শবেবরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত by মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম
সব দিবস ও রজনীই আল্লাহর সৃষ্টি। রাত ও দিনের মধ্যে কোনো কোনো রাত ও কোনো কোনো দিবস বিশেষ বিশেষ কারণে মহিমান্বিত ও মাহাত্ম্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তেমনি একটি রজনী লাইলাতুল বরাত অর্থাৎ সৌভাগ্য রজনী। পবিত্র শবেবরাতের গুরুত্ব অপরিসীম।
আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত দয়াপরবশ হয়ে তাঁর অনুগত পাপী-তাপী গুনাহগার বান্দাদের পাপরাশি ক্ষমা করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু রাত প্রদানে ধন্য করেছেন। যেমন- জুমার রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, আশুরার রাত, পবিত্র মিরাজ শরিফের রাত, দুই ঈদের রাত, বিশ্বনবীর এই ধরাধামে শুভাগমনের রাত, লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত এবং লাইলাতুল বরাত বা বরাতের রাত। মহাগ্রন্থ আল কোরআন ও রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বহু হাদিসে এই বরাত রজনীর ফজিলত, বরকত ও গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে।
পবিত্র কোরআনের ২৫ পারার সুরা দুখানে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- 'হা-মীম, ওয়াল কিতাবিম মুবীন। ইন্না আনযালনাহু ফি লাইলাতিম মুবারাকাতিন, ইন্না কুন্না মুনযিরিন। ফিহা ইউফ্রাকু কুল্লা আমরিন হাকীম।'- অর্থাৎ হা-মীম, শপথ ওই সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয় আমি সেটাকে বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয় আমি সতর্ককারী, তাতে বণ্টন করে দেওয়া হয় প্রত্যেক হিকমতময় কাজ।
তাফসিরে কবীর, তাফসিরে সাভী, তাফসিরে কাশ্শাফ, তাফসিরে রুহুল বয়ান, তাফসিরে জালালাইন ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য তাফসির গ্রন্থ অধ্যয়ন করে এ কথা নিশ্চিত বলা যায়, মুফাসসিরিনে কেরাম এ আয়াতে লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ শবেবরাতে পুণ্যময় রাত বলে মত ব্যক্ত করেছেন।
হাদিস শরিফের আলোকে ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত ছিদ্দিকে আকবর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হন এবং নিজ বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। তবে মুশরিক ও আপন ভাইয়ের সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণকারীকে ক্ষমা করেন না- (মোসনদে ইমাম আহমদ)।
উম্মুল মুমেনীন হজরত মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, শাবানের মধ্য রাতে প্রিয়নবী আমার হুজরা শরিফ থেকে গভীর রাতে বিছানা ত্যাগ করে উঠে গেলেন। আমি ধারণা করলাম, নবীজি হয়তো অন্য কোনো বিবির কাছে তাশরিফ নিয়ে গেছেন। তাই তাঁর খোঁজে যেতে চাইলে একপর্যায়ে আমার হাত তাঁর পা মোবারক স্পর্শ করে। তখন আমি বুঝতে পারলাম, তিনি নামাজের সিজদায় আছেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, প্রিয়নবী ওই রাতে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত ছিলেন। অধিক ইবাদতের কারণে তাঁর নূরানি পদযুগল ফুলে গেলে আমি তা টিপতে টিপতে আরজ করলাম, আমার মা-বাবা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক, আল্লাহ তায়ালা কি আপনার (উম্মতের) পূর্বাপর সব গুনাহ ক্ষমা করে দেননি? প্রিয়নবী জবাবে বলেন, হে আয়েশা, আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা পোষণকারী বান্দা হব না? আয়েশা তুমি কি জানো, আজ কোন রাত? আমি বললাম, দয়া করে আপনি বলুন। প্রিয়নবী (সা.) বললেন, এ পুণ্যময় রাতে আগামী এক বছর যেসব সন্তান-সন্ততি ভূমিষ্ঠ হবে, তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এক বছরে যেসব মানুষ মৃত্যুবরণ করবে, তাদের নামও তালিকাভুক্ত করা হয়।
আমাদের উচিত মৃত মা-বাবা, নিকট ও দূর-আত্মীয়স্বজনের জন্য সম্ভব হলে কবরস্থানে গিয়ে দোয়া করা। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ইদানীং টিভি চ্যানেলে তথাকথিত কিছু আলেম এ মহান রাতের গুরুত্বকে অস্বীকার করে মনগড়া কথা বলে সরলপ্রাণ মুসলমানদের এ মহান রাতের ফজিলতপ্রাপ্তি থেকে দূরে রাখার হীনচেষ্টা চালায়। অথচ কোরআন-হাদিসের সঙ্গে তাদের যদি গভীর সম্পর্ক থাকত, তাহলে তারা কোনোভাবেই এ রাতের মাহাত্ম্যকে অস্বীকার করতে পারত না। অথচ সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে ফকিহ ও ওলামায়ে কেরাম যুগে যুগে তাঁদের রচিত কিতাবগুলোতে এ রাতের ফজিলত, গুরুত্ব ও করণীয় সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা করেছেন। বাংলাদেশে শবেবরাত পালিত হয় অত্যন্ত পবিত্রতার পরশ মেখে। তবে স্মরণ রাখতে হবে, এ রাতে পটকা ফোটানো, আতশবাজি জ্বালানো, হাসি-তামাশা করা ইত্যাদি গুনাহের কাজ। এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে এ রাত ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করাই হোক ইমানদার মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন।
