চরাচর-মানবতাবাদী মাদার তেরেসা by শরাফত হোসেন
১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ বীরাঙ্গনা সমস্যা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। হায়েনাদের দ্বারা নিপীড়িত-নিগৃহীতদের সহযোগিতা-সহমর্মিতা জানাতে ছুটে এসেছিলেন মানবতাবাদী এক তপস্বী। ঢাকায় পাঁচটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে খুললেন বীরাঙ্গনাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র।
শুধু মানুষকে ভালোবেসে এবং মানবতার সেবা করে একজন মানুষ পৃথিবীর সব মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন। নিজের ধ্যান-জ্ঞান- সব কিছু দিয়ে আমৃত্যু মানুষের সেবা করে যাওয়া এই মানুষটির নাম মাদার তেরেসা, পুরো নাম এগনেস গঞ্জা বয়াজু। তিনি ইথিওপিয়ার ক্ষুধার্তদের কাছে যেতেন, যেতেন চেরনোবিল বিকিরণে আক্রান্ত অঞ্চলে। আমেরিকার ভূমিকম্পে আক্রান্তদের মাঝে সেবা পৌঁছে দিতেন। কলকাতায় তিনি মিশন শুরু করেছিলেন অবহেলিত বয়স্কদের নিয়ে, সংসার ও স্বজন যাঁদের বোঝা ভেবে ত্যাগ করেছে। শেষ বয়সে এসে মাদার তেরেসার কাছে পরম আশ্রয় পেয়েছেন তাঁরা। পরোপকার ও জনসেবার এই মহান ব্রতই তাঁকে গোটা ভারতে কিংবদন্তির মর্যাদা দিয়েছে।
১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন এই মহান নারী। পৃথিবীর ১২৩টি দেশে মিশনের মাধ্যমে চ্যারিটির কাজ পরিচালিত হয়ে আসছিল। এসব মিশনের মধ্যে ছিল এইড্স, কুষ্ঠরোগ ও যক্ষ্মারোগে আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র, স্যুপ-কিচেন, শিশু ও পরিবার পরামর্শকেন্দ্র, এতিমখানা, বিদ্যালয় ইত্যাদি।
নিকোলো ও দ্রানা বয়াজুর কনিষ্ঠ সন্তান মাদার তেরেসা ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট আলবেনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আলবেনিয়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯১৯ সালে এক রাজনৈতিক সমাবেশে তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এই অসুখেই তিনি মারা যান। ১২ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে একজন মিশনারি হিসেবে যোগ দেন 'সিস্টার্স অব লোরেটো সংস্থায়'। মা আর বোনদের সঙ্গে তাঁর আর কোনো দিন দেখা হয়নি। ১৯২৯ সালে তেরেসা ভারতে আসেন এবং ভারতের নাগরিকত্ব লাভ করেন ১৯৪৭ সালে। ১৯৩১ সালে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি মিশনারিদের পৃষ্ঠপোষকের নামানুসারে তেরেসা নাম গ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে দরিদ্রদের মধ্যে মিশনারির কাজ শুরু করেন। প্রথাগত লোরেটো অভ্যাস ত্যাগ করে নীল পাড়ের একটি সাধারণ সাদা সুতির বস্ত্র পরতে শুরু করেন। কাজ শুরু করেন বস্তি এলাকায়। একসময় তিনি গঠন করেন 'মিশনারিজ অব চ্যারিটি'। ১৯৫২ সালে মাদার তেরেসা কলকাতা নগর কর্তৃপক্ষের দেওয়া জমিতে মুমূর্ষুদের জন্য প্রথম আশ্রয় ও সেবাকেন্দ্র গড়ে তোলেন।
