবে। এতে করে আমরা লাভবান হব। গত তিন বছরে আমাদের কোটা পর্যবেক্ষণ করেছি, যেমন ২০১১ সালে আমাদের তথ্যমতে, ১৪৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেখানে মাত্র চারটির তালিকাভুক্ত আছে মন্ত্রণালয়ে। কারণ, রেজিস্ট্রেশন ছিল মাত্র চারটির।
শাজাহান খান: এখন প্রশ্নটা হলো, আমাদের নিয়ম কী? আপানার জাহাজের একটা নকশা প্রথমে জমা দেওয়া লাগবে। নকশা অনুমোদনের পর জাহাজটি তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশে এই যে লাখ লাখ নৌযান রয়েছে, এসবের কোনো নকশা নেই।
আমি বিজ্ঞপ্তি তৈরি করে ২০১১-১২ অর্থবছরে জমা দিয়েছি। সেটা হলো, ‘অভ্যন্তরীণ নৌ-শুমারি ও নাবিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প’। এখানে সাত কোটি ৭২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প জমা দেওয়া আছে। এটা যদি অনুমোদন হয়, নৌ-শুমারির কাজটা আমরা শুরু করতে পারব।
আমাদের দেশের ট্রলারগুলোতে রিভারসিবল গিয়ার লাগাতে হবে। সামনে চলতে পারে, পেছনে যেতে পারে না। এগুলো যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। এই সরকারের আমলে মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা ইতিমধ্যে প্রায় ৭০০ ট্রলারে রিভারসিবল গিয়ার প্রতিস্থাপন করেছি।
মাহমুদুজ্জামান বাবু: মাননীয় মন্ত্রী যে তথ্য-উপাত্তগুলো দিচ্ছিলেন সেগুলোর কারণেই আমাদের পুরো সংকটটা সামনের দিকে এগোচ্ছে। দুর্ঘটনা কেন ঘটে এবং সেটা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। দর্শকদের মতামতও নেওয়া হবে। এ নিয়েও কথা তুলেছেন যাঁরা আমাদের অভ্যন্তরীন নৌপথটা ব্যবহার করেন। তাঁরাও কিন্তু এই কথাগুলোই বলেছেন। সেই বিষয়গুলোতে আমরা পরে যাব। আমরা এই পরিসংখ্যানটা দেখে নিই, ঠিক কী পরিমাণ নৌ-দুর্ঘটনা এবং মৃত মানুষের সংখ্যা গত ১১ বছরে আমরা পেয়েছি:
২০০১ সালে ৭৬টি দুর্ঘটনায় মারা যায় ৩৯২ জন, ২০০২ সালে ২৮টি দুর্ঘটনায় ৬২৬ জন, ২০০৩ সালে ৬৪টি দুর্ঘটনায় ১২০৫ জন, ২০০৪ সালে ৫৬টি দুর্ঘটনায় ৪৮৭ জন, ২০০৫ সালে ৪৯টি দুর্ঘটনায় ১৭৬ জন, ২০০৬ সালে ৩৮টি দুর্ঘটনায় ৭৮ জন, ২০০৭ সালে ৩৪টি দুর্ঘটনায় ৩৪ জন, ২০০৮ সালে ৩১টি দুর্ঘটনায় ৩০১ জন, ২০০৯ সালে ২৯টি দুর্ঘটনায় ৩০৯ জন, ২০১০ সালে ৩৮টি দুর্ঘটনায় ৬৭ জন, ২০১১ সালে ৩৫টি দুর্ঘটনায় ১৫৬ জন।
শাজাহান খান: আমাদের দুর্ঘটনার মূল কারণ ও সমস্যাগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। আপনাদের স্লোগানের সঙ্গে আমি শতভাগ একমত। শুধু আপনি বলবেন যে বদলে যাওয়ার কথা, কিন্তু আমি বদলাব না; এটা হতে পারে না। যখন ঈদের সময় সদরঘাট দিয়ে আমার এলাকায় যাই তখন আপনি বলবেন যে এই জাহাজে ওঠা যাবে না, এটা ওভারলোড হয়ে গেছে। আমি বলব যে তোমার কী? মরলে আমি মরব। আমার যেতে হবে। এই কথাটা তো অস্বীকার করা যাবে না। এত লোক বহন করার নৌযানও আমাদের নেই।
মিথিলা ফারজানা: আমি একটা বিষয় দর্শকদের কাছে জেনে নিই, ঈদের সময় যে অতিরিক্ত যাত্রী নিতে হবে, তখন অতিরিক্ত যাত্রী নিতে অস্বীকৃতি জানায় যদি কোনো জাহাজ বা জাহাজের মালিক, আপনারা তার পরও কী বলবেন, ঈদে আমাদের দেশে যেতেই হবে। যদি এর জন্য অতিরিক্ত জাহাজের ব্যবস্থা করা হয় সে ক্ষেত্রে অন্য সময় এই জাহাজগুলোর কী হবে, কোনো সমাধান আছে আপনাদের কাছে?
