ইলিশ রপ্তানির আবদার অগ্রাহ্য দেশবাসীর স্বস্তি
ইলিশসহ মিঠাপানির মাছ রপ্তানি চালু করতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সুপারিশ গ্রহণ করল না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার সংগঠনটির সভাপতি এ কে আজাদের চিঠি নিয়ে মাছ রপ্তানিকারকরা মন্ত্রণালয়ে গেলে বাণিজ্যসচিব গোলাম হোসেন তাঁদের সরাসরি 'না' বলে দেন।
ফলে রমজান মাসে বন্ধ হওয়া ইলিশসহ মিঠাপানির উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছ রপ্তানি শিগগিরই আর চালু হচ্ছে না। আর এ খবরে আশ্বস্ত সাধারণ মানুষ।
ব্যবসায়ীরা চিংড়ি, কুঁচিয়া, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি রপ্তানি করতে পারবেন। এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি আজ (বুধবার) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। ওই চিঠিতে কী কী মাছ রপ্তানি করা যাবে, তা বলা হবে। গত ৩১ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মাছ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। তখন নির্দেশনায় বলা হয়, 'পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত চিংড়ি ব্যতীত ইলিশসহ সকল প্রকার কাঁচা মাছ রপ্তানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।'
জানা গেছে, রমজানের পরে রপ্তানির অনুমতি পাওয়ার আশায় অনেক ব্যবসায়ী প্রচুর পরিমাণে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ মজুদ করে রাখেন। ফলে বাজারে মাছের দাম খুব একটা কমেনি। এবার রোজা শেষে তাঁরা এসব মাছ রপ্তানি করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এফবিসিসিআইয়ে মাছ রপ্তানির অনুমতির সুপারিশ চেয়ে দেওয়া চিঠিতে কয়েকটি রপ্তানিকারক সংগঠন তাদের কাছে মাছ মজুদ আছে বলে উল্লেখও করে।
গত সোমবার এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ কাঁচা ইলিশ বাদে মাছ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। মঙ্গলবার রপ্তানি অনুমতির দাবিতে মন্ত্রণালয়ে যান মাছ রপ্তানিকারকরা। এফবিসিসিআইয়ের চিঠিতে বলা হয়, দেশের মৎস্য শিল্পের সঙ্গে ৩০ লাখ লোক জড়িত। পোশাক খাতের পর এটিই সবচেয়ে বড় রপ্তানি আয়ের খাত। মাছ রপ্তানির অনুমতি না দেওয়া হলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব যুক্তি খুবই হাস্যকর। কারণ মাছ রপ্তানি না হলেও দেশের বাজারে তা উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়। আর চিংড়ি, কুঁচিয়া ও সামুদ্রিক মাছ বিদেশে বেশি রপ্তানি হয়। সেগুলো রপ্তানিতে মন্ত্রণালয় বাধা দেয়নি। কয়েকজন রপ্তানিকারকের স্বার্থ হাসিলে এ ধরনের উদ্ভট যুক্তি দেখানো হচ্ছে। এফবিসিসিআই দেশবাসীর স্বার্থকে উপেক্ষা করছে। তবে সরকার শেষ পর্যন্ত ইলিশ রপ্তানির অনুমতি না দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রায় ৬০ কোটি ডলারের হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে হিমায়িত মাছ প্রায় ১১ কোটি ডলারের, চিংড়ি প্রায় ৪৭ কোটি ডলারের। উন্মুক্ত জলাশয়ের মিঠাপানির মাছ ও ইলিশ রপ্তানির পরিমাণ মোট আয়ের খুবই নগণ্য।
অন্যদিকে ইলিশ রপ্তানিকারকরা রপ্তানিমূল্য দেখাচ্ছেন কেজিপ্রতি মাত্র ছয় ডলার। অথচ ঢাকার পাইকারি বাজারেই ১০ ডলার দরে ইলিশ বিক্রি হয় সস্তার সময়ে। বেশি দামের সময় তা ২০ ডলারেও বিক্রি হয়। আর খুচরা বাজারে বড় ইলিশ ১২-১৩ ডলারের কমে বিক্রি হয় না কখনো। সুতরাং রপ্তানির দাবিতে দেখানো যুক্তি ধোপে টেকে না।
No comments