১৯৯১ সালে মাদার তেরেসা প্রথমবারের মতো মাতৃভূমি আলবেনিয়ায় ফিরে আসেন। এ দেশের তিরানা শহরে একটি 'মিশনারিজ অব চ্যারিটি ব্রাদার্স হোম' স্থাপন করেন। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর তিনি দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেছেন। প্রথমে ভারতে ও পরে সারা বিশ্বে তাঁর এই মিশনারি কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। সত্তরের দশকের মধ্যেই সমাজসেবী এবং অনাথ ও আতুরজনের বন্ধু হিসেবে তাঁর খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৯ সালে তিনি তাঁর সেবাকার্যের জন্য 'নোবেল শান্তি পুরস্কার' ও ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান 'ভারতরত্ন' লাভ করেন। এ ছাড়া মাদার তেরেসা ১৯৮৫ সালে 'প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম' এবং ১৯৭৮ সালে 'বালজান' পুরস্কার লাভ করেন। মাদার তেরেসা ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা মানবতাবাদী ও মানবসেবী।
শরাফত হোসেন
১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন এই মহান নারী। পৃথিবীর ১২৩টি দেশে মিশনের মাধ্যমে চ্যারিটির কাজ পরিচালিত হয়ে আসছিল। এসব মিশনের মধ্যে ছিল এইড্স, কুষ্ঠরোগ ও যক্ষ্মারোগে আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র, স্যুপ-কিচেন, শিশু ও পরিবার পরামর্শকেন্দ্র, এতিমখানা, বিদ্যালয় ইত্যাদি।
নিকোলো ও দ্রানা বয়াজুর কনিষ্ঠ সন্তান মাদার তেরেসা ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট আলবেনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আলবেনিয়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯১৯ সালে এক রাজনৈতিক সমাবেশে তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এই অসুখেই তিনি মারা যান। ১২ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে একজন মিশনারি হিসেবে যোগ দেন 'সিস্টার্স অব লোরেটো সংস্থায়'। মা আর বোনদের সঙ্গে তাঁর আর কোনো দিন দেখা হয়নি। ১৯২৯ সালে তেরেসা ভারতে আসেন এবং ভারতের নাগরিকত্ব লাভ করেন ১৯৪৭ সালে। ১৯৩১ সালে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি মিশনারিদের পৃষ্ঠপোষকের নামানুসারে তেরেসা নাম গ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে দরিদ্রদের মধ্যে মিশনারির কাজ শুরু করেন। প্রথাগত লোরেটো অভ্যাস ত্যাগ করে নীল পাড়ের একটি সাধারণ সাদা সুতির বস্ত্র পরতে শুরু করেন। কাজ শুরু করেন বস্তি এলাকায়। একসময় তিনি গঠন করেন 'মিশনারিজ অব চ্যারিটি'। ১৯৫২ সালে মাদার তেরেসা কলকাতা নগর কর্তৃপক্ষের দেওয়া জমিতে মুমূর্ষুদের জন্য প্রথম আশ্রয় ও সেবাকেন্দ্র গড়ে তোলেন।
১৯৯১ সালে মাদার তেরেসা প্রথমবারের মতো মাতৃভূমি আলবেনিয়ায় ফিরে আসেন। এ দেশের তিরানা শহরে একটি 'মিশনারিজ অব চ্যারিটি ব্রাদার্স হোম' স্থাপন করেন। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর তিনি দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেছেন। প্রথমে ভারতে ও পরে সারা বিশ্বে তাঁর এই মিশনারি কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। সত্তরের দশকের মধ্যেই সমাজসেবী এবং অনাথ ও আতুরজনের বন্ধু হিসেবে তাঁর খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৯ সালে তিনি তাঁর সেবাকার্যের জন্য 'নোবেল শান্তি পুরস্কার' ও ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান 'ভারতরত্ন' লাভ করেন। এ ছাড়া মাদার তেরেসা ১৯৮৫ সালে 'প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম' এবং ১৯৭৮ সালে 'বালজান' পুরস্কার লাভ করেন। মাদার তেরেসা ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা মানবতাবাদী ও মানবসেবী।
শরাফত হোসেন
No comments