অর্থমন্ত্রী বললেন-আই শুড রিজাইন by পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য

মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে গতকাল সোমবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পদ্মা সেতু ও গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুতে দুই সহকর্মীর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একপর্যায়ে অর্থমন্ত্রী উত্তেজিত হয়ে বলেন, 'আমার সহকর্মীরাই যখন আমার সমালোচনা করছে, তখন আমার এই পদে থাকার যোগ্যতা নেই।


আই শুড রিজাইন।' পরে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে শান্ত করেন।
সূত্র জানায়, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ না হওয়া নিয়ে বৈঠকে প্রথমে আলোচনার সূত্রপাত করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ অনেক দিন আগে জারি হলেও এত দিনেও সিলেকশন কমিটি গঠিত হয়নি। এ ব্যাপারে তিনি অর্থমন্ত্রীর ব্যাখ্যা দাবি করেন। এর জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অধ্যাদেশ অনুযায়ী এমডি নিয়োগের জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বোর্ডের পরামর্শ নিয়ে একটি 'সিলেকশন কমিটি' গঠন করার কথা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বোর্ড সভা আহ্বান করলেও তাতে বেশির ভাগ সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। তাই কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় তাঁরা সিলেকশন কমিটি গঠন করতে পারেননি।
সূত্র মতে, পরে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, অর্থমন্ত্রী ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি কোনো কাজেই সফলতা দেখাতে পারছেন না। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে এক লুকোচুরি খেলা খেলছেন। অর্থমন্ত্রীর কারণেই পদ্মা সেতুর ঋণদানপ্রক্রিয়া নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন লতিফ সিদ্দিকী। এরপর অর্থমন্ত্রী বলেন, 'পদ্মা সেতু নিয়ে চারদিকে আমার সমালোচনা। এখন সহকর্মীরাও আমার সমালোচনা করছে। সুতরাং আমি ব্যর্থ হয়েছি- এটা ভেবে আমার পদত্যাগ করা উচিত।' তিনি আরো বলেন, পদত্যাগের প্রস্তুতি তিনি নিয়েই রেখেছেন। যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে তিনি রাজি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় অর্থমন্ত্রীকে উত্তেজিত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'আলোচনা-সমালোচনা হতেই পারে।' পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী দুজনের হাত মিলিয়ে দেন বলেও বৈঠকের একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে। গ্রামীণ ব্যাংকে এখনো এমডি নিয়োগ করতে না পারার ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর যুক্তিকে প্রধানমন্ত্রীও সমর্থন করেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, অর্থমন্ত্রী বলেন, 'ড. ইউনূসকে নিয়ে অনেক কিছুই হচ্ছে। কিন্তু মানুষের সেন্টিমেন্ট তাঁর পক্ষে। এ ইস্যুতে দুনিয়া থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি।' জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ।'
বৈঠকে গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) আইন ২০১২-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের পর আপিলের সময়সীমা কমিয়ে এ-সংক্রান্ত আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে 'আন্তর্জাতিক অপরাধ (আদালত) (দ্বিতীয় সংশোধন) আইনের' খসড়া অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধিত খসড়ায় বর্তমান আইনে ট্রাইব্যুনালে রায়ের পর ৬০ দিন পর্যন্ত আপিলের সুযোগ থাকলেও সেটাকে ৩০ দিন করা হয়েছে। সচিব বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদীপক্ষের আপিল জমা দেওয়ার সুবিধার জন্যই সার্টিফায়েড কপি রায়ের দিনই সরবরাহের বিধান করা হয়েছে।
মন্ত্রিসভার এই বৈঠকে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (দ্বিতীয় সংশোধনী) আইন ২০১২-এর খসড়াও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে অর্পিত সম্পত্তির গেজেট প্রকাশ এবং আসল মালিকের উত্তরাধিকারদের সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার আবেদন দাখিলের সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.