অছাত্র আর বুড়োদের নিয়ে ছাত্রদলের নতুন কমিটি
২০১০ সালের পর থেকেই ঢাকাসহ দেশব্যাপী কর্মসূচিগুলোতে খালেদা জিয়া নিজেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, ছাত্রদলের এবারের কমিটি হবে অছাত্রবিহীন-ত্যাগীদের নিয়ে। বলেছিলেন, ঐতিহ্য ফিরিয়ে ছাত্রদলকে দেওয়া হবে নতুন জীবন। যুক্ত করা হবে অভিজ্ঞ আর কর্মঠ যোগ্যদের। কিন্তু তার কোনোটাই রাখা হয়নি।
দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও পর্যালোচনা শেষে ঘোষণা করা হলো 'অছাত্র' ও 'বুড়ো' সমন্বয়ের কমিটি। প্রায় এক যুগ আগে ছাত্রত্ব শেষ করা চল্লিশোর্ধ্ব আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলকে ছাত্রদলের সভাপতি এবং তাঁরই বন্ধু হাবিবুর রশীদ হাবিবকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। যিনি ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের জনক।
গত সোমবার মধ্য রাতে পাঁচ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। যাতে সিনিয়র সহসভাপতি পদে বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, যুগ্ম সম্পাদক পদে এস এম ওবায়দুল হক নাসির ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রাজিব আহসানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনের কাগজে ২০১ সদস্যের কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও বাকিদের নাম ঘোষণা করা হবে পরে। কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সুপার ফাইভ পদ নিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
ছাত্রদলের অভিভাবক বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, দলের চেয়ারপারসন সার্বিক দিক বিবেচনা করেই নতুন কমিটির ঘোষণা দিয়েছেন।
নতুন কমিটিতে শিক্ষক, পেশাজীবী, অছাত্র, বিবাহিত, একাধিক সন্তানের জনক, ব্যবসায়ী, ছাত্রলীগ সদস্য, অপরিচিত ও বিতর্কিতরা স্থান পাওয়ায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
অভিযোগ রয়েছে, তুলনামূলক যোগ্য ও দক্ষদের কয়েকজন কমিটিতে স্থান পাননি। আবার কয়েকজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী পদ দেওয়া হয়নি। কমিটিতে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর অনুসারীর সংখ্যা বেশি। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। অবশ্য, কমিটির নেতৃত্ব পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল। গতকাল কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া দায়িত্ব তিনি জীবনবাজি রেখে পালন করবেন। নতুন দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা চান তিনি।
তবে কমিটি নিয়ে পর্যালোচনায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, সংগঠন পরিচালনায় ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান গড়তে নতুন নেতৃত্বকে বেগম জিয়া যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা সফল করা কঠিন হবে। এদিকে ছাত্রদলের নতুন কমিটির খবরে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহড়া দিয়েছে ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রবেশদ্বারে দিনভর ছিল পুলিশি প্রহরা। পুরো ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
ছাত্রদল নিয়ে লুকোচুরি
স্বচ্ছ কমিটি করার উদ্দেশে রমজানের প্রথম সপ্তাহে খালেদা জিয়া ছাত্রদলের নেতাদের নিয়ে চার দফা বৈঠক করেন। একই সময়ে সাবেক ছাত্রনেতা শামসুজ্জামান দুদু, রিজভী আহমেদ ও সালাহউদ্দিন আহমেদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের তিনটি রিপোর্ট সংগ্রহ করেন তিনি। এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থক শিক্ষকদের কাছ থেকে দুটি রিপোর্ট এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেনকে দিয়ে আরেকটি রিপোর্ট সংগ্রহ করেন।
ঈদের পর এসব রিপোর্ট নিয়ে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও টুকুকে নিয়ে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে অন্য কারো সঙ্গে আলোচনা করেননি তিনি। কমিটির খসড়া চূড়ান্ত করার পর গত সপ্তাহে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে তা ই-মেইলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ সপ্তাহের প্রথম দিকে তারেক রহমানের মতামত আসে। তবে ওই মতামতকে খুব একটা গুরুত্ব না দিয়ে গতকাল বৈঠকে বসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাবেক ছাত্রদল নেতা আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া এবং সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও ছাত্রদলের বিদায়ী সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু। বৈঠক শেষে রাত দেড়টার দিকে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বাসায় ডেকে নেন সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল ও এস এম ওবায়দুল হক নাসিরকে। সেখানে প্রায় ঘণ্টাখানেক আলোচনা শেষে পৌনে ৩টার দিকে কমিটি ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।