কবির হোসেন: অন্য সময় এ জাহাজগুলোকে পর্যটন খাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমাদের পর্যটন খাত আরও সমৃদ্ধিশালী এবং সে সঙ্গে বিভিন্ন সংকটের সময় এগুলো ব্যবহার করে সংকট মোকাবিলা করা যাবে।
খবিরুল হক চৌধুরী: আমি তো মন্ত্রী মহোদয়ের মতো ’৯১ বা ’৯৬, ওইভাবে দেখব না। আমি নৌ-দুর্ঘটনা গবেষণায় এসেছি সেটা ১৯৮৬-তে। ১৯৮৬-তে অ্যাটলাস আর সামিয়া লঞ্চ যখন ডুবে গেল, পর পর প্রায় এক হাজার লোক মারা গেল, তখন হঠাৎ আমার মনে হলো কী হচ্ছে? এবং তারপর কিন্তু ধারাবাহিকভাবে হচ্ছে। এটা এই সরকারের সমস্যা বা ওই সরকারের সমস্যা নয়। প্রথম সমস্যা, যাঁরা এখানে জড়িত তাঁদের দিয়েই তদন্ত করা হয়। দ্বিতীয়ত, তদন্তের জন্য যে জ্ঞানের দরকার হয়, অন্যান্য দেশে তদন্তের একটা স্পেশালাইজেশন থাকে, আসলে এখানে কী হয়েছিল? এখানে রিপোর্ট করা হয়, এটা একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এক টেলিভিশনের রিপোর্টে দেখলাম, বলা হচ্ছে ওভারলোডিংয়ের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এটা আমি মানতে রাজি নই। ধরলাম, একটা জাহাজ ২৫০ জন যাত্রীপরিবহনের জন্য নকশা করা হয়েছে, সেখানে ৩০০ যাত্রী উঠলেই কি জাহাজটা ডুবে যাবে?
মিথিলা ফারজানা: তাহলে সমস্যাটা কোথায় থাকে?
খবিরুল হক চৌধুরী: সমস্যা আসলে কোথায়, সেটা জানার জন্য জানতে হবে যে একটা জাহাজের তিনটা জায়গায় সমস্যা। ১. নকশা ২. তৈরি ৩. পরিচালনা।
এই তিনটি স্তরে আমাদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যেমন, মানুষের ক্ষেত্রে মায়ের পেটে থাকার সময় এবং তার থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর দুটো সময়ের স্বাস্থ্যটা কিন্তু জরুরি। নকশার ক্ষেত্রে যাত্রীবাহী জাহাজের যে সতর্কতা প্রয়োজন সেই সতর্কতা মানা হয় না। আমি একজন বিশেষজ্ঞ কিন্তু আমার কাছে যাত্রীবাহী জাহাজ নিয়ে কেউ আসবে না। তারা জানে, আমি যেভাবে করতে বলব, তারা সেভাবে করতে পারবে না। আপনি বলতে পারেন কিছু জাহাজ তৈরির কথা। কিন্তু দুটি জাহাজ কিন্তু যথেষ্ট হবে না শত শত জাহাজের মধ্যে। আপনি এই বিষয়ে হয়তো আমার সাহায্য চাইতে পারেন। মালবাহী জাহাজে ১২ জন ক্রু থাকেন এবং সুবিধাটা থাকে যে ডুবে গেলেও কেউ মারা যায় না। যাত্রীবাহী জাহাজ যখন ডোবে; বেশির ভাগ যারা গ্রামের মানুষ, মহিলা, শিশু জানছে যে জাহাজটা ডুবে যাচ্ছে আমরা একটু পরে মারা যাব। এই ছবিটা যদি আমি দেখতে পারতাম যে এদের কী অবস্থা? সড়ক দুর্ঘটনার একটা সুবিধা হলো, দুর্ঘটনা ঘটার পর আশপাশের লোকজন দৌড়ে গিয়ে দেখতে পারে এবং বাঁচানোর একটা সম্ভাবনা থাকে। নদীতে ২০০ লোকসহ একটি জাহাজ ডুবে যাচ্ছে তাদের কী করার আছে?
