বুয়েট প্রো-ভিসিকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে

বুয়েটের উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) অধ্যাপক হাবিবুর রহমানকে শেষ পর্যন্ত বিদায় নিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বুয়েট কর্তৃপক্ষের করা মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে শিক্ষক সমিতির নেতাদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।


এর মধ্য দিয়ে পাঁচ মাস ধরে চলা বুয়েট সংকটের অবসান হতে যাচ্ছে।
উপ-উপাচার্যকে অপসারণ এবং মামলা প্রত্যাহারে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে দ্রুত ক্লাসে ফেরার কথা জানিয়েছেন বুয়েট শিক্ষকরা। আজ মঙ্গলবার শিক্ষক সমিতির বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, উপ-উপাচার্যকে প্রত্যাহার করা হবে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলাও প্রত্যাহার করা হবে। অন্য সব বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরপর শিক্ষকরা শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যাবেন এবং বুয়েট সচল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, 'মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তিনি (মন্ত্রী) বলেছেন, এগুলো প্রত্যাহার হয়ে গেল বলে ধরে নেন। আমরা তা ধরে নিয়েছি। প্রো-ভিসিকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। অন্যসব বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা আশ্বস্ত হয়েছি।'
রাত সোয়া ১১টায় বৈঠক শুরুর পর তা শেষ করে রাত সোয়া ১টার দিকে মিন্টো রোডের বাড়ির সামনে সাংবাদিকদের কাছে সিদ্ধান্ত জানান শিক্ষামন্ত্রী ও বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি।
উপাচার্য অধ্যাপক এস এম নজরুল ইসলামকে অপসারণের দাবি ছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি। সেই বিষয়ে পরবর্তী সময়ে 'প্রয়োজনীয়' ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস শিক্ষামন্ত্রী দিয়েছেন বলে অধ্যাপক মুজিবুর জানান।
আজ থেকে বুয়েটে ক্লাস শুরু হবে কি না জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, 'ক্যাম্পাসে আমাদের শিক্ষার্থী ও অন্য শিক্ষকরা রয়েছেন। কাল (মঙ্গলবার) সকালে সভা করব। সবাইকে সমগ্র বিষয়টি অবহিত করব। দ্রুত স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে আমরা আশা করছি।'
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী, শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের এবং বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আশরাফুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন, সহসভাপতি অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালীসহ শিক্ষক সমিতির ১০ সদস্য।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় শিক্ষক সমিতির সদস্যদের বৈঠকে ডাকেন শিক্ষামন্ত্রী। এরপর শিক্ষক সমিতি জরুরি বৈঠক করে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।
পলাশীতে রাস্তা অবরোধ ও শিক্ষাসচিবের আশ্বাস
দুপুর দেড়টার দিকে হাজারখানেক শিক্ষার্থী পলাশী মোড়ে অবস্থান নেন। এতে পলাশী মোড় হয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা পলাশী মোড়ে প্রতিবাদী চিত্র আঁকেন। পাশাপাশি উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষক এসে জানান, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে বুয়েট কর্তৃপক্ষের করা মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মাসুম সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষাসচিবের সঙ্গে বুয়েট শিক্ষকদের কয়েকজনের কথা হয়েছে। তিনি মামলার বিষয়টি নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়েছেন এবং কোনো ছাত্র-শিক্ষককে হয়রানি করা হবে না বলেও জানিয়েছেন।
শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'বুয়েট প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতির সঙ্গে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, শিগগিরই যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছাব।' শিক্ষাসচিবের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বিকেল ৩টায় দিনের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, 'শিক্ষাসচিব আশ্বাস দিয়েছেন মামলা নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হয়রানি করা হবে না। একই সঙ্গে বুয়েট পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মঙ্গলবার সকাল ১১টা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেছি।' গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলন
আন্দোলনের বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর বুয়েট শিক্ষক সমিতি গতকাল প্রথম সংবাদ সম্মেলন করে। পুরকৌশল বিভাগের সম্মেলন কক্ষে দুপুর পৌনে ২টায় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আশরাফুল ইসলাম এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, মামলা দেওয়ার ঘটনাটি ন্যক্কারজনক। এ জন্য শিক্ষক সমিতি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। তিনি এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। এ সময় শিক্ষক সমিতির নেতা অধ্যাপক ড. এ বি এম বদরুদোজ্জা বলেন, বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা সবর্জনবিদিত। শিক্ষকরা এখানে নিজেদের সন্তানের ভর্তি কোটা বাতিল করেছেন। এর পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তি চুরির অপবাদ দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.