বিশ্ব প্রতিযোগিতা সক্ষমতা-১০ ধাপ নামল বাংলাদেশ

বিশ্ব প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে ১০ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১১-১২ সালের ১০৮তম অবস্থান থেকে পিছিয়ে ২০১২-১৩ সালে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৮তম। ২০০৩-০৪ সালের পর প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বড় ধরনের অবনতি ঘটল। ২০০৪ সালে ২৪ ধাপ পিছিয়েছিল বাংলাদেশ।


আগের বছরগুলোতে বাংলাদেশ দু-এক ধাপ পিছিয়ে পড়লেও সূচকে পাওয়া নম্বর বাড়ছিল। কিন্তু এ বছর নম্বরও কমে গেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের অবস্থানই পিছিয়েছে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এ বিষয়ক প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ২০১১ সালের ১২ মাসের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে। গতকাল বুধবার সারা বিশ্বে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
সিপিডির কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন সংস্থাটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। এ প্রতিবেদনের পাশাপাশি সিপিডি একটি জরিপের ফলাফলও প্রকাশ করে। এটা তারা নিজেরাই করেছে।
প্রতিবেদনটি মূলত ব্যবসায়ীদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। বাংলাদেশ সম্পর্কে মতামত দিয়েছেন ৮৭ জন ব্যবসায়ী, যাঁদের বিনিয়োগ ১০ কোটি টাকার ওপরে। তবে সিপিডি মনে করে, প্রতিবেদনের মতামত শুধু ব্যবসায়ীদের, এটা কোনোভাবেই জাতীয় মতামত নয়।
প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ক্ষেত্রে এ বছর পুরনো সমস্যাগুলোর পাশাপাশি নতুন কিছু সমস্যা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে অবকাঠামোগত দুর্বলতা, দুর্নীতি প্রভৃতি পুরনো সমস্যার পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও ঋণের সংকট এবার বড় সমস্যা হিসেবে সামনে এসেছে। আগের ছোট সমস্যাগুলোও এবার বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
পুঁজিবাজারের উৎকর্ষ, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, শ্রমবাজারের দক্ষতা এবং প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসার উৎকর্ষের দিক থেকে বাংলাদেশের র‌্যাংকিংয়ের সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে।
কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সামান্য এগিয়েছে বলেও বিশ্ব সক্ষমতা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদের হুমকি ও সংগঠিত অপরাধ কমেছে। কর-কাঠামো বিনিয়োগ সহযোগী কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে ব্যবসায়ীরা বলেন, অবস্থা ভালোর দিকে গেছে। অর্থপাচার কমেছে। স্বাস্থ্য ও প্রাথমিক শিক্ষার সূচক এগিয়েছে। বাজারের আকারের সূচকেও দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।
মোটা দাগে তিনটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এগুলো হলো ব্যবসা-বাণিজ্যের মৌলিক চাহিদা, দক্ষতা বৃদ্ধিকারক উপাদান এবং উদ্ভাবন ও উৎকর্ষ। তিনটি বিষয়ে ১২টি সূচক রয়েছে, যেগুলোর ওপর ভিত্তি করে দেশগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করা হয়। তবে দেশভেদে বিভিন্ন সূচকের গুরুত্ব বিভিন্ন। যেমন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে মৌলিক অবকাঠামো বেশি গুরুত্ব পায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে গুরুত্ব পায় উদ্ভাবন ও উৎকর্ষের বিষয়টি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগের থেকে খারাপের দিকে গেছে যেসব বিষয় সেগুলো হলো- রাজনীতিকিদের নৈতিকতার ওপর আস্থা, আয়-বৈষম্য কমাতে সরকারের চেষ্টা, পুলিশের সেবা, রাস্তার অবস্থা, ব্যবসায়ীদের ইন্টারনেটের ব্যবহার, বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রযুক্তির আগমন, বিনিয়োগের মূলধনের প্রাপ্যতা, পুঁজিবাজারের তদারকি, আর্থিক খাতের উৎকর্ষ, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নৈতিকতা, বিচার পেতে ঘুষ প্রভৃতি। বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি জঘন্য বলেও প্রতিবেদনে মত দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য অনুষ্ঠানে বলেন, এত দিন মাঝেমধ্যে দুয়েক ধাপ কমলেও বাংলাদেশ নিজের তুলনায় এগোচ্ছিল। এ বছর অবস্থানের পাশাপাশি সূচকে পাওয়া নম্বর কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ নিজের তুলনায়ও পিছিয়েছে। এটাই দুশ্চিন্তার কারণ। রাজনীতিকদের উচিত, এটাকে সমালোচনা মনে না করে নীতিগত অবস্থানকে আরো দৃঢ় করা।

No comments

Powered by Blogger.