ঘটনার পরই কেবল দৌড়ঝাঁপ by প্রণব বল
প্রতি বর্ষায় পাহাড়ধসে প্রাণহানির পর দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় প্রশাসনের। চট্টগ্রামের পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন ও বাসিন্দাদের পুনর্বাসন নিয়ে চলে তোড়জোড়। এবারও পাহাড়ধসে ২৩ জনের প্রাণহানির পর বিষয়টা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
গতকাল সোমবার পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির দশম সভায় আবারও পুরোনো সুপারিশগুলো উঠে এসেছে। সভায় পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী ব্যক্তিদের বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসসংযোগ সাত দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নে শেষ পর্যন্ত কতটা গতি পাবে কমিটির অতীতের কার্যকলাপ থেকে সেই সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১১ জুনের ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনায় ১২৭ জনের মৃত্যুর পর চট্টগ্রামে পাহাড় ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত কমিটি গঠিত হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বিভাগীয় কমিশনারকে। কমিটি প্রথম বৈঠকেই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ ও তাদের স্থায়ী পুনর্বাসনের বিষয়ে সুপারিশ করে। কিন্তু স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি এসব সুপারিশের এখন পর্যন্ত কোনোটিই যথাযথ বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে প্রতিবছর পাহাড়ধসে মৃত্যু থেমে নেই।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি এই কয়েক বছরে নয়টি সভা করেছে। গতকালের সভাটি ছিল তাদের দশম সভা। এর আগে সর্বশেষ নবম সভাটি করে গত ৯ মে। ওই সভায়ও ঘুরেফিরে আগের সভাগুলোর সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ বাস্তাবায়নের কথা এসেছে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে ছিল ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় চিহ্নিতকরণ ও বাসিন্দাদের সংখ্যা নির্ধারণ, স্ব স্ব মালিককে তাঁদের পাহাড় থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া এবং ফৌজদারি মামলা দায়ের অন্যতম। এ ছাড়া রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী বাসিন্দাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী পুনর্বাসনের কথা। কিন্তু বারবার এসব সিদ্ধান্ত বা সুপারিশ উচ্চারিত হলেও তার ছিটেফোঁটাও বাস্তবায়িত হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক বিভাগীয় কমিশনার সিরাজুল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থায়ী পুনর্বাসন করা যায়নি। এটা অনেক অর্থ ও লজিস্টিক সাপোর্টের ব্যাপার। কিন্তু আমরা বারবার তাদের বলেছি, তোমরা পাহাড় থেকে সরে আসো। প্রয়োজনে তোমাদের টাকা দেওয়া হবে। তোমাদের বাসস্থানের বিষয়ে সরকার সাহায্য করবে। কিন্তু তারা তা করেনি। এ ছাড়া কোনো স্থান থেকে উচ্ছেদ করলেও দেখা যায় দুই দিন পর আবার ফিরে এসেছে।’
সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে (সিডিএমপি) কর্মরতদের প্রশ্ন, যদি সিদ্ধান্ত বা সুপারিশ বাস্তবায়ন করা না যায় তাহলে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি কেন? শুধু কমিটির সিদ্ধান্ত নয়, ২০০৭ সালের পর বিভিন্ন পাহাড়ধসের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিও একই ধরনের সুপারিশ ও সিদ্ধান্ত দিয়েছে। যেমন গত বছরের ১ জুলাই বাটালি পাহাড়ের প্রতিরোধ দেয়ালসহ ভূমিধসে ১৭ জনের মৃত্যুর পর তদন্ত কমিটি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ইত্যাদি বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করে। কিন্তু এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
এখন পর্যন্ত গতবারের ঘটনায় কোনো ফৌজদারি মামলাই হয়নি। হয়েছে অপমৃত্যু মামলা। এই মৃত্যুর জন্য প্রকৃতি ছাড়া আর কেউ দায়ী নয়—এ রকম একটা ধারণা জন্মেছে সবার মধ্যে। তাই চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত।
এ প্রসঙ্গে সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের পরামর্শক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে কমিটি নয়টি সভা করেছে। কিন্তু সেখান
থেকে কী বাস্তবায়ন করল। এত সুপারিশ কেবল কাগজে কলমেই? তাদের স্বল্পমেয়াদি সুপারিশ বাস্তবায়িত হলেও অন্তত মৃত্যু কিছুটা কমানো যেত। প্রয়োজনে তারা সিডিএমপির সহযোগিতা চাইতে পারত। এখন আমরা তাদের কাছে প্রস্তাব রাখব কী কী সুপারিশ আমাদের মাধ্যমে তারা বাস্তবায়ন করবে? আমরা এটাতে রাজি আছি।’
