ঢাকায় যানবাহন ঢুকলেই টোল আদায়ের প্রস্তাব by অমিতোষ পাল

রাজধানীতে যানবাহন ঢুকলেই টোল আদায়ের প্রস্তাব করা হচ্ছে। আজ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বাজেট ঘোষণা হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বাজেট প্রস্তাবে টোল আদায়ের এ প্রস্তাব থাকছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার।


এবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জন্য দুই হাজার ৪১৪ কোটি টাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জন্য এক হাজার ৭৮০ কোটি টাকা বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে।
সকাল ১১টায় বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের বনানী কমিউনিটি সেন্টারে উত্তরের প্রশাসক শাহজাহান আলী মোল্লা নবগঠিত ডিএনসিসির প্রথম বাজেট ঘোষণা করবেন। অন্যদিকে ডিএসসিসির বাজেট আজ বিকেল ৩টায় নগর ভবন মিলনায়তনে ঘোষণা করবেন দক্ষিণের প্রশাসক জিল্লার রহমান।
ডিএনসিসি এবার নিজস্ব উৎস থেকে এক হাজার ২৬ কোটি টাকার বাজেট চূড়ান্ত করেছে। বাকি এক হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা সরকারি ও ৫০ কোটি টাকা পিপিপি বরাদ্দ থেকে আসবে বলে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
অন্যদিকে ডিএসসিসি সরকারি অনুদানসহ মোট এক হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বাজেট চূড়ান্ত করেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে নিজস্ব উৎস থেকে আয় ধরা হয়েছে ৪৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়া সরকারি ও বিশেষ সরকারি অনুদান, বৈদেশিক ও পিপিপি প্রকল্প থেকে আয়ের উৎস নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) বিভক্তির আগে গত বছরের ১২ জুলাই ২০১১-১২ অর্থবছরের জন্য দুই হাজার ৭১৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিল। এবার দুই সিটি করপোরেশনের মোট বাজেটের পরিমাণ চার হাজার ১৯৪ কোটি টাকা।
জানা গেছে, ডিএনসিসির পক্ষ থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর কোনো প্রস্তাব করা হয়নি। তবে অকট্রো (নগরশুল্ক) প্রথা চালুর প্রস্তাব থাকছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, আশির দশকের শুরুতেও ঢাকা শহরে যানবাহন প্রবেশে এ প্রথা চালু ছিল। এ থেকে সিটি করপোরেশন ভালো রাজস্ব পেত। পরে সরকার অকট্রো প্রথা তুলে দিয়ে আড়াই কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেয়। পরে সেটা কমে ৫০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অকট্রো প্রথা চালু থাকলে এ খাত থেকে অন্তত শত কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতো বলে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ মনে করে। এ ছাড়া দেশের মোট যানবাহনের বেশির ভাগই ঢাকায় চলাচল করে। অথচ এখানের রাস্তাঘাট মেরামত করতে হয় সিটি করপোরেশনকে। অকট্রো প্রথা চালু করা না গেলে এ খাতে সরকারি থোক বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা প্রাপ্তির প্রস্তাব করা হবে বাজেটে।
তবে ডিএসসিসির ক্ষেত্রে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ দক্ষিণে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের পরিমাণ উত্তরের চেয়ে অনেক কম।
ডিএনসিসির বাজেটে এবার আয়ের খাত হিসেবে নিজস্ব উৎস থেকে ৪৮২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে ২৮৮ কোটি, সালামি-ভাড়া থেকে ২০ কোটি, ট্রেড লাইসেন্স ফি থেকে ১৬ কোটি, বিজ্ঞাপন থেকে ১০ কোটি, টার্মিনাল থেকে ছয় কোটি, পশুরহাট ইজারা থেকে ১১ কোটি, রাস্তা খনন ফি থেকে ৪০ কোটি, যন্ত্রপাতি ভাড়া থেকে দুই কোটি, সম্পত্তি হস্তান্তর থেকে ৮০ কোটি, বিদ্যুৎ বিল থেকে তিন কোটি টাকা আয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য খাত থেকে প্রায় এক কোটি টাকা আয় ধরা হয়েছে।
মোট বাজেটের ৮২ শতাংশ অর্থ বা ৮৪৮ কোটি টাকা উন্নয়ন ব্যয় হিসেবে ধরা হয়েছে। ব্যয়ের খাত হিসেবে পরিচালন বাবদ ১৭৩ কোটি টাকা, সড়ক মেরামত-রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ১৭৮ কোটি টাকা, শেষকৃত্যস্থান সংস্কার-উন্নয়ন বাবদ আড়াই কোটি টাকা, নাগরিক সুবিধা খাতে পৌনে তিন কোটি টাকা, আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণ বাবদ ১৬ কোটি টাকা, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসন খাত নির্মাণে পাঁচ কোটি টাকা, পরিবেশ উন্নয়ন খাতে পৌনে আট কোটি টাকা, মশক নিধন বাবদ ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। এ ছাড়া কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, শরীরচর্চাকেন্দ্র, কাউন্সিলর অফিস, লাইব্রেরি নির্মাণ, স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ, পার্কিং খাতেও পৃথক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.