লেখক : হেড মাওলানা, ইমারাতুন্নেসা সিটি করপোরেশন
বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
পবিত্র কোরআনের ২৫ পারার সুরা দুখানে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- 'হা-মীম, ওয়াল কিতাবিম মুবীন। ইন্না আনযালনাহু ফি লাইলাতিম মুবারাকাতিন, ইন্না কুন্না মুনযিরিন। ফিহা ইউফ্রাকু কুল্লা আমরিন হাকীম।'- অর্থাৎ হা-মীম, শপথ ওই সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয় আমি সেটাকে বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয় আমি সতর্ককারী, তাতে বণ্টন করে দেওয়া হয় প্রত্যেক হিকমতময় কাজ।
তাফসিরে কবীর, তাফসিরে সাভী, তাফসিরে কাশ্শাফ, তাফসিরে রুহুল বয়ান, তাফসিরে জালালাইন ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য তাফসির গ্রন্থ অধ্যয়ন করে এ কথা নিশ্চিত বলা যায়, মুফাসসিরিনে কেরাম এ আয়াতে লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ শবেবরাতে পুণ্যময় রাত বলে মত ব্যক্ত করেছেন।
হাদিস শরিফের আলোকে ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত ছিদ্দিকে আকবর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হন এবং নিজ বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। তবে মুশরিক ও আপন ভাইয়ের সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণকারীকে ক্ষমা করেন না- (মোসনদে ইমাম আহমদ)।
উম্মুল মুমেনীন হজরত মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, শাবানের মধ্য রাতে প্রিয়নবী আমার হুজরা শরিফ থেকে গভীর রাতে বিছানা ত্যাগ করে উঠে গেলেন। আমি ধারণা করলাম, নবীজি হয়তো অন্য কোনো বিবির কাছে তাশরিফ নিয়ে গেছেন। তাই তাঁর খোঁজে যেতে চাইলে একপর্যায়ে আমার হাত তাঁর পা মোবারক স্পর্শ করে। তখন আমি বুঝতে পারলাম, তিনি নামাজের সিজদায় আছেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, প্রিয়নবী ওই রাতে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত ছিলেন। অধিক ইবাদতের কারণে তাঁর নূরানি পদযুগল ফুলে গেলে আমি তা টিপতে টিপতে আরজ করলাম, আমার মা-বাবা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক, আল্লাহ তায়ালা কি আপনার (উম্মতের) পূর্বাপর সব গুনাহ ক্ষমা করে দেননি? প্রিয়নবী জবাবে বলেন, হে আয়েশা, আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা পোষণকারী বান্দা হব না? আয়েশা তুমি কি জানো, আজ কোন রাত? আমি বললাম, দয়া করে আপনি বলুন। প্রিয়নবী (সা.) বললেন, এ পুণ্যময় রাতে আগামী এক বছর যেসব সন্তান-সন্ততি ভূমিষ্ঠ হবে, তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এক বছরে যেসব মানুষ মৃত্যুবরণ করবে, তাদের নামও তালিকাভুক্ত করা হয়।
আমাদের উচিত মৃত মা-বাবা, নিকট ও দূর-আত্মীয়স্বজনের জন্য সম্ভব হলে কবরস্থানে গিয়ে দোয়া করা। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ইদানীং টিভি চ্যানেলে তথাকথিত কিছু আলেম এ মহান রাতের গুরুত্বকে অস্বীকার করে মনগড়া কথা বলে সরলপ্রাণ মুসলমানদের এ মহান রাতের ফজিলতপ্রাপ্তি থেকে দূরে রাখার হীনচেষ্টা চালায়। অথচ কোরআন-হাদিসের সঙ্গে তাদের যদি গভীর সম্পর্ক থাকত, তাহলে তারা কোনোভাবেই এ রাতের মাহাত্ম্যকে অস্বীকার করতে পারত না। অথচ সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে ফকিহ ও ওলামায়ে কেরাম যুগে যুগে তাঁদের রচিত কিতাবগুলোতে এ রাতের ফজিলত, গুরুত্ব ও করণীয় সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা করেছেন। বাংলাদেশে শবেবরাত পালিত হয় অত্যন্ত পবিত্রতার পরশ মেখে। তবে স্মরণ রাখতে হবে, এ রাতে পটকা ফোটানো, আতশবাজি জ্বালানো, হাসি-তামাশা করা ইত্যাদি গুনাহের কাজ। এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে এ রাত ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করাই হোক ইমানদার মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন।
লেখক : হেড মাওলানা, ইমারাতুন্নেসা সিটি করপোরেশন
বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
No comments