মাটির নিচে শিকার ধরা উদ্ভিদের খোঁজ!

মাংসাশী উদ্ভিদের কথা নতুন কিছু নয়। অনেক আগেই বিজ্ঞানীরা এ প্রজাতির উদ্ভিদ খুঁজে পেয়েছেন। এদের পাতায় বা কাণ্ডে বিশেষ ধরনের তরলে ভরা থলে থাকে। এর মাধ্যমে কীট-পতঙ্গ ও ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী শিকার করে খায় তারা। তবে এবার আরো নতুন চমক নিয়ে হাজির হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।


ফের নতুন প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদের খোঁজ পেয়েছেন তাঁরা। এবারের উদ্ভিদগুলোর কাজকর্ম আরো রহস্যময়। তারা শিকার ধরে মাটির নিচে।
ব্রাজিলের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় তৃণাঞ্চলে নতুন উদ্ভিদগুলো শনাক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে খোঁজ পাওয়া গেছে তিনটি প্রজাতির। এর আগে এ ধরনের উদ্ভিদের খবর অজানা ছিল বিজ্ঞানীদের কাছে। বিজ্ঞানীরা প্রজাতি তিনটিকে ফিলকক্সিয়া মিনেনসিস, ফিলকক্সিয়া গিয়াসেনসিস ও ফিলকক্সিয়া বাহিয়েনসিস নামে উল্লেখ করেছেন। এগুলো স্ন্যাপড্রাগন (থলের মতো ফুল বিশিষ্ট উদ্ভিদ) জাতের সদস্য।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের একদল বিজ্ঞানী মাংসাশী উদ্ভিদের নতুন এ প্রজাতিগুলো শনাক্ত করেছেন। ব্রাজিলের সাও পাওলোর স্টেট ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্পিনাসের গবেষকরাও তাঁদের সাহায্য করেছেন। গবেষকরা জানান, মাংসাশী উদ্ভিদের এমন অনেক প্রজাতি আছে যেগুলো বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য পোকামাকড়, ব্যাঙ এমনকি স্তন্যপায়ী ছোট ছোট প্রাণী শিকার করে খায়। এদের বেশির ভাগই পাতার সাহায্যে শিকার ধরে। পাতায় আঠালো পদার্থে শিকার আটকে যাওয়ার পরপরই পাতাগুলো ভেতরের দিকে মুড়িয়ে নেয়। কাণ্ডের ভেতরে থলের মতো বা তরলে পূর্ণ ফোলা অংশে প্রাণীগুলোকে ফেলে দেয়। হজম হয়ে যাওয়ার পর প্রাণীর দেহ থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নিয়ে নেয়।
কিন্তু ব্রাজিলের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় তৃণভূমিতে আবিষ্কৃত তিনটি প্রজাতি মাংসাশী হলেও তাদের বৈশিষ্ট্য আলাদা। তিনটি প্রজাতিরই আঠালো পদার্থযুক্ত পাতা রয়েছে, তবে পাতাগুলো তারা মাটির নিচের দিকে মেলে রাখে। ধারণা করা হচ্ছে, আঠালো এসব পাতার সাহায্যে তারা মাটির নিচে চলমান বিভিন্ন পোকামাকড় ধরে খায়। বিশেষ ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ শিকার করা প্রাণীগুলোকে দ্রুত হজমে সাহায্য করে।
নতুন প্রজাতিগুলোর অন্যান্য সাধারণ উদ্ভিদের মতো মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহের মতো মূল নেই। এই বৈশিষ্ট্য থেকেই গবেষকদের সন্দেহ শুরু হয়। এ ছাড়া তাঁরা পাতাগুলোর তরল পদার্থভর্তি ছোট ছোট গ্রন্থি চিহ্নিত করেছেন।
গবেষকদলের প্রধান ড. পিটার ফ্রিটস বলেন, 'উদ্ভিদগুলো প্রথমবার দেখার পর আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আমি আগে কখনোই এ ধরনের উদ্ভিদ দেখিনি। চারাগুলো একেবারেই নিরস বালুর ওপর দাঁড়িয়ে আছে। চারাগুলোর নামমাত্র মূল আছে এবং তাদের পাতাগুলো মাটির নিচের দিকে ছড়িয়ে আছে। ভালো করে তাকিয়ে আমরা দেখতে পেলাম, পাতাগুলোর ওপরের অংশে প্রাণীর অংশবিশেষ লেগে আছে। এ রকম আরো অনেক উদ্ভিদ থাকতে পারে, আমরা যেগুলোর সম্পর্কে জানি না।' সূত্র : টেলিগ্রাফ।

No comments

Powered by Blogger.