এবার 'ভাইতন্ত্র' কাজ করবে না এমন হুঁশিয়ারি দিলেও খালেদা জিয়া সে প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি। এর ফাঁকেও দলের স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য, ঢাকা মহানগর বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতা, বেগম জিয়ার এক উপদেষ্টা, গুলশান কার্যালয়ের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা কলকাঠি নেড়েছেন। এ ছাড়া শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু কমিটি গঠনের মূল ক্রীড়নক ছিলেন বলেও প্রচারণা চলছে।
জুয়েল : নতুন সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল ছাত্রদলের বিদায়ী কমিটিতে কোনো পদে ছিলেন না। এর আগের কমিটিতে (হেলাল-বাবু কমিটি) তিনি সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তারও আগের কমিটিতে (লাল্টু-হেলাল) তিনি সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
নরসিংদীর মনোহরদীর ছেলে জুয়েল ১৯৮৭ সালে এসএসসি পাস করেন। ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন্যান্সে ভর্তি হন। কয়েক বছর পর বিশ্ববিদালয় থেকে ঝরে পড়েন। পরে টাঙ্গাইলের একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন বলে জানা গেছে। এই নেতা এর আগে ছাত্রদল থেকে দুবার বহিষ্কার হন। সর্বশেষ গত বছর টুকু-আলীমের কমিটির বিরোধিতা করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভাঙচুরের দায়ে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। ওই সময় তাঁর বিরুদ্ধে বিএনপি পল্টন থানায় মামলাও করে। মামলার বাদী ছিলেন বিএনপি কার্যালয়ের স্টাফ জলিল। অবশ্য, কয়েক মাস আগে তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
হাবিব : নতুন সাধারণ সম্পাদক নেত্রকোনার ছেলে হাবিব বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। বিদায়ী কমিটির সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এর আগের (হেলাল-বাবু কমিটি) কমিটিতে তিনি মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুুল থেকে এসএসসি, ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি মাস্টার্স পাস করেছেন বলে জানা গেছে। গত বছর তাঁকে হত্যা করার একাধিকবার চেষ্টা করে প্রতিপক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকারী ছাত্রলীগ ক্যাডার মুহিতুল ইসলাম হিরুকে সভাপতি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন নিয়ে বিস্ময় দেখা দিয়েছে। সুপার ফাইভে থাকা কমিটিতে তিনজনের বিরুদ্ধেই বিরোধী আদর্শের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন হিরু। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি নেতা হয়ে ওঠেন। ২০০১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা করে। ওই হামলার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। মিছিলে তিনি গুলি করেন বলে পরের দিন একটি জাতীয় দৈনিকে ছবি প্রকাশিত হয়। হিরু কেন্দ্রীয় কমিটির বিদায়ী সভাপতি ও নতুন যুগ্ম সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ।
এ ছাড়া ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়-টুটুল কমিটিতে সদস্য ছিলেন নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ খান পারভেজ। আর ফজলুল হক হলের ছাত্রলীগ কমিটির সহসভাপতি শাহ নাসির উদ্দিন রুম্মন কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অছাত্রদের নিয়ে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সুপার ফাইভ কমিটিতে কেউই নিয়মিত ছাত্র নন। ঘোষিত কমিটির সভাপতি ফয়সাল আহমেদ সজল সাবেক জগন্নাথ কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ১৯৯৩-৯৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমানের মদদপুষ্ট। সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্না সাবেক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
এই কমিটিতে সিনিয়র সহসভাপতি রাজিব রহমান ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। বর্তমানে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষকতা করছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আল আশরাফ মামুন ও সাংগঠনিক সম্পাদক এ বি এম মোহসিন বিশ্বাস। তাঁরা দুজনই অর্থনীতি বিভাগের ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ
পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ইসহাক সরকারকে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত অছাত্র ইসহাক গত আহ্বায়ক কমিটির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন খন্দকার এনামুল হক। এ ছাড়া সিনিয়র সাধারণ সম্পাদক মির্জা আসলাম আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ এ জহির উদ্দিন তুহিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন কামরুজ্জামান টিপু।
একই অভিযোগ ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতাদের বিরুদ্ধেও।
গত সোমবার মধ্য রাতে পাঁচ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। যাতে সিনিয়র সহসভাপতি পদে বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, যুগ্ম সম্পাদক পদে এস এম ওবায়দুল হক নাসির ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রাজিব আহসানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনের কাগজে ২০১ সদস্যের কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও বাকিদের নাম ঘোষণা করা হবে পরে। কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সুপার ফাইভ পদ নিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
ছাত্রদলের অভিভাবক বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, দলের চেয়ারপারসন সার্বিক দিক বিবেচনা করেই নতুন কমিটির ঘোষণা দিয়েছেন।
নতুন কমিটিতে শিক্ষক, পেশাজীবী, অছাত্র, বিবাহিত, একাধিক সন্তানের জনক, ব্যবসায়ী, ছাত্রলীগ সদস্য, অপরিচিত ও বিতর্কিতরা স্থান পাওয়ায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
অভিযোগ রয়েছে, তুলনামূলক যোগ্য ও দক্ষদের কয়েকজন কমিটিতে স্থান পাননি। আবার কয়েকজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী পদ দেওয়া হয়নি। কমিটিতে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর অনুসারীর সংখ্যা বেশি। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। অবশ্য, কমিটির নেতৃত্ব পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল। গতকাল কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া দায়িত্ব তিনি জীবনবাজি রেখে পালন করবেন। নতুন দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা চান তিনি।
তবে কমিটি নিয়ে পর্যালোচনায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, সংগঠন পরিচালনায় ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান গড়তে নতুন নেতৃত্বকে বেগম জিয়া যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা সফল করা কঠিন হবে। এদিকে ছাত্রদলের নতুন কমিটির খবরে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহড়া দিয়েছে ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রবেশদ্বারে দিনভর ছিল পুলিশি প্রহরা। পুরো ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
ছাত্রদল নিয়ে লুকোচুরি
স্বচ্ছ কমিটি করার উদ্দেশে রমজানের প্রথম সপ্তাহে খালেদা জিয়া ছাত্রদলের নেতাদের নিয়ে চার দফা বৈঠক করেন। একই সময়ে সাবেক ছাত্রনেতা শামসুজ্জামান দুদু, রিজভী আহমেদ ও সালাহউদ্দিন আহমেদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের তিনটি রিপোর্ট সংগ্রহ করেন তিনি। এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থক শিক্ষকদের কাছ থেকে দুটি রিপোর্ট এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেনকে দিয়ে আরেকটি রিপোর্ট সংগ্রহ করেন।
ঈদের পর এসব রিপোর্ট নিয়ে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও টুকুকে নিয়ে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে অন্য কারো সঙ্গে আলোচনা করেননি তিনি। কমিটির খসড়া চূড়ান্ত করার পর গত সপ্তাহে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে তা ই-মেইলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ সপ্তাহের প্রথম দিকে তারেক রহমানের মতামত আসে। তবে ওই মতামতকে খুব একটা গুরুত্ব না দিয়ে গতকাল বৈঠকে বসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাবেক ছাত্রদল নেতা আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া এবং সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও ছাত্রদলের বিদায়ী সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু। বৈঠক শেষে রাত দেড়টার দিকে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বাসায় ডেকে নেন সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল ও এস এম ওবায়দুল হক নাসিরকে। সেখানে প্রায় ঘণ্টাখানেক আলোচনা শেষে পৌনে ৩টার দিকে কমিটি ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।