শাজাহান খান: এখানে সমস্যা পরিষ্কার যে জনগণের কী করণীয় আছে, সরকারের কী করার আছে। আমি মন্ত্রী হিসেবে কথা দিচ্ছি, আপনারা যে কাজগুলো করার কথা বলবেন সে কাজগুলো করব। তিনটি বিষয় এখানে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, দুর্ঘটনার কারণগুলো কী? এবং কারণগুলো উদ্ঘাটন করে আমাদের করণীয় কী?
বদিউজ্জামান: একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই, যাত্রীবাহী জাহাজের ক্ষেত্রে এখন আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। অনেক অত্যাধুনিক হয়েছে এবং অনেক দ্রুতগতির হয়েছে।
মিথিলা ফারজানা: নকশা যদি ঠিক থাকে এবং সেই নকশা অনুযায়ী যদি জাহাজ তৈরি করা হয়, তাহলে জাহাজ ডুবে যাওয়ার কোনো কারণ নেই?
খবিরুল হক চৌধুরী: একটা হচ্ছে নকশা। নকশা ঠিকভাবে হলেও সে অনুযায়ী জাহাজ নির্মাণ হচ্ছে না। মনিটরিং নেই, সার্ভেয়ার স্পটে যাচ্ছে না। আমাদের সংস্কৃতিটা এ রকম, প্রধান ক্যাপ্টেন তাঁর ভাতিজাকে বললেন, ‘আজকে আমার ভালো লাগতেছে না, তুমি চলে যাও গিয়ে জাহাজটা চালাও।’ এই যে সংস্কৃতিটা তৈরি হয়েছে এর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। যা এই স্বল্প লোকবল দিয়ে সম্ভব নয়।
আমিনুর রসুল: আমরা অনেকগুলো গবেষণা করেছি ২০০৫, ২০০৭ ও ২০০৯ সালে, এবং সর্বশেষ জুলাই-আগস্টে আরেকটি গবেষণা উপস্থাপন করতে পারব। আমরা এই গবেষণাগুলো থেকে সংক্ষেপে চারটি জিনিস খুঁজে পেয়েছি, যেগুলো দুর্ঘটনার মূল কারণ। ১. অনিরাপদ নৌযান ২. অনিরাপদ নৌপথ ৩. অনিরাপদ ব্যবস্থাপনা ৪. সচেতনতার অভাব।
অনিরাপদ নৌপথের জন্য শরীয়তপুর-১-এর দুর্ঘটনাটা ঘটেছিল। এখন অনিরাপদ নৌযানের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় উঠে আসে। আমাদের যে পরিমাণ নৌযান আছে তার ৪০ ভাগ সার্ভে করে নেওয়া হয়েছে, বাকি ৬০ ভাগ করা হয়নি। ২০০৭ সালে সরকার একটি পদক্ষেপ নিয়েছিল, আমাদের দেশে কী পরিমাণ নৌযান ত্রুটিযুক্ত আছে, সেগুলো আমরা চিহ্নিত করব। সেটা চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত করার পর কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাকি যে কার্যক্রমগুলো ছিল সেগুলোর কিছুই করা হয়নি। আর তার পরিণতি এমভি কোকো দুর্ঘটনা। দ্বিতীয়ত, নৌপথ যদি নিরাপদ রাখা যায় তাহলে নৌ-দুর্ঘটনা হবে না। এমভি বিপাশার ক্ষেত্রে কী হয়েছে? রাত্রিকালীন কোনো অবস্থাতেই অন্য কোনো জাহাজ চলতে পারবে না, শুধু যাত্রীবাহী জাহাজ চলবে। মনিটরিংয়ের জায়গায় এখানে সমস্যা আছে। নদীপথে বিকন বাতি থাকা উচিত কিন্তু নেই। যার কারণে নাবিকেরা পথটা ঠিকমতো দেখতে পান না। অনেক সময় ভুলপথে পরিচালিত হয় আর তার ফলাফল নৌ-দুর্ঘটনা। এই ত্রুটিগুলো থাকার কারণে নৌপথ অনিরাপদ অবস্থায় আছে। মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন, নৌ-শুমারি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সে জন্য সাত কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। যা মন্ত্রণালয় থেকে বের হতে হতে এই সরকারের মেয়াদকাল শেষ হয়ে যাবে। তাহলে নৌ-শুমারি কখন হবে? কীভাবে হবে? নৌ-বিভাগ সবচেয়ে অবহেলিত জায়গা। বাজেটে নৌ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ আছে ০.০০৭ ভাগ। এত কম পরিমাণ টাকা দিয়ে ছয় লাখ মানুষের জন্য নৌযান তৈরি করতে পারবেন বা রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবেন?
