হলমার্ক কেলেঙ্কারি-সম্পদ বেচে ঋণ শোধ দিতে বলবে সোনালী ব্যাংক

সম্পদ বিক্রি করে ঋণ শোধ করতে হলমার্ককে চিঠি দিতে পারে সোনালী ব্যাংক। প্রথমে ভাবা হয়েছিল সম্পদ বিক্রি করে ২৫ শতাংশ নগদ টাকা ফেরত নেওয়া হবে। হলমার্কের এমডির এক বক্তব্যের পর ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার চিন্তা করছেন ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা।


তাঁরা বলছেন, 'হলমার্ক যখন প্রচুর সম্পদ থাকার দাবি করছে, তখন এ সম্পদের কিছু অংশ বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ শোধ করছে না কেন?'
গত রবিবার দুর্নীতি দমন কমিশনে এসে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ দাবি করেন, ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের চেয়ে ২০ গুণ বেশি সম্পদ তাঁর রয়েছে। সময়মতো ঋণ শোধ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। তবে শর্ত হিসেবে স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করার সুযোগ দাবি করেন তানভীর মাহমুদ। এ দাবি মানতে গেলে সাময়িকভাবে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সর্ববৃহৎ এই ব্যাংকটিকে। কেননা এই পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে এবং সেই সময়টাতে নগদ টাকার টান থাকবে। তা ছাড়া জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশের পর থেকে ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও নানা ধরনের হতাশা কাজ করছে।
জানা যায়, প্রথমদিকে ঋণের ২৫ শতাংশ নগদ টাকায় ফেরত নিতে রাজি থাকলেও বর্তমানে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে চাইছে সোনালী ব্যাংক। ব্যাংকটির কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, যেহেতু ঋণের ২০ গুণ সম্পদ হলমার্কের রয়েছে (তাদের দাবি অনুযায়ী), এর ১ শতাংশও বিক্রি করলে ব্যাংকের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই ব্যাংকটির কর্মকর্তারা কৌশল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রথমে ২৫ শতাংশ নগদ টাকা জমা রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও এখন এটাকে ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে এবং এ টাকা ১৫ দিনের মধ্যে পরিশোধের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হবে। বাকি ৫০ শতাংশ অর্থের দেড়গুণ স্থাবর সম্পত্তি জমা দিতে হবে। এ বিষয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। এরপর আমরা ভেবে দেখব, ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যবসা করতে দেওয়া যায় কি না।'
সোনালী ব্যাংকের ওই পরিচালক আরো বলেন, 'জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক সম্পদ রয়েছে। প্রয়োজনে তারা ওই সম্পদ বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা ফেরত দেবে। হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন, ঋণের ২০ গুণ সম্পদ তাঁর রয়েছে। তাহলে তাঁকে ঋণ শোধের জন্য সময় দেওয়ার তো দরকার নেই। এ সম্পদের ২০ শতাংশের ১ শতাংশ বিক্রি করলেই তো ঋণের টাকা শোধ হয়ে যায়।' দ্রুত এ সিদ্ধান্তের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে (চিঠির মাধ্যমে) হলমার্ক গ্রুপকে জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হলমার্কসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ। বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শন ও সোনালী ব্যাংকের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের বড় ধরনের আর্থিক টানাটানিতে পড়ার কথা। তবে এখনো তেমন কোনো বিবৃতি সোনালী ব্যাংক থেকে আসেনি। কিন্তু ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিষয়টি টের পাচ্ছেন। ব্যাংকটির অনেক কর্মকর্তাই কালের কণ্ঠের কাছে অভিযোগ করে বলেছেন, গত বছরের একটি বোনাস এখনো আটকে রয়েছে। তাঁদের ধারণা, ব্যাংকের টাকা ফেরত না আসা পর্যন্ত ওই বোনাস পাওয়া যাবে না।
এদিকে ব্যাংকের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সম্পদ বিক্রির কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কি না তা জানতে হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে এসএমএস পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
সোনালী ব্যাংককে দেওয়া হলমার্কের বেশ কিছু চিঠির অনুলিপিতে দেখা যায়, হলমার্ক গ্রুপ প্রায় প্রতিটি চিঠিতেই দায়-দেনা নিয়মিতকরণসহ ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার অনুরোধ জানিয়েছে। গত ২৮ জুনের এক চিঠিতে হলমার্ক গ্রুপ তাদের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার বিবরণ দিয়ে বলেছে, '২০১৩ সাল নাগাদ আমাদের স্পিনিং মিলসহ আরো প্রায় ৪৫টি ইউনিট চালু হবে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো চালু হলে আমরা প্রতিবছর তিন হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করতে পারব।'

No comments

Powered by Blogger.