এবার 'ভাইতন্ত্র' কাজ করবে না এমন হুঁশিয়ারি দিলেও খালেদা জিয়া সে প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি। এর ফাঁকেও দলের স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য, ঢাকা মহানগর বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতা, বেগম জিয়ার এক উপদেষ্টা, গুলশান কার্যালয়ের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা কলকাঠি নেড়েছেন। এ ছাড়া শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু কমিটি গঠনের মূল ক্রীড়নক ছিলেন বলেও প্রচারণা চলছে।
জুয়েল : নতুন সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল ছাত্রদলের বিদায়ী কমিটিতে কোনো পদে ছিলেন না। এর আগের কমিটিতে (হেলাল-বাবু কমিটি) তিনি সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তারও আগের কমিটিতে (লাল্টু-হেলাল) তিনি সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
নরসিংদীর মনোহরদীর ছেলে জুয়েল ১৯৮৭ সালে এসএসসি পাস করেন। ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন্যান্সে ভর্তি হন। কয়েক বছর পর বিশ্ববিদালয় থেকে ঝরে পড়েন। পরে টাঙ্গাইলের একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন বলে জানা গেছে। এই নেতা এর আগে ছাত্রদল থেকে দুবার বহিষ্কার হন। সর্বশেষ গত বছর টুকু-আলীমের কমিটির বিরোধিতা করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভাঙচুরের দায়ে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। ওই সময় তাঁর বিরুদ্ধে বিএনপি পল্টন থানায় মামলাও করে। মামলার বাদী ছিলেন বিএনপি কার্যালয়ের স্টাফ জলিল। অবশ্য, কয়েক মাস আগে তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
হাবিব : নতুন সাধারণ সম্পাদক নেত্রকোনার ছেলে হাবিব বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। বিদায়ী কমিটির সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এর আগের (হেলাল-বাবু কমিটি) কমিটিতে তিনি মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুুল থেকে এসএসসি, ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি মাস্টার্স পাস করেছেন বলে জানা গেছে। গত বছর তাঁকে হত্যা করার একাধিকবার চেষ্টা করে প্রতিপক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকারী ছাত্রলীগ ক্যাডার মুহিতুল ইসলাম হিরুকে সভাপতি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন নিয়ে বিস্ময় দেখা দিয়েছে। সুপার ফাইভে থাকা কমিটিতে তিনজনের বিরুদ্ধেই বিরোধী আদর্শের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন হিরু। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি নেতা হয়ে ওঠেন। ২০০১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা করে। ওই হামলার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। মিছিলে তিনি গুলি করেন বলে পরের দিন একটি জাতীয় দৈনিকে ছবি প্রকাশিত হয়। হিরু কেন্দ্রীয় কমিটির বিদায়ী সভাপতি ও নতুন যুগ্ম সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ।
এ ছাড়া ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়-টুটুল কমিটিতে সদস্য ছিলেন নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ খান পারভেজ। আর ফজলুল হক হলের ছাত্রলীগ কমিটির সহসভাপতি শাহ নাসির উদ্দিন রুম্মন কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অছাত্রদের নিয়ে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সুপার ফাইভ কমিটিতে কেউই নিয়মিত ছাত্র নন। ঘোষিত কমিটির সভাপতি ফয়সাল আহমেদ সজল সাবেক জগন্নাথ কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ১৯৯৩-৯৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমানের মদদপুষ্ট। সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্না সাবেক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
এই কমিটিতে সিনিয়র সহসভাপতি রাজিব রহমান ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। বর্তমানে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষকতা করছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আল আশরাফ মামুন ও সাংগঠনিক সম্পাদক এ বি এম মোহসিন বিশ্বাস। তাঁরা দুজনই অর্থনীতি বিভাগের ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ
পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ইসহাক সরকারকে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত অছাত্র ইসহাক গত আহ্বায়ক কমিটির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন খন্দকার এনামুল হক। এ ছাড়া সিনিয়র সাধারণ সম্পাদক মির্জা আসলাম আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ এ জহির উদ্দিন তুহিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন কামরুজ্জামান টিপু।
একই অভিযোগ ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতাদের বিরুদ্ধেও।
No comments