সংসদে প্রধানমন্ত্রী-সকালে বিকেলে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের কাজের সঙ্গে কথার মিল নেই। তারা নির্বাচনের আগে বলে এক কথা, ক্ষমতায় এসে করে তার উল্টোটা। যেমন ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল, বন্ধ সব কলকারখানা চালু করবে। কিন্তু ক্ষমতায় এসে চালু কল-কারখানাও বন্ধ করে দিল।


আমরা ক্ষমতায় এসে বন্ধ কলকারখানা চালু করি। শ্রমিকদের দিকে লক্ষ রাখা ও তাঁদের কল্যাণ করাই আমাদের কাজ।'
গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীনের এ-সংক্রান্ত এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

বিদ্যুৎ উৎপাদনসক্রান্ত জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, 'বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলেই বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি।' গত রমজান মাসে বিদ্যুতের উন্নতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'রোজার মাসে লোডশেডিং না করতে আমি বিদ্যুৎ বিভাগকে বলেছিলাম। তবে লোডশেডিংয়ের কথা মানুষ যাতে ভুলে না যায় সে জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে সকালে ও বিকেলে এক ঘণ্টা লোডশেডিং দিতে বলেছি। তাতে জনগণের বিদ্যুৎ বিলও কম আসবে।'
মহিলা সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরার এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের দেশের মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন নয়। সাশ্রয়ী হলে অনেক বিদ্যুৎ সঞ্চয় সম্ভব।' তিনি দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ করেন, 'নিজের হাতে বাতি জ্বালালে ও বন্ধ করলে অনেক বিদ্যুৎ বাঁচাতে পারি। তাতে বিলও কম আসবে।' এতে বিদ্যুতের বিলও কম আসায় জনগণ উপকৃত হবে বলে দাবি করেন তিনি।
বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, 'যে কাজ গত সাত বছরে (বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার) হয়নি, আমাদের সরকার সাড়ে তিন বছরে তা করেছে।'
এদিকে লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে সুশাসনের ঘাটতির পেছনে জনপ্রশাসনের অদক্ষতা, দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও অনিয়মকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, সরকার এসব দুর্বলতা কাটিয়ে দেশে শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরকারি পরিকল্পনা তুলে ধরে জানিয়েছেন, ওই সময় পর্যন্ত মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় প্রায় ১৩ হাজার মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সরকার ২০১৩ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সাত হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতেও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তাঁর সরকার গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণের জন্য জনপ্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কৌশল হাতে নিয়েছে। তবে সুশাসন ও প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলো অনেক চ্যালেঞ্জিং। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত ও শক্তিশালী প্রয়াসের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা : স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা আগামী পাঁচ বছরের বছরওয়ারি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলিয়ে সরকার চলতি বছরের বাকি সময়ে এক হাজার ৯৮৬, ২০১৩ সালে তিন হাজার ৩৩৯, ২০১৪ সালে তিন হাজার ২৯৭, ২০১৫ সালে দুই হাজার ১৮২ ও ২০১৬ সালে দুই হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে। এ ছাড়া ভারত থেকে ২০১৩ সালে ৫০০ এবং ২০১৬ সালে ৫০০ মিলিয়ে মোট এ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, এ পরিকল্পনার আওতায় চার হাজার ৮৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার মোট ২৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে। যেগুলো ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে বেসরকারি (আইপিপি) ১৮টি ও সরকারি খাতে ৯টি রয়েছে। এ ছাড়া সরকারি খাতে আটটি, বেসরকারি খাতে ১৭টিসহ মোট ২৫টি প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার ৯৬৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রক্রিয়াধীন, যেগুলোর চুক্তি ধারাবাহিকভাবে আগামী ছয় মাসের মধ্যে স্বাক্ষর করা সম্ভব হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ২০১১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন পাঁচ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার কথা। সরকার ইতিমধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে এবং গত রমজান মাসে সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.