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পরই কেবল বিষয়টা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু হবে তা হতে পারে না। এটার একটি স্থায়ী সমাধানে যাওয়া দরকার। প্রয়োজনে একটি পাহাড়কে ঘিরে পাইলট প্রকল্প নিয়ে কীভাবে বাসিন্দাদের সরানো হবে, কীভাবে তাদের পুনর্বাসন করা হবে—এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে পাহাড়ধসের পর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির অধীনে গঠিত কারিগরি কমিটি চট্টগ্রামের ১২টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। পরে ব্যবস্থাপনা কমিটির নবম সভায় চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের সংখ্যা ১৩ এবং তাতে ৭০০ থেকে ৮০০ পরিবার বাস করে বলে জানায়।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১১ জুনের ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনায় ১২৭ জনের মৃত্যুর পর চট্টগ্রামে পাহাড় ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত কমিটি গঠিত হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বিভাগীয় কমিশনারকে। কমিটি প্রথম বৈঠকেই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ ও তাদের স্থায়ী পুনর্বাসনের বিষয়ে সুপারিশ করে। কিন্তু স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি এসব সুপারিশের এখন পর্যন্ত কোনোটিই যথাযথ বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে প্রতিবছর পাহাড়ধসে মৃত্যু থেমে নেই।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি এই কয়েক বছরে নয়টি সভা করেছে। গতকালের সভাটি ছিল তাদের দশম সভা। এর আগে সর্বশেষ নবম সভাটি করে গত ৯ মে। ওই সভায়ও ঘুরেফিরে আগের সভাগুলোর সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ বাস্তাবায়নের কথা এসেছে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে ছিল ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় চিহ্নিতকরণ ও বাসিন্দাদের সংখ্যা নির্ধারণ, স্ব স্ব মালিককে তাঁদের পাহাড় থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া এবং ফৌজদারি মামলা দায়ের অন্যতম। এ ছাড়া রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী বাসিন্দাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী পুনর্বাসনের কথা। কিন্তু বারবার এসব সিদ্ধান্ত বা সুপারিশ উচ্চারিত হলেও তার ছিটেফোঁটাও বাস্তবায়িত হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক বিভাগীয় কমিশনার সিরাজুল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থায়ী পুনর্বাসন করা যায়নি। এটা অনেক অর্থ ও লজিস্টিক সাপোর্টের ব্যাপার। কিন্তু আমরা বারবার তাদের বলেছি, তোমরা পাহাড় থেকে সরে আসো। প্রয়োজনে তোমাদের টাকা দেওয়া হবে। তোমাদের বাসস্থানের বিষয়ে সরকার সাহায্য করবে। কিন্তু তারা তা করেনি। এ ছাড়া কোনো স্থান থেকে উচ্ছেদ করলেও দেখা যায় দুই দিন পর আবার ফিরে এসেছে।’
সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে (সিডিএমপি) কর্মরতদের প্রশ্ন, যদি সিদ্ধান্ত বা সুপারিশ বাস্তবায়ন করা না যায় তাহলে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি কেন? শুধু কমিটির সিদ্ধান্ত নয়, ২০০৭ সালের পর বিভিন্ন পাহাড়ধসের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিও একই ধরনের সুপারিশ ও সিদ্ধান্ত দিয়েছে। যেমন গত বছরের ১ জুলাই বাটালি পাহাড়ের প্রতিরোধ দেয়ালসহ ভূমিধসে ১৭ জনের মৃত্যুর পর তদন্ত কমিটি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ইত্যাদি বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করে। কিন্তু এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
এখন পর্যন্ত গতবারের ঘটনায় কোনো ফৌজদারি মামলাই হয়নি। হয়েছে অপমৃত্যু মামলা। এই মৃত্যুর জন্য প্রকৃতি ছাড়া আর কেউ দায়ী নয়—এ রকম একটা ধারণা জন্মেছে সবার মধ্যে। তাই চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত।
এ প্রসঙ্গে সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের পরামর্শক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে কমিটি নয়টি সভা করেছে। কিন্তু সেখান
থেকে কী বাস্তবায়ন করল। এত সুপারিশ কেবল কাগজে কলমেই? তাদের স্বল্পমেয়াদি সুপারিশ বাস্তবায়িত হলেও অন্তত মৃত্যু কিছুটা কমানো যেত। প্রয়োজনে তারা সিডিএমপির সহযোগিতা চাইতে পারত। এখন আমরা তাদের কাছে প্রস্তাব রাখব কী কী সুপারিশ আমাদের মাধ্যমে তারা বাস্তবায়ন করবে? আমরা এটাতে রাজি আছি।’
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পরই কেবল বিষয়টা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু হবে তা হতে পারে না। এটার একটি স্থায়ী সমাধানে যাওয়া দরকার। প্রয়োজনে একটি পাহাড়কে ঘিরে পাইলট প্রকল্প নিয়ে কীভাবে বাসিন্দাদের সরানো হবে, কীভাবে তাদের পুনর্বাসন করা হবে—এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে পাহাড়ধসের পর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির অধীনে গঠিত কারিগরি কমিটি চট্টগ্রামের ১২টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। পরে ব্যবস্থাপনা কমিটির নবম সভায় চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের সংখ্যা ১৩ এবং তাতে ৭০০ থেকে ৮০০ পরিবার বাস করে বলে জানায়।
No comments