মাহমুদুজ্জামান বাবু: সব সমস্যাই এখানে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু এর জন্য দাবিটা আমরা কার কাছে জানাব? নৌ মন্ত্রণালয়ের কাছেই তো? তার মাধ্যমে মন্ত্রিসভায়? বাজেট বেশি বরাদ্দের জন্য আমরা মাননীয় মন্ত্রীর কাছে দাবি জানাব।
বদিউজ্জামান: বলা হচ্ছে, জাহাজ নকশা অনুযায়ী বানানো হয় না। নকশা ও মনিটরিং ছাড়া কোনো জাহাজ এখন আর বানানো হয় না। এ ক্ষেত্রে নেভাল আর্কিটেক্ট দিয়ে সুপারভিশন ও সার্ভে করা হয়। মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত প্রকৌশলীদের পর্যবেক্ষণে জাহাজ বানানো হয়। ডিপার্টমেন্ট অব শিপিংয়ের সার্ভেয়ার দ্বারা জাহাজের সার্ভে করা হয়। আগে ঢাকা থেকে চাঁদপুরে যেতে সময় লাগত সাত ঘণ্টা, এখন লাগে সাড়ে তিন ঘণ্টা। আগে বরিশাল যেতে লাগত ১২ ঘণ্টা, এখন সাত ঘণ্টায় জাহাজ পৌঁছে যায়। এসব উন্নয়ন জাহাজমালিকদের নিজস্ব অর্থায়নে করা হয়েছে। আপনারা ত্রুটিযুক্ত জাহাজ চিহ্নিত করুন, আমি সে জাহাজ ত্রুটিমুক্ত করে নেব। তবে আমি জানি না, সমস্যাটা কোথায়। এটা নিশ্চিত করতে হবে যে রাতের বেলা কোনো মালবাহী জাহাজ চলাচল করতে পারবে না। এটা ৫০ বছর আগে থেকে নিষিদ্ধ। সরকারকে এটা নিশ্চিত করতে হবে।
খবিরুল হক চৌধুরী: বাদল সাহেব বললেন যে নকশা সুপারভিশন সব ঠিকমতো হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় এবং বাদল সাহেব তো পরস্পর বিপরীত বক্তব্য দিয়েছেন। সার্ভেয়ারের সংখ্যা খুবই কম যে এত পরিমাণ নৌযানের সার্ভে করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে বাদল সাহেব বলছেন যে সার্ভে করা হয় এবং সার্ভে ঠিক আছে। সার্ভেয়ার কোথায় বসে সার্ভে করেছেন? আমাদের বাংলাদেশে ফাইলগুলো পরিষ্কার রাখার একটা প্রবণতা আছে। আমি একটা স্লোগান বলি, ‘অনিরাপদ নৌযান নিরাপদ নৌযানের চেয়ে অনেকাংশে নিরাপদ।’ কারণ, আমরা জানি যেটা অনিরাপদ সেখানে আমরা সব সময় সতর্ক থাকব। মানে হলো, সবগুলো নৌযানই অনিরাপদ। প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটতে পারত, কিন্তু যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখনই কেবল আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়।
আবুল খায়ের: ভারতের সঙ্গে একটা নৌ-প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে গত ২ জুলাই, যা ৩১ মার্চ ২০১৪ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এবং সেখানে বরাদ্দ ধরা আছে পাঁচ-দশ কোটি টাকার মতো। যা ভারত সরকার সহায়তা হিসেবে দেবে। ভারতের সহায়তায় ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ-দশ কোটি টাকার নৌ-প্রটোকল চুক্তির কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে? সে ক্ষেত্রে নৌপথ নিরাপদ রাখা বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদের সরকার কী পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে?
আলমগীর হোসেন: সমস্যাগুলো তো এখানে উঠে আসছে, এখন সমাধানের ব্যাপারে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে?
মিথিলা ফারজানা: মাননীয় মন্ত্রী, বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য কী কী করণীয়? নৌ-প্রটোকলের কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে? কোকো লঞ্চ-দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্টের কী সুফল আমরা পেয়েছি?
শাজাহান খান: বাংলাদেশে ২৭ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ছিল, এখন আছে মাত্র তিন হাজার ৬০০ কিলোমিটার। প্রতিদিন পানির সঙ্গে বালু ভেসে আসে। বর্ষায়ও অনেক জায়গায় বালু জমে ডুবোচর তৈরি হচ্ছে। হাইড্রোগ্রাফি টিম দিয়ে আমাদের সেখানে সার্ভে করতে হচ্ছে। যেখানে বালু জমাট বাঁধছে, তাৎক্ষণিকভাবে ড্রেজিং করার ব্যবস্থা করছি। অনেক সময় স্রোতের কারণে ড্রেজার দাঁড় করিয়ে রাখা যায় না। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু মাত্র তিনটি ড্রেজার ক্রয় করেছিলেন। এরপর আর কোনো নতুন ড্রেজার কেনা হয়নি। বর্তমান সরকার নতুন ১৭টি ড্রেজার কিনতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ব্যক্তিমালিকানায় ১৬টি ড্রেজার নিয়ে আসা হয়েছে। মোট ১১ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকার একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে এই ডুবোচর সরানোর প্রকল্পও। যার জন্য ৫০টি ড্রেজার দরকার। এর মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীনসহ আমাদের হাতে আছে ২৬টি। আরও ২৪টি ড্রেজার আমাদের প্রয়োজন। এর দ্বারা অর্ধেক কাজ করা যাবে।
দ্বিতীয়ত, শত শত নৌ-মামলা বিচারাধীন আছে মেরিন কোর্টে। ম্যাজিস্ট্রেটের অভাবে সেগুলোর সমাধান করা যাচ্ছে না। একজন মাত্র ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে কোর্ট চালাতে হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টিও অরগানোগ্রামের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য। আমাদের দেশে সরকারি ফাইল প্রসেসের একটা জটিল সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর, এর কারণে যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিন থেকে চার বছর লেগে যায়। আর গার্মেন্টস মালিকদের বলা হয়েছে ঈদে আপনারা পর্যায়ক্রমে ছুটি দেন। ফলে চাপটা অন্তত একটু কম থাকবে।
আরেকটি বিষয় জনগণকে জানাতে চাই, আপনারা নিজেরা অতিরিক্ত যাত্রী হবেন না। এই অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনা ঘটে। এর দায়দায়িত্ব মন্ত্রণালয় বা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনের ঘাড়ে যায়।
বাজেটে বরাদ্দ করা অর্থও কিন্তু আমরা খরচ করতে পারিনি। এই অর্থ ব্যয় করার জন্য যে লোকবল ও ব্যবস্থাপনা দরকার তার দারুণ অভাব। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অরগানোগ্রাম নতুনভাবে করা হয়েছে, যাতে করে বাজেটে বরাদ্দ করা অর্থ সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। ইতিমধ্যে সাতজন সহকারী সচিব, চারজন উপসচিব এবং দুজন যুগ্ম সচিব নিয়োগ করা হয়েছে। রাতের বেলা মালবাহী জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও তা চলছে। এটাকে বাধা দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় লোকবল আমাদের নেই। এটার জন্য আমাদের নৌ-পুলিশ দরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নৌ-পুলিশ তৈরি ও কোস্টগার্ডের সংখ্যা বৃদ্ধির অনুরোধ জানানো হয়েছে। সে সঙ্গে তাদের ব্যবহারের জন্য বাহনের খুব অভাব, তারও ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে কিছু কাজ করছি, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ, শিপিং করপোরেশন প্রভৃতির মাধ্যমে। এই কাজগুলো করার জন্য যে সময় প্রয়োজন সে সময়টা আমরা নিয়েছি এবং আমি বিশ্বাস করি, এই কার্যক্রমগুলো পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে যে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে, তা খুব তাড়াতাড়ি দৃশ্যমান হবে না। এটার ফল আমরা ভবিষ্যতে ভোগ করব। তবে সবচেয়ে বড় কথা মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি করলে এ ধরনের সমস্যা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব।
মিথিলা ফারজানা: মাননীয় মন্ত্রী, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তবে এমভি কোকো দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে আপনারা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন সেটা কিন্তু জানাননি?
শাজাহান খান: কোকো নৌ-দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্টে ১৯টি প্রস্তাবনা ছিল, যার মধ্যে ১০টি আমরা বাস্তবায়ন করেছি। তদন্ত রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে মেরিন কোর্টে এবং ফৌজদারি আদালতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এখনো সেই মামলা বিচারাধীন। দণ্ডাদেশ এখনো হয়নি।
মিথিলা ফারজান: যদি আজকের অনুষ্ঠান থেকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের প্রশ্নটা, আকুতিটা, আরজিটা পৌঁছে দিতে পারি, তবেই বদলে যাওয়ার মিছিল শুরু হয়েছে ধরে নেব এবং আমার কাছ থেকে আপনার কাছ থেকে এই বদলে যাওয়ার এবং বদলে দেওয়ার মিছিল আরও বড় হবে—এই প্রত্যাশা নিয়ে শেষ করছি।

No comments

Powered by Blogger.